Ajker Patrika

প্রধান শিক্ষক, অফিস সহকারী ও প্রতিষ্ঠাতার দুর্নীতি-জালিয়াতি

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ১২
প্রধান শিক্ষক, অফিস সহকারী ও প্রতিষ্ঠাতার দুর্নীতি-জালিয়াতি

রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ ও অফিস সহকারী মো. নুরুল ইসলাম এবং বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা মো. খোরশেদ আলম মাদবরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

আজকের পত্রিকার দীর্ঘ অনুসন্ধানে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়টির সব শিক্ষকের নামে ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য জনতা ব্যাংকের উত্তরা করপোরেট শাখায় প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) জন্য পৃথক সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। পিএফের টাকা প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ ও অফিস সহকারী নুরুল ইসলামের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা যৌথভাবে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকদের ৫৪ মাসের প্রায় ১৫ লাখ টাকা ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন, যার মধ্যে সিনিয়র শিক্ষক আলমাছ উদ্দিনের ৪৩ হাজার ২০০ টাকা, শামসুল হকের ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা, সিনিয়র শিক্ষিকা তাসলিমা আখতারের ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা, জিয়াসমিন ফারজানার ৪৩ হাজার ২০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেনের ৩৪ হাজার ৫৬০ টাকা, আতিকুর রহমানের ৪৩ হাজার ২০০ টাকা টাকা আত্মসাৎ করার ব্যাংক স্টেটমেন্ট আজকের পত্রিকার হাতে রয়েছে। অন্যদিকে ২০২০ সালে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিচয়পত্রের নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে, কিন্তু কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি। 

এ ছাড়া বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামাদ ও অফিস সহকারী নুরুল যোগসাজশ করে করোনার অজুহাত দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সব শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের এক বছরের বেতনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ঠিকই আদায় করা হয়েছে। 

অন্যদিকে ছয়জন শিক্ষকের বকেয়া বেতনের একটি তালিকা আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। সেখানে সিনিয়র শিক্ষক আলমাছ উদ্দিনের তিন বছরে ২ লাখ ১২ হাজার, শামসুল হকের দুই বছরে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা, তাসলিমা আখতারের দুই বছরে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা, জিয়াসমিন ফারজানার দুই বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেনের দুই বছরে ৯৩ হাজার ১২০ টাকা এবং আতিকুর রহমানের দুই বছরে ১ লাখ ৬ হাজার ২০০ টাকা বকেয়ার দাবি করা হয়েছে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক স্টেটমেন্ট তুলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাতের তথ্য জানতে পারেন। পরবর্তীতে সময়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আটজন শিক্ষক-শিক্ষিকা অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে গত ২২ মার্চ স্থানীয় সংসদ সদস্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের উপপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেন। 

কিন্তু তবু কোনো সুরাহা না পেয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিক্ষক আলমাছ উদ্দিন চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে একটি মামলা (সিআর মামলা নং-১০৬ / ২২) করেন। বাদী ওই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে এবং তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলার বাদী আলমাছ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা আগে জানি নাই বুঝি নাই, শুধু জমার শিটে স্বাক্ষর করেছিলাম। পরে একেক করে সবাই ব্যাংক স্টেটমেন্ট তোলার পর জানছি। এ ঘটনায় সব জায়গায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা না পেয়ে আদালতে গিয়ে মামলা করছি।’ 

আলমাছ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবাদ করায় গত ২৬ মার্চ স্কুলের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে অফিসে ডেকে নিয়ে সবার সামনেই আমাকে বলেছে, ‘‘আগামীকাল থেকে আপনি আর স্কুলে আসবেন না। আসলে ফুটবলের মতো লাথি দিয়ে বের করমু।’’ তাই তাঁদের ভয়ে কেউ সহজে মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে চায় না। প্রতিবাদ করায় আমাকে মৌখিক কয়েকবার সাসপেন্ড করছে, আবার জয়েন্ট করছে।’ 

মামলার বাদী অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকা আত্মসাৎ করার ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকার পরও পিবিআই অফিসার চার্জশিট নিয়ে পাঁয়তারা করছেন। দেয়-দিচ্ছে এমন করছে। আবার চার্জশিটে টাকা আত্মসাতের বিষয় দিতে পারবে না তা বলছে।’ 

অন্যান্য শিক্ষক জানান, কেউ মুখ খুললেই চাকরি থাকে না। খণ্ডকালীন শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করে দেওয়া হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবকিছুই চলে মৌখিক আর প্রভাবের বলে। এভাবেই তারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।’ 

টাকা আত্মসাৎ প্রসঙ্গে বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি গাড়িতে আছি। পরে কথা বলি।’ পরে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তারপর তাকে খুদেবার্তা পাঠালে তিনি বলেন, ‘আমি গাজীপুরে। মা অসুস্থ। পরে বলি।’ পরে আবার খুদে বার্তায় তিনি বলেন, ‘মামলা তদন্তাধীন। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়।’ 

অন্যদিকে অফিস সহকারী মো. নুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিহিংসার কারণে মামলা করা হয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা কেউ আত্মসাৎ করেনি, বকেয়া রয়েছে। আসতে আসতে দিয়ে দেওয়া হবে।’ 

প্রতিষ্ঠানটিন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আলহাজ্ মাহবুবুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে তাঁকে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি। 

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা খোরশেদ আলম মাদবরের বিরুদ্ধে অন্যের জমি জালিয়াতি করে বিক্রি, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, মার্কেটের দোকান দখল, মসজিদের জমি দখল, বাউন্ডারি ভাঙচুর, হামলা, আপন বোনকে এলাকাছাড়া, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ভাই-বোনদের বঞ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দানসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, খোরশেদ আলম তারই আপন ভাই আব্দুল আজিজ জজের স্বাক্ষর জাল করে বসতবাড়ির চার কাঠা জমি ফকির মো. আবুল হাশেম ও মো. জালাল উদ্দিনের কাছে ১৯৮০ সালে বিক্রি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ২০২১ সালে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুটি মামলা (সিআর মামলা নং-৮৫৯ / ২০২১ এবং ৮৬২ / ২০২১) করেন। মামলার তদন্তে সিআইডি জানায়, কথিত জাল দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রির সময় আব্দুল আজিজ নাবালক ছিলেন। তার দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রির কোনো আইনগত ক্ষমতা ছিল না। আব্দুল আজিজের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে দলিল লেখক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের সহযোগিতায় বাদীর দস্তখত ও টিপ জাল করে দলিলটি করা হয়েছে। 

ওই দুই মামলায় সিআইডির পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন ২০২২ সালের ১৬ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। পরে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় চলতি বছরের ৮ জুন বাউনিয়া থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন খোরশেদ আলম মাদবর। 

রাতের আঁধারে বাউনিয়া মাদবরবাড়ির বাইতুর রশিদ জামে মসজিদের বাউন্ডারি এবং অজুখানা ও বাথরুমের ভেঙে ফেলার অভিযোগে খোরশেদের বিরুদ্ধে ঢাকার প্রথম সহকারী জজ আদালতে মামলা (সিআর মামলা নং-১০১ / ২০২০) এবং একই অভিযোগে তুরাগ থানায় তিনটি জিডি রয়েছে। বাউনিয়ার ডায়না সুপার মার্কেটে অন্যের দোকান দখল করার অভিযোগে একটি জিডি রয়েছে। 

এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে আব্দুল জলিল মাদবর একটি জমি ক্রয় করেন। এর কয়েক মাস পরেই তিনি আট ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করেন। তখন একমাত্র সাবালক খোরশেদ আলম ভাই-বোনদের বঞ্চিত করে একাই ‘আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়’-এর কাছে ওই জমি দান করে প্রতিষ্ঠা হন। এ নিয়ে আব্দুল আজিজ জজ ও সাইদুল আলম ২০২০ সালে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেন (সিআর মামলা নং-৭৬৫ / ২০২০)। 

বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়শুধু তাই নয়, খোরশেদ মাদবরের এক ভাই ক্যানসারের রোগী, অন্য দুই ভাই পঙ্গু এবং পঙ্গুর মধ্যে একজন পাগলপ্রায়। তবু সম্পত্তির লোভে পঙ্গু ও অসুস্থ ভাইদের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা (নং-৯১ / ২০) করেন খোরশেদ। পরে মামলাটির তদন্ত শেষে সিআইডি ফাইনাল রিপোর্ট দিলে আদালত তা খারিজ করে দেন। এ ছাড়া সিটি জরিপ চলাকালে খোরশেদ আলম তার পঙ্গু ও অসুস্থ তিন ভাইকে ঠকিয়ে পৈতৃক সম্পত্তির আড়াই শ অযুতাংশের বেশি তার নামে রেকর্ড করিয়ে নেন। এ ঘটনায় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা (সিআর মামলা নং-৮৬ / ২০১৯) বিচারাধীন রয়েছে। 

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী আব্দুল আজিজ জজ বলেন, ‘আমাদের খোরশেদ আলম মাদবর মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমার স্বাক্ষর জাল করে সম্পত্তি দখল করেছে। ছোট বোন রোকেয়া বেগম ময়নাকে অত্যাচার করে নামমাত্র দাম দিয়ে ক্রয় করে তাঁকে এলাকাছাড়া করেছে। সেই শোকে মারা গেছেন ময়না। আবার পারিবারিক উপার্জনের টাকা দিয়ে একার নামে কোটি কোটি টাকার জমি কিনেছেন।’ 

অভিযোগ প্রসঙ্গে হাজি মো. খোরশেদ আলম মাদবর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আপনি এসব তথ্য কোথায় পাইছেন, কে দিয়েছে? আপনি রিপোর্ট করলে কী হবে? আপনি আমার সামনে আসেন, আইস্যা তারপর কথা বলেন।’ 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের (অর্গানাইজড ক্রাইম) এসআই নুরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার তদন্তে আমরা মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত এবং ভয়ভীতির হুমকি-ধমকির বিষয়টি পেয়েছি। কিন্তু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অডিট রিপোর্ট ছাড়া বলতে পারছি না। অডিট রিপোর্টে তারা দেখায়নি। অডিট রিপোর্ট হয়তো টাকা-পয়সা খাওয়াইয়া করে দিছে।’ এক বছরের পাওনা বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্কুলের ফান্ডে যদি টাকা আসে, আর যদি শিক্ষকদের বেতন না দেওয়া হয়, তাহলে দুর্নীতির বিষয়টি বলা যাবে।’ 

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মজিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে আসেনি। মামলা হলে তো প্রতিকার হবেই। আর টাকা যদি প্রতিষ্ঠানে থাকে, তাহলে আগে যে হারে বেতন পাইতেন, সেই হারেই দিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাঈদ আল নোমানের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
কর্মী-সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান বিএনপি প্রার্থী সাঈদ আল নোমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
কর্মী-সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান বিএনপি প্রার্থী সাঈদ আল নোমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনের বিএনপির প্রার্থী সাঈদ আল নোমানের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থীসহ সর্বোচ্চ ৫ জন উপস্থিত থাকতে পারবেন, এমন নির্দেশনা থাকলেও শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেছেন তিনি।

আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে মনোনয়ন দাখিল করতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যান সাঈদ আল নোমান। এ সময় তাঁর সঙ্গে শতাধিক নেতা-কর্মী ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশ বাধা দিলে দুই পক্ষের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে সাঈদ আল নোমান কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। তবে শুধু সাঈদ আল নোমানই নন, মনোনয়ন জমা দিতে আসা প্রায় সব প্রার্থীই কর্মী-সমর্থক পরিবেষ্টিত হয়ে এসেছেন।

এ ব্যাপারে সাঈদ আল নোমান বলেন, ‘এটা একদিকে যেমন প্রাপ্তির, অন্যদিকে বিব্রতকরও। এটা বাবার সময় থেকে দেখে আসছি।’ এমন পরিস্থিতির জন্য বিব্রতবোধ করার কথাও জানান তিনি।

নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার সময় প্রার্থী বা তাঁর প্রস্তাবক, সমর্থকসহ পাঁচজনের বেশি উপস্থিত থাকতে পারবেন না; এ সময় কোনো ধরনের মিছিল, শোডউন করলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. মো. জিয়াউদ্দিনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাঁর একান্ত সচিব মো. রিদুয়ানুল ইসলাম জানান, ‘স্যার (বিভাগীয় কমিশনার) মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে ব্যস্ত আছেন। এই বিষয়ে তিনি পরে কথা বলবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের অবরোধ থেকে ‘খেলনা পিস্তলসহ’ যুবক আটক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আটক আরাফাত জামান। ছবি: ডিএমপি
আটক আরাফাত জামান। ছবি: ডিএমপি

রাজধানীর শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি থেকে ‘খেলনা পিস্তলসহ’ এক যুবককে আটক করা হয়েছে। আজ সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ওই যুবককে আটক করা হয়।

আটক যুবকের নাম মো. আরাফাত জামান (৩৯)। তিনি ধানমন্ডীর জিগাতলা এলাকার বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কর্মসূচি চলাকালে ইনকিলাব মঞ্চের স্বেচ্ছাসেবক ও উপস্থিত সাধারণ জনতা সন্দেহজনক আচরণের কারণে ওই যুবককে আটক করে। পরে তাঁর হেফাজত থেকে একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয় এবং পরে পুলিশে দেওয়া হয়।

উদ্ধার করা পিস্তল। ছবি: ডিএমপি
উদ্ধার করা পিস্তল। ছবি: ডিএমপি

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে অবরোধ কর্মসূচি থেকে ইনকিলাব মঞ্চের স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ জনতা খেলনা পিস্তলসহ একজনকে আটক করে। ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাড়কাঁপানো শীতে চা-শ্রমিকদের দুর্ভোগ, পরনে নেই গরম কাপড়

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
ঠান্ডার মধ্যে শীতবস্ত্র ছাড়াই কাজে বের হয়েছেন বাগানের চা-শ্রমিক নারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠান্ডার মধ্যে শীতবস্ত্র ছাড়াই কাজে বের হয়েছেন বাগানের চা-শ্রমিক নারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পৌষের মাঝামাঝিতে হাড়কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজারের জনজীবন। তীব্র শীতে খেটেখাওয়া মানুষ, বিশেষ করে জেলার ৯২টি চা-বাগানের শ্রমিকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই কাজে যেতে হচ্ছে তাঁদের। শীত থেকে বাঁচার মতো প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ও নেই শ্রমিকদের। একই সঙ্গে ঠান্ডার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বাগানের বয়স্ক থেকে শিশুরা।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রোববার ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে।

সূর্যের দেখা না মেলায় ও ঘন কুয়াশা থাকায় মৌলভীবাজারে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এই ঠান্ডার মধ্যেই গাছ-গাছালিতে ঘেরা চা-বাগানগুলোয় সকাল থেকে কাজে নেমে পড়ছেন চা-শ্রমিকের। তাঁদের পরনে নেই পর্যাপ্ত গরম কাপড়। অনেকে ঠান্ডার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

চা-শ্রমিকেরা জানান, শীতের কারণে অনেক কষ্টে পড়েছেন তাঁরা। বাগান কর্তৃপক্ষ তাঁদের কোনো শীতবস্ত্র দেয় না। আর নিজেদের স্বল্প আয় দিয়ে গরম কাপড় কেনার সাধ্যও তাঁদের নেই। রাতে ঠান্ডার জন্য অনেকেই ঘুমাতে পারেন না। শীত নিবারণে ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাত কাটাতে হয়। কেউ কেউ বস্তা বিছিয়ে ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন।

শমশেরনগর চা-বাগানের চা-শ্রমিক গীতা রবিদাস ও মায়া রবিদাস বলেন, ‘এই শীতে কাজ করা অনেক কষ্টের। আমরা চা-শ্রমিকেরা কোনো শীতবস্ত্র পাই না। বাগানের শ্রমিকদের অবস্থা খুবই করুণ। ঠান্ডায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

চা-শ্রমিকনেতা সীতারাম বিন বলেন, ‘প্রতিবছর শীতের সময় চা-শ্রমিকদের বেশি কষ্ট হয়। এমনিতেই শ্রীমঙ্গলসহ পুরো মৌলভীবাজার জেলায় শীত বেশি পড়ে। এ জেলায় ৯২টি চা-বাগান রয়েছে। কোনো বাগানের শ্রমিকদের পর্যাপ্ত গরম কাপড় নেই। প্রতিদিন ঠান্ডার কারণে অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন চা-শ্রমিকেরা। বিশেষ করে শীতে বাগানের শিশু ও বৃদ্ধরা অনেক কষ্টে আছেন।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরেই এই অঞ্চলে শীতের দাপট বেড়েছে। বিশেষ করে রাতে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও কয়েক দিন একই রকম তাপমাত্রা থাকবে।

শীতের দাপট বাড়ার সঙ্গে ঠান্ডার রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। অনেকেই চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে ছুটছেন। কেউ প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান বলেন, শীতের মধ্যে সবাইকে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরতে হবে। বিশেষ করে এ সময় শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে বেশি করে গরম কাপড় পরিধান করে রাখতে হবে।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তৌহিদুজ্জামান পাভেল বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। কেউ আবেদন করলে তাদের শীতবস্ত্র দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে সদস্যপদ স্থগিত জামায়াত নেতার মনোনয়নপত্র দাখিল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে সদস্যপদ স্থগিত হওয়া জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। একই আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কামরুল হাসান মিলন।

এ ছাড়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আখতারুল আলম ফারুক, খেলাফত মজলিসের মো. রফিকুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।

অপর দিকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন প্রয়াত প্রকৌশলী শামছ উদ্দিনের স্ত্রী অধ্যক্ষ আখতার সুলতানা, ছেলে তানভীর আহমেদ রানা ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল করিম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম জানান, এই আসনে নির্বাচনের জন্য ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, তাঁর মধ্যে আটজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কামরুল হাসান মিলনকে মনোনয়ন দিলে অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সমর্থকেরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেন। তাঁরা জামায়াত মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন ও অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সমর্থনে ‘ফুলবাড়িয়া ঐক্যবদ্ধ জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ-মিছিল করেন।

এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সদস্যপদ (রুকনিয়াত) স্থগিত করে জামায়াতে ইসলামী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দল আমাকে মূল্যায়ন না করলেও মানুষের ভালোবাসায় প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে সাধারণ মানুষ আমার ওপর আস্থা রাখবে।’

উল্লেখ্য, একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসন। মোট ভোটার ৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার ৪৭৯ জন পুরুষ ও ২ লাখ ৭ হাজার ৩৬২ জন নারী এবং হিজড়া দুজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

নাহিদকে শুভকামনা জানিয়ে সরে গেলেন জামায়াতের আতিক

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত