Ajker Patrika

গ্রামজুড়ে পুলিশ-আতঙ্ক সৎকারেও কেউ নেই

রিমন রহমান, রাজশাহী
গ্রামজুড়ে পুলিশ-আতঙ্ক সৎকারেও কেউ নেই

গ্রামে এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর সৎকারের জন্য কোনো লোক নেই। শেষে পুলিশ অভয় দিল, বৃদ্ধাকে সৎকারের দিন গ্রামে কোনো পুলিশ যাবে না। তাতেও সৎকারকাজের জন্য আসেনি কেউ। পরে অন্য গ্রামের লোকজন এসে মালঞ্চ রায় নামের ওই বৃদ্ধার মরদেহ সৎকার করে।

গতকাল রোববারের চিত্রটি এমনই ছিল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রামপাড়া গ্রামের। পুলিশ-আতঙ্কে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গ্রামটি পুরুষশূন্য। ভয়ে রাতে বাড়িতে কোনো নারীও থাকছেন না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাঁওতাল অধ্যুষিত এই গ্রামে ৩৬টি পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে মাত্র ৪টি পরিবার মুসলিম।  

গ্রামের বাসিন্দা আনন্দ রায় চোলাই মদ তৈরি করে পান করেন। একবার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল। কিন্তু জামিন নেওয়ার পর আর আদালতে হাজিরা দেননি আনন্দ। তাই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গত শুক্রবার দুপুরের পর পুলিশ বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ধরে ফেলে। তখন গ্রামবাসী পুলিশের ওপর হামলা করে তাঁকে ছিনিয়ে নেয়। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদুর রহমানকে মারধরের পর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। গ্রেপ্তার করা হয় সাতজনকে। তবে আনন্দকে আর পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় পুলিশ মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে। মারধরের শিকার এসআই মনিরুল এ মামলার বাদী। পুলিশ এখন এ মামলায় ধরপাকড় চালাচ্ছে। শুধু রামপাড়া নয়, আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তল্লাশির নামে বাড়িঘরে হামলা, আসবাব, হাঁড়ি-পাতিল ভাঙচুর, এমনকি একটি বাড়ির টিউবওয়েলের হাতল খুলে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

এই ধরপাকড়ের মধ্যেই রামপাড়ায় শনিবার রাতে নিজ বাড়িতে মারা যান ৮০ বছরের বৃদ্ধা মালঞ্চ। গ্রামের লোকজন বলছেন, ওই রাতেও গ্রামে পুলিশ এসেছিল। মালঞ্চ রায় ছাড়াও আরও কয়েকজনের বাড়ি তছনছ করা হয়েছে। বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে। ভোররাতে মালঞ্চ মারা যান। তাঁর ছেলে সচীন রায় ও নাতি চয়ন রায় গত শুক্রবার থেকে পালিয়ে আছেন। মালঞ্চ মারা গেলেও তাঁরা আসেননি। খবর পেয়ে সেখানে যান জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়। তিনিই পুলিশের সঙ্গে কথা বলে অভয় নেন। তাও গ্রামের কোনো পুরুষ ফিরে আসেননি। তাই অন্য গ্রামের লোকজন ডেকে মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।

গতকাল দুপুরের পর পার্শ্ববর্তী দেবপুর গ্রামের পুরান পুষ্করিণী এলাকায় মালঞ্চ রায়ের সৎকার হয়। এ সময় ১০-১৫ জন পুরুষ মানুষকে দেখা গেছে। তাঁরা সবাই অন্য গ্রাম থেকে এসেছিলেন। সানাদিঘি গ্রামের সুরেশ রায়, দেবপুর গ্রামের সন্তোষ রায়, কামারপাড়া গ্রামের টুটন সিংহ, রাজারামপুর গ্রামের অজিত মুন্ডা, অভয়া গোপালপুর গ্রামের সুশীল কুমারসহ অন্যরা জানালেন, আদিবাসী নেতা বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়ের ডাকে তাঁরা এসেছেন।

সচীন রায়ের স্ত্রী শিখা রায় বলেন, শুক্রবার রাতে পুলিশ এসে তাঁদের ঘরের দরজা, বাথরুমের দরজা ও হাঁড়ি-পাতিল ভাঙচুর করে গেছে। তাঁর শাশুড়ি মারা গেলেও তাঁর স্বামী মাকে দাফন করার জন্য বাড়িতে আসতে পারেননি। তাঁর ছেলেও আসতে পারেনি। তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও পাশের গ্রামের লোকজন এসে দুপুরের পর লাশ দাফন করতে নিয়ে যায়।

মাদক মামলার আসামি আনন্দ রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কেউ নেই। বাড়ির একটি দরজায় তালা, আরেকটি ভাঙা। পাশের বাড়ির বাসিন্দা নীলা বেওয়া (৬৫) জানালেন, ঘটনার সময় তাঁর ছেলেরা বাড়িতে ছিল না। তাও পুলিশ তাদের ধরতে আসে। না পেয়ে ঘরের জানালা-দরজা, চুলা, হাঁড়ি-পাতিল সব ভেঙে দিয়ে গেছে। বাড়ির বাইরের টিউবওয়েলের হাতলটাও খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নীলা বলেন, জমির ধান পেকে গেছে। এখন ধান কাটার মতোও বাড়িতে কেউ নেই। তিনি কী করবেন তা বুঝতে পারছেন না।

আদিবাসী পরিষদের নেতা বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, ‘পুলিশ আনন্দকে ধরতে এসেছিল সাদাপোশাকে। সে কারণেই গ্রামবাসী মনে করেছে অন্য কেউ আনন্দকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আর এ জন্যই সাদাপোশাকের পুলিশকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। দু-একজন গায়ে হাতও তুলেছিল। এটা ভুল-বোঝাবুঝি। তাও আমরা বলছি, যারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, শুধু তাদেরই আইনের আওতায় আনা হোক। অন্য কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়।’

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। যাঁরা জড়িত ছিল, শুধু তাঁদেরই খোঁজা হচ্ছে। হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ সঠিক নয়।’ ওসি বলেন, ‘গ্রামের এক বৃদ্ধা মারা যাওয়ায় আদিবাসী নেতা আর আওয়ামী লীগের নেতাদের অনুরোধের কারণে আমরা বলেছি, আজ গ্রামে কোনো পুলিশ যাবে না। তাও যদি ভয়ে কেউ গ্রামে না আসে, তাহলে আমরা কী করতে পারি?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচি ঘোষণা রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। রাবি প্রশাসন দেড় বছর সময় পেয়েছে, এখন সময় বিপ্লবীদের।’ তিনি লেখেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আরো একবার শেখালো লীগের প্রতি নমনীয়তা আমাদের জন্য কতটা বিভৎস হতে পারে।’ আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত থাকার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন রাকসু জিএস। অভিযুক্তদের নাম, কর্মস্থল, বর্তমান পদবি, ঠিকানা এবং ফ্যাসিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণাদি সরাসরি তার ফেসবুক ইনবক্স অথবা নির্দিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক পোস্টে তিনি আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফারসি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তাঁর জমিদারি ছিল।

হাসন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার’; ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে’; ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’; ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’; ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শনচিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত