Ajker Patrika

পথ আটকে শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১১: ৪৭
পথ আটকে শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

এক মাস ধরে গৃহবন্দী সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী। যায় না বিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি থমকে গেছে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম। স্থানীয় এক যুবকের নিয়মিত উত্ত্যক্তে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এই ছাত্রী আতঙ্কে বাইরে যায় বন্ধ করে দিয়েছে। বিচার পেতে ওই ছাত্রীর পরিবার মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো মামলা না করতে চাপ দেয়। একপর্যায়ে ১৫ হাজার টাকাও দাবি করে পুলিশ। বাধ্য হয়ে ওই ছাত্রীর পরিবার দ্বারস্থ হয় আদালতে। 

নীলফামারীর ডিমলার উপজেলার ছাতনাই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তরা ওই ছাত্রীর পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। 

ওই ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি ডিমলা থানা-পুলিশ। মামলা রুজুর জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) নিসার আলী ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর নীলফামারী আদালতে মামলা করেন। 

অভিযুক্তরা হলেন নুর আলম (২৪), নাসিরুল ইসলাম (নাসু) (৪২), আবু তৈয়ব আলী (৪২) ও আবু সায়েদ। তাঁরা উপজেলার মধ্য ছাতনাই এলাকার বাসিন্দা। নুর আলম বেকার, নাসিরুল ইসলাম পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ছোট ভাই, তৈয়ব আলী দলিল লেখক ও আবু সায়েদ সাবেক ইউপি সদস্য। 

মামলার অভিযোগ ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার জানায়, ছাতনাই উচ্চবিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় মধ্য ছাতনাই গ্রামের নুর আলম দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিল। গত ২৬ আগস্ট বিকেলে বাড়ি থেকে কিশোর-কিশোরী ক্লাবে যাওয়ার পথে ঠাকুরগঞ্জ এলাকায় ওই শিক্ষার্থীকে জোর করে জড়িয়ে ধরে নুর। হাত ধরে টানাটানির একপর্যায়ে স্কুলছাত্রীর ওড়না খুলে ফেলেন। পরে শিক্ষার্থীর চিৎকারে নুর পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে ক্লাবে নিয়ে যান। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই নাসিরুল ইসলামসহ তৈয়ব আলী ও আবু সায়েদ নামের ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে নুর আলমের পক্ষ নিয়ে এ বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হুমকি দেন। তখন সহপাঠীরা ওই ছাত্রীকে বাড়িতে নিয়ে যায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। অভিযোগের তিন দিন পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় তদন্ত করতে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘পুলিশি তদন্তের পর মামলা রুজু করতে আমরা অন্তত সাতবার থানায় গিয়েছি। সেখানে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হতো। পরের দিন আবার থানায় যাই। একপর্যায়ে মামলার তদন্তকারী এসআই নিশার আলী আমাকে মামলা না করার জন্য চাপ দেন। তিনি আমাকে বলেন, “মামলা করে লাভ কি? আসামি পক্ষ দুই লাখ টাকা দেবে আপস করেন।” তাঁর কথায় রাজি না হয়ে মামলা করতে চাইলে খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন এসআই এবং শর্তজুড়ে দেন আসামিকে আমাকেই ধরিয়ে দিতে হবে। এরপর আমি সেখান থেকে বাড়ি চলে যাই। পরে ঘটনার ১০ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর নীলফামারী আদালতে অভিযোগ দায়ের করি। এখনো তদন্তে আসেনি।’

তিনি অভিযোগ করেন, আদালতে মামলা করায় এসআই নিসার আলী নসরুল, তৈয়ব, সায়েদসহ অভিযুক্ত যুবক তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘আমাদের মানসিক অবস্থা খুবই বিপর্যস্ত। আমার মেয়েও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে ট্রমার মধ্যে চলে গেছে। এদিকে প্রভাবশালীরা মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। বখাটে নুর ও লোকজন আমার মেয়ের মুখে অ্যাসিড নিক্ষেপসহ তাকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে। বখাটেদের ভয়ে এক মাস স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় মেয়েটি। পুলিশ একটু আন্তরিক হলে আমার মেয়ে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেত।’ 

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে বখাটের ভয়ে স্কুলে যাইতে পারতেছি না। ওই বখাটে যদি আবার আসে। আপনারা আমার স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’ 

কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষক সোহেল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তখন ক্লাবেই ছিলাম। চিৎকার শুনে তাড়াহুড়ো করে গিয়ে দেখি নুরকে অনেক লোকজন ঘিরে ধরে রেখেছে। ওই ছাত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছে। অনেক কষ্টে তার কাছে জানতে পারি, তাকে নুর অশ্লীল কিছু করার চেষ্টা করেছেন। আটক নুর আলমও অপরাধ স্বীকার করেন। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরে ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রশিদা বেগম ও স্থানীয় কয়েকজন নুরকে শাসিয়ে ছেড়ে দেন।’ 

অন্য শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা বলছেন, ‘মহিলা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কিশোর-কিশোরী ক্লাবে নারী নির্যাতন, ইভ টিজিং, যৌন হয়রানি প্রতিরোধসহ ১৭টি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। অথচ এই ক্লাবের শিক্ষার্থীই যৌন হয়রানির শিকার হলো। তাহলে এখানে পাঠিয়ে কি লাভ?’ 

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পুরবী রানী জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে তিনি জানতেন বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ছাতনাই উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনার পর থেকে মেয়েটি আজও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই নিসার আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগ তদন্তের পর মামলা রুজু করার জন্য আমিই তাদের থানায় আসতে বলেছি। কিন্তু তারা আসেনি।’ 

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে মামলার তদন্ত অফিসার আমাকে জানায় তাঁরা মামলা করবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘন কুয়াশার কারণে ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস চলছে। পঞ্চগড়ের তেলিপাড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা চার দিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ভোর থেকেই জেলার সড়ক ও জনপথ ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে। কনকনে ঠান্ডা আর কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর প্রভাব পড়েছে কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে হাসপাতালগুলোতে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। ভোরে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।

নাইট কোচের চালকেরা জানান, ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। রফিকুল আলী নামের এক চালক বলেন, ‘এত কুয়াশায় সাবধানে গাড়ি চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হয়। কুয়াশায় সামনে কিছুই বোঝা যায় না।’

আরেকজন চালক জানান, কুয়াশার কারণে গতি কমিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

শীতের প্রভাবে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর ভিড়। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি এ সময় গরম কাপড় ব্যবহার, উষ্ণ খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। গত শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও পরবর্তী দিনগুলোতে তা আবার কমে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত শীতবস্ত্রগুলো প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিরোজপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
মাহমুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেন। মোবাইলে আলাপকালে মাহমুদ হোসেন নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাহমুদ হোসেন ভান্ডারিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ভাতিজা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে এই আসনে বিএনপির একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠেছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়।

উল্লেখ্য, পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আহমদ সোহেল মঞ্জুর সুমন। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই মাহমুদ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমি ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিলেও ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চেতনাকে ধারণ করে সব সময় দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, ‘পিরোজপুর-২ আসনের সাধারণ মানুষ আমাকে এই আসনে নেতৃত্বে দেখতে চান। জনগণের সেই প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপি একটি গণমানুষের দল। সেই গণমানুষের চাওয়াকেই গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগোতে চাই।’

মাহমুদ হোসেন জানান, শিগগির তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাঠিতে ভর দিয়ে করতে হয় যাতায়াত, একই পরিবারে ছয় প্রতিবন্ধীর মানবেতর জীবন

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে একটি পরিবার। পরিবারটির ছয় সদস্যই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের আজিম বাড়ির বাসিন্দা প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে শুধু একজন সুস্থ। বাকি ছয় সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।

পরিবারে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। একমাত্র সুস্থ সন্তান মিসু আক্তার প্রিয়া (৩৩) গৃহস্থালির কাজ করেন। অন্য ছয় সন্তানের কেউই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক জীবন কিংবা দাম্পত্য জীবনে পা রাখতে পারেননি। অর্থাভাবে নিয়মিত চিকিৎসাও হচ্ছে না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের। ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থাও নেই। ফলে পুরো পরিবারের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানেরা হলেন নুরুল ইসলাম (৪১), তাজুল ইসলাম (৩৯), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৪), মো. আবদুর রব (৩২) ও রেহানা বেগম (২৩)। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সবাই স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও ছয় থেকে সাত বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।

জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আবু মনুহর দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় দেড় বছর আগে স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে পরিবারটির দুর্দশা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে তাঁরা নিজের ঘরে শিশুদের খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে কোনোরকমে দিন চালাচ্ছেন।

প্রতিবন্ধী আবদুর রব বলেন, ‘শরীরে শক্তি নেই, হাঁটতেও পারি না। তাই ভিক্ষাও করতে পারি না। ঘরে বসে শিশুখাদ্য বিক্রি করি। দিনে ৭০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। আটজনের সংসারে অনেক সময় না খেয়েই থাকতে হয়।’

নুরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। সরকারি বা বেসরকারি আর কোনো সহযোগিতা পাই না। বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা চাই।’

প্রতিবন্ধী সন্তানদের মা ফুল বানু বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক সন্তান বড় করতেই এখন অনেক কষ্ট। সেখানে পরপর ছয়টি প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করছি, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। আমি এখনো বিধবা ভাতার কার্ড পাইনি।’

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ, বিল্লাল হোসেন মানিক ও রাজনীতিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পরিবারটি চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহায়তা তারা পাচ্ছে না। তাঁরা পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসেছেন। কেউ বাদ পড়লে যাচাই-বাছাই করে সুবিধার আওতায় আনা হবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। হাসপাতালে এলে বিশেষভাবে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার জানান, বিষয়টি দুঃখজনক, খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে আগুন: দগ্ধ আরেক সন্তানের মৃত্যু

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর বড় মেয়ে সালমা আক্তার স্মৃতিও (১৭) মারা গেছে। এর আগে একই ঘটনায় তাঁর ছোট মেয়ে আয়েশা বেগমের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল দুজনে।

গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতির মৃত্যু হয়। বেলাল হোসেন নিজেও অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন। রাত ১টার দিকে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর রাতে ভবানীগঞ্জের চরমনসা গ্রামের সুতারগোপ্তা এলাকায় দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেনের বসতঘরে আগুন দেয়। এতে ঘর ও আসবাব পুড়ে যায় এবং আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই ছোট মেয়ে আয়েশা বেগমের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় বেলাল হোসেন, তাঁর বড় মেয়ে স্মৃতি এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেজো মেয়ে সায়মা আক্তার বিথি (১৪) দগ্ধ হয়। বেলাল হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। স্মৃতি ও বিথিকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের তথ্যমতে, স্মৃতির শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং বিথির প্রায় ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে বিথিকে পরদিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে স্মৃতি পাঁচ দিন ধরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায়।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বেলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করা হয়েছে, এর মধ্যে দুটি বন্ধ এবং একটি খোলা অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে পোড়া বাড়ি পরিদর্শন করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বলেন, ঘটনার দিন আগুনে পুড়ে আয়েশার মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতিও মারা গেছে। নিহত সন্তানদের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত