Ajker Patrika

ফুলবাড়ীর তরুণ কৃষক লাজুর সাফল্যে বদলে যাচ্ছে গ্রামের চিত্র

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
বাগানে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত তৈয়বুর রহমান লাজু। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগানে গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত তৈয়বুর রহমান লাজু। ছবি: আজকের পত্রিকা

তৈয়বুর রহমান লাজু (৪৮)। ছোটবেলা থেকেই গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। কৃষির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে শাকসবজি ও সাথি ফসল চাষ করে এখন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। গত তিন বছরে কৃষির ওপর মনোনিবেশ করে বদলে ফেলেছেন নিজের জীবন, প্রেরণা জুগিয়েছেন এলাকাবাসীকেও।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা লাজুর বাবা আকবর আলী একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। বাবার অবসরের পর সংসারের হাল ধরেন লাজু। ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেন পৈতৃক জমিতে চাষাবাদ। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক লাজু এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন, বর্তমানে আবারও পড়ালেখা শুরু করে স্নাতক করছেন। কৃষি থেকে বছরে তাঁর আয় প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা।

লাজু জানান, কৃষি নিয়ে তিনি গত তিন বছর ধরে নিয়মিত পড়াশোনা করছেন। ইউটিউব থেকে কচুর লতি চাষ সম্পর্কে জানতে পেরে নিজে ৩০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। এতে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০–৩৫ হাজার টাকার লতি বিক্রি করেছেন এবং বাকি ফসল থেকে আরও দুই-আড়াই লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন। ফসল শেষে গাছ ও চারা বিক্রির সম্ভাবনাও রয়েছে।

কচুর লতির পাশাপাশি লাজু যৌথ বাগান গড়ে তুলেছেন। ৭৭ শতাংশ জমিতে ২৩০টি গৌরমতি আমগাছ ও ৬০০টি পেয়ারাগাছের সমন্বয়ে একটি বাগান করেছেন। আরেকটি ৭৫ শতাংশ জমিতে ৩৬০টি বারি-৪ জাতের আমগাছের মাঝে ১ হাজার ২০০ বস্তায় আদা চাষ করছেন। এই মৌসুমে এখান থেকে দেড় লাখ টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ শতাংশ জমিতে শরিফা ও পেঁপে চাষ করেছেন, যেখানে ৪৬টি শরিফা ও ১৬১টি পেঁপেগাছ রয়েছে।

বসতবাড়ির কাছেই নিজ জমিতে কচুর লতি চাষ শুরু করেছেন লাজু। তার জমিতে তিনি ছাড়াও দুই জন লোক দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বসতবাড়ির কাছেই নিজ জমিতে কচুর লতি চাষ শুরু করেছেন লাজু। তার জমিতে তিনি ছাড়াও দুই জন লোক দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ছাড়া ২০০টি বরই গাছ, কলাবাগান, গরুর খামার এবং সেখান থেকে উৎপাদিত গোবর দিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির হাউজও তৈরি করেছেন। বাগান নজরদারিতে রাখতে বসিয়েছেন সিসি ক্যামেরা।

লাজুর কৃষিকাজে সহায়তা করেন স্ত্রী তৌহিদা বেগম ও ছেলে তৌফিক এলাহী। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও তিনি নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আরও এক একর জমিতে কচুর লতি চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি।

তার সাফল্য দেখে এলাকার নারীরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সাবেক ইউপি সদস্য নুরবানু তাঁর দেখাদেখি ২০ শতাংশ জমিতে মালটা, আম, আদা ও পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি। কৃষক আবুল কালামসহ আরও অনেকে এখন লাজুর পরামর্শে কৃষিতে মনোনিবেশ করছেন।

এ ছাড়া তরুণ কৃষকদের নিয়ে তিনি একটি ফেসবুক গ্রুপ চালু করেছেন, যেখানে কৃষিবিষয়ক নানা তথ্য আদান-প্রদান হয়। পাশাপাশি তিনি একজন ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবেও সফলতা পেয়েছেন। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে সেখান থেকেও আয় করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, ‘তৈয়বুর রহমান লাজু একজন অনুকরণীয় কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন। যৌথ বাগান ও সাথি ফসল চাষে আমরা তাঁকে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি। এটি একটি লাভজনক এবং টেকসই পদ্ধতি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হলুদ সরিষা ফুলে ভরে উঠেছে মাঠ, কৃষকের বাড়তি লাভের আশা

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
সরিষা ফুলের খেত। ফকিরহাটের বেতাগা গ্রামে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সরিষা ফুলের খেত। ফকিরহাটের বেতাগা গ্রামে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাঠজুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুল। ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছি। মাঠে কাজে ব্যস্ত কৃষক। আজ শনিবার সকালে বাগেরহাটের ফকিরহাটের বেতাগা গ্রামে এই দৃশ্য দেখা যায়।

আমন ধান কাটার আগেই বিনা চাষে ও রিলে পদ্ধতিতে আগাম সরিষা চাষ করে কৃষকেরা এবার বাড়তি লাভের স্বপ্ন দেখছেন। মাঠজুড়ে ভরে ওঠা সরিষা ফুল ভালো ফলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ফকিরহাটে ১৬৩.৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১৮০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ১ দশমিক ২ টন ধরে মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১৬ টন। তবে মাঠের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে। উপজেলার ৩০০ জন কৃষককে বিনা মূল্যে ১ কেজি সরিষা বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি পটাশ সার বিতরণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবাদ হওয়া উল্লেখযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-২০, বিনা সরিষা-৯ ও বিনা সরিষা-১১।

ফকিরহাটের বিভিন্ন ব্লকের কৃষক জসিম শেখ, মিঠুন দাস ও তপন দাস জানান, একই জমিতে বারবার এক ফসল চাষ করলে জমির উর্বরতা কমে যায়। কৃষি অফিসের পরামর্শে তাঁরা আমন ও বোরো ধানের মাঝখানে সরিষা চাষ শুরু করেছেন। এতে মাটির উর্বরতা বজায় থাকছে, পাশাপাশি কম শ্রম ও কম খরচে বাড়তি ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হচ্ছে।

বেতাগা গ্রামের কৃষক পরেশ দাস ও সুধাংশু দাস জানান, আমন ধান থাকা অবস্থাতেই তাঁরা জমিতে বিনা চাষে সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেন। সেই সরিষায় এরই মধ্যে ফুল এসেছে। যখন অন্য কৃষকেরা জমি চাষ শুরু করছেন, তখন তাঁদের খেতে সরিষার ফুল ও ফলন গঠন শুরু হয়েছে। আগাম সরিষা আহরণের পর একই জমিতে আবার বোরো ধান চাষ করবেন তাঁরা। এতে বছরে একটি অতিরিক্ত ফসল পাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি চাষ, সার এবং ওষুধের খরচও কমবে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপুল মজুমদার জানান, অধিক লাভজনক হওয়ায় বিনা চাষে সরিষা আবাদে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা এই পদ্ধতিতে চাষ করে সফল হয়েছেন, তাঁদের দেখে অন্য কৃষকেরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সরিষা এখন কৃষকের জন্য লাভজনক একটি মধ্যবর্তী ফসল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহও বেড়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে হৃদরোগবিষয়ক সম্মেলন শুরু ১৫ ডিসেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আন্তর্জাতিক কার্ডিওভাসকুলার কনফারেন্স ‘কার্ডিকন-২০২৫’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. সন্দীপন কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আন্তর্জাতিক কার্ডিওভাসকুলার কনফারেন্স ‘কার্ডিকন-২০২৫’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. সন্দীপন কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম সোসাইটি অব ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির (সিএসআইসি) উদ্যোগে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কার্ডিওভাসকুলার কনফারেন্স ‘কার্ডিকন-২০২৫ ’। ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশি-বিদেশি ৫৫০ শতাধিক চিকিৎসক অংশগ্রহণ করবেন। উপস্থাপন করা হবে শতাধিক গবেষণাপত্র।

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. সন্দীপন কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘শ্রেষ্ঠত্বের দিকে পদক্ষেপ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ সম্মেলনে হৃদরোগ ব্যবস্থাপনার মৌলিক, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আয়োজকেরা জানান, সম্মেলনে পর্তুগাল থেকে অধ্যাপক ফুয়াসটু জে পিন্টু, ইতালি থেকে অধ্যাপক এন্থোনিও কলোম্বো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডা. রফিক আহমেদ, মালয়েশিয়া থেকে অধ্যাপক ডা. সাজলি সাহলান বিন কাসিম, ভিয়েতনাম থেকে ডা. ফেম নাত মিনহ, পাকিস্তান থেকে ডা. গোলাম হুসাইন সোমরু, নেপাল থেকে ডা. অরুণ মাসকেই এবং ভারত থেকে অধ্যাপক অশোক শেঠসহ বিভিন্ন দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ অংশ নেবেন। এ ছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরাও সম্মেলনে তাঁদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করবেন।

সভায় জানানো হয়, কার্ডিকন সেন্ট্রাল অর্গানাইজিং কমিটির কো-অর্ডিনেটর ডা. কাজী শামীম আল মামুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন কার্ডিকন সেন্ট্রাল অর্গানাইজিং কমিটির সভাপতি ডা. মো. নূর উদ্দিন তারেক, সিএসআইসি সভাপতি ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরী, অর্গানাইজিং কমিটির সেক্রেটারি ডা. আ ই ম নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীর, সিএসআইসি জেনারেল সেক্রেটারি ডা. আনিসুল আউয়াল এবং সিএসআইসি জয়েন্ট সেক্রেটারি ও কার্ডিকন অর্গানাইজিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এস এম ইফতেখারুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি রাজাকারের আস্ফালন দেখার জন্য নয়: মেঘমল্লার বসু

­যশোর প্রতিনিধি
যশোরে ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে মেঘমল্লার বসু। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোরে ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলনে মেঘমল্লার বসু। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি রাজাকারের আস্ফালন দেখার জন্য নয়। আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে যশোর শহরের টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে ছাত্র ইউনিয়ন যশোরের ১৩তম সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ যে লড়াই, সেই লড়াইকে পূর্ণতা দেওয়ার কথা বলেই জুলাই আন্দোলনে নেমেছিল জনগণ। কিন্তু একদল বিপথগামী বাংলাদেশবিরোধী শক্তি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এই চব্বিশকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড় করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলায় জেলায় মহল্লায় তাদের যে অপতৎপরতা, সেটা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সব জায়গায় বোঝানোর চেষ্টা করছে, জুলাই একাত্তরের লড়াইয়ের উল্টো। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কেউ যদি ফ্রান্স-আমেরিকায় বসে বলে, বাংলাদেশের শহীদ সংখ্যা দুই হাজার, তাহলে তার মোকাবিলা হবে রাজপথে। তার মোকাবিলা হবে বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিকভাবে।’

মানুষের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জনগণ জুলাইয়ে রক্ত দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন মেঘমল্লার বসু। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম তখন একাত্তরে যুদ্ধের প্রশ্নে যারা বলেছিল, যারা একাত্তরে যুদ্ধে যাচ্ছে, তারা ভারতের দালাল, হিন্দুদের দালাল, সেই একই গোষ্ঠী ২০২৫ দাঁড়িয়ে এই ধর্ম বিক্রির রাজনীতি করছে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বাংলাদেশ বহু ধর্মের, মতের দেশ। সেখানে যে যার মতো ধর্ম পালন করবে। তাই কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারবে না কে কিসের ধর্ম পালন করবে। ধর্ম চর্চার অধিকার মানুষের নাগরিক অধিকার, মানুষের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জুলাইয়ে রক্ত দিয়েছিলাম।’

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সমালোচনা করে ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সরকার এল, সেই সরকার প্রথমে অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। আওয়ামী লীগের বৈদেশিক নীতি আর এই দেশে চলবে না। আমরা এমন নীতি চাই, যেখানে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে সমমর্যাদাপূর্ণ। বাস্তবে আমরা দেখছি, ভারতের সঙ্গে যেসব অসমচুক্তি হয়েছে, সেই অসমচুক্তি একটিও দূর হয়নি। আদানির কাছ থেকে বেশি বেশি বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে। রামপাল চুক্তি এখনো রয়েছে, ভারতের কাছে আম-ইলিশ পাঠিয়ে কূটনীতিক রাজনীতিক এখনো জারি রাখা হয়েছে। সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের কাছে দেশ বিক্রির যে পাঁয়তারা, সেটা অব্যাহত রয়েছে। দেশবিরোধী সকল শক্তিকে রুখে দিতে ছাত্র ইউনিয়ন সব সময় রাজপথে থাকবে।’

যশোর জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি নাজিফা জান্নাত, সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, সিপিবি যশোর জেলা সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবু হাসান, উদীচী যশোর সংসদের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, জেলা বাসদ নেতা ইমরান খান, যশোরের ১৩তম সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ। এর আগে বিকেলে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের লাশ হস্তান্তর

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের লাশ আট দিন পর দেশে এসেছে। আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া বিজিবির ৪৭ ব্যাটালিয়ন এবং ভারতের বিএসএফের ১৪৬ ব্যাটালিয়নের মধ্যে এক পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি হস্তান্তর করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া বিজিবি-৪৭ ব্যাটালিয়ন।

নিহত যুবক হলেন শান্ত ইসলাম (২৫)। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের শিপন ইসলামের ছেলে।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধীন আশ্রয়ণ বিওপি এলাকার সীমান্ত দিয়ে একদল চোরাকারবারি ১৪৬ ব্যাটালিয়ন বিএসএফের নিউ উদয়া ক্যাম্পের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১৫৪/৩-এস থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। এ সময় নিউ উদয়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের বাধা দিলে চোরাকারবারিরা বিএসএফ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।

বিএসএফ সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়লে শান্ত ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় শান্তকে ভারতের করিমপুর রুরাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

শান্ত ইসলামের মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে একাধিক আলোচনা ও পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ৮ ডিসেম্বর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পর আজ শনিবার সন্ধ্যায় জামালপুর বিওপি-সংলগ্ন সীমান্ত পিলার ১৫২/৭-এস এলাকায় কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ভারতীয় পুলিশ দৌলতপুর থানা-পুলিশের কাছে শান্ত ইসলামের লাশ হস্তান্তর করে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের লাশ আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভারতের পুলিশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত