Ajker Patrika

পত্রিকার হকার থেকে আইটি প্রশিক্ষক আলমগীর

জিল্লুর রহমান
পত্রিকার হকার থেকে আইটি প্রশিক্ষক আলমগীর

মান্দা (নওগাঁ) : শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা; প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে ছুটতে হয়েছে বাসস্ট্যান্ডে। এর পর পত্রিকা সংগ্রহ করে পাঠকের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাঁর নিত্যদিনের কাজ। এ পেশার আয় দিয়েই চলত পাঁচজনের সংসার। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় কিশোর বয়সেই নামতে হয়েছিল জীবনযুদ্ধে। তবুও হাল ছাড়েননি। সততা, আত্মবিশ্বাস, আর কঠোর পরিশ্রম এনে দিয়েছে সফলতা। এক সময়ের পত্রিকা বিক্রেতা সেই কিশোর আলমগীর কবির এখন সফল আইটি উদ্যোক্তা।

আলমগীর কবিরের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলায়। উপজেলার চৌবাড়িয়া বাজারের কাছে মালশিরা গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে তিনি। তিন ভাইবোনের মধ্যে আলমগীর সবার বড়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা ফয়েজ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারে নেমে আসে চরম দুর্দিন। আলমগীর তখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভাবের কারণে সেখানেই লেখাপড়ার ইতি টানতে হয়েছে। কিশোর বয়সেই হাল ধরতে হয়েছে সংসারের। টাকা-পয়সা না থাকায় কী করবেন ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে পরিচয় ঘটে জাহাঙ্গীর আলম নামে এক পত্রিকা বিক্রেতার সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই পত্রিকার হকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আলমগীর। আজ তিনি নিজ এলাকার বহু তরুণের ভরসাস্থল। পত্রিকার হকার থেকে শুধু অধ্যবসায়ের গুণে আইটি প্রশিক্ষকের মতো ভূমিকায় নিজেকে গড়ে নিতে পেরেছেন তিনি।

আলমগীরের পথটা সহজ ছিল না। কোনো উদ্যোক্তারই থাকে না। পত্রিকা বিক্রির আয়ের টাকায় অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, ছোট ভাইবোনের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালানো দুরূহ হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে অন্যের দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন। তবুও হাল ছাড়েননি। সততা, নিষ্ঠা, আর কঠোর পরিশ্রমে আজ তিনি সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। আর এ ক্ষেত্রে তাঁর সহায় হয়েছে পত্রিকাই। পড়ার অভ্যাস যে ছাড়তে পারেননি তিনি। অবসর সময়ে সব ধরনের পত্রিকা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তেন। এক সময় কম্পিউটার নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি–সংক্রান্ত পাতাগুলো পড়া শুরু করেন। গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো সংগ্রহেও রাখতেন।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপে আলমগীর কবির জানালেন, একটু একটু করে জানতে গিয়ে কম্পিউটার বিষয়ে আগ্রহ বাড়তেই থাকে। একপর্যায়ে এ নেশা তাঁকে পাগল করে তোলে। অবশেষে এক ভাইয়ের শরণ নেন, চৌবাড়িয়া বাজারে যার কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। পত্রিকা বিলি শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই বড় ভাইয়ের দোকানে বসেই নিয়মিত কম্পিউটার শেখা শুরু করেন। তীব্র আগ্রহের কারণে শিখতে সময় লাগে না। দ্রুত উন্নতি হয় তাঁর। দক্ষতা বাড়াতে পত্রিকার আইটি পাতাগুলো তাঁর কাজে লাগে। কিন্তু নিজের কম্পিউটার না থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কাজ করতে পারছিলেন না। আর কম্পিউটার কেনার টাকা তো নেই তাঁর কাছে।

আলমগীর কবির বলেন, পত্রিকা বিলির সূত্র ধরে এক সময় গ্রামীণ ব্যাংক চৌবাড়িয়া শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। কম্পিউটার কেনা ও শেখার আগ্রহের কথা শুনে তিনি আলমগীরকে ২০ হাজার টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। যথাসময়ে ঋণ পেয়েও যান। এর সঙ্গে মায়ের এক জোড়া হাতের বালা বিক্রির টাকায় ২০০৪ সালের দিকে কিনে ফেলেন পুরোনো একটি কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ক্যামেরা। চৌবাড়িয়া বাজারেই শুরু করেন ব্যবসা। পরে এর সঙ্গে যুক্ত করেন ফটোস্ট্যাস্ট মেশিনও। এর পর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

ব্যবসার আয় দিয়ে ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম বাঁধনকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করান আলমগীর। বর্তমানে তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করছেন। ক্রমেই ব্যবসার প্রসার ঘটায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের খোঁজ পেয়ে ২০১০ সালে ‘মা কম্পিউটার’ নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। পর্যায়ক্রমে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যুক্ত করা হয় ২০টি কম্পিউটার। ২০১২ সালে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ডেটাবেজ প্রোসেসিংয়ের অনুমোদন পান।

এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি যুবককে প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন যুবক বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছেন। বহু তরুণের কর্মসংস্থানের সহায় হতে পেরে এক ধরনের আনন্দবোধ করেন আলমগীর। বললেন, ‘বর্তমান আমার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এলাকার ৪০ জন শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়ে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে। মার্কিন একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সিপিএ, ই–মেইল, মার্কেটিং, গ্রাফিকস ডিজাইনসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন তাঁরা। এ থেকে যা আয় হয়, তার ৬০ শতাংশই কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া দোকান থেকে কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোকপি, ছবির কাজ, বিকাশ লেনদেন, ফ্লেক্সিলোডসহ ইন্টারনেটের যাবতীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি মাসে এখন অন্তত ১ লাখ টাকা আয় হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচি ঘোষণা রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। রাবি প্রশাসন দেড় বছর সময় পেয়েছে, এখন সময় বিপ্লবীদের।’ তিনি লেখেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আরো একবার শেখালো লীগের প্রতি নমনীয়তা আমাদের জন্য কতটা বিভৎস হতে পারে।’ আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত থাকার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন রাকসু জিএস। অভিযুক্তদের নাম, কর্মস্থল, বর্তমান পদবি, ঠিকানা এবং ফ্যাসিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণাদি সরাসরি তার ফেসবুক ইনবক্স অথবা নির্দিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক পোস্টে তিনি আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফারসি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তাঁর জমিদারি ছিল।

হাসন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার’; ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে’; ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’; ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’; ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শনচিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পটুয়াখালীর দুমকী: পানির স্তর নেমে গেছে তীব্র সংকটে মানুষ

  • উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটির বাসিন্দারা চরম পানিসংকটে ভুগছে
  • প্রায় দুই বছর ধরে এ সংকট দেখা দিয়েছে; গভীর নলকূপে পানি মিলছে না
দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫২
পটুয়াখালীর দুমকী: পানির স্তর নেমে গেছে তীব্র সংকটে মানুষ

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটির বাসিন্দারা চরম পানিসংকটে ভুগছে। তারা জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে এ সংকট দেখা দিয়েছে। শুকনো মৌসুমে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করতে পারছে না এলাকাবাসী।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের আলগীসহ কয়েকটি গ্রাম, লেবুখালী ইউনিয়নের লেবুখালীসহ উত্তর এলাকা, আংগারিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম আংগারিয়াসহ পশ্চিম এলাকা, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের দুমকী, শ্রীরামপুর, উত্তর দুমকী এলাকায় দুই বছর ধরে শুকনো মৌসুমে হস্তচালিত গভীর নলকূপে পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এসব এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানায়, এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে অভিযোগ জানালে কর্তৃপক্ষের লোকজন গিয়ে দেখে জানিয়েছেন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে গভীর নলকূপে পানি উঠছে না।

এ বিষয়ে কথা হয় শাহজাহান খান নামের এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে। শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুকনো মৌসুমে এলাকার খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পানির সংকট দেখা দেয়। অন্যদিকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের পীরতলা জামলা ও আংগারিয়া খালটিতে ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় পানির প্রবাহ ব্যাহত ও খালের পানি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় লোকজন পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এ অবস্থায় শুকনো মৌসুমে টিউবওয়েলের পানির অভাবে অনেকে ব্যবহার অনুপযোগী পানি পান করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

জামাল হোসেন নামের এক শিক্ষক বলেন, শুকনো মৌসুম এলেই কলেজশিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা পানির সমস্যায় ভোগেন। এ সময় উপায় না পেয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হয়।

পশ্চিম আংগারিয়ার বাসিন্দা রিনা বেগম বলেন, গভীর নলকূপ বসিয়েও পানির সংকটে ভুগতে হচ্ছে। শুকনো মৌসুম শুরু হলেই পানি পাওয়া যায় না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব এলাকায় ৮০০ থেকে ১ হাজার ফুট গভীরে টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

দুমকী উপজেলায় সরকারিভাবে ১ হাজার ৫৩০টি টিউবওয়েল এবং বেসরকারিভাবে ১ হাজার টিউবওয়েল বসানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া এলাকাবাসী ব্যক্তিগত খরচে নিজ নিজ বাসায় টিউবওয়েল বসিয়ে মোটর যুক্ত করেও পানি তুলতে পারছে না।

পানিসংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নিপা আক্তার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইতিমধ্যে হস্তচালিত নলকূপের পরিবর্তে সাবমারসিবল পাম্প বসানোর জন্য এলাকাবাসীর স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত