Ajker Patrika

কার্ডিওগ্রাফার দেখছেন রোগী

  • হাসপাতালে পাওয়া যায়নি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা এবং আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাকে।
  • চিকিৎসক না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে রোগীদের বিরক্তি প্রকাশ।
আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর (যশোর)
বহির্বিভাগে খালি পড়ে রয়েছে চিকিৎসকের কক্ষ (বাঁয়ে), চিকিৎসক না আসায় রোগী দেখছেন কার্ডিওগ্রাফার মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
বহির্বিভাগে খালি পড়ে রয়েছে চিকিৎসকের কক্ষ (বাঁয়ে), চিকিৎসক না আসায় রোগী দেখছেন কার্ডিওগ্রাফার মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঈদের পর রোগীর ভিড় বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর লাইন থাকলেও চিকিৎসকদের কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে চিকিৎসকেরা অনুপস্থিত থাকায় এনসিডি কর্নারে একজন কার্ডিওগ্রাফারকে রোগী দেখতে দেখা গেছে। এ সময় হাসপাতালে পাওয়া যায়নি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাকে। এ সময় চিকিৎসক না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে বিরক্তি প্রকাশ করেন রোগীরা।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, এনসিডি কর্নারের সামনে টিকিট হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েকজন রোগী। ভেতরে দরজা বন্ধ করে রোগী দেখছেন কার্ডিওগ্রাফার মোস্তাফিজুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি নিজেকে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ৯টার সময় এসেছি। এখন পর্যন্ত ৬০-৭০ জন রোগী দেখেছি। বাইরে আরও রোগী আছে।’

এনসিডি কর্নারে মূলত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা ও বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। কার্ডিওগ্রাফারের কাজ হচ্ছে মূলত রোগীর ইসিজি করা। মনিরামপুর হাসপাতালে দীর্ঘদিন কার্ডিওগ্রাফারের পদ খালি থাকায় কয়েক দিন আগে মোস্তাফিজুর রহমানকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এনসিডি কর্নারে তিনি চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে রোগীর নাম নিবন্ধন করার কাজ করে থাকেন। গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসক না আসায় তিনি নিজে চিকিৎসক সেজে রোগীর ব্যবস্থাপত্র লিখেছেন।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ভবনের দোতলায় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুমন কবির, গাইনি বিশেষজ্ঞ দিলরুবা খাতুন ডায়না, চিকিৎসক অনুপ বসু, হোমিও চিকিৎসক মনিরুজ্জামান ও ইউনানি চিকিৎসক রুহুল আমিন রোগী দেখেন; কিন্তু তাঁদের কেউ কক্ষে নেই। বাইরে থেকে কক্ষে তালাবদ্ধ। এই ভবনের নিচতলায় ১১৬ নম্বর কক্ষে দুজন চিকিৎসকের চেয়ার ফাঁকা পড়ে রয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ১২৫ নম্বর কক্ষের সামনে কয়েকজন মাকে সন্তান কোলে নিয়ে বাইরে অপেক্ষায় বসে থাকলে দেখা গেলেও ভেতরে নেই কোনো চিকিৎসক। এ সময় শুধু বহির্বিভাগে ১২৬ নম্বর কক্ষে চিকিৎসক রাফেজা খাতুনকে রোগীদের সেবা দিতে দেখা গেছে।

এদিকে হাসপাতালে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ১১৬ নম্বর কক্ষে আসেন চিকিৎসক নাহিদ হাসান। আর ১২৫ নম্বর কক্ষে রোগী দেখা শুরু করেন সেকমো আনিছুর রহমান। পরে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক ফরিদুল ইসলামকে রোগী দেখতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে মহাদেবপুর গ্রামের তিন মাসের শিশু ওবায়দা খাতুনের মা জাহিনুর খাতুন বলেন, ‘বাচ্চার জ্বর ও ঠান্ডা সমস্যা নিয়ে সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে এসেছি। দেড় ঘণ্টা ধরে শিশু ওয়ার্ডের সামনে বসে আছি। ডাক্তারের দেখা পাইনি।’ একই কথা বলেছেন মোহনপুর গ্রামের তিন বছরের শিশু আলভি হাসান ও বিজয়রামপুর গ্রামের এক বছরের শিশু আবু হুরায়রার স্বজনেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পাশাপাশি পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাতজন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন একজন ইউনানি ও একজন হোমিও চিকিৎসক।

একটি সূত্রের দাবি, জেলার অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তুলনায় মনিরামপুরে চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি। কিন্তু এখানকার চিকিৎসকেরা সময়মতো হাসপাতালে ডিউটি না করে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের (সেকমো) দিয়ে বহির্বিভাগে রোগী দেখান।

জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হুমায়ুন রশিদ বলেন, ‘আমার রাতে ডিউটি ছিল। চিকিৎসক কম থাকায় আজ (বৃহস্পতিবার) জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে তিনজন চিকিৎসক রোগী দেখেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বিষয়টি হাসপাতালের প্রধান দেখেন। তাঁরা আজ কেন আসেননি তা স্যার বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল বলেন, ‘ঈদের পর বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে হাসপাতাল খুলেছে। অসুস্থ থাকায় আমি আজ দুদিন আসতে পারিনি। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুমন কবির ও শিশু বিশেষজ্ঞ জেসমিন সুমাইয়া আজ আসার কথা ছিল। কেন আসেননি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’

যশোরের সিভিল সার্জন মাসুদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কার্ডিওগ্রাফারের রোগী দেখার কথা নয়। মনিরামপুর হাসপাতালে কেন এমন হলো, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা, আটক ১০

কর্ণফুলী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১০ জন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার মইজ্জ্যেরটেক এলাকায় সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযানে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার।

আবু সাঈদ জানান, রোববার সকাল থেকে সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি অটোরিকশা জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ। এই ঘটনার জের ধরে অটোরিকশাচালকেরা ট্রাফিক পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। চালকদের এলোপাতাড়ি মারধরে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইমতিয়াজসহ দায়িত্বে থাকা কনস্টেবলরা আহত হন। পরে থানা-পুলিশের সহায়তায় তাঁদের উদ্ধার করা হয় এবং ১০ হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি সহায়তা নয়, গণচাঁদাতেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংস্কার করবে উদীচী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুর্বৃত্তদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে এবং গণচাঁদা সংগ্রহ করে সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কার্যালয় সংস্কারের জন্য তারা সরকার বা কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করবে না।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এক যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদীচী কখনোই সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা গণচাঁদাই সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি। এবারও ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়টিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদীচীর দেশ-বিদেশের হাজারো শিল্পী ও কর্মী তাদের পরিশ্রমের উপার্জনের টাকা দিয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।

বিবৃতিতে আরও সতর্ক করে বলা হয়, উদীচীর নাম করে অন্য কেউ যদি আর্থিক সহায়তা চায় এবং এর ফলে কেউ প্রতারিত হন, তবে তার দায়ভার কেন্দ্রীয় সংসদ নেবে না।

উদীচী নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং ছায়ানট ভবনে হামলার পর থেকেই উদীচীর ওপর হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দেওয়া হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা প্রশাসন নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ফলে গত ১৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় মৌলবাদী অপশক্তি বিনা বাধায় উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এতে সংগঠনের ৫৭ বছরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, দুষ্প্রাপ্য বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হামলা ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, উদীচীর এখন একটাই প্রত্যাশা—এই ন্যক্কারজনক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বিচারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চায় এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ চায়, এ দেশের মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত সাধারণ মানুষের যে ত্যাগের ইতিহাস, তা কোনো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না বলেও তারা অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে দেশের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এই অন্ধকারের অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায় উদীচী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শহীদ করপোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫১
শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা
শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা করপোরাল মাসুদ রানাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে ড্রোন হামলায় নিহত বীর সেনানীর বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাসুদ রানার মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার তাঁর গ্রামের বাড়ি-সংলগ্ন উপজেলার করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণের কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে একটু দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। পরে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে মাসুদ রানাসহ শহীদ ছয় শান্তিরক্ষীর মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহীদ মাসুদের গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে এলাকার লোকজন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হেলিকপ্টারযোগে শহীদ মাসুদ রানার মরদেহ আনা হবে তাঁর নিজ গ্রামে। সেখানে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠটি ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে অস্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।

মাসুদ রানা উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের বড় ছেলে। ২০০৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মাসুদ রানার মেজো ভাই মনিরুল ইসলাম এবং ছোট ভাই রনি আলমও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য।

স্বজনেরা জানান, গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে রেখে শান্তি রক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদানে যান মাসুদ রানা। মিশন শুরুর মাত্র এক মাস সাত দিনের মাথায় ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় ড্রোন হামলায় তিনি শহীদ হন। শান্তিরক্ষী হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়লেও কফিনে মুড়িয়ে ফিরছেন এই বীর।

নাটোর স্টেডিয়ামের আর্মি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর বলেন, ‘শহীদ মাসুদের দাফন সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ওই হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন। তাদেরই একজন নাটোরের লালপুরের কৃতী সন্তান করপোরাল মাসুদ রানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাবনা-৩: স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ারুলের

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৮
গতকাল রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় কেএম আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় কেএম আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনা-৩ আসনে (চাটমোহর–ভাঙ্গুড়া–ফরিদপুর) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে তিনি এই ঘোষণা দেন।

মতবিনিময় সভায় চাটমোহর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাইজুলের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মুত্তালিব প্রামানিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস আলো মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজির সরকার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলজার হোসেন প্রমুখ।

এ ছাড়া ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা। বক্তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলামকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

কে এম আনোরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে দুবার এমপি এবং দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। এখন জনগণ চাইছে আমি নির্বাচনে অংশ নিই। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। সাধারণ জনগণ বহিরাগত কোনো প্রার্থী চায় না। নির্বাচনী অনুকূল পরিবেশ থাকলে আমার জয় নিশ্চিত ইনশা আল্লাহ। আমার শেষনিশ্বাস পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।’

চাটমোহর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পাবনা-৩ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। এর আগে কে এম আনোয়ারুল ইসলাম ও হাসাদুল ইসলাম হীরার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত