Ajker Patrika

‘সেবা বন্ধ থুইয়া মানুষোক জিম্মি করি আন্দোলন করেছে, গরিব মানুষ কোনঠে যাইবে’

রংপুর প্রতিনিধি
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মেসি ও প্যাথলজি বিভাগের সামনে রোগীর জটলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মেসি ও প্যাথলজি বিভাগের সামনে রোগীর জটলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুপুর ১২টা। তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মেসি ও প্যাথলজি বিভাগের সামনে রোগীর জটলা। ওষুধ না পেয়ে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে অনেকেই ফেরত যাচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ভিড়ে টিকতে না পেরে শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আলমপুর ইউনিয়নের ভীমপুর গ্রামের নুর জাহান বেগম। তিনি সকাল ৯টায় চিকিৎসক দেখাতে হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসক দেখাতে পারলেও ওষুধের জন্য দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন তিনি।

হতাশার সুরে নুর জাহান বেগম বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করিও ওষুধ পাওছি না। ছোট বাচ্চাটাক নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছি। শুনোছি ফার্মেসি বন্ধ থুইয়া আন্দোলন করোছে। আমরা গরিব মানুষ ওই জন্য তো সরকারি হাসপাতালে আসি। কিন্তু এটে সেবা বন্ধ থুইয়া মানুষোক জিম্মি করি আন্দোলন করেছে। তাহলে গরিব মানুষ কোনঠে যাইবে।’

নুর জাহানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইকরচালী গ্রামের গৃহবধূ মৌসুমী আক্তার বলেন, ‘সারা দেশোত আন্দোলন চলছে। সগ আন্দোলন চাকরিজীবীর ঘরে। ওরা চাকরি করে, বেতন পায়, ফির আন্দোলন করে আর হামরা সেই আন্দোলনের পাঁঠার বলি হই।’

ফার্মেসির পাঁচ হাত দূরেই ব্যানার টাঙিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন ফার্মাসিস্ট ও টেকনোলজিস্টরা। দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে তাঁদের তিন দিন ধরে চলমান কর্মবিরতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা।

সেখানে জানতে চাইলে কর্মবিরতিতে থাকা ফার্মাসিস্ট লুৎফর রহমান বলেন, ‘দশম গ্রেড বাস্তবায়ন আমাদের সার্ভিস স্ট্রাকচারের ন্যায্য অংশ। বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় কর্মবিরতি চলছে। আমরা চাই দ্রুত সমাধান হোক, যাতে রোগীরা ভোগান্তিতে না পড়েন।’

ফার্মেসির পাঁচ হাত দূরেই ব্যানার টাঙিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন ফার্মাসিস্ট ও টেকনোলজিস্টরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফার্মেসির পাঁচ হাত দূরেই ব্যানার টাঙিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন ফার্মাসিস্ট ও টেকনোলজিস্টরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে না পেরে অনেক রোগী ফিরে যাচ্ছেন। দৌলতপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করতে বলছে, কিন্তু ল্যাবে কেউ নেই। পরীক্ষা না করেই ফিরে যেতে হচ্ছে। সবাই আন্দোলন করে, কিন্তু আমরা যে কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য দাম পাই না, কই আমরা তো আন্দোলন করি না।’

প্যাথলজি ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রিনা আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা গ্রেড উন্নয়নসহ কয়েকটি ন্যায্য দাবি জানিয়ে আসছি। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাধ্য হয়েই কর্মবিরতিতে যেতে হয়েছে।’

এক্স-রে রুমের সামনেও ছিল একই চিত্র। প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে রোগীরা ফিরে যাচ্ছিলেন। রেডিওলজি বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কামরুজ্জামান সনেট বলেন, ‘এক্স-রে বিভাগেও কাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা কোনোভাবেই রোগীদের কষ্ট দিতে চাই না, কিন্তু দীর্ঘদিনের বৈষম্যের সমাধান না হলে কর্মবিরতি ছাড়া বিকল্প থাকছে না।’

এদিকে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকদের নিয়োগবিধি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন না হওয়ায় মাঠপর্যায়ে কর্মরত ব্যক্তিরা নানা বৈষম্যের মুখে পড়ছেন। দ্রুত নিয়োগবিধি প্রকাশ ও কার্যকর না হলে কর্মীদের ক্ষোভ আরও বাড়বে বলে তাঁরা সতর্ক করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ