Ajker Patrika

সিলেট-৫ আসন: স্বতন্ত্রপ্রার্থীর প্রধান এজেন্টসহ ৩১ জনের নামে মামলা

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
সিলেট-৫ আসন: স্বতন্ত্রপ্রার্থীর প্রধান এজেন্টসহ ৩১ জনের নামে মামলা

সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের এক স্বতন্ত্রপ্রার্থীর নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের নেতাসহ ৩১ জনের নামে মামলা করেছে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে-আসামিরা নিজেদের ফেসবুক আইডি থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে বিরূপ প্রচারণা চালায়। ফলে জনমনে বিভ্রান্তি, ভয়, আতঙ্ক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। 

গতকাল শুক্রবার জকিগঞ্জ থানায় এজাহার দাখিল করলে আজ শনিবার ভোরে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ। মামলার বাদী ডিজিএফআইয়ের সিলেট শাখার এসএএসআই শাহালম দেওয়ান। 

আজ শনিবার সন্ধ্যায় জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি–তদন্ত) সুকান্ত চৌধুরী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আমরা দেখতেছি। সব পুলিশ তো বিভিন্ন কাজে। তবুও আমরা চেষ্টা করতেছি।’ 

মামলার আসামিরা কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ আল কবিরের অনুসারী। এই আসনে আরেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী হলেন হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী (কেটলি প্রতীক)। হুছামুদ্দীন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দলটির সিলেট মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। 

গত বুধবার লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শাব্বির আহমদ অভিযোগ করেন, ‘সরকারি দল ও তাদের ডামি প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারছে না, তাদেরকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংস্থা থেকে চাপ সৃষ্টি করছে, ওই সংস্থা এক প্রার্থীর (হুছামুদ্দীন চৌধুরী) পক্ষ অবলম্বন করে নির্বাচন থেকে সবাইকে সরে দাঁড়ানোর চাপ দিচ্ছে। এই অবস্থায় সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ না থাকায় আমি নির্বাচন বয়কট করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।’ অবশ্য পরদিন তিনি তাঁর এই বক্তব্য প্রত্যাহার করেন। 

গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদও সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন বরাবর একই লিখিত অভিযোগ করেন। তবে পরদিন মাসুক উদ্দিনের ছেলে ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তানিম আহমদ লিখিতভাবে অভিযোগটি প্রত্যাহার করেন। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ আল কবিরও গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে অভিযোগ করেন। ৮ দফার অভিযোগে হুছামুদ্দিন চৌধুরীকে পাস করিয়ে দিতে নির্বাচনী এলাকায় ধারাবাহিক একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোক দিয়ে ভয়ভীতি, কুৎসা রটনা, মিথ্যা খবর, নেতা-কর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে বলে জানান। 

ডিজিএফআইয়ের মামলার বিষয়ে আহমদ আল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে যাদের নাম রয়েছে, তাঁদের অনেকেই স্মার্টফোন ব্যবহারই করেন না। আমার নির্বাচনে বিজয় দেখে কেউ যদি এটা করে থাকে, তাহলে তো আমার আর কিছু করার নেই। আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়ে যতটুকু করার, ততটুকু করব।’ 

নির্বাচনী কোনো পরিবেশ নাই জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আরও বলেন, ‘ইলান (এ রকম) যদি আগেরদিন মামলা করা হয় কর্মীদের ইলেকশন থেকে সরিয়ে রাখার জন্য, তাহলে নির্বাচনী পরিবেশ কীভাবে থাকে? এই মামলার কারণে আমি অনেকটা শঙ্কিত। আমি একজন নিরীহ মানুষ। নিরীহ মানুষকে এভাবে হয়রানি করলে কষ্ট হয়। সাধারণত আমি কখনো দেখিনি ডিজিএফআই–এ মামলা করতে। মামলা তো সাধারণত পুলিশ করার কথা।’ 

নির্বাচন কমিশনে অভিযোগের বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির বলেন, ‘আমি একটা নয়, অনেকগুলো অভিযোগ করছি। সবকিছু লিখিতও দিয়েছি। তারা যেসময় পারেন, বিচার করবেন। আমার সঙ্গে পরে আর যোগাযোগ হইছে না। তবে প্রশাসন ও পুলিশ থেকে সব সময় বলা হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আর এই আশার মধ্যেই আমি আছি। এই আসনে সবে নির্বাচন নিয়া প্রতিবাদ করতেছেন।’ 

ডিজিএফআইয়ের মামলার আসামিরা হলেন-৯ নম্বর মানিকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু জাফর মো. রায়হান (৪৮), ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আহমদ আল কবিরের ছোট ভাই ও নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট আহমদ আল ওয়ালী (৫৫), ৬ নম্বর সুলতানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম (৫৩), জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল আহাদ (৪০), ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কমরু (৪০), সোনার বাংলা সমবায় সমিতির এমডি জাফরুল ইসলাম (৪২), সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ (৪৫), মাতারগ্রামের সফিকুল হকের ছেলে আল আমিন আব্দুল্লাহ সুমন (৪০), জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ সালাম (৩৮), ১ নম্বর বারহাল ইউপির চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী (৫৫), ৩ নম্বর কাজলসার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জুলকারনাইন লস্কর (৫৮) এবং ৪ নম্বর খলাছড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সামাদ আজাদ (৩৫)। 

এ ছাড়া বিএনপি নেতা ও ৭ নম্বর বারঠাকুরী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন (৫৫), বিএনপি নেতা ও খলাছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা মাসুক (৫৮), রূপালী ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক আবু মোহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে স্বপন (৪৫), ২ নম্বর বিরশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার (৫২), ৮ নম্বর কসকনকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুছ সাত্তার মঈন (৫৫), সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজ (৫৫), সীমান্তিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আব্দুর রউফ তাপাদার (৪৫), উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হাই (৫৮), গঙ্গাজল বাজারের সাবেক সেক্রেটারি মো. আসলাম মিয়া (৫৭), যুবলীগ নেতা ইমরান হোসেন লিমন (৩২), বিরশ্রী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এমাদ মিয়া (৫০) এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. বুরহান উদ্দিনের (৫১) নাম মামলার আসামি হিসেবে আছে। 

খলাছড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তাক আহমদ (৫২), ফুলতলী গ্রামের মৃত আব্দুস শহিদ চৌধুরীর ছেলে আলবাব হোসেন চৌধুরী (৪৫), এনায়েত চৌধুরী (৪০) সহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচণায় আসামি আব্দুল হাকিম শামীম, শাহরিয়ার কবির রায়হান, আরএ নোমান, এমডি নুরুল আমিন রোকনদের ফেসবুক আইডি থেকে এসব অপপ্রচার চালানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুজনের গোলটেবিলে পর্যবেক্ষণ: ভোটের খরচ না কমলে দুর্নীতিও কমবে না

  • আর্থিক বিষয়সহ কমিশনের অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করার অভিযোগ।
  • নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ও বিবেচনায় রাখার তাগিদ।
  • অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি বলে অভিমত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতিও কমানো যাবে না। কিন্তু অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিবিড় নজরদারি করতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) উভয়ের তরফে অবহেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ণ, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দলের সদস্যদের দায়বদ্ধতা, নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কিছু সুপারিশ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) গ্রহণ করা হয়নি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের কাছ থেকে এসব কথা উঠে আসে। বেসরকারি সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’ এ বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকার ও ইসির প্রস্তাবের মাধ্যমে আরপিওর বিভিন্ন অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আবার অনেক বিষয়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। কোনো আসনে মোট ভোটের ৪০ শতাংশ না পড়লে আবার ভোট গ্রহণের বিধান, পর পর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান বাতিল করা এবং প্রতি পাঁচ বছর পর দলের নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করা, কোনো ব্যক্তির একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করা, ২০২৩ সালে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ নিবন্ধন দেওয়া দলের নিবন্ধন বাতিল করাসহ অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে।

নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ পরে জনগণের কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি মনে করেন, ইতিমধ্যে ‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের মাধ্যমে’ নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা থেকেও সুরক্ষা প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্য ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

সুজনের সম্পাদক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, ভোট গণনা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ হিসেবে দেখা উচিত। নির্বাচন কমিশন এবং সরকার নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যে সংস্কারগুলো করেছে, তা সন্তোষজনক নয়।

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, নির্বাচনসংক্রান্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ গৃহীত হয়েছে। বাকি সুপারিশগুলো যাতে গ্রহণ করা হয়, সে জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং কমিশনকে চাপের মুখে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

ইসির সাবেক অতিরিক্তি সচিব জেসমিন টুলি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা নির্বাচনী আচরণবিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর অপব্যবহার বা ভোটারদের বিভ্রান্তি রোধে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ বা সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্টভাবে থাকা উচিত ছিল। তা করা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সংস্কার কমিশনের তুলনায় নির্বাচনবিষয়ক কমিশনের অর্জন কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি।

বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, অধ্যাপক ওয়ারেসুল করিম, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মীর নাদিয়া নিভিন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফেনী পৌরসভা: সরকারি জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ, মালামাল চুরি

  • সুলতানপুরে প্রায় ৭০ শতক জমির ওপর স্থাপিত জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র।
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব সমাধানের আশায় স্থাপন করা হয়।
  • কারখানাটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় মাদকসেবীরা আস্তানা গেড়েছে।
  • ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়; ২০২১ সালে শুরু হয় সার উৎপাদন।
ফেনী প্রতিনিধি
ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে এলাকায় পরিত্যক্ত জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে এলাকায় পরিত্যক্ত জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফেনী পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব সমাধানের আশায় স্থাপিত জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্রটি এখন মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোটি টাকার এই প্রকল্পটি এখন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। নিয়মিত তদারকি ও নিরাপত্তা না থাকায় প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো চুরি হয়ে গেছে।

ফেনী পৌরসভার সুলতানপুরে প্রায় ৭০ শতক জমির ওপর স্থাপিত প্রকল্প এলাকাটি ঘুরে দেখা গেছে, উৎপাদন শেডগুলো ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও দরজা নেই, কোথাও ছাউনি খুলে নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতির কোনো অস্তিত্ব নেই। ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা কংক্রিট, মরিচা ধরা লোহার অংশ। আগাছায় ঢেকে পুরো এলাকাজুড়ে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সার উৎপাদন শুরু হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেবক এগ্রোভেট লিমিটেড।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যাশিত আয় না হওয়ায় ২০২৩ সালেই সার উৎপাদন বন্ধ করে দেয় এগ্রোভেট লিমিটেড। পরে সেখানে কিছুদিন প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফার্নেস অয়েল উৎপাদনের চেষ্টা চালানো হয়। ২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পর প্রকল্পটির সব কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন কোনো তদারকি বা নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় একে একে যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামো চুরি হয়ে যায়।

প্রকল্প চলাকালে কেন্দ্রটির পাহারাদার হিসেবে কাজ করা ফরিদ আহমদ বলেন, ‘যখন এখানে সার উৎপাদন হতো, তখন আমি ছয় হাজার টাকা বেতনে পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতাম। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আর কেউ এখানে আসেনি। আমিও পাহারা দেওয়া বন্ধ করে দিই। এখন এখানে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। সব ভেঙে নিয়ে গেছে চোরেরা।’ তিনি বলেন, ‘পৌরসভার কোনো পদক্ষেপ না থাকায় যে যেভাবে পেরেছে নিয়ে গেছে।’

পাশের পৌর কবরস্থানে দাফনকাজে নিয়োজিত ইমাম মোহাম্মদ আলী বলেন, কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত জায়গাটি মোটামুটি ভালো অবস্থায় ছিল। সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই চুরি শুরু হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘কারখানা স্থাপনের শুরু থেকেই আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে আশপাশে বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। লাভ না হওয়ায় যারা চালু করেছিল, তারাই আবার বন্ধ করে পালিয়েছে। ৫ আগস্টের পর এলাকার কিছু মাদকসেবী, চোর ও বহিরাগতরা মিলে ফ্যান, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতিসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। কয়েকবার পৌরসভাকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির উদ্দিন বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না দাবি করে পৌর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

পৌর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ সাহা বলেন, ‘২০১৮ সালে সুলতানপুরে বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন কেন্দ্রটি চালু করা হয়। চট্টগ্রামের একটি এনজিও পৌরসভার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এটি পরিচালনা করছিল। সম্ভবত লাভ না হওয়ায় তারা বন্ধ করে দেয়। তবে তারা প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেনি। বর্তমানে প্রকল্পটির অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা নেই।’

কেন পৌরসভার আওতাধীন কোটি টাকার প্রকল্পটি অচল হয়ে পড়েছে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির উদ্দিন। একপর্যায়ে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সেবক এগ্রোভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খালেদ আমিনকে ফোন করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রকল্পটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তরের জন্য বলেন। তবে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে পৌরসভা কেন কোনো উদ্যোগ নেয়নি এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে সেবক এগ্রোভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খালেদ আমিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জয়পুরহাটের ২টি আসন: জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা

  • বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ।
  • তৃণমূলকে উপেক্ষা করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বলছেন বঞ্চিতদের অনুসারীরা।
  • বিএনপির দ্বন্দ্বকে সুযোগ হিসেবে দেখছে জামায়াত।
মো. আতাউর রহমান, জয়পুরহাট 
জয়পুরহাটের ২টি আসন: জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা

জয়পুরহাটের দুটি আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর দলটির তীব্র অন্তঃকোন্দল সামনে আসে। দুই আসনেই প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা। সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সড়ক অবরোধ, রাস্তায় শুয়ে পড়া, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ কিংবা মশাল মিছিল—কিছুই বাদ যায়নি। বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে সুযোগ হিসেবে দেখছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে নেমে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তৎপর এনসিপি ও এবি পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও।

জয়পুরহাট-১ (জেলা সদর ও পাঁচবিবি) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান। তবে এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীম এবং কুসুম্বা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মণ্ডলের অনুসারীরা। তাঁরা বলছেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে প্রার্থী নির্ধারণ করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফয়সাল আলীম বলেন, ‘তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক আমার। অবহেলিত এ এলাকার উন্নয়ন এবং দলে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়ার সবচেয়ে বেশি যোগ্যতা আমি রাখি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সব দিক বিশ্লেষণ করে দল আমাকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির মো. ফজলুর রহমান সাঈদ। তিনি বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়। অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার। বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভোটের মাঠে আমাদের জন্য ইতিবাচক।’ এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন দলের জেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া।

জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সচিব আবদুল বারী। তাঁর প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা এবং সাবেক ছাত্রনেতা আব্বাস আলীর অনুসারীরা। আবদুল বারী বলেন, ‘সরকারি চাকরি করা সত্ত্বেও বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। প্রাথমিকভাবে দলের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার আগে-পরে এলাকাবাসীর ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। নির্বাচিত হলে কৃষিভিত্তিক কারখানা গড়ে তুলব। কৃষিসংশ্লিষ্ট উপাদানের দাম সহনশীল রাখতে কাজ করব। এলাকা আলুপ্রধান। তাই আলুভিত্তিক চিপস ইন্ডাস্ট্রি করে তোলা হবে।’ প্রাথমিক মনোনয়নবঞ্চিত গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘যাঁকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নাই। সাধারণ ভোটাররা তাঁকে অতিথি পাখি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি নেতা-কর্মীদের কোনো খোঁজ রাখেননি। এখন পর্যন্ত দলের প্রাথমিক সদস্যও নন। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য। তৃণমূলের ৩ লাখ ৫১ হাজার নেতা-কর্মী ও ভোটাররা আমার সঙ্গে আছেন।’

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সহকারী সেক্রেটারি এস এম রাশেদুল আলম সবুজ। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। তাঁদের বিশ্বাস, জামায়াতে ইসলামীর দ্বারাই এর বাস্তবায়ন সম্ভব। নির্বাচিত হলে দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব প্রশাসন, মাদক, বৈষম্য ও চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ তৈরির জন্য কাজ করব। কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে কাজ করব ইনশা আল্লাহ।’ এনসিপির মনোনয়ন পেতে পারেন জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব দেওয়ান কাজল। এবি পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী এস এম জাহিদ সরকার। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবাই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ঘন কুয়াশার কারণে বন্ধ করেছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলে জানান বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন।

সালাহউদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১০টার সময় নদীপথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। সে সময় নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় কিছু যানবাহন আটকা পড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আরও বলেন, কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত