Ajker Patrika

রাজশাহীতে সমবায় সমিতির টাকা তছরুপ, ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ১৮
রাজশাহীতে সমবায় সমিতির টাকা তছরুপ, ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজশাহীতে একটি সমবায় সমিতির লাখ লাখ টাকা তছরুপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতি বছর এই সমিতি শুধু ভাড়া বাবদই প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা আয় করে থাকে। কিন্তু বছরের পর বছর নিরীক্ষার সময় আয়ের হিসাব তুলে ধরা হয় কম। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখানো হয়, সমিতির আয়-ব্যয়ের টাকার অঙ্ক সমান। এ নিয়ে সমিতিরই একজন সদস্য আদালতে মামলা করেছেন। বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা এ মামলায় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ চার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

সমিতিটির নাম রাজশাহী রিফিউজি কো-অপারেটিভ স’মিল লিমিটেড। এই সমিতির বয়স ৭১ বছর। ১৯৫২ সালে সমিতিটি নিবন্ধন পায়। এর নিবন্ধন নম্বর-২২। আইডি নম্বর ৮১২২০০৩৯১। এটি মূলত ভারত থেকে রাজশাহীতে আসা তৎকালীন মুহাজির বা রিফিউজি কাঠ মিল ব্যবসায়ীদের সমিতি। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের জেলা প্রশাসক রাজশাহী নগরীর গোরহাঙ্গা এলাকায় প্রায় সাড়ে ১৪ কাঠা খাস জমি সমিতিটিকে ইজারা দেয়। এখনো ওই ইজারা চলমান। রাজশাহী নিউমার্কেট সংলগ্ন জমিটি প্রধান সড়ক লাগোয়া। এটি এখন শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়ে উঠেছে।

এই জমিতেই কয়েকটি দোকানপাট ও কার্যালয় নির্মাণ করে রাজশাহী রিফিউজি কো-অপারেটিভ স’মিল লিমিটেড। প্রতি মাসে এসব দোকানপাট ও কার্যালয় থেকে ভাড়া ওঠে। সেই ভাড়ার টাকাই তছরুপ করা হয় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল সমিতির সহসভাপতি মো. সোবহান বাদী হয়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার আমলি আদালতে মামলাটি করেন।

মামলায় সমিতির সভাপতি আবদুল জাব্বার আনসারী, সাধারণ সম্পাদক আসলাম পারভেজ, সদস্য সারফারাজ আব্বাস ও জুলেখা আব্বাসকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে আবদুল জাব্বার আনসারী ও আসলাম পারভেজ সম্পর্কে সহোদর। আর জুলেখা ও সারফারাজ হলেন সভাপতি জাব্বার আনসারীর সন্তান। ছয় সদস্যের কমিটির মধ্যে এই পরিবারটিই চারটি পদ দখল করে আছে। আর তাদের বিরুদ্ধেই সমিতির বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, শুধু ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ দুই অর্থবছরেই মামলার আসামিরা দোকান ভাড়ার ১৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ও জামানতের ১২ লাখ ৯৪ হাজার ৯০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মামলা অনুযায়ী, সমিতি জিয়াউল হক নামের এক ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে বছরে ৩৬ হাজার, খাজা বাবা নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ২০ হাজার, একটি দোকান থেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার, একটি বিরিয়ানির দোকান থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার ও আরেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে থাকে। প্রতি অর্থবছরে সমিতি ভাড়া থেকেই ৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আদায় করে থাকে।

এ টাকা সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্য দুই সদস্য ইচ্ছেমতো লুটপাট করা হয়। শুধু তা-ই নয়, সমিতির এই চার সদস্যই অনিয়ম করে সমিতিতে তাদের শেয়ারের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে সভাপতি আনসারীর শেয়ারের সংখ্যা ছিল ৫৮০টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৬৮০টি করে নেওয়া হয়। একইভাবে ছেলে সারফারাজ ও মেয়ে জুলেখার ১৩০টি করে শেয়ার ছিল। তা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৩০টি করে নেওয়া হয়। জামাতা সাব্বির আহমেদের কোনো শেয়ার ছিল না। হঠাৎ কাগজে-কলমে তাঁর শেয়ার ১ হাজার ২০০টি করা হয়। কীভাবে তাঁদের পরিবারের শেয়ার রাতারাতি বেড়ে গেছে তা সমিতির অন্য সদস্যরা জানেন না। এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি বলে অভিযোগ সমিতির অন্য সদস্যদের।

সমিতির সদস্য মো. আলমগীর বলেন, এই সমিতিতে মোট সদস্য আছেন ৪৫ জন। সমিতির আয় সদস্যদের কল্যাণে তাঁদের মাঝে বণ্টনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি-সম্পাদক তা করেন না। সমিতির আয়-ব্যয় ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে করার নিয়ম থাকলেও সেটাও করা হয় না। তাঁরা আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাবও কাউকে দেন না। ইচ্ছেমতো ব্যয় দেখিয়ে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর সমিতির লাখ লাখ টাকা তছরুপ করা হচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে সমিতির সভাপতি আবদুল জাব্বার আনসারী বলেন, ‘আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক না। সহসভাপতি মামলা করেছেন তা ঠিক। কিন্তু সবকিছু তো তাঁকে নিয়েই করা হয়েছে।’ পরিবারের সদস্যদের শেয়ার নিয়ম মেনে বাড়ানো হয়েছে বলেও দাবি তাঁর।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতি অর্থবছরে শুধু ভাড়া থেকেই সংগঠনটি ৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আয় করে। কিন্তু সমবায় কর্মকর্তা যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন, তাতে এই আয় দেখানো হয় না। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩ টাকা আয় দেখানো হয়। আর খরচও দেখানো হয় ৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩ টাকা। সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষরিত এই আয়-ব্যয় হিসাব বিবরণী অনুমোদন দেন নিরীক্ষা কর্মকর্তা ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন থানা সমবায় কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরেও ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৩ টাকা আয় এবং একই পরিমাণ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের স্বাক্ষর করা হিসাব বিবরণী অনুমোদন দেন নিরীক্ষক ও মেট্রোপলিটন থানা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক বিউটি রানী সাহা।

মামলার বাদী মো. সোবহান বলেন, ‘সমবায় কর্মকর্তাকে “ম্যানেজ” করে বছরের পর বছর নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। এভাবে সমিতির আয়-ব্যয় সমান দেখানো হয়। বাস্তবে ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেক বেশি। এই টাকা সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ কয়েকজন আত্মসাৎ করেন।’

জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসলাম পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব হিসাবই তো অডিট রিপোর্টে দেওয়া যায় না। বোঝেনই তো! নিজেদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়।’

বছর বছর আয়-ব্যয় সমান দেখিয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতের ব্যাপারে মেট্রোপলিটন থানা সমবায় কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন বলেন, ‘সভাপতি-সম্পাদক যে হিসাব বিবরণী দেন, যাচাই-বাছাই করেই সেটা অনুমোদন দেওয়া হয়। এর বেশি কোনো আয় হয় কিনা তা জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাঈদ আল নোমানের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
কর্মী-সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান বিএনপি প্রার্থী সাঈদ আল নোমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
কর্মী-সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান বিএনপি প্রার্থী সাঈদ আল নোমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনের বিএনপির প্রার্থী সাঈদ আল নোমানের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থীসহ সর্বোচ্চ ৫ জন উপস্থিত থাকতে পারবেন, এমন নির্দেশনা থাকলেও শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেছেন তিনি।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে মনোনয়ন দাখিল করতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যান সাঈদ আল নোমান। এ সময় তাঁর সঙ্গে শতাধিক নেতা-কর্মী ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশ বাধা দিলে দুই পক্ষের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে সাঈদ আল নোমান কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। তবে শুধু সাঈদ আল নোমানই নন, মনোনয়ন জমা দিতে আসা প্রায় সব প্রার্থীই কর্মী-সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে এসেছেন।

এ ব্যাপারে সাঈদ আল নোমান বলেন, ‘এটা একদিকে যেমন প্রাপ্তির, অন্যদিকে বিব্রতকরও। এটা বাবার সময় থেকে দেখে আসছি।’ এমন পরিস্থিতির জন্য বিব্রতবোধ করার কথাও জানান তিনি।

নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার সময় প্রার্থী বা তাঁর প্রস্তাবক, সমর্থকসহ পাঁচজনের বেশি উপস্থিত থাকতে পারবেন না; এ সময় কোনো ধরনের মিছিল, শোডউন করলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. মো. জিয়াউদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাঁর একান্ত সচিব মো. রিদুয়ানুল ইসলাম জানান, ‘স্যার (বিভাগীয় কমিশনার) মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। এই বিষয়ে তিনি পরে কথা বলবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের অবরোধ থেকে ‘খেলনা পিস্তলসহ’ যুবক আটক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আটক আরাফাত জামান। ছবি: ডিএমপি
আটক আরাফাত জামান। ছবি: ডিএমপি

রাজধানীর শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি থেকে ‘খেলনা পিস্তলসহ’ এক যুবককে আটক করা হয়েছে। আজ সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ওই যুবককে আটক করা হয়।

আটক যুবকের নাম মো. আরাফাত জামান (৩৯)। তিনি ধানমন্ডীর জিগাতলা এলাকার বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কর্মসূচি চলাকালে ইনকিলাব মঞ্চের স্বেচ্ছাসেবক ও উপস্থিত সাধারণ জনতা সন্দেহজনক আচরণের কারণে ওই যুবককে আটক করে। পরে তাঁর হেফাজত থেকে একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয় এবং পরে পুলিশে দেওয়া হয়।

উদ্ধার করা পিস্তল। ছবি: ডিএমপি
উদ্ধার করা পিস্তল। ছবি: ডিএমপি

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে অবরোধ কর্মসূচি থেকে ইনকিলাব মঞ্চের স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ জনতা খেলনা পিস্তলসহ একজনকে আটক করে। ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাড়কাঁপানো শীতে চা-শ্রমিকদের দুর্ভোগ, পরনে নেই গরম কাপড়

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
ঠান্ডার মধ্যে শীতবস্ত্র ছাড়াই কাজে বের হয়েছেন বাগানের চা-শ্রমিক নারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠান্ডার মধ্যে শীতবস্ত্র ছাড়াই কাজে বের হয়েছেন বাগানের চা-শ্রমিক নারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পৌষের মাঝামাঝিতে হাড়কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজারের জনজীবন। তীব্র শীতে খেটেখাওয়া মানুষ, বিশেষ করে জেলার ৯২টি চা-বাগানের শ্রমিকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই কাজে যেতে হচ্ছে তাঁদের। শীত থেকে বাঁচার মতো প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ও নেই শ্রমিকদের। একই সঙ্গে ঠান্ডার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বাগানের বয়স্ক থেকে শিশুরা।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রোববার ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে।

সূর্যের দেখা না মেলায় ও ঘন কুয়াশা থাকায় মৌলভীবাজারে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এই ঠান্ডার মধ্যেই গাছ-গাছালিতে ঘেরা চা-বাগানগুলোয় সকাল থেকে কাজে নেমে পড়ছেন চা-শ্রমিকের। তাঁদের পরনে নেই পর্যাপ্ত গরম কাপড়। অনেকে ঠান্ডার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

চা-শ্রমিকেরা জানান, শীতের কারণে অনেক কষ্টে পড়েছেন তাঁরা। বাগান কর্তৃপক্ষ তাঁদের কোনো শীতবস্ত্র দেয় না। আর নিজেদের স্বল্প আয় দিয়ে গরম কাপড় কেনার সাধ্যও তাঁদের নেই। রাতে ঠান্ডার জন্য অনেকেই ঘুমাতে পারেন না। শীত নিবারণে ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাত কাটাতে হয়। কেউ কেউ বস্তা বিছিয়ে ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন।

শমশেরনগর চা-বাগানের চা-শ্রমিক গীতা রবিদাস ও মায়া রবিদাস বলেন, ‘এই শীতে কাজ করা অনেক কষ্টের। আমরা চা-শ্রমিকেরা কোনো শীতবস্ত্র পাই না। বাগানের শ্রমিকদের অবস্থা খুবই করুণ। ঠান্ডায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

চা-শ্রমিকনেতা সীতারাম বিন বলেন, ‘প্রতিবছর শীতের সময় চা-শ্রমিকদের বেশি কষ্ট হয়। এমনিতেই শ্রীমঙ্গলসহ পুরো মৌলভীবাজার জেলায় শীত বেশি পড়ে। এ জেলায় ৯২টি চা-বাগান রয়েছে। কোনো বাগানের শ্রমিকদের পর্যাপ্ত গরম কাপড় নেই। প্রতিদিন ঠান্ডার কারণে অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন চা-শ্রমিকেরা। বিশেষ করে শীতে বাগানের শিশু ও বৃদ্ধরা অনেক কষ্টে আছেন।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরেই এই অঞ্চলে শীতের দাপট বেড়েছে। বিশেষ করে রাতে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও কয়েক দিন একই রকম তাপমাত্রা থাকবে।

শীতের দাপট বাড়ার সঙ্গে ঠান্ডার রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। অনেকেই চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে ছুটছেন। কেউ প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান বলেন, শীতের মধ্যে সবাইকে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরতে হবে। বিশেষ করে এ সময় শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে বেশি করে গরম কাপড় পরিধান করে রাখতে হবে।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। কেউ আবেদন করলে তাদের শীতবস্ত্র দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে সদস্যপদ স্থগিত জামায়াত নেতার মনোনয়নপত্র দাখিল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে সদস্যপদ স্থগিত হওয়া জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। একই আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কামরুল হাসান মিলন।

এ ছাড়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আখতারুল আলম ফারুক, খেলাফত মজলিসের মো. রফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।

অপর দিকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন প্রয়াত প্রকৌশলী শামছ উদ্দিনের স্ত্রী অধ্যক্ষ আখতার সুলতানা, ছেলে তানভীর আহমেদ রানা ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল করিম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম জানান, এই আসনে নির্বাচনের জন্য ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, তাঁর মধ্যে আটজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কামরুল হাসান মিলনকে মনোনয়ন দিলে অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সমর্থকেরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেন। তাঁরা জামায়াত মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন ও অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সমর্থনে ‘ফুলবাড়িয়া ঐক্যবদ্ধ জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ-মিছিল করেন।

এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সদস্যপদ (রুকনিয়াত) স্থগিত করে জামায়াতে ইসলামী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দল আমাকে মূল্যায়ন না করলেও মানুষের ভালোবাসায় প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে সাধারণ মানুষ আমার ওপর আস্থা রাখবে।’

উল্লেখ্য, একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসন। মোট ভোটার ৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার ৪৭৯ জন পুরুষ ও ২ লাখ ৭ হাজার ৩৬২ জন নারী এবং হিজড়া দুজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত