Ajker Patrika

ইউএনওকে আসামি করে মামলার আবেদন করলেন সাব–রেজিস্ট্রার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
ইউএনওকে আসামি করে মামলার আবেদন করলেন সাব–রেজিস্ট্রার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ওপর হামলার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান আসামি করে মামলার আবেদন করেছেন আহত সাব-রেজিস্ট্রার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত হয়ে এই মামলার আবেদন করেন সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। 

এতে শিবগঞ্জের ইউএনও আবুল হায়াতসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। অন্যান্য আসামিরা হলেন-চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রাজারামপুর এলাকার আলাউদ্দিনের মেয়ে সালে নূর বেগম এ্যানি, শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া গ্রামের আল আমিন জুয়েল ও সদর উপজেলার বাখেরআলী বিশ্বনাথপুর গ্রামের মর্ত্তুজা আলীর ছেলে তমাস উদ্দিন। 

মামলার বাদী বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার গন্ডগ্রাম গ্রামের সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ১০ জানুয়ারি বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রারের এজলাস ও খাস কামরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াতের নির্দেশনায় ও তার হুকুমে হামলা হয়। এ সময় সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। 

মামলার আবেদনে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে ইউএনও আবুল হায়াত মামলার দুই নম্বর আসামি সালেনুর বেগম এ্যানিকে সঙ্গে নিয়ে অফিসে এসে অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক মৃত তালেব আলীর পেনশনের কাগজপত্রের ছাড়পত্র দিতে বলেন। কিন্তু এর সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে অনুরোধ করলে ইউএনও অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রারকে জানাতে হাতে ফোন নিলে তা কেড়ে নেন এবং কলার ধরে কিল-ঘুষি মারে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ইউএনও। 

ইউসুফ আলী মামলার আবেদনে জানান, মারধর করে ইউএনও চলে যাওয়ার পরেও সেই মহিলাকে সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ফিরিয়ে দিলে ইউএনও’র আনসার বাহিনী অফিসে এসে সকল সেবাগ্রহীতাদের তাড়িয়ে দেয়। পরে ইউএনওর নির্দেশে লাঠি লোহার রড ও পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। হামলার পরদিন ১১ জানুয়ারি শিবগঞ্জ থানায় ইউএনও আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয় বলে অভিযোগ করেন সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। 

বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘বাদী নিজে আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলার আবেদন করেছেন। বিচারক বাদীর সকল ঘটনা ও অভিযোগ শুনেছেন। আমরা আশা করছি, আদালতে সঠিক বিচার পাব। এ সময় আদালতে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে ইউএনও আবুল হায়াতের মোবাইল ফোনে কল করে যোগাযোগ করা হল তিনি বলেন, ‘একটি মামলা চলমান আছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন।’ 

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই সাব-রেজিস্ট্রার এলাকায় ছিলেন না, এমনকি তিনি থানায় আসেননি। তবে থানায় তাঁর পক্ষে একটি মামলা নেওয়া হয়েছে এবং আসামিও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ 

নিজ কার্যালয়ে হামলার পরদিন ১১ জানুয়ারি রাতে এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন-শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের মহরার সাজিরুল ইসলাম, আলফাজ উদ্দিন ও রোজবুল হক। ১১ জানুয়ারি রাতে মোহরার মামুন অর রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। 

এর আগে ১০ জানুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগীদের হামলায় আহত হন শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। পরে অফিসের কর্মচারী ও স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সেখান থেকে গত ২১ জানুয়ারি আহত সাব-রেজিস্ট্রারের পরিবার তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি ছাড়পত্র পান। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে পিকআপের ধাক্কায় জামায়াত নেতা নিহত

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
নিহত শরিফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শরিফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের মনিরামপুরে পিকআপের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শরিফুল ইসলাম (৫৫) নামে এক জামায়াত নেতা নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন কামরুজ্জামান নামে মোটরসাইকেলের অপর আরোহী। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে যশোর-চুকনগর সড়কের মনিরামপুর সরকারি কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

মনিরামপুর থানার ওসি রজিউল্লাহ খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের লাশ মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা আছে।

নিহত শরিফুল ইসলাম উপজেলার হানুয়ার গ্রামের মাওলানা আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি মনিরামপুর উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য ও উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি। রাজগঞ্জ বাজারে তাঁর হোমিও চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে।

আহত কামরুজ্জামান হানুয়ার গ্রামের ওমর ফারুকের ছেলে। তিনি মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশ জানায়, শরিফুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান উপজেলার জালঝাড়া জামায়াতে ইসলামীর অফিস থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁরা মনিরামপুর সরকারি কলেজের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা পিকআপ ধাক্কা দিলে দুজনে ছিটকে পড়ে বুকে ও মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শরিফুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।

মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেহেদী হাসান বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পর আমরা শরিফুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। আহত অপরজন চিকিৎসাধীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন বই এলেও পদ্মার চরে কাটছে না শিক্ষকসংকট

তামীম আদনান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)
শিক্ষক কম থাকায় অনেক সময় ক্লাস হয় না। এতে শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিক্ষক কম থাকায় অনেক সময় ক্লাস হয় না। এতে শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নতুন বছর মানেই নতুন বইয়ের উচ্ছ্বাস। আর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বছরের প্রথম দিনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরের ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছাবে নতুন বই। ঝকঝকে বইয়ের গন্ধে মুখর হবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। তবে সেই আনন্দের মাঝেই দীর্ঘদিনের তীব্র শিক্ষকসংকট চরের শিশুদের শিক্ষাজীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের পদ্মার চরের ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষক পদ ১৫০টি। বর্তমানে সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৮৫ জন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ৬৫টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, দুর্গম চরাঞ্চলে নতুন শিক্ষক নিয়োগ পেলেও যাতায়াত ও আবাসন সমস্যা দেখিয়ে অনেকেই বেশি দিন সেখানে থাকতে চান না। অল্প সময়ের মধ্যেই নানা সুপারিশে তাঁরা সুবিধাজনক এলাকায় বদলি হয়ে যান। প্রতিবছর শিক্ষক নিয়োগ হলেও দুর্গম চরাঞ্চলে শিক্ষক ধরে রাখার জন্য কার্যকর নীতিমালা বা প্রণোদনা না থাকায় সংকটটি বছরের পর বছর রয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্কুলে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণির বিপরীতে মাত্র দুই থেকে তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। কোথাও আবার একজন শিক্ষকই পুরো বিদ্যালয়ের পাঠদান সামলাচ্ছেন। এক শিক্ষকের পক্ষে একসঙ্গে একাধিক শ্রেণিতে পাঠদান কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি কর্মরত শিক্ষকদের একটি বড় অংশ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় দাপ্তরিক কাজেই তাঁদের বেশির ভাগ সময় ব্যয় হচ্ছে।

শিক্ষক কম থাকায় অনেক সময় ক্লাস হয় না। এতে শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিক্ষক কম থাকায় অনেক সময় ক্লাস হয় না। এতে শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চিলমারী ইউনিয়নের খারিজাথাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের প্রায়ই উপজেলা শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। দুর্গম চরাঞ্চল পাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসাতেই পুরো দিন শেষ হয়ে যায়। ফলে ওই দিনগুলোতে অনেক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যত বন্ধ থাকে।’

চর থেকে উপজেলা সদরে একজন শিক্ষকের যাতায়াতে গড়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এতে খরচ হয় প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্ষা মৌসুমে নৌকাই একমাত্র ভরসা, আর শুষ্ক মৌসুমে মোটরসাইকেলে চলাচল করতে হয়। নারী শিক্ষকদের জন্য এই যাতায়াত আরও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।

পূর্ব খারিজাথাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পারভিনা আক্তার জানান, তিনি ১৮ বছর ধরে চরাঞ্চলে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে তাঁর বিদ্যালয়ে ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদান করছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক। প্রতিটি শ্রেণিতে গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ জন শিক্ষার্থী। তিনি দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকলে মাত্র দুজন শিক্ষক দিয়ে পুরো বিদ্যালয়ের পাঠদান চালাতে হয়। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দিচ্ছি—সেটাই বড় প্রশ্ন। বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান আসেনি।’

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষক কম থাকায় অনেক সময় ক্লাস হয় না। তার ভাষ্য, ‘আমরা স্কুলে গিয়ে বসে থাকি। আবার অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একসঙ্গে বসানো হয়।’

অভিভাবকদের অভিযোগ আরও তীব্র। আব্দুর রাজ্জাক নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের সন্তানের হাতে নতুন বই আছে, কিন্তু মাথার ওপর শিক্ষক নেই। শহরের স্কুলে যেখানে শিক্ষক ভরপুর, সেখানে চরের শিশুদের জন্য কেন স্থায়ী ব্যবস্থা নেই।’

চরের অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকসংকটের কারণে তাঁদের সন্তানেরা শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার মান দুর্বল হচ্ছে। তবুও অনেক শিক্ষার্থী একের পর এক শ্রেণি পেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে গিয়ে পড়ালেখাই ছেড়ে দিচ্ছে।

দৌলতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘নতুন শিক্ষক এলেও তারা নানা অজুহাতে চরাঞ্চলে থাকতে চান না। বিভিন্ন সুপারিশে সুবিধাজনক এলাকায় চলে যান। জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষক নিয়োগের কথা রয়েছে। আমরা চাহিদা পাঠিয়েছি। নতুন শিক্ষক পেলে কিছুটা হলেও সংকট কাটবে বলে আশা করছি।’

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চরের দায়িত্বে থাকা অনেক শিক্ষক স্বেচ্ছায় সুবিধাজনক স্থানে বদলির আবেদন করেছেন। নতুন শিক্ষক নিয়োগের পর তাঁরা সেখান থেকে চলে আসবেন। ফলে সংকট দ্রুত কাটার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, দৌলতপুর উপজেলায় মোট ২১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮২টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। এ ছাড়া ১ হাজার ১৬৬টি সহকারী শিক্ষক পদের বিপরীতে ১৩২টি পদ শূন্য রয়েছে, যার সিংহভাগই পদ্মার চরাঞ্চলে। চলতি বছরে উপজেলায় প্রায় ৪০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে।

নতুন বইয়ের আনন্দের মাঝেই শিক্ষকসংকটের এই দীর্ঘশ্বাস পদ্মার চরের হাজারো শিশুর শিক্ষা ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে—এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রেললাইনের পাত তুলে ফেলায় ইঞ্জিনসহ দুই বগি লাইনচ্যুত, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বন্ধ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ঢাকাগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকাগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে রেললাইনের পাত খুলে ফেলায় ঢাকাগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ভোর ৫টা ১০ মিনিটে গফরগাঁও রেলস্টেশনে ঢোকার আগে এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা প্রায় ২০ ফুট রেললাইনের পাত খুলে ফেলায় তারাকান্দি থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।

গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মো. হানিফ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি এখনো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। তবে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে জেনেছি, রেললাইনের পাত খুলে ফেলায় ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ময়মনসিংহের পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমাদের সদস্যরা রয়েছেন। রেললাইনের প্রায় ২০ ফুট অংশ খুলে ফেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে এবং দ্রুত রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা আন্দোলনে নামেন। এর পর থেকে রেললাইন অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: তহবিলের হিসাব না পেয়ে দৃশ্যত স্থবির রাকসু

  • ১৯৯০-২০১৩ পর্যন্ত তহবিলের হিসাব দিতে পারছে না প্রশাসন।
  • বিতর্ক উৎসব ও অনলাইন সেবার মতো নানা কাজ হয়েছে: ভিপি জাহিদ
দীন ইসলাম, রাবি
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের দুই মাস পার হলেও ইশতেহার বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাকসু প্রতিশ্রুত সংস্কারের বদলে জাতীয় রাজনীতি ও প্রতীকী কর্মকাণ্ডে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে প্রতিনিধিদের দাবি, প্রশাসন রাকসুর তহবিলের সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা যথাযথভাবে অগ্রসর হতে পারছেন না।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর গত ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৬ অক্টোবর শপথগ্রহণ করেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তবে দুই মাস পার হয়ে গেলে এখনো রাকসু তহবিলের হিসাব দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০১৩ সালের পর থেকে হিসাব দিতে পারলেও ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ের তহবিলের কোনো হিসাব দিতে পারছে না প্রশাসন। এ বিষয়ে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর দেখি কোনো ফাইল, কোনো হিসাবই ছিল না। শূন্য থেকে পুরো ভিত্তি গড়ে তুলতে হয়েছে।’

রাকসুর ভিপি ও এজিএসসহ ২৩ পদের মধ্যে ২০ জনই শিবিরসমর্থিত প্যানেলের। এই প্যানেলের ইশতেহারে ১২ মাসে ২৪টি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তহবিলের যথাযথ হিসাব দিতে না পারায় কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন রাকসু প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পরই তাঁরা প্রশাসনকে তহবিলের হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রশাসন ১৫ দিনের সময় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেওয়ার কথা জানালেও শেষ পর্যন্ত তা দিতে পারেনি।

রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই বিতর্ক উৎসব, মাঠ সংস্কার, পানির ফিল্টার স্থাপন ও অনলাইন সেবাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। হয়তো অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কাজের গতি আশানুরূপ নয়। তবে রাকসুর কাজ বাদ দিচ্ছি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে এগুলো নিয়ে কেউ কাজ করেনি। এখন কাজ হচ্ছে এবং সবকিছু আস্তে আস্তে সামনে আসবে। ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্টগুলো জমা করতে আরও সময় লাগবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত