Ajker Patrika

মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েও শিমা ও শশীর স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা

হারুনূর রশিদ, রায়পুরা (নরসিংদী)
শিমা আক্তার ও নুসরাত জাহান শশী। ছবি: সংগৃহীত
শিমা আক্তার ও নুসরাত জাহান শশী। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরার নুসরাত জাহান শশী ও শিমা আক্তার জীবনের নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে তাঁদের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন পূরণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্থিক অসচ্ছলতা।

শিমা আক্তার ৭৬.২৫ নম্বর পেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। উপজেলা সদরের মির্জাপুর গ্রামের ভ্যানগাড়িচালক মো. বাদশা মিয়া ও লায়লা বেগম দম্পতির বড় মেয়ে শিমা। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। বাবা ভ্যানগাড়ি চালান এবং মা আয়ার কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি অসাধারণ আগ্রহ ছিল তাঁর। দারিদ্র্যের মধ্যেও তিনি পঞ্চম, অষ্টম, এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল অর্জন করেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। শিমার সাফল্যে তাঁর পরিবার ও গ্রামবাসী আনন্দিত হলেও তাঁর মেডিকেলে ভর্তি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

শিমা আক্তার বলেন, ‘আগে থেকেই আমার স্বপ্ন একজন ভালো ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু আমাদের পরিবারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে জানি না, আমার স্বপ্ন পূর্ণ হবে কি না। কলেজে পড়ার সময় টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারতাম না। বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ হেঁটে যাতায়াত করতে হতো। স্ট্রাগল আমার জীবনের একটা অংশ। মনে হচ্ছে, আরও একটা স্ট্রাগল করতে হবে। বাবা-মাসহ আমি নিজেও অসুস্থ হলে ভালো ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারিনি। তাঁরা কখনো সুখের মুখ দেখেননি। ডাক্তার হয়ে তাঁদের জন্য কিছু করতে চাই, পাশাপাশি আমার মতো মেধাবী গরিব মানুষের সেবা করতে চাই। সবার সহযোগিতা পেলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।’

শিমার বাবা মো. বাদশা মিয়া বলেন, ‘মেডিকেলে ভর্তি খবরে এলাকাবাসীর মুখে আনন্দের হাসি, আর আমার চোখে কান্না, ঘুম নাই। আমার পক্ষে ওর মেডিকেল ভর্তির খরচ চালানো সম্ভব না। অনেক সময় নিজে না খেয়ে মেয়েকে সামর্থ্য অনুযায়ী খাওয়ানো-পরানোর চেষ্টা করেছি। তার ইচ্ছে পূর্ণ করতে পারিনি। মেয়েটা অনেক কষ্ট করে আজ এখানে পৌঁছেছে। আমি সবার দোয়া সহযোগিতা চাই, যাতে আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়।’

শিমার মা লায়লা বেগম বলেন, ‘মেয়েকে লেখাপড়া করাতে খুব কষ্ট হয়েছে। দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে তার বাবা ভ্যানগাড়ি চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালায়। একসময় মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে নিজে একটা ছোট্ট কাজ নিই; সেই কাজের সামান্য বেতন দিয়ে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। এই সাফল্য আমাদের গর্বিত করেছে। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে এখন তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আমাদের পক্ষে একা তাঁকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কেউ যদি মেয়ের পাশে দাঁড়ান, তা হলেই সম্ভব।’

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের এই মেধাবী মেয়েটির ভর্তি নিশ্চিত করতে এখনই সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত, যাতে শিমার মতো প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয় এবং দেশ ও সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারেন।’

শিমার শিক্ষক মাহমুদাবাদ রাজী উদ্দিন আহমেদ রাজু উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘দরিদ্র্য পরিবার থেকে উঠে আসা শিমা খুবই মেধাবী। সে যে আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছে, সেটা সত্যিই অভাবনীয়। তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে লেখাপড়া চালানো সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেলে তার স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে।’

এদিকে, উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মেধাবী নুসরাত জাহান শশী নানা প্রতিকূলতার মধ্যে অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এবারের পাবনা মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর বাবা মো. জিল্লুর রহমান স্থানীয় একটি ক্লিনিকে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। তাঁর আয়ে তিন মেয়ের লেখাপড়া এবং পরিবারের খরচ চালানোই দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শশী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান। এরপর মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫.২৫ নম্বর পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন।

শশীর বাবা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমি ছোট একটা চাকরি করি। অভাব-অনটনের মধ্যে জীবন চলে। মেয়ের মেডিকেল কলেজে ভর্তি এবং পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ জোগানো আমার পক্ষে অসম্ভব। সহযোগিতা পেলে আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।’

শশীর মা বলেন, ‘আমাদের মেয়ে মেধাবী। সে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

নুসরাত জাহান শশী বলেন, ‘আমি ডাক্তার হতে চাই। কারণ মানুষের সেবা করা আমার জীবনের লক্ষ্য। দারিদ্র্য আমার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের উচ্চবিত্তের মানুষের সহায়তা ছাড়া আমার পক্ষে মেডিকেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত