Ajker Patrika

সিলেটে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাবা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়নি

সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাবা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়নি

সিলেটের ওসমানীনগরে অচেতন অবস্থায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী পরিবারের পাঁচজনকে উদ্ধারের পর বাবা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো ধরনের সূত্র উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

তবে ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিহতের ১২ আত্মীয়-স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপরও তাদের কাছ থেকে এ ঘটনার কারণ সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ওসমানীনগরের তাজপুর এলাকার একটি বাসার দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে দরজা ভেঙে প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্যকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর রফিকুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর ছেলে মাইকুল ইসলামকে (১৮) মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। উদ্ধার অন্য তিনজন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে হোসনে আরা বেগম (৪৫) ও তাঁর মেয়ে সামিরা ইসলামের জ্ঞান ফেরেনি। তবে ছেলে সাদিকুল ইসলামের (২৫) জ্ঞান ফিরেছে।

রফিকুল ইসলাম ওসমানীনগর উপজেলার বড় দিরারাই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তবে তিনি বেশ আগেই যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। ১২ জুলাই রফিকুল স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন। পরে ১৮ জুলাই তিনি তাজপুরের চারতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক ও শ্যালকের স্ত্রীও ছিলেন।

বুধবার বিকেলে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘প্রবাসী পরিবারের বাবা-ছেলে মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। নিহতের স্বজনেরা সুস্থ হলে মামলা দায়ের করা হবে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে। তবে স্বজনসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। নিহত দুজনের লাশ ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। নিকট আত্মীয়রা যেসব কথা-বার্তা বলছে, মনে হচ্ছে তারা সত্য কথাই বলছে। এখন যারা বেঁচে আছেন তারা সুস্থ হলে, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললে হয়তো কোনো ক্লু পাওয়া যাবে।’

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত আহতের শরীরে কোনো ধরনের বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে আসল কারণ জানা যাবে।’

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মো. আবদুল গফফার বলেন, অচেতন অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসা মা ও দুই ছেলে-মেয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ছেলেটার অবস্থা একটু ভালো। তবে মা-মেয়ের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাঁদের শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।

আবদুল গফফার বলেন, ‘তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের শরীরে কোনো ধরনের বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে কারণ তো একটা আছে। সে জন্য সংশ্লিষ্ট নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

এদিকে ওই বাসায় থাকা সব খাবার জব্দ করে পরীক্ষার জন্য রাসায়নিক ল্যাবে পাঠিয়েছে সিআইডি। বাসার তিন রুমের ওই ফ্ল্যাটে পাঁচ প্রবাসী ছাড়াও তাদের নিকটাত্মীয়রা ছিলেন। তবে অচেতন হয়েছেন শুধু এই পাঁচ প্রবাসী। এ ঘটনায় বাসায় থাকা নিকটাত্মীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া ১২ জনের মধ্যে মৃত রফিকুল ইসলামের শ্বশুর আনফর আলী, শাশুড়ি বদরুন্নেছা, শ্যালক দেলোয়ার হোসেন ও শ্যালকের স্ত্রী শোভা বেগম রয়েছেন। ঘটনার সময় তারা সবাই ওই বাড়িতে ছিলেন। 

সিআইডি সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, ‘আমরা ওই বাসার সব খাবার নিয়ে এসেছি। খাবার রাসায়নিক ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হবে। আমরা সবদিক বিবেচনা করেই তদন্ত করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অঙ্ক না পারায় পিটিয়েছেন শিক্ষক; অচেতন ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আহত ছাত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ছাত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ায় অঙ্ক না পারায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মুমূর্ষু অবস্থায় ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার চরচেঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় এই ঘটনা ঘটে।

অভিযোগে জানা যায়, চরচেঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গণিতের ক্লাস চলাকালে অঙ্ক না পারায় সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম মারধর করেন। এতে এই ছাত্রী শ্রেণিকক্ষেই অচেতন হয়ে পড়ে। সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাসে অঙ্ক না পারায় শিক্ষক রেজাউল করিম ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। বেত্রাঘাতে তার মেরুদণ্ডে আঘাত পায়। অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখনো সে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না।’

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিমান চন্দ্র আশ্চর্য জানান, ‘সে হঠাৎ হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শরীরের কোনো একটা অংশে মারাত্মক আঘাত পাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাতিয়ার বাইরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘অঙ্ক না পারায় তাকে পিঠে একটি থাপ্পড় দিয়েছি। এই আঘাতের কারণে সে অসুস্থ হওয়ার কথা না। এরপরও সে অসুস্থ হওয়ায় আমরা তাকে হাসপাতালে গিয়ে দেখে এসেছি। ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তর: জব্দ করা মাছ নিয়ে ‘হরিলুট’

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
গতকাল রাত ৯টার দিকে শত শত মানুষ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে জব্দ করা জাটকা লুট করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাত ৯টার দিকে শত শত মানুষ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে জব্দ করা জাটকা লুট করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কম্পাউন্ডে জব্দ করা জাটকা মাছ নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা ও ‘হরিলুটের’ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে শত শত মানুষ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে জব্দ করা জাটকা লুট করে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ঘটনাস্থলে থাকা চারজন আনসার সদস্য।

জাটকা বিতরণের সময় মৎস্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কার্টন সরিয়ে রেখে অল্প কিছু মাছ বিতরণের অভিযোগ উঠলে হট্টগোল শুরু হয়। এরপর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে।

সরেজমিনে গতকাল রাত ৯টার দিকে দেখা যায়, গ্যারেজের পাশে মৎস্য অফিসের কয়েকজন স্টাফকে অন্তত তিনটি জাটকাভর্তি কার্টন ধরে রাখতে দেখা যায়। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা একটি কার্টনভর্তি জাটকা লুট করে নিয়ে যায়। লুটের সময় অনেক নারীকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক নারী অভিযোগ করেন, কর্মকর্তারা প্রতারণা করেছেন। তাঁরা সব মাছ নিজেদের জন্য সরিয়ে রেখে অল্প কিছু অফিসের সামনে রেখে গেট খুলে দেন। এরপর শত শত সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

আমিন হাওলাদার নামের একজন বলেন, মাছ ছিল ১০-১২ কার্টন। কিন্তু একটি কার্টনের মাছ বণ্টন করতে গেট খুলে দিলে হরিলুট চলে। তাদের থামাতে আনসাররা চেষ্টা করেও পারেননি।

নীহারিকা মণ্ডল নামের এক গৃহিণী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘একটা জাটকাও পাইনি। সব লুট হয়েছে। স্যাররা পেছনে কার্টন ভর্তি করে রেখেছে।’ মহসীন মিয়া নামে শেরেবাংলা সড়কের এক যুবক বলেন, ‘কয়েকটি মাদ্রাসার লোকজনকে বস্তা ভরে জাটকা দিয়েছে। কিন্তু গরিবেরা দাঁড়িয়ে থেকেও পায়নি।’

এ বিষয়ে জানতে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. কামরুল হাসানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি অভিযান পরিচালনা করতে নিষেধ করেছিলাম। তারপরও সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসানের নেতৃত্বে অফিসের সামনেই বাস থামিয়ে অভিযান চালানো হয় এবং বেশ কিছু মাছ উদ্ধার করা হয়।’ তবে কী পরিমাণ মাছ উদ্ধার হয়েছিল, তা তিনি জানাতে পারেননি।

রিপন কান্তি স্বীকার করেন, ‘দুস্থদের মধ্যে বিতরণকালে কিছু মাছ লোকজন লুট করেছে। সেখানে চারজন আনসার ছিল।’ তবে তার স্টাফরা মাছ সরিয়ে ফেলেছেন, এমন অভিযোগ মানতে নারাজ তিনি। তিনি বলেন, ‘যারা বলেছে, তারা গুজব ছড়িয়েছে। আমার স্টাফদের জাটকা নেওয়ার সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে অসময়ের বৃষ্টি: ১০ কোটি টাকার ফসল নষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫৩
বৃষ্টিতে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। গতকাল সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বৃষ্টিতে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। গতকাল সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘বাজারে মুলা তোলার আগেই সব শেষ হইয়া গেল—এই যে জমি, এখন শুধু পানি আর পানি।’ গতকাল শুক্রবার সকালে জমির সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক রাব্বানী মন্ডল। রাব্বানীর চোখের কোণে পানি, পায়ের নিচেও হাঁটুসমান পানি। একসময় যে জমি ভরে উঠেছিল মুলার গাছে, এখন সে জমি ডুবে রয়েছে বৃষ্টির পানিতে।

নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এখনো এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, বাগমারা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার হাজারো কৃষক এখন বড় ক্ষতির মুখে। শাক থেকে শুরু করে ঢ্যাঁড়স, মুলা, পেঁয়াজ; এমনকি আমন ধান—সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৪ হাজার ২০০ জন। দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, ১৯৮৬ সালের পর এই সময়ে এমন বৃষ্টি আর কখনো দেখেননি তাঁরা। গতকাল সকালে পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক রাব্বানী মন্ডলের সঙ্গে। মুখে বিষণ্ণতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি এবার হইছে। এখনো পানি নামেনি। ৫ বিঘা জমি পানির নিচে। চারপাশে পুকুর, পানি নামারও পথ নাই।’

রাব্বানী আরও বলেন, ‘সরকার যদি পাশে থাকে, তাহলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তা না হলে কঠিন হবে।’

পবা উপজেলার শিয়ালবেড়, পাইকপাড়া, দাদপুর ও মুরারীপুর গ্রামের মাঠজুড়ে একই চিত্র। যেদিকে চোখ যায়, এখনো চোখে পড়ে কেবল পানি। কোথাও ধান হেলে পড়েছে, কোথাও শাকসবজি ডুবে রয়েছে পানির নিচে। পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১২ কাঠা জমিতে শাকসবজি করেছিলাম, বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। এমন সময় তো বৃষ্টি হয় না।’

একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ১ বিঘা জমিতে বি৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার আগেই নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি উঠেছে, বাতাসে ধানের গাছ হেলে পড়েছে। মাঠে দেখা গেল, কৃষকেরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কেটে নিচ্ছেন। সেখানে তাঁর ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পর বৃষ্টি হইলে এই সর্বনাশ হতো না।’

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম এ মান্নান বলেন, নভেম্বরের শুরুতেই যে বৃষ্টি হয়েছে, সেটি মূলত নিম্নচাপের কারণে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন জমি শুকিয়ে দ্রুত নতুন ফসল লাগাতে পারেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রণোদনা এলে তা বিতরণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম: গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটা ফের চালু

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫৫
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে আবার অবৈধভাবে চালু করা মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের ইটভাটা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে আবার অবৈধভাবে চালু করা মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের ইটভাটা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কৃষকের ফসলের ক্ষতি, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণের কারণে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগরের বসন্তপুর গ্রামে মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেটি আবার চালু করেছেন মালিক। এ জন্য তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্রও নেননি। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে অবৈধ ইটভাটামালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আবার কার্যক্রম শুরু করা ইটভাটামালিক মো. খোরশেদ আলম। তিনি কাশিনগর ইউনিয়নের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকা, তিন ফসলি জমি নষ্ট এবং পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির দায়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ভ্রাম্যমাণ আদালত মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামের ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেন। সে সময় এর মালিক মো. খোরশেদ আলমকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর অবৈধ ইটভাটাটি সরকারের কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়ে আবার চালু ও নতুন বয়লার নির্মাণ করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ইটভাটাটি আবার বন্ধের দাবিতে ওই এলাকার কৃষক ও শিক্ষার্থীরা পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বসন্তপুর গ্রামে মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী খোরশেদ আলম। তিনি ইটভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে দীর্ঘদিন পরিবেশ দূষণ করে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, আবাসিক এলাকা, ফসলি জমি, ফলদ ও বনজবাগান থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। অথচ এই ইটভাটার কাছেই মনিকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বসন্তপুর বাজার, সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিক, ভাটা-লাগোয়া আবাসিক ঘরবাড়ি ও ফসলি মাঠ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

বসন্তপুর গ্রামের কৃষক এনামুল, ফজলু মিয়া ও হুমায়ুন কবির নামের কয়েকজনের সঙ্গে আজকের পত্রিকার এই প্রতিনিধির কথা হয়। তাঁরা বলেন, ‘ইটভাটামালিক আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় এই এলাকার কৃষকদের তিন ফসলি জমি দখল করে ভাটার কার্যক্রম শুরু করেন। এটি চালু করার পর বিষাক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের কৃষিজমির ফলন ভালো হচ্ছে না। পরে সরকার পরিবর্তন হলে এলাকার কৃষকেরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলে প্রশাসন তদন্ত করে সত্যতা পায়। পরে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে সেখানে ফসলের ফলন ভালো হচ্ছিল। কিন্তু সেটি অবৈধভাবে আবারও চালু করায় আমাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’

বসন্তপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হানু মিয়া বলেন, ‘তিন ফসলি জমির মধ্যে এবং স্কুল, বাজার ও মাদ্রাসার পাশে অবৈধ ইটভাটাটি প্রশাসন ভেঙে দেওয়ার পরও কীভাবে চালু করেছে, আমরা জানি না। ক্ষতিকর ইটভাটাটি যেন প্রশাসন বন্ধ করে দেয়, সে জন্য অনুরোধ জানাই।’

মিজানুর রহমান নামের ওই এলাকার এক শিক্ষক বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন সরেজমিনে এসে তদন্ত করেছিল। মা ব্রিকস ইটভাটাটি আবারও চালু করায় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব অবৈধ এই ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে ইটভাটার মালিক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ইটভাটাটি চালু করেছি।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর ইউনিয়নে গুঁড়িয়ে দেওয়া মা ইটভাটাটি আবার চালু করার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেটি অবৈধভাবে চালু করলে আবারও আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চৌদ্দগ্রামের ইউএনও মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা দ্রুত অবৈধ ইটভাটাটি পরিদর্শন করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, চিকেনস নেকের কাছে নতুন তিন গ্যারিসন

‘এখন যুবলীগের কার্যক্রম নেই, তাই এনসিপিতে এসেছি’

নুর না মামুন—বিতর্কে আবারও সংঘর্ষে বিএনপি–গণঅধিকার, আহত ৩১

রিজভীর পা ছুঁয়ে সালাম করা ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফুল প্রত্যাহার

ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্‌রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত