Ajker Patrika

নিয়োগ-চাঁদাবাজি ছিল আফতাবের কবজায়

  • ডিমালা আ.লীগের সভাপতি ছাড়াও তিনবার এমপি ছিলেন আফতাব
  • এমপি হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করেছেন
  • তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন অনেকের জমি দখল করেছেন
মাসুদ পারভেজ রুবেল, (ডিমলা) নীলফামারী
আফতাব উদ্দিন সরকার
আফতাব উদ্দিন সরকার

আফতাব উদ্দিন সরকার ১৯৯৬ সাল থেকে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সেই সঙ্গে ২০১৪ থেকে টানা তিনবার নীলফামারী-১ (ডোমার ও ডিমলা) আসন থেকে সংসদ সদস্য হন। এই দুই পদের দাপটে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এলাকার অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নিয়োগ, জমি দখল, বালু ব্যবসা, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি—সবকিছুই ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণে।

সাধারণ মানুষ ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে সংসদ সদস্য (এমপি) আফতাব ডোমার-ডিমলার গডফাদার হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর রাজত্বে সবাই ছিলেন প্রজা। তাঁর অনিয়মের বিরুদ্ধে মানুষ কথা বলতে ভয় পেত। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাসহ নানা ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।

ডিমলা উপজেলা সদরের বাবুরহাট বাজারে প্রায় দেড় একর জায়গার ওপর আফতাবের বাড়ি। সেখানে গুদামঘর, মিল-চাতাল ও পেট্রলপাম্প রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেখানে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ লোকজন। আফতাবের বাড়ি, অফিস, পাম্পসহ তাঁর স্বজনদের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই তিনি পরিবার নিয়ে সটকে পড়েন। তারপর থেকে তাঁকে আর এলাকায় দেখা যায়নি।

নিয়োগ-বাণিজ্য: আফতাব এমপি হওয়ার পর থেকে দুই উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন। উপজেলার জেলা পরিষদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্তত ১০ জন শিক্ষক জানান, ২০১৫ সালে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে ৩২ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন। এ জন্য সাবেক এমপিকে ৩ থেকে ৮ লাখ টাকা করে দিয়েছেন তাঁরা।

ডিমলা আলিম মাদ্রাসার সাবেক সুপার সাহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর ছেলের চাকরির জন্য প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আফতাবকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া বেপারিটোলা আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মান্নান বলেন, এমপির সঙ্গে সমঝোতা করে তাঁর প্রতিষ্ঠানের ছয় পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ জন্য এমপিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে।

জমি দখল: আফতাব ও তাঁর পরিবারের লোকজন গত ১৬ বছরে অনেকের জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেশী রুমি দত্ত ও তাঁর কিশোর ছেলেকে ২০১৭ সালে আফতাবের বাড়িতে তুলে নিয়ে লিখে নেওয়া হয় তাঁদের বাড়ির ৪২ শতাংশ জমি। রুমি বলেন, ‘প্রাণভয়ে ও সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে দলিলে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হই। আড়াই কোটি টাকা মূল্যের জমি লিখে নিয়ে আফতাব এমপি আমাকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়েছি।’

এ ছাড়া জমি হারানো ঝেল্লাপাড়া গ্রামের বিষ্ণু রায় আক্ষেপ করে বলেন, ‘আদালতের রায় পেলেও তাঁদের ক্ষমতার কাছে আমরা অসহায়। এত বড় অন্যায় নীরবে মেনে নিতে হয়েছে।’

খাসজমি বিক্রি: পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৭ বিঘা আবাদি জমি প্রতারণার মাধ্যমে ব্যক্তিমালিকানা দেখিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন সাবেক এই এমপি ও তাঁর ভাইয়েরা। এসব জমি কিনে বিপাকে পড়েছেন রামডাঙ্গার বাসিন্দা আতিকুর রহমান। এ ছাড়া আফতাব সভাপতি থাকার সুযোগ নিয়ে ডিমলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের জমি বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বালু উত্তোলন: বুড়িতিস্তা নদীর রামডাঙ্গা-কুটিরডাঙ্গা এলাকায় শতাধিক কৃষকের জমি খনন করে বালু ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে আফতাবের বিরুদ্ধে। এতে বাধা দেওয়ায় স্থানীয়দের নামে মামলাও দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী কৃষক আলম জানান, বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় এমপির পালিত সন্ত্রাসীরা নির্যাতন করে তাঁর বাঁ চোখ নষ্ট করে দেয়

কমিশন: দুই উপজেলায় সব প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই বরাদ্দের ২০ শতাংশ কমিশন নিতেন সাবেক এমপি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বরাদ্দ পেয়ে কাজ না করারও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

ঠিকাদারি ও চাঁদাবাজি: আফতাবের ছেলে আশরাফুল ইসলাম জুয়েল ডিমলা সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, জুয়েল সরকারি কলেজের শিক্ষক হয়েও বাবুরহাট ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ও অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতির পদ দখল করেন। তিনি অটোরিকশার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

খালিশা চাপানি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল চৌধুরী বলেন, ‘ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব দরপত্র ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন এমপির ছেলে জুয়েল। তাঁর মাধ্যমে কার নামে কাজ হবে, তা আগেই ঠিক করা হয়। তিনি বেশির ভাগ কাজ বাগিয়ে নিতেন।’

রংপুর শহরে ছয়তলা ভবনের বাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক জুয়েল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে রংপুর শহরে বাড়ি থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

এদিকে সরকার পতনের পর আফতাব আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর দাবি, তাঁর পৈতৃক বাড়ি ভারতের কোচবিহারে হওয়ায় তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে সেখানে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউ আবার বলছেন, দেশেই আত্মগোপনে আছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে হেফাজতে নির্যাতন, ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে হেফাজতে নির্যাতন, ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ও ডাকাতি মামলার আসামি মো. খোকন (৩৯)। গত শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) তিনি ফরিদগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে ফরিদগঞ্জ থানায় গত ২৮ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকালে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ফখরুদ্দিন আহমেদ স্বপন।

মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীন ফরিদগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট একটি ডাকাতি মামলায় (জি আর নং-৩১৫/২৫) ১৬ ডিসেম্বর তিনজন অজ্ঞাতনামা আসামিকে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখিত খোকনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের সময় আসামি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

আসামির গ্রেপ্তারের সময় গ্রেপ্তারের স্মারকপত্রে আসামি সুস্থ ও পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে কোনো জখমের উল্লেখ না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পরীক্ষা করে নির্যাতনের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন। একই সঙ্গে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী সাত কার্যদিবসের মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন।

যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর হাসপাতাল থেকে আসামিকে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেন চিকিৎসক রানা সাহা ও আসিবুল হাসান চৌধুরী। হাসপাতালের মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যায়, আসামির উভয় পায়ের ঊরুর ওপর একাধিক নীলাফুলা জখম রয়েছে। যদিও চিকিৎসা সনদে উল্লেখ করা হয়, আসামির বর্ণনামতে এই জখম প্রায় চার দিন আগের।

এদিকে আদালতের মামলা করার নির্দেশের পর ২৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা ঘটনার গুরুত্ব ও স্পর্শকাতরতার কথা উল্লেখ করে ১৫ দিনের তদন্তের সময় প্রার্থনা করেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট সময় বিবেচনা না করে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা করার আগের আদেশ বহাল রাখেন।

আদালতের আদেশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য। ফলে আইনানুযায়ী এ ধরনের অপরাধে মামলা করা ছাড়া তদন্ত পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।

সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফ ইফতেখারকে।

মামলার বাদী মো. খোকন ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি সরদার বাড়ির শাহজাহানের ছেলে। বিভিন্ন অপরাধে ফরিদগঞ্জ থানায় চার মামলার আসামি খোকন। সর্বশেষ গত রোববার (২৮ নভেম্বর) ডাকাতির ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রামের মিজি বাড়ির রহিম বাদশার স্ত্রী পেয়ারা বেগম। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হন আসামি খোকন।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল হাসান বলেন, আদালতের আদেশের পর ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে বাড়ানো হলো মেট্রোরেলের ট্রিপ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির সদ্যপ্রয়াত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেওয়ার সুবিধার্থে আগামীকাল বুধবার মেট্রোরেলের ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের সই করা নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উদ্যোগের বিষয়ে ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার ৩১ ডিসেম্বর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও খালেদা জিয়ার জানাজার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মেট্রোরেলের ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে প্রয়োজন অনুযায়ী মেট্রোরেল সেবা সমন্বয় করা হবে। যাতায়াত স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে ডিএমটিসিএল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ)। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ)। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তিকর মন্তব্য করায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মাওলানা মুখলিছুর রহমান (চিতল মুখলিছ) নামের এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় জনতা। তিনি শেখ হাসিনাকে চিতল মাছ ও হিরো আলমকে নোয়া গাড়ি উপহার দিয়ে ‘চিতল মুখলিছ’ নামে পরিচিতি পান। মুখলিছুর রহমান পরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ২টার দিকে চুনারুঘাট পৌর শহরের থানা রোডে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে থানার গেট এলাকায় দাঁড়িয়ে মাওলানা মুখলিছুর রহমান বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। বিষয়টি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের কানে গেলে তাঁরা তাঁকে আটক করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি পালানোর চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা তাঁকে ধরে মারধর করে। পরে স্থানীয় মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

যুবদল নেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে।

উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মারুফ আহমেদ বলেন, থানার গেট এলাকায় বসে তিনি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তেজিত জনতা তাঁকে কিছু মারধর করে। পরে উপস্থিত মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে মাওলানা মুখলিছুর রহমান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই বিষয়টি মীমাংসা হয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০২
হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানকে ভারতে পালাতে সাহায্যকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে তৃতীয় দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের পর অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার ফয়সাল নামে একজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেন।

দুই আদিবাসী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম এবং ফয়সালকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পৃথক দুটি আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। শুনানি শেষে আদালত কারাগারে প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতের অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

২৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে সিবিউন ও সঞ্জয়কে কারাগারে পাঠানো হয়। ২১ ডিসেম্বর দুজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট থেকে এই দুজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

সিবিউন ও সঞ্জয়ের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে পারাপারকারী চক্রের হোতা জনৈক ফিলিপ নামক ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত, গ্রেপ্তার, ফিলিপ ব্যতীত আর কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, ফিলিপের সঙ্গে কিলিং মিশনের কে বা কারা যোগাযোগ করেছে তা জানার জন্য, কিলিং মিশনের ইন্ধনদাতা এবং অর্থদাতাদের শনাক্ত করার জন্য সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

অন্যদিকে ফয়সালের রিমান্ড আবেদন থেকে জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর র‍্যাব-১১-এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন তরুয়া এলাকার মোল্লার বাড়ির সামনে তরুয়ার বিলে অভিযান চালিয়ে ফয়সালকে আটক করে। অভিযানের সময় বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হাদি হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তাঁর রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, হাদি হত্যা মামলা একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। মামলার এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আসামি ফয়সালের দেখানো মতে নরসিংদী সদরের তরোয়া বিল থেকে ১৬ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে। নরসিংদী সদর মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ফয়সালের তথ্যানুযায়ী উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলি পল্টনে চাঞ্চল্যকর ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে। অস্ত্রের উৎস ও সরবরাহকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ, হত্যার মোটিভ উদ্ধার, ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য ফয়সালকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় রিকশায় করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা হয়। মোটরসাইকেল করে এসে রিকশার পাশ থেকে করা গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঘটনার পরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়ার হলে সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান হাদি।

১৪ ডিসেম্বর রাতে ফয়সালকে আসামি করে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদির মৃত্যুর পর তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত