Ajker Patrika

প্রশ্ন ফাঁস করে বাগানবাড়ি বানিয়েছেন অসীম, ব্যাংকেও আছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর
আপডেট : ১০ মে ২০২৪, ২০: ৪৭
প্রশ্ন ফাঁস করে বাগানবাড়ি বানিয়েছেন অসীম, ব্যাংকেও আছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের অসীম গাইন বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের উত্তর বিক্রি করে হয়েছেন কোটিপতি। গড়ে তুলেছে বাগানবাড়ি। কিনেছেন বহু জমি। ব্যাংকেও আছে বহু টাকা। 

বাবা দরিদ্র কৃষক হলেও মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে তিনি এই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এদিকে অসীম গাইন হঠাৎ এত সম্পত্তির মালিক হওয়ায় দুদক অনুসন্ধানে নেমেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের মৃত ফটিক চন্দ্র গাইনের ছেলে অসীম গাইন (৪৮)। বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। দিন আনে দিন খান, এমনভাবেই চলত তাঁদের সংসার। গ্রামে তিনি ডিশ ব্যবসা করতেন। মাঝে মাঝে দালালদের মাধ্যমে বিদেশে লোকও পাঠাতেন অসীম গাইন। 

অসীমের পৈতৃক বাড়ি। ছবি: সংগৃহীতকখনো কখনো গরু কেনাবেচাও করতেন। সেই অসীম গাইন মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে বহু সম্পত্তির মালিক হন। পুরোনো একটি টিনের ঘরের পরিবর্তে নির্মাণ করেছেন দালানঘর। ২০ শতাংশ জমির ওপর অনেকটাই বাগানবাড়ির মত করে গড়ে তুলেছেন বাড়ি। ব্যাংকে আছে বহু টাকা। নিজ গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে বহু জমিও কিনেছেন তিনি। এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মামলার পর থেকে অসীম গাইন ও তাঁর স্ত্রী রিক্তা গাইন পলাতক আছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ মার্চ মাদারীপুরের ১৮টি কেন্দ্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহ করে একটি চক্র। 

এ সময় পুলিশ ৮ জনকে আটক করে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক ডিভাইস ও একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে এই ঘটনার পরদিন ৩০ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী রেজাউল করিম বাদী হয়ে অসীম গাইনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন। 

পরে অভিযান চালিয়ে অসীম গাইনের সহযোগী রনি বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত পলাতক অসীম গাইনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেননি। 

অসীমের তৈরি নতুন ভবন। ছবি: সংগৃহীতএ দিকে অসীম গাইনের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা, আলিশান বাড়ি নির্মাণসহ বহু সম্পত্তির মালিক হওয়ার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পায় দুদক। এরপর থেকে দুদক অনুসন্ধানে নেমেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, অসীম গাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ সরকারি চাকরি নিয়োগ অনেক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। একসেট প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়ার শর্তে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন। মোবাইল ফোনে মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে উত্তর পাঠিয়ে দিতেন। সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছেন গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের বহু প্রার্থীর কাছ থেকে। 

অসীমের তৈরি নতুন ভবন। ছবি: সংগৃহীতএভাবেই কয়েক বছরেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অসীম গাইন। টিনের ঘরের পরিবর্তে দালান নির্মাণ করেছেন। বাড়ির আশেপাশেসহ বিভিন্ন গ্রামে নিজ নামে ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে একশ বিঘারও বেশি জমি কিনেছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মামলার পর থেকে সে বাড়িতে থাকেন না। পালিয়ে আছেন। সম্ভবত তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। 

অসীম গাইনের বৌদি গৌরি দে বলেন, ‘অসীম গাইনের পারিবারিকভাবে কয়েক বিঘা জমিজমা আছে। তাছাড়া সে দীর্ঘদিন ধরে ডিশলাইন ও ইন্টারনেট ব্যবসা করেন। এ ছাড়া গরু বেচা-কেনাও করতেন। এইসব ব্যবসার আয়ের টাকা দিয়েই সে বাড়ি বানিয়েছেন। সে নির্দোষ। সে কোনো অন্যায় করেনি। তার বিরুদ্ধে একটি চক্র মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন।’ 

অসীমের তৈরি নতুন ভবন। ছবি: সংগৃহীতদুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘অসীম গাইনের বিরুদ্ধে মাদারীপুর ও ঢাকায় একাধিক মামলা আছে। তা ছাড়া বিভিন্ন মিডিয়াতে এ ব্যাপারে সংবাদ প্রচার হয়েছে। সেই সংবাদের কপিও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদারীপুর দুদক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগও পাওয়া গেছে। তাই ইতিমধ্যেই অসীম গাইনের হঠাৎ সম্পদ অর্জনের কারণ অনুসন্ধান করছে দুদক। প্রধান কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার কাজের সঙ্গে অসীম গাইন ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও জড়িত আছে। অসীম ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে লাখ লাখ টাকার চুক্তি করেন। পরে তাঁর অন্য সহযোগীদের নিয়ে উত্তরপত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরবরাহ করেন। পুরো ঘটনা জেলার গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি রেখেছেন। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তও করছে। দ্রুত প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহের ঘটনায় মামলার চার্জশিট আদালতে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত অসীম গাইন, তা নিশ্চিত হয়েছে জেলা পুলিশ। এ ছাড়া এটা নিয়ে ঢাকা থেকে আলাদাভাবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে।’ 

অসীমের তৈরি নতুন ভবনের গেট। ছবি: সংগৃহীতমাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে পুলিশ ও দুদককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ ছাড় পাবে না। দ্রুত সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেইলি স্টারে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অধীনে এ মামলা দাখিল করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে সমবেত হয়। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে হামলার আহ্বান জানায়।

রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ভবনের মূল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভবনের বিভিন্ন তলা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বহু আসবাব নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, হামলায় ভবনের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লকারে থাকা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, লিফট, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও ক্ষতি করা হয়।

আসামিদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে ‘দ্য ডেইলি স্টার ভবনে’ সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের আনুমানিক মূল্য ৪০,০০,০০,০০০ (চল্লিশ কোটি টাকা)। যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের হিসাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সন্ত্রাসীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে দ্য ডেইলি স্টারের তৃতীয় তলায় স্টোরে সংরক্ষিত হিসাব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জাতীয় রাজস্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর-সম্পর্কিত যাবতীয় নথি এবং নিউজ পেপার আর্কাইভস পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয় বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রমাণ নষ্টের উদ্দেশ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে ভবনের ভেতর থেকে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। অনলাইন কার্যক্রম ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

মামলার এজাহারে ডেইলি স্টার জানিয়েছে, এই হামলার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেডফোন কানে রেললাইনে যুবক, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত

ফেনী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল্লাহ আল নাহিদ (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নাহিদ সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ এলাকার দেবীপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।  

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেনটি উত্তর শিবপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দীপক দেওয়ান বলেন, নিহত যুবক হেডফোন কানে রেললাইনে হাঁটছিলেন। পরে চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রেললাইনের এক পাশে ছিটকে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত