Ajker Patrika

ধর্ষণে মারা যাওয়া মাগুরার শিশুটিকে দাফনের প্রস্তুতি বাড়িতে

মাগুরা প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪১
মাগুরা শহরের নীজনান্দুয়ারীর মাঠপাড়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাগুরা শহরের নীজনান্দুয়ারীর মাঠপাড়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাগুরায় ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া শিশুটির বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি চলছে। শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম। ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাড়িতে দাফনের জন্য এর মধ্যে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে।

শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে শিশুটির মরদেহ ঢাকা থেকে মাগুরা শহরে আনা হবে। এরপর দাফনের কাজ শুরু হবে।

নুরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ছোট শিশুর কবর খোঁড়া দেখলে খুব খারাপ লাগে। শিশুটির জন্য দোয়া রইল।

এদিকে শিশুটির বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শিশুটি মারা যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ঘটনাস্থল মাগুরা শহরের নীজনান্দুয়ারীর মাঠপাড়ার ওই বাড়িতে হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পাশের বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, শিশুটি মারা যাওয়ার পর কিছু অচেনা লোক বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোকবুল মিয়া বলেন, ‘তারা (অভিযুক্ত ব্যক্তিরা) অপরাধ করেছে, আর আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা আজকের পত্রিকাকে জানান, যেকোনো ধরনের অরাজকতা মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

জানা গেছে, সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার শিশুটি মারা যায়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

আইএসপিআর জানিয়েছে, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ বেলা ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

আরও জানানো হয়, শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে এবং যেকোনো প্রয়োজনে তাঁদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে।

এর আগে মাগুরা পৌর এলাকায় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ৫ মার্চ রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবার জানায়। পরদিন অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সর্বশেষ রাজধানীর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিল। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় শিশুর বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। চার আসামিকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে ঘটনার খবরে পরদিন মাগুরা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও নারী অংশ নেয়। বেলা ১১টা থেকে মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা অপরাধীদের বিচারের দাবি জানান।

বিক্ষোভকারীদের অন্যতম সংগঠক সাদিয়া ইয়াসমিন জানান, ধর্ষকদের বিচার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করতে হবে। বিলম্ব করলে তাঁদের কোনো শাস্তি নাও হতে পারে।

ওই দিন বেলা ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর একটি দল ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলার পর বেলা ৩টায় বিক্ষোভকারীরা আদালত প্রাঙ্গণ ছেড়ে শহরের ভায়নার মোড়ে অবস্থান নেন। তাঁরা বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভায়না মোড় অবরোধ করে রাখায় মাগুরা ঢাকা-খুলনা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএমএমইউতে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে যা বললেন প্রাণ গোপালের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ কেন হচ্ছে না, ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব

জামিনে বেরিয়েই ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হন ‘ডিবি হেফাজতে’ মৃত এজাজ

নিউজিল্যান্ডের কাছে বাজে হারের ‘বদলা’ নেবেই পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত