Ajker Patrika

ককটেল ফুটতেই সেলুনে লুকায় পুলিশ, রণক্ষেত্র হয় এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১৪: ১৫
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী নগর মহিলা দলের নেত্রীর বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন সড়কের ওপর। তখন কিছুটা দূরে পরপর দুটি ককটেল ফোটে। আত্মরক্ষায় পুলিশ সদস্যরা পাশের একটি সেলুনে ঢুকে পড়েন। নামিয়ে ফেলা হয় সেলুনের শাটার। এরপর ২ কিলোমিটার এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। ৪ ঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরের দড়িখড়বোনা এলাকায় মহানগর মহিলা দলের সহক্রীড়া সম্পাদক লাভলী খাতুনের বাড়িতে হামলার এ ঘটনা ঘটে। দড়িখড়বোনা মোড়ে পুলিশ আসে ৭টার মধ্যে, কিন্তু সংঘর্ষ থামাতে পারেনি। রাত ১১টার দিকে সংঘর্ষ শেষ হলে সেনাবাহিনীর পাঁচটি গাড়ি আসে।

এ সংঘর্ষে আহত হন চার ব্যক্তি এবং পুড়িয়ে দেওয়া হয় তিনটি মোটরসাইকেল। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল আজকের পত্রিকার রাজশাহীর মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জাহিদ হাসান সাব্বিরের। সংঘর্ষের সময় তিনি ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। মোটরসাইকেলটি রাখা ছিল সড়কের পাশে। একটি পক্ষ তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মূলত মহিলা দল নেত্রী লাভলী ও নগর যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মারুফ হোসেন জীবনের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জীবন একই এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশের নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক হাসান কোনো জবাব দেননি। তিনি বলেছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

আ.লীগ নেতাকে ধরানো নিয়ে দ্বন্দ্ব

ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে নগর মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক বিথী খাতুন একটি মামলা করেন। বিথী আর লাভলী ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। এ মামলায় নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু ও তাঁর ভাই সাব্বির বাবুকে আসামি করা হয়। তাঁরা কাদিরগঞ্জ এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার লাভলী লোকজন নিয়ে ওই ফ্ল্যাট ঘেরাও করেন। পরে যৌথ বাহিনী অভিযান চালালে মোস্তাককে পাওয়া যায়নি। তবে গভীর রাতে তাঁর ভাই সাব্বিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে ধরানো নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। এর জেরে বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে লাভলীর অভিযোগ।

আত্মরক্ষায় সেলুনে ঢোকে পুলিশ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাভলীর বাড়িতে হামলার পর সাত-আটজন পুলিশ সদস্য আসেন দড়িখড়বোনা মোড়ে। তাঁরা এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তখন পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ককটেল ফুটলে পুলিশ দড়িখড়বোনা মোড়ের একটি সেলুনে ঢুকে ভেতর থেকে শাটার লাগিয়ে দেয়। এরপর রাত ১১টা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের আর কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের এলাকায় দেখা যায়। এর আগে এই সংঘর্ষের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের নগর বিশেষ শাখার (সিটি এসবি) তোফাজ্জল হোসেন ইটের আঘাতে আহত হন। কানে গুলি লাগে রনি নামের রেলওয়ের এক কর্মচারীর। এ ছাড়া বাড়িতে হামলায় মহিলা দল নেত্রী লাভলী ও তাঁর আড়াই বছর বয়সী নাতনি লামিয়া আহত হয়।

লাভলী জানান, চিকিৎসা শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি মামলা করবেন। বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতাদের জানানো হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের জানানোর বিষয়টি জানিয়েছেন সাবেক যুবদল নেতা জীবনও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত