Ajker Patrika

পঞ্চাশের নিচে শিক্ষার্থী, একীভূত হচ্ছে যশোরের ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ১১
পঞ্চাশের নিচে শিক্ষার্থী, একীভূত হচ্ছে যশোরের ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

যশোরের অভয়নগর উপজেলার হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮। গ্রামটি আয়তনে ছোট এবং জনসংখ্যায় কম। এ ছাড়া দুই কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। শিক্ষার্থী কম থাকলেও বিদ্যালয়টিতে পাঠদান করাচ্ছেন ছয়জন শিক্ষক। এত দিন ধরে গোঁজামিলের তথ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি চালানো হচ্ছে। শিক্ষকেরাও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো যশোরে এমন বিদ্যালয় রয়েছে ১৬টি। কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী না থাকায় কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা। ইতিমধ্যে তালিকা প্রস্তুত করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এরপর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এসব বিদ্যালয়কে পাশের কোনো সরকারি বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা হবে। এসব বিদ্যালয় ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বানানোর পরামর্শ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের। তবে এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা পাশের বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার বিপক্ষে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) সমন্বয় সভায় যেসব বিদ্যালয়ে পাঁচটি শ্রেণিতে ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী রয়েছে, সেসব বিদ্যালয় একীভূত বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর একত্র করার জন্য প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের নাম, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, জমির পরিমাণ, যে বিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্র করা হবে তার নাম, বর্তমান বিদ্যালয় থেকে একত্র করার জন্য প্রস্তাবিত স্কুলের দূরত্ব, প্রস্তাবিত স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা উল্লেখ করে অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের।

সে অনুযায়ী গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম ১৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সেই চিঠিতে একত্র করার জন্য প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের নাম, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, জমির পরিমাণ, যে বিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্র করা হবে তার নাম, বর্তমান বিদ্যালয় থেকে একত্র করার জন্য প্রস্তাবিত স্কুলের দূরত্ব, প্রস্তাবিত স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা উল্লেখ করা হয়।

বিদ্যালয়গুলো হলো ১৮ জন শিক্ষার্থীর যশোরের অভয়নগর উপজেলার হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ২৮ জন শিক্ষার্থীর কেশবপুর উপজেলার সানতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৪ জন শিক্ষার্থীর পল্লী মঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১৮ জন শিক্ষার্থীর ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪৪ জন শিক্ষার্থীর তেঘরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪৫ জন শিক্ষার্থীর মনিরামপুর উপজেলার পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ২৮ জন শিক্ষার্থীর ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩০ জন শিক্ষার্থীর দক্ষিণ পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩১ জন শিক্ষার্থীর কুমারসীমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৪ জন শিক্ষার্থীর গোপমহল মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ২৫ জন শিক্ষার্থীর কামিনীডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৯ জন শিক্ষার্থীর হাটগাছা মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৩ জন শিক্ষার্থীর উত্তর দহাকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৩ জন শিক্ষার্থীর বয়ারখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪৭ জন শিক্ষার্থীর জোঁকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪২ জন শিক্ষার্থীর সদর উপজেলার দক্ষিণ ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এসব বিদ্যালয়ের কোনোটির গমনোপযোগী শিশুদের সংখ্যা কম, কোনোটির জনহার জনসংখ্যা কম। আবার কোনোটির বিদ্যালয়ের দুই কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা. আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার উপজেলায় হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮ জন শিক্ষার্থী ও ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। মূলত ওই এলাকাটিতে জনসংখ্যা কম, জন্মহারও কম। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিবেচনা করে দেখেছি, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো অসম্ভব। তা ছাড়া পাশেই ফুলেরগাতি হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা তালিকা প্রস্তুত করেছি। কিন্তু ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বড় একটি অংশ অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত হতে চান না।’

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের পর এই জেলায় অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমেছে। এসব বিদ্যালয়কে অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।’ তাতে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং যাতায়াতসহ অন্য কোনো সমস্যায় হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাতায়াতে সমস্যা বা ব্যয় কারও বাড়বে না। বরং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ নানা সুবিধার আওতায় আনবে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই (ডিরেক্টর অব প্রাইমারি এডুকেশন) পরিচালক মনীষ চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, একীভূত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় পর্যায়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। পাঁচটি ক্লাসে ৫০ জন শিক্ষার্থী না থাকার পরও এসব বিদ্যালয় চালানো রাষ্ট্রীয় অপচয়। তবে কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে, তা জানাতে পারেননি তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জীবননগরে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযানে বিদেশি পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি 
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: সংগৃহীত
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলিসহ গাজী জাহিদ হাসান (৩৬) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার গাজী জাহিদ হাসান পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং তিনি মো. নুরুল ইসলামের ছেলে।

আজ রোববার ভোর ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন সৌমিক আহমেদ অয়নের (৩৬ এডি) নেতৃত্বে জীবননগর মডেল মসজিদের পাশে গাজী জাহিদ হাসানের মালিকানাধীন সাইকেলের শোরুমে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে অস্ত্র ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করা মালপত্রের মধ্যে রয়েছে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি স্মার্টফোন, ১১টি সিমকার্ড এবং একটি ব্যাটন।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জীবননগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিপন কুমার দাস বলেন, এই ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় দুর্বৃত্তদের হামলায় দুই যুবক গুরুতর আহত

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনায় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের হামলায় দুই যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে নগরীর লবণচরা থানাধীন আশিবিঘা ঢালাই সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

আহত দুজন হলেন মো. রনি ও সজিব। তাঁদের দুজনকেই গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশিবিঘা ঢালাই সড়কে রনি ও সজিবের ওপর ৮-১০ জনের একটি সশস্ত্র দল অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় রনির কপালের মাঝখানে এবং বাঁ হাত ও ডান হাতের বাহুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে।

এ সময় দুর্বৃত্তরা রনির সঙ্গে থাকা বন্ধু সজিবকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তাঁর মাথা ফেটে যায়। তাঁদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

লবণচরা থানার ওসি (তদন্ত) মো. ইউসুফ আলী বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনায় এখনো আহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরিষাখেতে ৮৫টি মৌ-বাক্স, এক সপ্তাহ পর শুরু হবে মধু সংগ্রহ

রাকিবুল ইসলাম, গাংনী (মেহেরপুর) 
গাংনী উপজেলার তেরাইল মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার তেরাইল মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। সরিষাখেতের পাশে মৌ-বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে তেরাইল কলেজের সামনের সরিষাখেতে বসানো হয়েছে ৮৫টি মৌ-বাক্স।

সরিষা ফুলের হলুদ আভা আর মৌমাছির গুনগুন শব্দে পুরো এলাকা হয়ে উঠেছে মনোরম। এই দৃশ্য দেখতে রাস্তায় চলাচলকারী পথচারী ও আশপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় করছে। অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখছেন মৌচাষিদের কাজ।

মৌচাষিরা জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে মধু সংগ্রহ শুরু হবে। তাঁদের ধারণা, এই খেত থেকেই প্রায় ২০ মণ মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাধারণত তাঁরা এই ধরনের মধু সংগ্রহের দৃশ্য খুব কমই দেখেন। সরাসরি বাক্সে মধু উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখে তাঁরা মুগ্ধ। তাঁদের মতে, সরিষা ফুল থেকে সংগৃহীত মধু স্বাভাবিকভাবেই বিশুদ্ধ হয় এবং ক্রেতারাও চোখের সামনে দেখে মধু কিনতে পারেন।

মধু সংগ্রহ দেখতে আসা সাজেদুর রহমান বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি সরিষাখেতের পাশে মৌ-বাক্স বসানো। এত বড় সরিষার মাঠ আশপাশে আর কোথাও নেই। মৌচাষিদের কাছে শুনেছি, এখান থেকে প্রায় ২০ মণ মধু সংগ্রহ করবেন তাঁরা।’

মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘দোকান থেকে মধু কিনলে অনেক সময় খাঁটি কি না বোঝা যায় না। কিন্তু এখানে সরাসরি সংগ্রহ করা মধু নিঃসন্দেহে খাঁটি।’

মৌচাষি মো. সোহান আলী বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও এখানে এসেছি। কারণ, এই এলাকায় প্রচুর সরিষার আবাদ হয়। এবার ৮৫টি বাক্স বসানো হয়েছে। আশা করছি, প্রায় ২০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারব। সাধারণত তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে মৌমাছিরা ভালোভাবে মধু সংগ্রহ করতে পারে।’

আরেক মৌচাষি মো. কামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাঠ দিয়ে তৈরি বিশেষ বাক্সে রানি মৌমাছি রাখা হয়। বিস্তীর্ণ সরিষাখেতের পাশে এসব বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। এখান থেকে ৮৫টি বাক্সে প্রায় ২০ মণ মধু পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। আমরা কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে মধু বিক্রি করি।’

গাংনী উপজেলার তেরাইল মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার তেরাইল মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘বিশেষ করে সরিষা ফুলের মধু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। ডিসেম্বরের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মধু সংগ্রহের মৌসুম চলে। সরিষা ফুল শেষ হলে আমরা অন্য ফুলের এলাকায় চলে যাই। আগামী ৩০ তারিখের (৩০ ডিসেম্বর) পর থেকে এখানে পুরোপুরি মধু সংগ্রহ শুরু হবে।’

গাংনী উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে মধু উৎপাদনের প্রধান মৌসুম। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। বাক্স পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।

ইমরান হোসেন আরও বলেন, মধু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পবিত্র কোরআনেও মধুর উপকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগও মধু ও কালিজিরা খাওয়ার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কর্মবিরতিতে কার্যক্রম বন্ধ: মাসব্যাপী টিকাবঞ্চিত শিশুরা

খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট
কর্মবিরতিতে কার্যক্রম বন্ধ: মাসব্যাপী টিকাবঞ্চিত শিশুরা

ইপিআই সম্প্রসারণ কর্মসূচির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে নবজাতকসহ শিশুদের ১০টি রোগ প্রতিরোধের টিকাদান কার্যক্রম। টানা এক মাসের কর্মবিরতিতে টিকাবঞ্চিত হচ্ছে জেলার হাজারো শিশু।

উচ্চতর বেতন স্কেলের দাবিতে সারা দেশের মতো লালমনিরহাটেও কর্মবিরতি চলছে গত ২৯ নভেম্বর থেকে। দীর্ঘ এক মাস কর্মসূচি চলমান থাকায় বন্ধ রয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। তাঁদের কর্মবিরতিতে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।

জানা গেছে, পোলিও, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকার, হাম, ডিপথেরিয়া, রুবেলাসহ ১০টি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে জন্মের পর থেকে ১৮ মাস বয়সে নির্ধারিত সময়ে ১১টি ভ্যাকসিন প্রদান করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে এ ১০টি রোগ নির্মূল করতে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এ ভ্যাকসিন প্রদান করছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইপিআই সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করছেন স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ২৪টি টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে উপজেলাপ্রতি ৫-৬শ শিশু এসব কেন্দ্রে বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন পেয়ে থাকে। এ জন্য শিশুর জন্মের পরেই টিকা কার্ড প্রদান করা হয় এবং কার্ডেই উল্লেখ থাকে, কখন কখন টিকা পাবে শিশুরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে হয়। ভ্যাকসিন টিকা কার্ড ছাড়া মেলে না শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ। ফলে জন্মনিবন্ধনেও ভাটা পড়েছে।

ইপিআই কার্যক্রম সফল হওয়ায় একাধিকবার আন্তর্জাতিক পুরস্কারও গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এ পুরস্কারপ্রাপ্তির পরে ভ্যাকসিন হিরো হিসেবেও বেশ আলোচনায় আসেন ইপিআই কর্মসূচির মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নকারী স্বাস্থ্য সহকারীরা। আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্তির সেই কার্যক্রম আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে হিরোদের কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিতে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এমন মারাত্মক ১০টি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

আদিতমারীর বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ বলেন, জন্মের পরপরই শিশুকে ভ্যাকসিন দিতে হয়। এক মাস টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ থাকায় আমার শিশু ভ্যাকসিন নিতে পারেনি। আমি এটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি। স্বাস্থ্য সহকারীরা এক মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁদের দ্রুত মাঠে কার্যক্রম শুরু করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ হেল্থ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের লালমনিরহাটের সাবেক সভাপতি সোহেল মাসুদ বলেন, ‘একই যোগ্যতার উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তারা ১৮তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। অথচ আমরা ভ্যাকসিন হিরোরা আজও ১৮তম গ্রেডে রয়েছি। আমাদের পরিশ্রমে দেশ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেও আমরা অন্ধকারেই রয়েছি।’

সংগঠনটির সহসভাপতি হালিমা আক্তার বলেন, ‘রোধ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে শিশুদের সুরক্ষায় আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করে আসছি। অথচ আমাদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। একই যোগ্যতা নিয়ে অনেক দপ্তরের কর্মীরা উচ্চতর বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। অথচ আমরা বঞ্চিত। সরকার আমাদের দাবি মেনে

নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করছে না। সরকার দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা পুনরায় কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাব।’

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলার সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির কারণে গোটা দেশে এক মাস ধরে ইপিআই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে শিশুরা মারাত্মক ১০টি রোগের ১১টি ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ টিকাদান কার্যক্রম সচল করতে ঊর্ধ্বতন মহলের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. আবদুল হাকিম বলেন, ইপিআই কর্মসূচির কর্মীরা সারা দেশে উচ্চতর গ্রেডের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ নিয়ে সভাও করা হয়েছে। তাঁদের কর্মবিরতি দীর্ঘ সময় হলে শিশুদের সুরক্ষায় খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার যে ব্যাখ্যা দিলেন আখতার

রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

জটিল ও সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন খালেদা জিয়া: এ জেড এম জাহিদ

রাষ্ট্রপতির কাছে অব্যাহতিপত্র দিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না: সামান্তা শারমিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত