Ajker Patrika

মায়েদের সেদিন মিথ্যে বলেছি

কামরুল হাসান
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২১, ১০: ৫১
মায়েদের সেদিন মিথ্যে বলেছি

ঢাকা: ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে যে বাড়ির নিচে এসে দাঁড়ালাম, সেখানে উৎকণ্ঠিত স্বজনদের ভিড়। ছিলেন ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মা সিমিন হোসেন, তাহমিদের বাবা শাহরিয়ার খান, ফাইরুজ মালিহার বাবা বোরহান উদ্দীন আর অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। এ বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে হোলি আর্টিজান বেকারি–যেখানে তাঁদের সন্তানেরা জিম্মি হয়ে আছেন। সবারই ভরসা হাতের মোবাইল ফোন। হাজারো উড়ো খবর আসছে সে ফোনে। একটি ফোন এলেই উদ্বিগ্ন মুখগুলো মলিন হয়ে যাচ্ছে অজানা শঙ্কায়। সবার অপেক্ষা কখন সন্তানেরা ফিরে এসে ডাকবেন, মা ও মা…।

১ জুলাই, ২০১৬। রোজকার মতো কাজে ব্যস্ত ছিলাম অফিসে। প্রথম ফোন করলেন আজিজা আহমেদ পলা, প্রথম আলো ট্রাস্টের তৎকালীন পরিচালন কর্মকর্তা। হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সময় তিনি ছিলেন পাশের কোনো বাড়িতে। বললেন, হোলি আর্টিজানে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। দ্রুত যেন রিপোর্টার পাঠাই। এরপর নানা মাধ্যম থেকে খবর আসতে থাকে। ঘটনাও বড় হতে থাকে। প্রথম সংস্করণের কাজ শেষ করে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে শুনি পুলিশের ওপর হামলা হয়ে গেছে। র‍্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেছে। কাউকে ত্রিসীমায় ঘেঁষতে দিচ্ছে না। সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে কোনোমতে বেষ্টনীর ভেতরে ঢুকে দেখি, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকজন চুপচাপ। সবাই উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন। 

আমি এসে দাঁড়ালাম গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির নিচের তলায়। সামনে কয়েকটি বাড়ির পরই হোলি আর্টিজান বেকারি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সে বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলেছেন।

হাতের ফোন বাজছে তো বাজছেই। ফোন বাজলেই এগিয়ে আসা মানুষের প্রশ্ন, কিছু জানা গেল? কেউ কি বেরোতে পারছে? জিম্মিকারীরা কি কোনো শর্ত দিল? আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। ফোন পকেটে রেখে বলি, কেউ কিছু বলতে পারছে না।

সংবাদকর্মীদের সবাই চেষ্টা করছেন ভেতরে কী হচ্ছে তা জানার। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, ভেতরে আটকে থাকা হাসনাত করিম নামের এক ব্যক্তি তাঁর চাচা আনোয়ারুল করিমকে ফোন করেছিলেন। সেই ফোনের সূত্র ধরে আনোয়ার করিম পুলিশকে জানিয়েছেন, হোলি আর্টিজানের ভেতরে জঙ্গিরা লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছে। পুলিশ গুলি চালালে তারাও সবাইকে মেরে ফেলবে। প্রথম খবর বলতে এটা ছিল নির্ভরযোগ্য সূত্র।

একটু পর র‍্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আমাদের বললেন, ‘জঙ্গিরা ভেতরে আছে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার চেষ্টা চলছে।’ এর বেশি কেউ কিছু বলতে পারেন না। ওদিকে অফিস থেকে তাড়া দিচ্ছে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানোর। আমরা আটকে পড়া লোকজনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন হোসেনের সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে যারেফ হোসেনও আছেন। সিমিন হোসেনকে প্রথম দেখায় হকচকিয়ে যাই। পরনে ঘরোয়া পোশাক, পায়ে হাওয়াই চপ্পল। কাঁধের আটপৌরে ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছছেন। বললেন, তাঁর ছোট ছেলে ফারাজ ভেতরে আটকে আছে। কেমন আছে, কিছুই জানেন না। বলতে বলতে চোখ মুছলেন সিমিন হোসেন। একটু দূরে ছিলেন যারেফ। মাকে আগলে রাখছেন তিনি। অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। তাঁরও একই প্রশ্ন। বিবর্ণ চেহারা নিয়ে এগিয়ে এলেন আফতাব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার খান। তাঁর সন্তান তাহমিদ ভেতরে আটকে আছে। মুঠোফোনে একটি ছবি দেখিয়ে বললেন, ‘ভাই, এটা আমার ছেলে। কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। একটু দেখবেন তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় কি না।’ আমরা মাথা নাড়ি, কিছু বলতে পারি না।

বৃষ্টি আরও বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বজনদের উৎকণ্ঠা। তাঁরা ক্ষুব্ধ ও ব্যাকুল। মাঝরাতের পর একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সকালে কমান্ডোরা আসবেন, তারপর অভিযান হবে। এখন অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই। বৃষ্টি মাথায় বসে থাকি আমরা।

রাত পৌনে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে থাকা র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান আবুল কালাম আজাদ (সিলেটে আতিয়া মহলে বোমা হামলায় নিহত) আমাকে ফোনে বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের মুখপাত্র ‘আমাক’ নিহত ব্যক্তিদের ছবিসহ খবর প্রকাশ করেছে। সেখানে ২০ জনের মৃতদেহ আছে। ফোন রেখে ‘২০ জন নিহত’ হয়েছে কথাটি মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সিমিন হোসেন ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। জানতে চান, কে এই খবর দিল, কতটা সত্যি সে খবর। অবিন্তার মা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকেন। মালিহার বাবা দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলেন। শাহরিয়ার খান আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকেন। আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি উদ্বিগ্ন ও অসহায় মা–বাবার এই ব্যাকুলতার কাছে হার মানি। ইচ্ছে করেই একটি মিথ্যে বলি, জীবনে তো কত মিথ্যে বলেছি। বললাম, যিনি ফোন করেছিলেন তিনি ধারণা থেকে বলছেন। হয়তো সেটা ঠিক নয়। কিন্তু সিমিন হোসেন নাছোড়। এগিয়ে আসেন তাঁর ছেলে যারেফ, তিনি মাকে বুঝিয়ে শান্ত করেন।

এভাবে ভোর হয়ে আসে। সিলেট থেকে আসা কমান্ডোরা অভিযান শুরু করে। একটি করে গুলির শব্দ হতে না হতেই আর্তনাদ করে ওঠেন আটকে পড়াদের স্বজনেরা। ঘণ্টাখানেক পর গুলির আওয়াজ থেমে যায়। ভেতরে কমান্ডো অপারেশন শেষ। শাহরিয়ার খানের মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। একটি নম্বর থেকে ছেলে তাহমিদ ফোন করেছেন। ছেলের কণ্ঠ শুনে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। গোয়েন্দারা বললেন, হোলি আর্টিজানের ভেতরে কেউ বেঁচে নেই। আমি খবর শুনে কথা হারিয়ে ফেলি। কী করব ভাবতে পারছি না। নিজেকে খুব অসহায় লাগে। অবিন্তার মা পাশেই ছিলেন। সব শুনে তিনি পাথর হয়ে যান।

সিমিন হোসেন বারবার বলেন, ‘আমার ছেলের খোঁজটা এনে দাও ভাই।’ আমি নীরব হয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকাই। আমার নীরবতার ভেতরে তিনি হয়তো সত্যিটা খুঁজে নেন। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেন না। অঝোর ধারা চোখ থেকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় মায়ের শেষ ভরসাটুকু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শরীয়তপুরে এনসিপির মশাল মিছিল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৩
শরীয়তপুর জেলা শহরে এনসিপির মশাল মিছিল
শরীয়তপুর জেলা শহরে এনসিপির মশাল মিছিল

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার প্রতিবাদে শরীয়তপুর জেলা শহরে মশাল মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ চত্বর থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় হাদি হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।

এনসিপির শরীয়তপুর জেলার সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার বলেন, ‘হাদি হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভিন্নমত দমন ও রাজনৈতিক কণ্ঠরোধের ধারাবাহিকতারই অংশ এই হত্যাকাণ্ড। দিনদুপুরে খুনিরা গুলি করে কীভাবে পালিয়ে গেল? এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা অবিলম্বে এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আমিন মোহাম্মদ জিতু বলেন, ‘এটি শুধু একজন ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যার বিচার না হলে তরুণ সমাজ রাজপথে আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

বিক্ষোভে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাণিজ্য থমকে আছে রেললাইনের অভাবে

  • ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি
  • সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়
আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার বহুল প্রতীক্ষিত রেললাইনের নির্মাণকাজ এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে। এক যুগ আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গেল মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরাবাসী বলছে, শত বছরের প্রতীক্ষিত রেললাইন নির্মিত হলে একদিকে যেমন সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বিকশিত হবে, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনে খরচ কমায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় সাতক্ষীরাকে রেললাইনে সংযুক্ত করে সুন্দরবন পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫৮ সালে সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়ক নির্মাণের সময় জমি অধিগ্রহণ করেও নির্মিত হয়নি রেললাইন।

দীর্ঘকাল পরে ২০১০ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় তৎকালীন সরকারপ্রধান নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানারেইল কোম্পানি লিমিটেড। সম্ভাব্যতা যাচাই করতে খরচ হয় ১১ কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়।

এরপর আবারও থেমে যায় রেললাইন নির্মাণের উদোগ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রেললাইন স্থাপনের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে যশোর রেলওয়ের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এরপর গত মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৫টি স্টেশনযুক্ত ৪২ কিলোমিটার রেললাইনের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরায় ২২ লাখের বেশি মানুষের বাস। এ জেলা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। সুন্দরবন, চিংড়ি, আম ও ভোমরা বন্দরের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, নৌপথ ও আকাশপথে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই জেলাবাসীর। রেললাইন নির্মিত হলে মৎস্য খাতের নতুন দিকের সূচনা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব সরকারকে দিই, সে ধরনের উন্নয়ন চোখে পড়ে না।’

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। তাই রেললাইন হলে ভোমরায় ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার বলেন, ‘জিআই পণ্য আম, চিংড়ি এবং ভোমরা স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ জরুরি। আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেললাইন নির্মাণের জন্য যত প্রচেষ্টা রয়েছে, সেটা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া:সেতুর খুঁটি নির্মাণেই মেয়াদ শেষ

  • আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালে মে মাসে
  • প্রথম দফায় ৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ এবং ওই বছরে ২০২৩ সালের অক্টোবরে কাজ শেষ করার কথা ছিল
  • নকশা পরিবর্তনের কারণে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা করা হয় এবং মেয়াদ শেষ হয় গত জুনে
  • ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা জেলহাজতে এবং তাঁদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত রয়েছে
আরিফ রহমান, ঝালকাঠি
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু। খুঁটি নির্মাণের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার আমুয়া ইউনিয়নে ধোপাবাড়ির খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু। খুঁটি নির্মাণের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া ইউনিয়নে হাসপাতালসংলগ্ন ধোপাবাড়ির খালের ওপর সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। দুই পাড়ে খুঁটি (পিলার) নির্মাণ করে বন্ধ রয়েছে কাজ। এতে পাশের ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতু ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নড়বড়ে ও ভাঙাচোরা ওই সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থী, নারী, শিশু ও হাসপাতালে আসা রোগীরা।

উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্তি কনস্ট্রাকশন এবং কবির ট্রেডার্স যৌথভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায়। সেতুটি নির্মাণে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্মাণকাজ ২০২২ সালের মে মাসে শুরু হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেতুর নকশা পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রায় ছয় মাস আগে মেয়াদ শেষ হলেও নির্মাণকাজ খুঁটি পর্যন্তই আটকে আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকেরা জেলহাজতে থাকা এবং তাঁদের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত রয়েছে। এ কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রকল্প প্রকৌশলী মিলন ঘরামি ও ব্যবস্থাপক মো. বাহাদুর হাওলাদার জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ পুনরায় শুরু করা হবে এবং তিন থেকে চার মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।

প্রকল্পের অগ্রিম কোনো বিল তোলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অগ্রিম কোনো বিল তোলেনি। তবে কাজের বেশ কয়েকটি মেমো তাঁদের কাছে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ধোপাবাড়ির খাল অনেক প্রশস্ত। এ জন্য স্থানীয়দের কাছে এটি নদী হিসেবে পরিচিত। খালটি বিষখালী নদীর সঙ্গে যুক্ত। খালের ওপর দীর্ঘদিন ধরে একটি কাঠের সেতু রয়েছে। এটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। নড়বড়ে হওয়ায় পথচারীরাও অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। সেতুটি শুধু আমুয়া ইউনিয়নের নয়, বরং পুরো কাঁঠালিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। সেতুটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলার একমাত্র আমুয়া হাসপাতাল, আমুয়া বন্দর ও তিনটি বড় বাজার। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই সেতু ব্যবহার করছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ী, নারী ও শিশু রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। স্কুলশিক্ষার্থীরা আতঙ্ক নিয়ে কাঠের সেতু পার হয়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে গিয়ে পরিবারগুলোর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

আমুয়ার জনপ্রতিনিধি নকিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুটি আমাদের এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বছরের পর বছর কাজ বন্ধ হয়ে আছে।’

শেখ ফজিলাতুন্নেছা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ভাঙাচোরা কাঠের সেতু দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দ্রুত কাজ শেষ করা প্রয়োজন।’

কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নিয়মিত তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় কাজ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঝালকাঠির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহের নান্দাইল: নদীর জায়গা দখল করে আ.লীগ নেতার মার্কেট

  • নরসুন্দা নদীর পাড় দখলের অভিযোগ
  • কর্তৃপক্ষ বলছে, সওজের জমি। নিজস্ব সম্পত্তি দাবি বাচ্চুর
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪৫
নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল ভবন। ময়মনসিংহের নান্দাইলের তারের ঘাট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতল ভবন। ময়মনসিংহের নান্দাইলের তারের ঘাট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের নান্দাইলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান বাচ্চুর বিরুদ্ধে নরসুন্দা নদীর পাড় দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। মুশুল্লি ইউনিয়নের তারের ঘাট বাজারসংলগ্ন নদীর জায়গা দখল করে দোতলা মার্কেট নির্মাণ করছেন তিনি।

হাবিবুর রহমান বাচ্চু মুশুল্লি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি তারের ঘাট বাজার পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

সরেজমিনে দেখা যায়, তারের ঘাট বাজারে নরসুন্দা নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সেতু রয়েছে। সেতুর পশ্চিম পাশে নদীর উপরে নির্মাণ হচ্ছে পাকা ভবন। সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে হাবিবুর রহমান বাচ্চুর ছেলে মো. ফয়সাল ছবি তোলার কারণ জানতে যান। এ সময় তিনি দাবি করেন, নদীর ওপর কোনো মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে না। নিজেদের জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক এমপি তুহিনের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছেন হাবিবুর রহমান বাচ্চু। অবৈধভাবে পাথর ব্যবসার পাশাপাশি দখল করেছেন সরকারি জায়গা। ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। তবে সরকার পতনের পর ভোল বদলে ফেলেন।

নদীর জায়গায় ভবন নির্মাণের বিষয়ে হাবিবুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘এই জমি আমার নিজস্ব সম্পত্তি। নদীর পাড়ের ভেতরে আমার আরও প্রায় ৫০ ফুট জমি আছে।’ তবে মুশুল্লি ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণাধীন স্থাপনাটি কোনো ব্যক্তিগত জমিতে নয়। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে পড়ে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বিজয় চন্দ্র বসাক বলেন, ‘সড়ক ও সেতুর দুই পাশে সওজের নিজস্ব জমি রয়েছে। সওজের জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হলে তদন্তের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে।’

নান্দাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা জান্নাত বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত