Ajker Patrika

আসামি ধরতে গিয়ে সংঘর্ষ: র‍্যাবের মামলায় গুলিতে নিহত বৃদ্ধের ছেলে গ্রেপ্তার

আসামি ধরতে গিয়ে সংঘর্ষ: র‍্যাবের মামলায় গুলিতে নিহত বৃদ্ধের ছেলে গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে এক আসামি ধরতে গিয়ে র‍্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলায় সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত আবুল কাসেমের ছেলে নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলায় ঘটনাস্থল থেকে আটক পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ রোববার আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় ৭০ থেকে ৮০ জন ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি। পুরো এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।

এর আগে শুক্রবার রাতে উপজেলার বরগাঁও চেয়ারম্যানপাড়ায় র‍্যাবের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার রাতে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন র‍্যাব-১১ এর উপসহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন।

এদিকে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে র‍্যাবের মামলা হওয়ার পর পুরো গ্রাম জুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা হতদরিদ্র কুটির শিল্প ও জামদানি শাড়ি বুনে নারী-পুরুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। গত দুদিন ধরে গ্রামের কুটির শিল্প ও জামদানি শাড়ি বোনা বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় তাসলিমা ও বিলকিস বেগমসহ একাধিক এলাকাবাসী জানান, গত শুক্রবার রাত ৩টার দিকে দ্বিতীয় দফা র‍্যাব সদস্যরা এলাকার প্রতিটি ঘরে তল্লাশি চালিয়ে নিহত আবুল কাসেমের ছেলে নজরুল, নাতি শ্রাবন এবং আরও স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বয়োজ্যেষ্ঠসহ ২০ থেকে ২৫ জনকে আটক করে নিয়ে যান। পরে শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা ও ইউপি সদস্যের জিম্মায় নিহত ছেলে নজরুলসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে অন্যান্যদের ছেড়ে দেয়। পুরো গ্রাম গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। তাঁদের গ্রামের অধিকাংশ নারী-পুরুষ কুটির শিল্পের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাজ করতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছেন বলে জানান তাঁরা।

নিহত আবুল কাশেমের স্ত্রী রমিজা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে র‍্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী লোক গুলি করে হত্যা করেছে। চার ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে এখন আমরা কী করব? সংসারের ভরণপোষণ চালাবে কে? আমার বড় ছেলে নজরুল ইসলাম তার মরদেহটি পর্যন্ত দেখতে পেল না। তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।’

নিহত আবুল কাসেমের ছেলে দীন ইসলাম বলেন, ‘গত শনিবার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে আমার বাবার লাশ স্থানীয় বরগাঁও কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আমাদের পুরো পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছে।’

এ বিষয়ে র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহামুদ পাশা বলেন, ‘এক নারীর গলা কাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় প্রধান সন্দেহজনক আসামি সেলিমকে বরগাঁও গ্রাম থেকে আটক করে নিয়ে আসার সময় গ্রামবাসীরা আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। র‍্যাব সদস্যরা বাধা দেওয়ায় স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে র‍্যাবের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় র‍্যাবের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২১ জন গ্রামবাসীর নামে মামলা করা হয়েছে।’

সোনারগাঁ তালতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাকির রব্বানী বলেন, ‘র‍্যাব-১১ বাদী হয়ে গ্রামবাসীদের ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এ মামলায় গত শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া নিহত আবুল কাসেমের ছেলে নজরুল, সেলিম মিয়া, হযরত আলী, জাহাঙ্গীর ও আমানুল্লাহ নামে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে সোনারগাঁ থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান উল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মামলায় র‌্যাব উল্লেখ করেছে—হত্যা মামলার আসামিকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হয় তারা। ওই সময় আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে র‌্যাব। এ ঘটনার পর সেখানে একজন গুলিবিদ্ধ বৃদ্ধ মারা যান। এতে আরেকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানতে পারে র‌্যাব। মামলায় র‌্যাব তাদের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগ করেছে।’

উল্লেখ্য, উপজেলার গজারিয়াপাড়া এলাকায় রোজিনা আক্তার নামে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গত শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও গ্রামের একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সাদা পোশাকে অভিযান চালান র‍্যাব সদস্যরা। এ সময় গ্রামের কুটির শিল্প কারিগর আবুল কাশেমের (৬৮) পেটে গুলি চালানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে গ্রামবাসীরা তাঁকে সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক হুমায়ুন কবির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি খাল দখল, অবৈধ দোকানঘর নির্মাণ

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি 
আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারি খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণকাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারি খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণকাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি খাল দখল করে অবৈধ দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক স মিলমালিকের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার রশিদ ফকিরের ব্রিজ থেকে সাহেবেরহাট সড়কের রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে আকুল বালার মালিকানাধীন স মিলের পূর্ব পাশে একটি সরকারি খালের মধ্যে প্রায় ১০০ হাত দীর্ঘ দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেন তিনি। প্রায় দুই মাস আগে নির্মাণকাজ শুরু হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে।

এরপর রত্নপুর ইউনিয়নের সরকারি ভূমি কর্মকর্তা উত্তম ব্যাপারীকে সরেজমিন পাঠিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময় দোকানঘর নির্মাণ না করার মর্মে স মিলমালিকের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও নেওয়া হয়। তবে কিছুদিন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার পর আবারও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করেছেন আকুল বালা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণ করা হলে চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানখেতে পানি সরবরাহে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অভিযুক্ত আকুল বালা বলেন, ‘খালের মধ্যে ব্যবসার জন্য দোকান ঘর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম। ভূমি অফিস থেকে দোকান ঘর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। তাই আমি বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছি।’

স্থানীয় হরেন বালা, হরশিদ রায় জানান, খালের মধ্যে ১০০ হাত লম্বা একটি ঘর দুই মাস আগে নির্মাণ শুরু করেছিলেন আকুল বালা। প্রশাসন ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়ায় পরেও তাঁদের বাধা উপেক্ষা করে আকুল বালা নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে রত্নপুর ইউনিয়নের সরকারি ভূমি কর্মকর্তা উত্তম ব্যাপারী বলেন, খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণের কাজ আগে একবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার কাজ হলে সরেজমিন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজীদ সরদার জানান, বন্ধ করে দেওয়া দোকানঘর পুনরায় নির্মাণ করা হলে সরেজমিন পরিদর্শন করে তা ভেঙে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনা ওয়াসার দুর্নীতি: ঘুষে বন্ধ বকেয়া বিলের চাপ

  • ১০ হাজার গ্রাহকই পানির বিলের একটি পয়সাও পরিশোধ করেননি
  • সংস্থাটির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা
  • কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের বিল বকেয়া
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা ওয়াসার ৪৪ হাজার ১১ জন গ্রাহক। এর মধ্যে ১০ হাজার গ্রাহকই পানির বিলের একটি পয়সাও পরিশোধ করেননি। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সব মিলিয়ে সংস্থাটির বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঘুষ নিয়ে ফিরে আসেন। ফলে বকেয়া বিল আদায় করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৪ ডিসেম্বর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় আলোচনা হয়। এ সময় বিল পরিশোধে গ্রাহকদের সতর্ক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো বকেয়া আদায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে চরম দ্বন্দ্ব। এ সুযোগটি নিচ্ছেন সাধারণ কর্মচারীরা। তাঁরা কর্মকর্তাদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ ফাঁকি দেওয়াসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা কর্মকর্তাদের আদেশ-নির্দেশও মানছেন না।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, কিছু গ্রাহক বিল কিস্তি করে নিয়ে গেলেও সেই কিস্তি পরিশোধ করেন না। অনেকের নাম-ঠিকানা ভুয়া থাকায় তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্রাহকসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই বিল পরিশোধ করেন না। অনাদায়ি গ্রাহকের অধিকাংশ উচ্চবিত্ত। এ ছাড়া বয়রা মহিলা হোস্টেল, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের বিল বকেয়া রয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ওয়াসার রাজস্ব বিভাগের গঠিত আদায়কারী টিমের সদস্য ও বিল প্রদানকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দেড় লাখ থেকে ২ লাখের বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে। প্রতি মাসে এসব প্রতিষ্ঠানে নোটিশ পাঠানো হলেও তারা আদায়কারীদের ৩-৪ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রতিটি গ্রাহকের বাসাবাড়িতে মিটার রিডিং এবং বিল পৌঁছে দেওয়ার জন্য আউটসোর্সিং ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। তাঁদের পেছনে প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। অথচ এরা ঠিকমতো বিল পৌঁছান না। আবার তিন-চার মাসের বিল একসঙ্গে পাঠিয়ে ঘুষ-বাণিজ্য করেন, এই অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে ‘আমির সুলতান’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প কর্মকর্তা সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘আগে দুর্নীতি হতো কি না জানি না। তবে এখন ডিজিটাল হওয়ায় সেই সুযোগ নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে প্রতিটি গ্রাহকের মিটারের ছবি তুলে অনলাইনে এন্ট্রি দেওয়া এবং প্রতি মাসে পানির বিল গ্রাহকদের হাতে পৌঁছানো। আর এ কাজের জন্য চারজন সুপারভাইজারসহ ৩৪ জন কর্মী কাজ করছে।’

প্রকল্প কর্মকর্তা স্বীকার করে বলেন, ‘অনেক সময় অফিস থেকে আদায়কারীরা গেলে গ্রাহকেরা মাঝেমধ্যে আমাদের ফোন দেন। এটা কোনো অন্যায় নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠান বিল আদায় করে না, কাজেই আমরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।’

দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে ওয়াসার বাণিজ্য ব্যবস্থাপক খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘বকেয়া আদায়ে নিয়মিত মাইকিং, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নোটিশ প্রদান এবং বাড়ি বাড়ি লোক পাঠানো হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার দু-একটি অভিযোগ পাওয়া গেলেও তা প্রমাণিত হয়নি।’

খাদেমুল আরও বলেন, ‘ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ বকেয়া ২ লাখের বেশি নয়। বকেয়া অনাদায়ির সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়ে গ্রাহকেরা গভীর নলকূপ স্থাপন করছে। এ ক্ষেত্রে ওয়াসার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছে না। গভীর নলকূপে মাসে খরচ হচ্ছে মাত্র ৪০০ টাকা। আর ওয়াসাকে দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। সে কারণে কিছু গ্রাহক এখন অনুমোদন ছাড়াই গভীর নলকূপ বসাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওয়াসা।’

ওয়াসার পরিচালক শেখ দিদারুল আলম বলেন, ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওয়াসার বোর্ড সভায় বিষয়টি তোলা হয়েছিল। সেখানে আউটসোর্সিং ঠিকাদার পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। অনেকেই পানির বিল দেয় না। বিল পরিশোধের জন্য সতর্ক করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে কৃষিজমির টপসয়েল কেটে অবাধে বিক্রি, পরিবেশ ও উৎপাদন হুমকিতে

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে অবাধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই একটি সংঘবদ্ধ মাটিখেকো চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অবৈধ কার্যক্রম চললেও শীত শুরু হলেই ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নে তৎপরতা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কার্যকর তদারকির অভাবে চলতি মৌসুমে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়েছে। দিন-রাত শ্রমিক ও ভেকু (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষিজমির উৎপাদনক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে। অতিরিক্ত ভারী যান চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, টপসয়েল কাটা ও পরিবহনের সঙ্গে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রাহ্মণডোরা এলাকার মুর্শেদ মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া, শেরপুর এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া এবং অলিপুর এলাকার মন্নর মিয়া এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা কৃষিজমি থেকে টপসয়েল কেটে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের শেরপুর, কেশবপুর ও ঋষিপাড়া এলাকা থেকে নিয়মিত মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি ট্রাক্টর টপসয়েল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে পরে তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এই মাটিখেকো চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় প্রকাশ্যে কিছু বলা কঠিন। সরকার পরিবর্তন হলেও প্রভাবশালীরা থেকে যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কামাল মিয়া বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি কাটি, তা মালিকের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া। যদি আইনি কোনো বাধা থাকে, তাহলে আর এসব কাজ করব না।’

আরেক অভিযুক্ত মন্নর মিয়া বলেন, ‘এই মৌসুমে মাত্র দুই দিন মাটি কেটেছি। এখন আর কাটছি না। যে গাড়ি এনেছিলাম, সেটিও ফেরত পাঠিয়েছি। এ বছর আর মাটি কাটব না।’

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়টি শুনেছি। যারা এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

  • বাগেরহাট-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়া কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি
  • বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে গত বছরের আগস্টে আ.লীগ থেকে পদত্যাগ করেন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

বাগেরহাটের চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে চারটির দুটিতেই দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই নেতা। বিএনপিতে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যে দুটি আসনের মনোনয়ন পাওয়ায় বিএনপি বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে থাকা ঘনিষ্ঠ ছবি শেয়ার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি একই সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি। ছিলেন চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

অপর দিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ দে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে সোমনাথ দে জাতীয় পার্টি করতেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘুবিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।

২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২২ সালে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটিতে তিনি ৩নং সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন। ‘দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে’ কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল চলতি বছরের মার্চে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন সোমনাথ দে। জেল থেকে বেরিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ২০ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন কপিল ও সোমনাথ।

এই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় শরণখোলার বাসিন্দা রাসেল আহম্মেদ ফেসবুকে সোমনাথ দের ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা, ধানের শীষে ভোট দিন।’ পোস্টের নিচে একজন লিখেছেন, ‘সাথে জাতীয় পার্টির স্লোগান যুক্ত করে দিন।’

গত শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পরে আসন দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের আসলে করার কিছু নেই। তবে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন দল করে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পরে অন্য দলের কেউ এসে মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এটি কীভাবে মেনে নেবে বলেন। তাঁরা দুজনই সুবিধাবাদী এবং শেখ হেলালের নিকটতম অনুসারী ছিলেন।’

তবে বাগেরহাট-১ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘কখনো অন্য কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এটিই আমার প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া।’ আর বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ায় যাঁরা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী, নির্যাতন করে, তাঁদের গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা সাধারণ মানুষ তাঁরা আমাকে সাদরে বরণ করেছেন। আমি জাতীয় পার্টি করেছি, আওয়ামী লীগ করেছি, ৫ আগস্টের পর জেল খেটেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়, দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনীত করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত