Ajker Patrika

হেমিলটনের জমি দুই নেতার দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
হেমিলটনের জমি দুই নেতার দখলে

রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া মৌজায় ৬ কাঠা একটি জমির মালিক ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক ‘মি. হেমিলটন’। এরপর রেকর্ড সংশোধন করে সেই মালিক বনে যায় ‘চার্চ অব বাংলাদেশ’। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই জমি দখল করেছেন বিএনপির দুই নেতা। তাঁরা দাবি করেছেন, চার্চ অব বাংলাদেশের কাছ থেকে তাঁরা ৪ কাঠা জমি কিনেছেন। যদিও খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এই জমি আসলে সরকারি সম্পত্তি।

জমিটি কেনার দাবি করছেন মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও রাজপাড়া থানা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। জমিটি বিক্রি করেছেন চার্চ অব বাংলাদেশের কথিত সভাপতি রেভা. সুনীল মানখিন। তবে সরকারি জমি বিক্রি করায় এই তিনজন ও জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। এরপর আদালত ওই জমিতে ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন।

রাজশাহী নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের এই জমিতে দীর্ঘদিন চলছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম। জমির নথিপত্র থেকে জানা যায়, সিএস এবং এসএ খতিয়ানে জমির মালিকের স্থানে লেখা আছে ‘মিষ্টার হেমিলটন সাহেব, সাং মহিষবাথান’। আরএস খতিয়ানে জমির মালিক হিসেবে লেখা আছে, ‘মিঃ হেলীটন সাহেব, সাং মহিষবাথান’। ২০২০ সালে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এই জমির কিছু অংশ সরকার অধিগ্রহণ করে। এই অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মি. হেমিলটন সাহেবের মহিষবাথানের ঠিকানায় চিঠি ইস্যু করা হয়। এর পরের বছরই ‘চার্চ অব বাংলাদেশ’ আরএস রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করে। প্রতিষ্ঠানটি জমির মালিকানা দাবি করে। এরপর তাদের নামে রেকর্ড ঠিক করে দেওয়া হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ নিয়ে এই জমির মালিকানা বদল করেছেন তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি-এসি ল্যান্ড)। জানতে চাইলে তৎকালীন এসি ল্যান্ড আবুল হায়াত বলেন, পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারি হয়ে গেলে সরকারকে সেটা বুঝে নিতে হবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সরকার সেটা করেনি। আবার ব্রিটিশ কাউন্সিলও দীর্ঘদিন মালিকানা দাবি করে আসেনি। চার্চ অব বাংলাদেশ যেহেতু ভুল সংশোধনের আবেদন করে, তাই সবকিছু দেখেই জমিটা তাদের নামে রেকর্ড সংশোধন করে দেওয়া হয়।

তবে মামলার বাদী মিজানুর রহমান মিনুর আইনজীবী জমশেদ আলী বলেছেন, ‘জমির মালিক হিসেবে তিনটি রেকর্ডে এক ব্যক্তির নাম রয়েছে। এটি নিতান্তই করণিক ভুল বলে এসি ল্যান্ড তা সংশোধন করতে পারেন না। এটি একমাত্র দেওয়ানি আদালত অথবা কোর্টের এখতিয়ারভুক্ত। কোনোভাবেই এসি ল্যান্ড করতে পারেন না।’

এদিকে ২০২১ সালে জমির মালিকানা বুঝে পায় চার্চ অব বাংলাদেশ। তবে আইনজীবীরা বলছেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে মি. হেমিলটন নামের ব্রিটিশ এক নাগরিকের জমি ছিল এটি। বাংলাদেশে বর্তমানে তাঁর কোনো ওয়ারিশ না থাকায় এটি সরকারি সম্পত্তি হয়ে গেছে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। এখন জমির মালিকানা দাবি করছেন বিএনপির নেতা নজরুল হুদা ও মিজানুর রহমান। মিজানুর বলেন, চার্চ অব বাংলাদেশের জমি ভুল করে নিজের নামে রেকর্ড করেছিলেন ইংল্যান্ডের নাগরিক মি. হেমিলটন। চার্চ অব বাংলাদেশ রেকর্ড সংশোধন করে তাঁদের কাছে বিক্রি করেছে। 

এরপর গত ৭ আগস্ট জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন বিএনপির নেতা নজরুল ও মিজানুর। তাঁদের দাবি, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চার্চ অব বাংলাদেশের পক্ষে সভাপতি রেভা. সুনীল মানখিন তাঁদের কাছে জমি বিক্রি করেছেন। রেভা. সুনীল মানখিনের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোড। 
তবে সাইনবোর্ড লাগানোর পরদিন ৮ আগস্ট মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহীর সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে নালিশি মামলা করেন। এই অভিযোগে তিনি বলেন, চার্চ অব বাংলাদেশের ভুয়া সভাপতি সেজে রেভা. সুনীল মানখিন জাল কাগজপত্র তৈরি করে বেআইনি ও জালিয়াতির মাধ্যমে এই জমি বিক্রি করেছেন। নজরুল হুদা ও মিজানুর রহমান জালিয়াতি ও কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং ভুল বুঝিয়ে যোগসাজশে নিজেদের নামে নাম খারিজ করেছেন। 
জানতে চাইলে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, এটি মূলত মালিকবিহীন সরকারি সম্পত্তি। সেই কারণে বাংলাদেশ সরকারকে ৪ নম্বর বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজশাহীর মেয়র ও সংসদ সদস্য ছিলেন। জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে তিনি জনস্বার্থে এই মামলা করেছেন। 

মিজানুর রহমান মিনু এই জমিতে কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন না করার জন্য রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছেন। দুই নেতার বিরুদ্ধে দলের হাইকমান্ডেও অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবনটি পুরাকীর্তি ঘোষণা, বাধ্যতামূলক অধিগ্রহণ এবং সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছেও একটি আবেদন করেছেন তিনি। ১ সেপ্টেম্বর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদা সুলতানার নেতৃত্বে একটি দল এই সম্পত্তিতে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবন পরিদর্শন করে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গত মঙ্গলবার দুপুরে জমির ক্রেতা বিএনপির নেতা নজরুল হুদার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। জমির আরেক ক্রেতা ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, সেখানে মোট ৬ কাঠা জমির মধ্যে তাঁরা দুজনে সোয়া ২ কাঠা করে মোট সাড়ে ৪ কাঠা কিনেছেন। জমির দাম ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৬ কোটি টাকা তাঁরা দুজনে পরিশোধ করেছেন।

তবে মিজানুর রহমান মিনুর আইনজীবী জমশেদ আলী জানান, মামলার পর আদালতের বিচারক বিবাদী নজরুল হুদা ও মিজানুর রহমানকে কেন নালিশি সম্পত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণ বা জবরদখল থেকে বিরত থাকার আদেশ প্রদান করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন এবং অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের ওই সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্বপাশেই খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪০
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর। ছবি: বাসস
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর। ছবি: বাসস

রাজধানী ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে জিয়া উদ্যানে অবস্থিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের ঠিক পূর্ব পার্শ্বে ৪ ফুট বাই ৭ ফুট নতুন কবর খোঁড়া হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী।

প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জমান চৌধুরী বলেন, যেই স্থাপত্য প্রকৌশল সংস্থা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে আর্কিটেক্টের কাজ করেছিল সেই সংস্থাকে দিয়েই এবার বেগম খালেদা জিয়ার কবর খোঁড়ানো ও বাঁধাই করা হচ্ছে, যাতে মূল নকশায় কোনো ধরনের পরিবর্তন না আসে।

বসত আর্কিটেক্ট প্রকৌশল সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেছেন—তাঁরা ২০০২ সালে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে জিয়া উদ্যানের এই মাজারটি নতুনভাবে সংস্কার করেন। যেখানে একটি অতি সুন্দর ব্রিজ নির্মাণসহ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার ও মাজার প্রাঙ্গণ ফুটিয়ে তোলা হয়। আজ সেই সুন্দর স্থাপনার অবয়ব ঠিক রেখেই শহীদ জিয়ার কবরের ঠিক পূর্ব পার্শ্বে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য নতুন করে খবর খোঁড়া হচ্ছে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের ঠিক পূর্ব পার্শ্বে ৪ ফুট বাই ৭ ফুট নতুন কবর খোঁড়া হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের ঠিক পূর্ব পার্শ্বে ৪ ফুট বাই ৭ ফুট নতুন কবর খোঁড়া হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জমান চৌধুরী বলেন, আজ মঙ্গলবার রাতেই তাঁরা কবর খোঁড়া ও তাতে মার্বেল পাথর স্থাপন করাসহ আনুষঙ্গিক কাজ সেরে ফেলতে চান। কাল সকাল নাগাদ হয়ত কিছু কাজ করা হতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে বসত আর্কিটেক্ট প্রকৌশল সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, ২০০২ সালে যখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার সংস্কার করা হয়, তখন সেভাবে কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। না হয় তখনই বেগম খালেদা জিয়ার কবরের জন্য সেভাবে জায়গা রেখে দুটি কবরের জায়গা করে রাখতে পারতেন।

এখন কেন করছেন, এর জবাবে সেই বসত প্রকৌশল সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, আগে সেভাবে নির্দেশনা ছিল না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাদেরকে আজ সকালে শহীদ জিয়ার কবরের পাশে বেগম খালেদা জিয়ার কবর খোঁড়ার জন্য অনুরোধ করা হলে তারা সেভাবেই কাজ শুরু করেন।

বসত আর্কিটেক্ট প্রকৌশল সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, তার সৌভাগ্য হয়েছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের ডিজাইনসহ স্থাপত্যশৈলী নির্মাণের। সেই সৌভাগ্যক্রমে এবার বেগম খালেদা জিয়ার কবরের স্থাপত্যশৈলীর কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে।

তিনি জানান, শহীদ জিয়ার মতো বেগম খালেদা জিয়ার কবরেও সেই সাধারণ মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হবে এবং একই ডিজাইনে থাকবে সবুজ ঘাস। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার নতুন কবরের জন্য শহীদ জিয়ার মাজারের মূল নকশায় কোনো পরিবর্তন হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দত্তক নেওয়া কিশোরীকে ‘যৌন নির্যাতনের’ অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বরিশাল নগরে দত্তক নেওয়া এক কিশোরীকে (১৪) শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে এডলিন বিশ্বাস (৪০) নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর পুলিশ লাইনস আমবাগান এলাকা থেকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছেন থানার এসআই আবদুল মাজেদ।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন এডলিন বিশ্বাস (৪০) ও জনি বিশ্বাস।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৪ বছর আগে দত্তক নেওয়া এক শিশুকে মারধর করতেন এডলিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। গত কদিন ধরে ওই কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন চালায় এডলিনের ভাই জনি বিশ্বাস। কিশোরীকে যৌন নিপীড়নে জনিকে সহায়তা করতেন বোন এডলিন। দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ চললে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে গোপনে ওই কন্যাশিশু বিষয়টি সরকারি জরুরি সেবা (৯৯৯) নম্বরে কল করে পুলিশকে জানায়।

রাতেই অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে দুজনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মামলার বাদী এসআই আবদুল মাজেদ বলেন, শিশুটিকে ছোটবেলায় দত্তক নেয় এডলিনের পরিবার। বর্তমানে মেয়েটির বয়স ১৪ বছর। বাসার কাজ করানোর পাশাপাশি অনেক দিন ধরে মেয়েটির ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালান এডলিন ও তাঁর ভাই জনি। সোমবার মেয়েটি সরকারি জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশকে জানায়। অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মামুন উল ইসলাম বলেন, এক শিশুকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের মামলায় এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার আরেকজন আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৫
বরিশাল লাঞ্চঘাট। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল লাঞ্চঘাট। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে তীব্র কুয়াশার কারণে দুই দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকাগামী পাঁচটি বিলাসবহুল লঞ্চ বরিশাল নৌবন্দর ত্যাগ করেছে।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় বরিশাল নৌবন্দর থেকে পাঁচটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েছে। বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জুলফিকার আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কুয়াশার কারণে বরিশালের সড়ক ও নদীপথ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। গত রোববার ও গতকাল সোমবার ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথ বন্ধ থাকলেও আজ আবার চলাচল শুরু হয়। তবে কুয়াশার কারণে আট ঘণ্টার যাত্রা ১২ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার উদ্দেশে যেতে বরিশাল থেকে লঞ্চে ওঠা যাত্রী আ. রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে লঞ্চে উঠেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরাপদে ঢাকা পৌঁছাতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটে বাস চললেও কুয়াশার কারণে গতিসীমা কম। কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে বরিশাল বাসমালিক গ্রুপ বাসচালকদের সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে।

ঘন কুয়াশার কারণে গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বরিশাল নৌবন্দর থেকে সরাসরি ঢাকাগামী চারটি ও ভায়া রুটের একটি লঞ্চ যাত্রী নামিয়ে বাতিল করা হয় বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে। এরপর গতকালও বরিশাল নদীপথে লঞ্চ চলাচল সম্ভব হয়নি। আজ পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এলে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। রাত ৯টার দিকে বরিশাল নৌবন্দর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের সরাসরি চারটি ও ভায়া রুটের একটি লঞ্চ ছেড়ে যায়।

এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটের বাস চলাচল বন্ধ না হলেও অতিরিক্ত সাবধানতার সঙ্গে চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে সড়কপথে চার ঘণ্টার যাত্রায় সময় লাগছে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ঘন কুয়াশার কারণে গত চার দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। এ সময় বরিশালে সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জুলফিকার আলী জানান, সদর দপ্তরের নির্দেশনায় আজ রাত থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৩
তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব। ছবি: সংগৃহীত
তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব। ছবি: সংগৃহীত

ঋণখেলাপি হওয়ায় যশোর-৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তালহা শাহরিয়ার আইয়ূবের (টিএস আইয়ূব) প্রার্থিতা গ্রহণ না করতে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। আজ মঙ্গলবার যশোরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক হাসানের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।

ঢাকা ব্যাংকের রাজধানীর ধানমন্ডি শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রিয়াদ হাসান ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এস এম রাইসুল ইসলাম নাহিদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে টি এস আইয়ূবকে ‘ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত’ উল্লেখ করা হয়েছে।

টি এস আইয়ূব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আসনটিতে টি এস আইয়ূব ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার ফারাজী। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে রয়েছেন টি এস আইয়ূবের ছেলে ফারহান সাজিদ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ূব আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ূব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা থেকে ঋণ নেন তালহা শাহরিয়ার আইয়ূব। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ঋণখেলাপি; যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী একজন ইচ্ছাকৃত (Willful) ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (CIB) রিপোর্টে তিনি একজন মন্দজনিত ঋণখেলাপি (Bad & Loss)।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, টি এস আইয়ূব তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন এবং বৈদেশিক রপ্তানিপ্রক্রিয়া-সংক্রান্ত দলিলাদি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেন। যে টাকা অনাদায়ী ও অপ্রত্যাশিত হিসেবে রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয় এবং চার্জশিট দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ঢাকা ব্যাংক ঋণের টাকা আদায়ে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা করলে আদালত ব্যাংকের পক্ষে রায় ও ডিক্রি দেন। পরে ব্যাংক অর্থজারি মোকদ্দমা করে, যা বর্তমানে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর্যায়ে রয়েছে। উক্ত মামলা ছাড়াও ব্যাংক তাঁর বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার-সংক্রান্ত সিআর মামলা করেছে, যা বর্তমানে শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।

উপরিউক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত তালহা শাহরিয়ার আইয়ূবের নির্বাচনী এলাকা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা গ্রহণ না করাসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানায় ব্যাংকটি।

সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির এই প্রার্থী সরকারি-বেসরকারি খাতের অন্তত চার ব্যাংকে ১৩৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা থেকে সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের নামে ২০১৭ সালে ১৪টি ভুয়া এলসির বিপরীতে ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

২০১৯ সালে এ বিষয়ে মামলা করে ব্যাংক। সুদসহ বর্তমানে তাঁর কাছে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে টি এস আইয়ূব ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। সরকার পতনের পর তিনি কারামুক্ত হন। এরই মধ্যে তাঁকে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করেছে ঢাকা ব্যাংক।

সূত্রে আরও জানা গেছে, টি এস আইয়ূবের সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ৭০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। ঋণটি পুনঃতফসিল করতে তাঁকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ডাউন পেমেন্ট জমার শর্ত দিয়েছে ব্যাংক। তিনি মাত্র ৬৫ লাখ টাকা জমা দেওয়ায় তা নিয়মিত হয়নি।

এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি তিনি। এর বাইরে তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরেক প্রতিষ্ঠানের অগ্রণী ব্যাংকে ১২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আছে।

তবে খেলাপি হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে টি এস আইয়ূব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঋণখেলাপি ছিলাম, আদালতের মাধ্যমে এখন নেই। তারপরেও যদি ব্যাংক কোনো চিঠি দিয়ে থাকে, তাহলে বিস্তারিত ব্যাংক বলতে পারবে। আমি এখন ঋণখেলাপি নেই।’

এ বিষয়ে যশোরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, টি এস আইয়ূবের বিরুদ্ধে ঢাকা ব্যাংক থেকে চিঠি এসেছে। মনোনয়ন যাচাই–বাছাইকালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত