Ajker Patrika

উদ্বেগের সেই রাতের কথা 

শরিফুল হাসান
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২১, ১০: ৫২
উদ্বেগের সেই রাতের কথা 

ঢাকা: হঠাৎ করেই এলো ফোনটা। আমাদের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদের সেই কর্মকর্তার মুখটা বিষণ্ন হয়ে উঠল। ফোনটা শেষ করে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখে তিনি জানালেন, গুলশানে গোলাগুলি চলছে। পুলিশের একজন এএসপি, ওসিসহ অনেকেই আহত। এখুনি যেতে হবে। 

সেদিন ছিল শুক্রবার। ১ জুলাই, ২০১৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস আলোকিত। আমরা কয়েকজন মানুষ রাতে আড্ডা দিচ্ছিলাম যেখানে পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারকসহ আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার পরপরই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ফোনটা এল—গুলশানে ভয়াবহ কোনো হামলা হয়েছে। গোলাগুলি চলছে। আমাদের আড্ডা ভেঙে গেল। সবাই তখন দুশ্চিন্তায়। তবে আসলে ঠিক হয়েছে, কারওই জানা নেই। 

আমি তখন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আমিও ছুটলাম গুলশানের উদ্দেশ্যে। নিজের মোটরসাইকেলে। মাথায় তখন নানা প্রশ্ন ঘুরছে। গুলশানের কাছাকাছি গিয়ে দেখি অনেক পথ বন্ধ করে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। গুলশান-২ মোড়ে যাওয়ার পর দেখি পুলিশ, র্যাবসহ অনেকের গাড়ি ছুটছে। পিছু নিলাম। ততক্ষণে আরও কয়েকটা ফোনে জেনে গেছি, গুলশানের ৭৯ নম্বরের দিকের কোনো এক রেস্তোরাঁয় হামলা হয়েছে। বড় ঘটনা। 

রাত সাড়ে দশটার দিকে ৭৯ নম্বর সড়কের কাছাকাছি পৌঁছালাম। ততক্ষণে রেস্তোরাঁটির চারপাশে পুলিশ আর র‍্যাবের শত শত সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ শুরু হবে। সাংবাদিকদের ভীড়। একটু পরপর লাইভ। আমার সঙ্গে ছিলেন প্রথম আলোয় তখন আমার সহকর্মী কামরুল হাসান, অন্তু ও জিয়া ইসলাম। 

পুলিশ ও হোলি আর্টিজান থেকে পালিয়ে বের হওয়া কয়েকজনের সুবাদে আমরা ততক্ষণে জেনে গেছি, হোলি আর্টিজান বেকারি নামে একটা রেস্তোরাঁর ভেতরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ভেতের অনেক জিম্মি। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু হামলাকারী জঙ্গিদের কাছে অনেক অস্ত্র-বোমা আছে। তাদের হামলায় উদ্ধার অভিযানে আসা পুলিশ সদস্যরাও নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি। 

আমরা কয়েকজন তখন ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে গেলাম। কিন্তু তখন বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। খবর পেলাম, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার রবিউল করিম মারা গেছে। আচ্ছা কোন রবিউল? 

জানলাম, এই রবিউলই প্রথম আলোর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের সহকর্মী শামসের আপন বড় ভাই। শামসকে ফোন দিলাম। ওর কান্নায় খুব বেশি কিছু বলতে পারলাম না। ‍নিজেরও চোখ ভিজে গেল। একটু পর শুনলাম বনানী থানার ওসিও হামলায় নিহত হয়েছেন। 

বাতাসে তখন নানা গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। আটকে পড়াদের স্বজনেরা বারবার সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইছেন, ভেতরে কী হচ্ছে। আটকা পড়া অনেক পরিবারের সদস্যই সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে আসছেন তাঁদের স্বজনদের কাছে। আমরা দেখছি, সেনাবাহিনীসহ বিশেষায়িত নানা বাহিনীর সদস্যরা আসা–যাওয়া করছেন। কিন্তু কারও কাছে সঠিক কোনো উত্তর নেই। ঠিক কী ধরনের অভিযান হবে, সেটাও পরিষ্কার নয়। কিন্তু সবার চোখে–মুখে উদ্বেগ। 

এর মধ্যে ৭৫ নম্বর সড়কের কাছাকাছি কোথাও দেখলাম ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক সিমিন হোসেনকে। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাঁকে অনেকবার দেখেছি। কিন্তু তাঁর এমন উদ্বিগ্ন চেহারা কখনো দেখিনি। কাছে গিয়ে জানলাম, সিমিন হোসেনের ছোট ছেলে ফারাজ আইয়াজ হোসেন কানাডা থেকে দেশে এসে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে এই বেকারিতে এসে ভেতের আটকা পড়েছেন। ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় মায়ের এই ছটফটানি। 

রাত আড়াইটার দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের সূত্রে জানা গেল, জঙ্গি সংগঠন আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। সঙ্গে হত্যাযজ্ঞের কয়েকটি ছবি। সেগুলো দেখে পুরো শরীর কেঁপে উঠল। বাংলাদেশে কেন এমন ভয়াবহ হামলা, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে লাগলাম। 

রাত যত বাড়ল, পুলিশ-র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আনাগোনা তত বাড়ল। আমি দেখলাম, তাঁরা সবাই রাস্তার উল্টোদিকে বিজেএমসির চেয়ারম্যানের বাংলোতে যাচ্ছেন। গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে আমিও বাথরুমে যাওয়ার নাম করে সেখানে ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখি, পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়া কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ভেতরের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছেন। শুনলাম সেখানে বড় ধরনের অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। একটু পরই অভিযান চালানো হবে। 

কিন্তু সেই অভিযান আর হয় না। পরে শুনলাম সিলেট থেকে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা আসবেন। তাঁরাই অভিযান চালাবেন। ভোর হয়ে যাবে। আর এই দেরি নিয়ে অনেক পরিবারই ক্ষুব্ধ। তাঁরা চাইছেন, তাঁদের সন্তানদের এখুনি উদ্ধার করে আনা হোক। অবশেষে শেষ রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় এল বিশেষ সেই কমান্ডো বাহিনী। তখন হোলি আর্টিজানের চারপাশে প্রচণ্ড কড়াকড়ি। সাংবাদিকসহ সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সড়ক থেকে। বৃষ্টিও শুরু হলো। আমি কাছাকাছি কোনো একটা বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ততক্ষণে প্রচণ্ড গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গুলশান এলাকা। 

সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা ছুটছেন। গুলি করছেন। এসে গেছে সাঁজোয়া যান। আমার কয়েক হাত সামনে থেকেই কমাণ্ডোদের গুলি চালাতে দেখলাম। আমি আমার মোবাইলের ভিডিও অন করলাম, যাতে ছবিগুলো রাখতে পারি। মনে হচ্ছিল হলিউডের কোনো সিনেমা দেখছি। বাস্তবের এই সিনেমার নাম ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’। 

অপরাশেন শেষ হওয়ার পর সিমিন হোসেনের মতোই উদ্বিগ্ন দেখেছিলাম এক বাবাকে। পুলিশসহ যাকে দেখছেন, তাঁকেই ছবি দেখিয়ে বলেছেন, তাঁর ছেলের কোনো খোঁজ আছে কী না। ভদ্রলেকোর নাম জানলাম, শাহরিয়ার খান। ভোরে অভিযানের পর একটি ফোন আসার পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় পড়লেন মাটিতে। এর পর শুরু করলেন মোনাজাত। কাছে যেতেই জানালেন, ‘আমার ছেলে বেঁচে আছে।’ কিন্তু তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করবে কে? 

খুব বেশিক্ষণ লাগেনি এই অভিযানে। আধা ঘণ্টারও কম বোধহয়। সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযান শেষ হওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। সেনা ও সোয়াট সদস্যরা ফিরে আসতে থাকেন। এর পর আসে অ্যাম্বুলেন্স। বের করা হতে থাকে লাশ। সারাদিন পর দুপুরের দিকে ফিরে আসি। রাত থেকে না খাওয়া। সারারাত জেগে ছিলাম। ক্লান্ত। ঘুমও দরকার। 

ঘটনার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মনে হয়, হোলি আর্টিজান হামলা আমাদের আসলেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনার ছয়দিন পরই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেখানেও দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। গুলিবিনিময়কালে একজন সাধারণ নারী ও একজন জঙ্গি নিহত হয়। বাংলাদেশের সেই সময়টা ছিল আসলেই আতঙ্কের। দুশ্চিন্তার। সেই আতঙ্ক জঙ্গিবাদ নিয়ে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার চেষ্টায় সেই উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। 

ওই সময়ের হামলাকারীদের একজনের বাবার একটা কথা আজও মেনে পড়ে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আর কোনো বাবার যেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। সব বাবা-মার কাছে আহ্বান, সন্তানদের খোঁজ নিন। কোথায় যায়, কী করে খোঁজ নিন।’ 

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত