Ajker Patrika

লিচুর রাজধানীতে ফলন বিপর্যয়

  • ঈশ্বরদীতে অর্ধেকের বেশি গাছে মুকুল আসেনি, ঝরে পড়ছে গুটি
  • এবার ফলন ৭০ শতাংশ কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে
  • বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ফলন কম—এটা গুজব: ফল বিজ্ঞানী
সাইফুল মাসুম, ঢাকা ও খোন্দকার মাহাবুবুল হক, ঈশ্বরদী
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ২২
লিচুগাছে কাঙ্ক্ষিত মুকুল আসেনি। তবে ফলন্ত লিচুগুলো যাতে ঝরে না পড়ে, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাগানমালিকেরা। গত শুক্রবার পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর পশ্চিমপাড়ার একটি লিচুবাগানে। ছবি: আজকের পত্রিকা
লিচুগাছে কাঙ্ক্ষিত মুকুল আসেনি। তবে ফলন্ত লিচুগুলো যাতে ঝরে না পড়ে, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাগানমালিকেরা। গত শুক্রবার পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর পশ্চিমপাড়ার একটি লিচুবাগানে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে রসালো লিচুর স্বাদ নেওয়ার সুযোগ এবার কম হতে পারে।

চাষিরা বলছেন, কোনো কোনো এলাকায় অর্ধেকের বেশি গাছে মুকুল আসেনি। আবার অনেক গাছের গুটি ঝরে গেছে। কিছু গাছের লিচু ফেটে গেছে। এ নিয়ে লিচুচাষি, বাগানের মালিক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভুগছেন দুশ্চিন্তায়।

জানতে চাইলে বারির (ফল বিভাগ) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মসিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক এলাকায় এবার লিচুর ফলন কম হবে। এর প্রধান কারণ আবহাওয়া। সাধারণত শীতের পরে গরম ধীরে ধীরে বাড়ে। এবার হঠাৎ গরম, হঠাৎ শীত—এমন বিরূপ আবহাওয়ার কারণে লিচুর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঈশ্বরদীতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কিংবা মোবাইল ফোনের টাওয়ারের কারণে লিচু উৎপাদন কম হচ্ছে—এটা গুজব বলে মন্তব্য করেছেন এই ফল বিজ্ঞানী।

দেশের লিচু উৎপাদনকারী শীর্ষ পাঁচ জেলার একটি পাবনা। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলাকে লিচুর রাজধানী বলা হয়। নানা প্রজাতির লিচুর ফলন হয় এখানে। কিন্তু এবার লিচু উৎপাদনের চিত্র ভিন্ন। ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ও সাহাপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি বাগান ঘুরে জানা গেছে, ৭০-৭৫ শতাংশ বাগানে এবার লিচুর মুকুল নেই। ৩০টি গাছের মধ্যে ৫টিতে ফলন্ত লিচুর দেখা মিললেও সংখ্যায় অনেক কম। যেসব গাছে মুকুল ধরেছে, সেগুলোর গুটি ঝরে যাচ্ছে প্রচণ্ড গরমে। ছলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের লিচুচাষি ইমরান মণ্ডল বলেন, তাঁর বাগানের গাছে ৫ থেকে ১০ শতাংশ লিচু ধরেছে। তিনি জানান, বাগানের ২৮টি ফলন্ত গাছে এবার ২ হাজার ৮০০ লিচু হবে কি না সন্দেহ। অথচ গত বছর অনেক ভালো ফলন হয়েছিল।

লাভের আশায় উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়ন ও ছলিমপুরে তিন শতাধিক লিচুগাছসহ সাতটি বাগান কিনেছিলেন মানিকনগর গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী আবুল বাশার প্রামাণিক। কিন্তু এবার লিচুর কাঙ্ক্ষিত ফলন না হওয়ায় তাঁর চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। আবুল বাশার বলেন, ‘এবার লোকসান ঠেকাব কীভাবে, তা বুঝতে পারছি না। বাগানের ৩০-৩৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। এরই মধ্যে আবার খরায় ঝরছে লিচুর গুটি।’ এবার ৪-৫ লাখ টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন তিনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না জানান, প্রাকৃতিক কারণে এবার গাছে তুলনামূলক কম মুকুল এসেছে। যা এসেছে, গরমের কারণে তা-ও ঝরে পড়ছে। ফলে এবার ফলন প্রায় ৭০ শতাংশ কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এবার লিচুর দাম একটু বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। মুকুল কম আসায় ১৯ হাজার ৪৪৩ টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন হয়েছিল ৩০ হাজার ১২০ টন।

পাবনা ছাড়াও লিচু উৎপাদনকারী অন্য শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে দিনাজপুর, গাজীপুর, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হর্টিকালচার উইংয়ের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে দেশের ৩০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। বিগত দুই মৌসুমে প্রতিবছর ২ লাখ ৩০ হাজার টনের বেশি লিচু উৎপাদিত হয়েছে। এবারও একই রকম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও বিরূপ আবহাওয়ায় অনেক জেলায় উৎপাদন অনেক কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কৃষি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ১২ প্রজাতির লিচুর চাষ করা হয়। এর মধ্যে জনপ্রিয় জাতগুলো হচ্ছে বোম্বাই, বেদানা, চায়না-৩, মঙ্গলবারি, কদমি, কাঁঠালি ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ‘বারি লিচু-১ থেকে বারি লিচু-৬’ প্রজাতির লিচু উদ্ভাবন করেছে।

দেশীয় লিচুর ফলন আসে সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি। আর হাইব্রিড লিচু আসে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে।

মাগুরায়ও ফলন কম

মাগুরা প্রতিনিধি ফয়সাল পারভেজ জানান, গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মাগুরা সদরের হাজরাপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু বাগানে কোনো কোনো গাছের লিচু শুকিয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে। গাছের পাতা শুকিয়ে গেছে।

ইছাখাদা গ্রামের লিচুবাগানি ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘গরমে অধিকাংশ লিচুতে দাগ পড়ে যাচ্ছে। অনেক লিচু অপরিপক্ব অবস্থায় হলদে হয়ে ফেটে গেছে। এ রকম হলে বাজারে নেওয়ার অগে আমাদের পথে বসতে হবে।’

মাগুরা সদর কৃষি অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এই মৌসুমে লিচু একটু কম ধরেছে। তবে প্রচণ্ড গরমে সকালে ও সন্ধ্যার দিকে গাছে পানি দিতে হবে। তাহলে লিচু ঝরে পড়া এবং তাপে ফাটা কমবে।’

মাগুরা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৫৩১ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদন করা হচ্ছে। এখান থেকে ৫০০ টন লিচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে, যার আনুমানিক মূল্য ৪০ কোটি টাকা।

দিনাজপুরে ফলন ভালো

দিনাজপুর প্রতিনিধি আনিসুল হক জুয়েল জানান, বর্তমানে লিচুবাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, যে পরিমাণ ফলন এসেছে, যদি তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে আর খরার কবলে পড়তে না হয়, তবে লিচুতে এবার ভালো লাভ হবে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর সানবার্নের (তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণ) কারণে কিছু গাছের ফসল নষ্ট হয়েছিল। তবে এবার গাছে গাছে লিচুর গুটিগুলো ভালো ফলনের জানান দিচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার লিচুর আকার বড়, রসালো ও মিষ্টি হবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে দিনাজপুরের রসাল লিচু বাজারে আসতে শুরু করবে।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান রয়েছে ৯ হাজার ৯৮টি। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার ৬২৮ টন। ১৩ উপজেলায় চাষ হলেও সদর ও বিরল উপজেলার লিচু সেরা। সবচেয়ে বেশি আবাদও হয় বিরল উপজেলায়। আড়াই হাজার হেক্টরে। বাগানের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত