Ajker Patrika

রাজশাহীতে গণহারে মামলা, আসামি করা নিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ৫২
রাজশাহীতে গণহারে মামলা, আসামি করা নিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ

ছাত্র–জনতার অভুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় মামলা করছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ঘটনা না ঘটলেও মামলা হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।

আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম না দিতে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগের মামলায় গণ আসামি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির ঘটনা নিয়েও মামলা হচ্ছে এখন।

পুলিশ বলছে, মামলায় কাকে আসামি করা হবে না হবে তা বাদীর ওপরেই নির্ভর করছে। মামলা রেকর্ডের আগে যাচাই–বাছাই করার সুযোগ হচ্ছে না। আর আইনজ্ঞরা বলছেন, অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কেউ মামলায় গণআসামি করছেন। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন তা নজর রাখা উচিত। কারণ, মামলার লক্ষ্য হলো– সুবিচার পাওয়া। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে মামলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট থেকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হতে শুরু করেছে। ১৯ আগস্ট প্রথম মামলা হয় নগরের বোয়ালিয়া থানায়। গত ৫ আগস্ট আলী রায়হান নামের এক শিবির নেতার নিহতের ঘটনায় করা এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। মামলায় আসামি হিসেবে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি আরও ১০০০ থেকে ১২০০ জন।

রাজশাহীতে ৫ আগস্টের সংঘর্ষে আলী রায়হানসহ মোট দুজনের মৃত্যু হয়। অপর শিক্ষার্থী সাকিব আনজুমকে হত্যার অভিযোগে ২৩ আগস্ট রাতে বোয়ালিয়া থানায় আরও একটি মামলা হয়। এতেও আসামি করা হয় লিটনসহ ৪২ নেতা–কর্মীকে। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা আরও প্রায় ৩০০ জন।

১৯ আগস্টের পর থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় প্রতিদিনই দুয়েকটি করে মামলা হচ্ছে। সব মামলাতেই গণহারে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাত আসামিও করা হয়েছে ১০০ থেকে ২০০ জনকে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট ডাকাতির অভিযোগেও এখন মামলা হতে শুরু করেছে। নগরের বোয়ালিয়া, কর্ণহার ও গোদাগাড়ী থানায় এমন মামলা হয়েছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, রাজশাহী মহানগরের বিত্তশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মামলার আসামি না করতে মোটা অংকের টাকারও লেনদেন হচ্ছে। ফলে রাজশাহীর প্রভাবশালী সাবেক একাধিক এমপি ও কোন কোন প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে এখনও মামলা হয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজশাহী সদর আসন থেকে টানা তিনবার এমপি হওয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার নামেও এখনও পর্যন্ত মামলা হয়নি। এনিয়েও সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে।

বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার বাদী কে হবেন তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলীয় নেতাদের কাছে সমালোচিত হওয়া ব্যক্তিরাও আগবাড়িয়ে মামলা করতে যাচ্ছেন। দলের সুনজরে আসতে রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের বহিষ্কৃত যুগ্ম সম্পাদক সামসুন নাহারও ২০১৮ সালের ঘটনায় সম্প্রতি মামলা করেছেন। সামসুন নাহার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২০২৩ সালে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সামসুন নাহার এখনও দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেছেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসনের বিএনপির প্রার্থী ও দলের চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় তিনি মামলাটি করেছেন। এ মামলাতেও গণআসামি করা হয়েছে। এছাড়া ওই সময় মিনুর বাড়ি ও নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলার অভিযোগে আরও দুটি মামলা করেছেন তার বাড়ির কেয়ারটেকার।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন রাজশাহী–১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী–৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী–৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও রাজশাহী–৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

রাজশাহী সদর আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান, রাজশাহী–৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ এবং রাজশাহী–৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সদ্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি।

ওমর ফারুক চৌধুরী ও আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে ভোটডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে। সাড়ে ৫ বছর আগের ঘটনার এসব মামলায় গণআসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া কারও ওপর অতীতে ছোটখাট কোন রাগ থাকলে তাকেও আসামি করা হচ্ছে।

রাজশাহীর বাঘা থানায় মামলা করতে একটি এজাহার দিয়েছেন কিশোরপুর গ্রামের জাহিদ হাসান নামের এক ব্যক্তি। এই এজাহারে ১৪ নম্বর আসামি হিসেবে বাঘা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান ও ১৫ নম্বর আসামি হিসেবে তাঁর ছেলে মো. স্বদেশের নাম লেখা হয়েছে। মামলায় ১৩০ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার তারিখ বলা হয়েছে ২৫ আগস্ট। নুরুজ্জামান দৈনিক ইত্তেফাকের বাঘা উপজেলা প্রতিনিধি। আর তার ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

নুরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে তার ওপর কেউ বিরাগভাজন থাকতে পারে। এ জন্য ছেলেসহ তাকেও আসামি করতে এজাহারে নাম লেখা হয়েছে।

সাংবাদিক নুরুজ্জামান অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এলাকায় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেওয়ার মতো কেউ নেই। তারপরও গায়েবি মামলা করতে এরকম এজাহার দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কিছু অতিউৎসাহী লোকজন এসব মামলা করছে। আবার যাদের বাদী করা হচ্ছে, তারা নিজেরাও মামলার বিবরণ ও আসামি সম্পর্কে কিছুই জানে না। 

গায়েবি অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে সোমবার বিকালে অভিযোগকারী জাহিদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি। সন্ধ্যার পর তিনি যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, ‘মামলাটা অভিযোগ আকারে আছে। এখনও মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। তবে মামলা হয়ে যাবে।’

ওসি বলেন, ‘আসামি কে হবেন না হবেন তা বাদীর ওপরেই নির্ভর কছে। মামলা হওয়ার পরে তদন্তের সময় আমরা বাকিটা দেখব।’

আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের রাজশাহীর এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ কোনো যাচাই–বাছাই করছে না। যাদের নামে ইচ্ছে হচ্ছে মামলা করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগের ঘটনা সামনে এনে গায়েবি মামলাও করা হচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগের বিত্তশালী নেতাদের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষ যোগাযোগ করছে মামলা থেকে বাঁচানোর কথা বলে। তারা বিএনপি নেতাদের কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আসলেই এ টাকা বিএনপির নেতারা নিচ্ছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে দুয়েকজন বিত্তশালী আওয়ামী লীগ নেতার নামে এখনও কোন মামলা হয়নি।’

একাধিক মামলার আসামি হয়ে যাওয়ার ভয়ে ওই নেতা নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী বলেন, ‘কোনো অপরাধের বিচার পাওয়াটাই মামলার মূল্য উদ্দেশ্য। এখানে কাউকে হয়রানি করার জন্য গণআসামি করা ঠিক হবে না। তবে মামলা করাই তো শেষ কথা নয়। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করবেন। তখন যেন মামলাগুলোর সতর্কতার সাথে তদন্ত করা হয়। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধেই যেন অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।’

গণআসামি করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘আমার নামে এখন ৬৭টা মামলা, সবগুলো মামলাই গায়েবি। আমাদের অন্য নেতাকর্মীদের নামেও অসংখ্য গায়েবি মামলা আছে। তারপরেও আমরা গায়েবি মামলা সমর্থন করি না। কেউ হয়তো অতিউৎসাহী হয়ে এ ধরনের মামলা করছেন। এর দায় মামলার বাদীকেই নিতে হবে। আমরা বলছি, কাউকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে যেন মামলার আসামি করা না হয়।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যে মামলা হচ্ছে সেগুলো বাদীর ইচ্ছার ওপরেই নির্ভর করছে। বাদী আসামিদের নাম দিচ্ছেন, সে অনুযায়ী মামলা হচ্ছে। তবে তদন্তের সময় পুলিশ দেখবে আসলেই কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যাদের ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদেরই অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করা হবে। অন্যদের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ মারা গেছেন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত
সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ (৭০) মারা গেছেন। আজ সোমবার ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

পরিবারসূত্রে জানা যায়, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ধরে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। তিনি ধানমন্ডির বাসায় থাকতেন। গত কয়েক দিন ধরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

সুকুমার রঞ্জন ঘোষ শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ শ্রীনগর উপজেলা সদরে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে অসুস্থ ছিলেন।

উল্লেখ্য, সুকুমার রঞ্জন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (কুলা প্রতীক) ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে (ধানের শীষ) পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে নিহত দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক, স্ত্রীকে চাকরির আশ্বাস

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১০
ময়মনসিংহে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ভালুকায় গণপিটুনিতে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের বাড়িতে শোকের মাতম এখনো থামেনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পুরো পরিবার যেন শোকে কাতর।

প্রতিদিনই বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে দিপুর পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সহায়তাসহ নানা আশ্বাস। এ ছাড়া দিপুর পরিবারের জন্য বাড়িতে সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

আজ সোমবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান নিহত দিপু দাসের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। তাঁর সঙ্গে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দিপুর পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা, শীতবস্ত্র, শুকনো খাবার ও একটি সেলাই মেশিন পরিবারটিকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি দিপুর স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার ঘোষণাও দেন জেলা প্রশাসক।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সহযোগিতাসহ সব সময় তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছি।’

উল্লেখ্য, ১৮ ডিসেম্বর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। পরে তাঁর মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ময়মনসিংহে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ঘটনায় নিহতে দিপুর ছোট ভাই অপু দাস ১৯ ডিসেম্বর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে ভালুকা থানায় একটি মামলা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রতিবাদ সমাবেশ

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকায় দিপু দাস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ময়মনসিংহ নগরী ও তারাকান্দায় মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। আজ সচেতন ময়মনসিংহবাসীর ব্যানারে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন দিপু দাসের ছোট ভাই অপু দাস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা আল নুর মো. আয়াস, হৃদয় খান, সাংবাদিক মোজাম্মেল খোকন, কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা প্রমুখ।

একই দাবিতে দিপু দাসের নিজ উপজেলা তারাকান্দায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ফ্রন্ট ও দিপু দাসের পরিবার। আজ সকালে তারাকান্দা বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তারাকান্দা উপজেলা সভাপতি বিজন কুমার ভৌমিক রতন, সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শর্মা সরকার কাঞ্চনসহ দিপুর পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা কারখানার মালিকসহ প্রকৃত দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন এবং দিপু দাসের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের, যানজটে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় আট দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা রহমতপুর এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। ঘণ্টা তিনেক ধরে চলা অবরোধে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজট তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।

ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত সপ্তাহ থেকে ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) থেকে পৃথক করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করা, সব কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদ শুধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য সংরক্ষণ, ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের বেসরকারি চাকরিতে ন্যূনতম দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের চাকরিতে যোগদানের পর ছয় মাসের বনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘৯ মাস আগে আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তখন শুধু আশ্বাস দিয়েছিল, বাস্তব কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’ আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত আমাদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মেনে না নেবে, তত দিন ক্যাম্পাস লকডাউন, প্রশাসনিক ভবন বন্ধসহ এই আন্দোলন চলবে।’

এ বিষয়ে রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। তবে এসব দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিতাসে শাশুড়িকে চুবিয়ে হত্যায় জামাতা গ্রেপ্তার

হোমনা (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
মো. জামাল সিকদার। ছবি: সংগৃহীত
মো. জামাল সিকদার। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় শাশুড়িকে খালে চুবিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি জামাতা মো. জামাল সিকদারকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল রোববার রাতে ঢাকার সাভারে আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। আজ সোমবার সকালে তাঁকে তিতাস থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে তিতাস থানা-পুলিশ দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায়।

গত ১০ অক্টোবর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে সুফিয়া খাতুন নামে (৭০) এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়। পারিবারিক কলহের জেরে তাঁর জামাতা জামাল তাঁকে বসতবাড়ির কাছে খালে চুবিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে তিতাস থানা-পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে পালিয়ে ছিলেন জামাল।

জানা গেছে, জামাল সুফিয়া বেগমের ভাই দিলু সিকদারের ছেলে। তাঁর সঙ্গে সুফিয়ার মেয়ে রহিমা বেগমের বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ির পাশেই জামালের বাড়ি।

তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, শাশুড়িকে চুবিয়ে হত্যার প্রধান আসামি জামাল উদ্দিন শিকদারকে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করে আজ সকালে থানায় আনা হয়। পরে দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত