সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

৩ মাস পর ক্যাম্পাসে ফিরেই অবরুদ্ধ ভিসি, কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে স্থগিত কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ৫০
বেতন-ভাতা বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিন মাসের বেশি সময় লাপাত্তা ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিমেবি) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। হঠাৎ করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের চৌহাট্টা এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়েন তিনি।

প্রথমে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন প্রায় আড়াই বছর ধরে বেতন-ভাতা বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে চাইলে তাঁদের সঙ্গে উপাচার্যের ধস্তাধস্তিও হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিসি কার্যালয়ে এসেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে এসো জড়ো হন বেতন বঞ্চিতরা। একপর্যায়ে চাকরি নিয়মিতকরণ ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে চাইলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় ভিসির।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও বিষয়টি সুরাহা করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ভিসি, ট্রেজারার, সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর ভিসি ১৫ দিনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা করে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে কর্মসূচি স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে লাপাত্তা ছিলেন ভিসি এনায়েত হোসেন। বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেও দেখা মেলেনি তাঁর। তাঁদের দাবি, বৃহস্পতিবার সকালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক মাঈদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক বলতে কেউ নেই। ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ তিনজনই লাপাত্তা। বৃহস্পতিবার যুবলীগ-ছাত্রলীগকে নিয়ে ভিসি ক্যাম্পাসে আসার খবর পেয়ে আমরা এসেছি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের সবার চাকরি নিশ্চিত করে বেতন-ভাতা চালু করা হবে। দাবি আদায় না হলে আমরা আবারও রাস্তায় নামব।’

ভিসি কার্যালয়ে এসেছেন, এমন খবরে বেতন বঞ্চিতরা সেখানে অবস্থান নেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভিসি কার্যালয়ে এসেছেন, এমন খবরে বেতন বঞ্চিতরা সেখানে অবস্থান নেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘটনাস্থলে যাওয়া মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-প্রসিকিউশন) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান, ১৫ দিনের মধ্যে সিন্ডিকেট মিটিং ডাকবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ সংক্রান্ত যে ফাইলগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ আরও যারা রয়েছেন, তাদের সবাইকে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সেগুলোর সমাধান দেবে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে ভিসি এনায়েত হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। পরবর্তীতে নাম পাল্টে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নঈমুল হক চৌধুরী নিয়োগ বাণিজ্যসহ ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়াদ শেষ হলে প্রথমে চাকরি হারান রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নঈমুল হক চৌধুরী। এরপর একই পথে যেতে হয় ভিসি ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকেও।

প্রথম ভিসির মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের শুরুতেই দ্বিতীয় ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ও শেখ হাসিনার চক্ষু চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। তিনি যোগ দেওয়ার আগেই আগের উপাচার্যের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা স্থগিত করার নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও বেতন-ভাতা পাননি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূর করার আশ্বাস দেন ভিসি এনায়েত। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় দুই বছর হলেও এসবের কোনো কিছুই করেননি তিনি। আগের ভিসির মতো তাঁর বিরুদ্ধেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় সৃষ্ট জটিলতা ও বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন চলাকালেই গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ তিনজনই লাপাত্তা। গত মাসে পদত্যাগ করেছেন রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত