Ajker Patrika

বকশীগঞ্জ ওসির বিরুদ্ধে এজাহারভুক্ত আসামিদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর) 
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৪৬
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারভুক্তসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের দাবি, বকশীগঞ্জে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই গ্রেপ্তার ও মামলা-বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন। তবে ওসি শাকের আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে এটিকে কুচক্রী মহলের অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে বকশীগঞ্জ উপজেলার নীলাখিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকাকে নীলাখিয়া বাজারে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে বকশীগঞ্জ থানা-পুলিশ।

পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সাইফুল ইসলাম খোকা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা না থাকলেও পুলিশ থানায় নিতে চাইলে, আমি সটকে পড়ি।’

গত ২৫ ডিসেম্বর বিকেলে বকশীগঞ্জ পৌর শহরের পাখিমারা গ্রামের ছানোয়ার হোসেন ছানুকে আটকের পর থানা থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ছানু পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি।

থানা থেকে ছাড়া পাওয়া ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি কি না, সেটা জিজ্ঞাসা শেষে থানা থেকে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আমি একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই।’

গত ১১ ডিসেম্বর বিকেলে বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের নই মিয়ার হাট থেকে বকশীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মতিউর রহমান এবং এএসআই আতাউর রহমান বগারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আক্রাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান।

আক্রাম হোসেন গত ১৬ নভেম্বর দায়ের করা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ৪০ নম্বর একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এ ছাড়া তিনি মেরুরচর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আনিছুর রহমান বাদী হয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গত ২ অক্টোবর বকশীগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত ৬৯ নম্বর আসামি।

দুটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও ওই দিন রাত ৮টার দিকে আক্রাম হোসেনকে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছেন ওসি।

বকশীগঞ্জ থানার এএসআই আতাউর রহমান বলেন, ‘আক্রাম হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে নই মিয়ার হাট থেকে আটক করে থানা আনা হয়েছিল। তবে তাঁকে কেন থানায় আনা হয়েছিল, সেটা জানি না। আমাকে এএসআই মতিউর রহমান সেখানে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি এএসআই মতিউর ভালো বলতে পারবে।’

এএসআই মতিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি ওসি স্যার জানেন। স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

থানা থেকে ছাড়া পাওয়া আক্রাম হোসেন বলেন, ‘থানা থেকে আমাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে আমি নির্দোষ।’

মামলার বাদী আনিছুর রহমান বলেন, ‘আসামি আক্রাম হোসেনকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে যোগাযোগ করলে ওসি সাহেব জানিয়েছেন, ‘‘শারীরিক অসুস্থ হওয়া তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”’

গত ২৫ নভেম্বর পৌর শহরের চর কাউরিয়া সীমারপাড় এলাকার মৃত হাজি শেখ সাদি মাস্টারের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী আবু রায়হানকে পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গভীর রাতে তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আবু রায়হান গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তর পূর্ব থানায় দায়ের করা ১০ নম্বর মামলার এজাহারভুক্ত ৪১ নম্বর আসামি। পৌর শহরের মিয়াপাড়া গ্রামের মকবুর শেখের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন পুনো বাদী হয়ে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ওই মামলাটি করেন।

মামলার বাদী তোফাজ্জল হোসেন পুনো বলেন, ‘আসামি আবু রায়হানকে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। থানা থেকে ছাড়া পেয়ে রায়হান এলাকায় ব্যবসা করছে।’

থানা থেকে আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আসামি আবু রায়হান বলেন, ‘আমি খাইতে বসেছি। পরে কথা বলব।’ এই বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। এরপর একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবেদ আলী, তুলন, মিজানসহ অনেকেই বলেন, ‘থানায় পুলিশের হাতে আবু রায়হানকে আটক দেখেছি। পরদিন জানতে পারি, থানা থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান মির্জা সোহেল পারভেজকে সূর্যনগর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। পরদিন ২০ ডিসেম্বর বকশীগঞ্জ থানায় নাশতার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

প্যানেল চেয়ারম্যান মির্জা সোহেল পারভেজের মুক্তির দাবিতে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাঁর স্ত্রী আলপনা বেগম বলেছেন, তাঁর স্বামী মির্জা সোহেল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় আসামিরা তাঁর স্বামীর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। অথচ ওই মামলায় তাঁর স্বামীকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখানে যোগ দেন। আগে নেত্রকোনা মডেল থানার ওসির দায়িত্বে ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয়রা বলেন, বকশীগঞ্জ থানায় যোগদানের আগে নেত্রকোনা মডেল থানার ওসির দায়িত্বে থাকাকালীন সেখানকার হাজার হাজার বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীকে গায়েবি মামলায় হয়রানি করেছেন খন্দকার শাকের আহমেদ। এখন বকশীগঞ্জে দেদার মামলা-বাণিজ্য করে যাচ্ছেন তিনি।

বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। আমার বিরুদ্ধে কুচক্রী মহল অপপ্রচার করা হচ্ছে। আইনানুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আপনি থানায় এসে কথা বলুন।’

দেওয়ানগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিত দাস বলেন, ‘দায়িত্ব পালনে অনিয়মসহ গাফিলতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে নির্দেশনায় তদন্ত সাপেক্ষে ওসির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেইলি স্টারে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অধীনে এ মামলা দাখিল করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে সমবেত হয়। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে হামলার আহ্বান জানায়।

রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ভবনের মূল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভবনের বিভিন্ন তলা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বহু আসবাব নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, হামলায় ভবনের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লকারে থাকা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, লিফট, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও ক্ষতি করা হয়।

আসামিদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে ‘দ্য ডেইলি স্টার ভবনে’ সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের আনুমানিক মূল্য ৪০,০০,০০,০০০ (চল্লিশ কোটি টাকা)। যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের হিসাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সন্ত্রাসীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে দ্য ডেইলি স্টারের তৃতীয় তলায় স্টোরে সংরক্ষিত হিসাব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জাতীয় রাজস্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর-সম্পর্কিত যাবতীয় নথি এবং নিউজ পেপার আর্কাইভস পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয় বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রমাণ নষ্টের উদ্দেশ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে ভবনের ভেতর থেকে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। অনলাইন কার্যক্রম ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

মামলার এজাহারে ডেইলি স্টার জানিয়েছে, এই হামলার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেডফোন কানে রেললাইনে যুবক, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত

ফেনী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল্লাহ আল নাহিদ (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নাহিদ সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ এলাকার দেবীপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।  

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেনটি উত্তর শিবপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দীপক দেওয়ান বলেন, নিহত যুবক হেডফোন কানে রেললাইনে হাঁটছিলেন। পরে চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রেললাইনের এক পাশে ছিটকে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত