Ajker Patrika

মাদকের খোলা বাজার সিলেটের দক্ষিণ রণিখাই

লবীব আহমদ, সিলেট
মাদকের খোলা বাজার সিলেটের দক্ষিণ রণিখাই

ভারত থেকে আনা মাদকের অন্যতম হাব হয়ে উঠেছে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন। এখান থেকে মাদক যেমন যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়, তেমনি অনেকে এসে এখানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে। এ সংকটের সমাধান চেয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয়রা মানববন্ধন করেছেন। জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন, পুলিশের তদারকি না থাকায় দক্ষিণ রণিখাইয়ে মাদক সেবন ও বিক্রি দিন দিন আরও বাড়ছে। 

গত শুক্রবার ওই ইউনিয়নের গৌরীনগর এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে পড়ে রয়েছে বহু ফেনসিডিলের বোতল। গৌরীনগর পয়েন্ট থেকে শুরু করে পিয়াইনগুল এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ২ কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মাদকের খালি বোতল। স্থানীয়রা জানান, রাতদিন এই এলাকায় অবাধে বিক্রি হয় মাদক। দাম মিটিয়ে রাস্তার ধারে প্রকাশ্যে মাদক গ্রহণ করে চলে যায় মাদকসেবীরা। কেউ কেউ গাড়িতে বসে মাদক সেবন করে ফেলে রেখে যায় বোতল। 

স্থানীয়রা জানান, ভারত থেকে আসা মাদক ইউনিয়নের সুন্দাউরা, খাগাইল, গৌরীনগর, পূর্ণাছগাম ও দরাকুল গ্রামে এসে পরে সব জায়গায় পাচার হয়। এ গ্রামগুলোর মাদক কারবারিরা কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই দিনেদুপুরে মাদকের কারবার করছে। বিভিন্ন সময় দু-একজন আটক হলেও পরে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে। ধরা পড়ছে না হোতারা। আগে ইউনিয়নের খাগাইল পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও এখন আর সেটা নেই। এ সুযোগে কেউ কেউ বাড়িতেও মাদক মজুত করছে। 

দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ইমাদ বলেন, ‘দক্ষিণ রণিখাই এখন মাদকের ওপেন হাটে পরিণত হয়েছে।

আমরা উদ্যোগ নিয়েও তা নির্মূল করতে পারছি না। আগে খাগাইল পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট থাকলেও এখন আর সেটা নেই। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় এটি দিন দিন বাড়ছেই।’ 

জানা যায়, উপজেলার চিকাডহর সীমান্তের কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় সেখান থেকে অবাধে প্রবেশ করে সেগুলো। ওইখানে বিজিবিরও তেমন টহল নেই। সেখান থেকেই মাদক আসছে দক্ষিণ রণিখাইসহ অন্যান্য জায়গায়। লিডিং ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও স্থানীয় বাসিন্দা ড. মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, ‘যখন ছুটিতে বাড়িতে যাই, তখন দেখা যায় রাস্তাঘাটে হাঁটাই কঠিন। তবে সবচেয়ে বেশি শঙ্কার বিষয়, এলাকায় মাদক নির্মূলে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা নেই।’ 

কোম্পানীগঞ্জ থানা-পুলিশ জানায়, গত ছয় মাসে উপজেলায় ২৮টি মাদক মামলায় ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় ২ হাজার ৯২০ বোতল ও ৬২২.৪৩ লিটার মাদক জব্দ করা হয়। 

উত্তর রণিখাইয়ের ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার ফয়জুর রহমান জানান, সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক দক্ষিণ রণিখাইসহ সারা দেশে যায়। যারা মাদক আনে, তাদের শক্তিশালী গ্যাং আছে; যে কারণে স্থানীয়রা কথা বলতে পারে না, প্রশাসনও ততটা সাহস করতে পারে না। তারা সব সময় সশস্ত্র থাকে; যার কারণে ৪-৫ জন বিজিবি তাদের মোকাবিলা করতে পারে না। 

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ জানান, ‘আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ রণিখাই গিয়েছিলাম। রাস্তার পাশে মাদকের বোতল দেখেছি এবং নির্দেশনাও পেয়েছি। আমরা আরও জোরদার পদক্ষেপ নেব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে টেকনাফে ১৭ জনকে উদ্ধার

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
উদ্ধারকৃত ১৭ জন। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধারকৃত ১৭ জন। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় মানবপাচার চক্রের হাত থেকে ১৭ জনকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

টেকনাফ–২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যেম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন রাজারছড়া এলাকায় অভিযান চালায় বিজিবি। এ সময় একটি ট্রলারকে ঘিরে ফেলে বিজিবি সদস্যরা। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা রাতের অন্ধকারে সাঁতরে পালিয়ে যায়। পরে ট্রলারটি তল্লাশি করে ৭ জন পুরুষ, ৪ জন নারী ও ৬ শিশুসহ মোট ১৭ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, উন্নত জীবন, উচ্চ বেতনের চাকরি ও স্বল্প খরচে বিদেশে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচারকারী চক্রটি তাঁদের সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদেরকে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মা-ছেলের মৃত্যু

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার সোনাতলায় ট্রেনে কাটা পড়ে মা-ছেলে মারা গেছেন। এ সময় তাঁদেরকে উদ্ধার করতে গিয়ে আরও এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন রনি বেগম (৩০) ও তাঁর ছেলে ইয়াসিন আরাফাত (১০)। তাঁরা পার্শ্ববর্তী গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দৌহাইল গ্রামের বাসিন্দা। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনাতলা রেলস্টেশনের অদূরে ছয়ঘড়িয়াপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রনি বেগম তাঁর ছেলেকে নিয়ে সোনাতলা বাজারে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছিলেন। রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় লালমনিরহাটগামী পদ্মরাগ ট্রেন দেখে রনি বেগম আত্মহত্যার জন্য ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ছেলে ইয়াসিন আরাফাত তার মাকে উদ্ধার করতে গেলে মা-ছেলে দুজনেই ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন। এই দৃশ্য দেখে পথচারী তাজুল ইসলাম (৬৫) মা-ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তিনিও ট্রেনের ধাক্কায় আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে।

পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, রনি বেগম মানসিক রোগী ছিলেন। তিনি এর আগেও বাড়িতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।

সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, মা-ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চকরিয়ায় ডিম বিক্রেতার পাথর নিক্ষেপে ভাঙল ট্রেনের কাচ

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি   
পাথর নিক্ষেপের ফলে ট্রেনের খাবারের কোচের জানালার কাচ ভেঙে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাথর নিক্ষেপের ফলে ট্রেনের খাবারের কোচের জানালার কাচ ভেঙে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের চকরিয়া স্টেশনে সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চকরিয়া রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের এক যাত্রীকে লক্ষ্য করে এক তরুণ ডিম বিক্রেতা পাথর নিক্ষেপ করেন। এতে ট্রেনের খাবারের কোচের জানালার কাচ ভেঙে যায়।

চকরিয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনটি চকরিয়া রেলস্টেশনে পৌঁছায় শনিবার রাত পৌনে ১১টায়। এ সময় একজন ভাসমান ডিম বিক্রেতা ট্রেনে ডিম বিক্রি করছিলেন। একজন যাত্রী ওই বগিতে ডিম বিক্রেতাকে যেতে নিষেধ করেন। এতে ডিম বিক্রেতার সঙ্গে ওই যাত্রীর কথা-কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ট্রেনের অন্য যাত্রীরা এগিয়ে এলে ডিম বিক্রেতা চলে যান। এরপর ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিলে ডিম বিক্রেতা বগি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারেন। পাথরটি ট্রেনের খাবারের কোচের জানালায় লাগলে কাচ ভেঙে যায়। এতে খাবারের কোচের একজন সহকারী সামান্য আহত হন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া রেলস্টেশনের ইনচার্জ মো. ফরহাদ বিন জাফর চৌধুরী বলেন, সৈকত এক্সপ্রেস চকরিয়া স্টেশনে পৌঁছানোর পর এক যাত্রী ডিম বিক্রেতাকে বগিতে যেতে বারণ করেন। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যাত্রীর সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার সময় ওই ডিম বিক্রেতা বগিতে পাথর ছুড়ে মারেন, সেটি লেগে খাবারের কোচের জানালার কাচ ভেঙে যায়।

ফরহাদ আরও বলেন, এই ঘটনার খবর পাওয়ার পর স্টেশনের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখে পাথর নিক্ষেপকারী ওই ডিম বিক্রেতাকে শনাক্ত করা হয়। তাঁর নাম মনসুর আলম। তাঁর বাড়ি সাহারবিল আব্দুল জব্বার সিকদারপাড়া গ্রামে। এ বিষয়ে রেল প্রশাসন ও রেল পুলিশকে জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ: ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর নদীবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে হাইমচর থানায় এই মামলা করেন। এতে ৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অন্য ১০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি।

মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন মো. ফিরোজ খান (৫৩), মো. কামাল হোসেন (৫৫), মো. মনিরুল ইসলাম (৪৩), মো. সুলতান খান (৪৫), মো. মিন্টু (২৮), মো. সোহেল (৪০), মহিন হাওলাদার (২৫) ও মো. মনিরুজ্জামান (৪০)। এই আটজন এমভি জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের কর্মচারী। মামলায় আরও ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এদিকে আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের চার কর্মচারী মিন্টু, সোহেল, মহিন হাওলাদার ও মনিরুজ্জামানকে চাঁদপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হাসান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর নদীবন্দরের পক্ষে দায়ের করা মামলার তদন্ত ও পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবে নৌ পুলিশ।

নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের গ্রেপ্তার চার আসামিকে ঝালকাঠি থেকে গতকাল চাঁদপুর নৌ থানায় আনা হয়। আজ তাদেরকে চাঁদপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

উল্লেখ্য, এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি জাকির সম্রাট-৩ ও বরিশালগামী অ্যাডভেঞ্চার-৯ নামে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে চার যাত্রী নিহত এবং আহত হয় বেশ কয়েকজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত