Ajker Patrika

মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণে ব্যস্ত রাজবাড়ীর চাষিরা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর মাঠে মাঠে চলছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার মেছোঘাটা মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজবাড়ীর মাঠে মাঠে চলছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার মেছোঘাটা মাঠ থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চলতি মাসের শুরুতে কয়েক দফায় বৃষ্টিপাতের কারণে রাজবাড়ীতে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। দেরিতে আবাদ শুরু হলেও ভালো ফলনের আশা করছেন চাষিরা। তবে বেশি দামে সার কেনায় খরচ কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। আর কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকেরা যেন চাহিদা অনুযায়ী ন্যায্য দামে সার পান, সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে।

রাজবাড়ী সদর, কালুখালী ও গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে চাষিরা মাঠে হাজির হচ্ছেন মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করতে। চাষিরা কেউ মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ রোপণ করছেন, কেউ সেচ দিচ্ছেন। যাঁরা আগেভাগে আবাদ করেছিলেন, তাঁরা চারা গাছের যত্ন নিচ্ছেন। কেউবা চারায় কীটনাশক দেওয়ার কাজ সেরে নিচ্ছেন।

রাজবাড়ী-২
রাজবাড়ী-২

কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া চরের পেঁয়াজচাষি কাশেম মোল্লা বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টির কারণে সপ্তাহ দুই দেরি হয়েছে পেঁয়াজ রোপণে। গত বছর থেকে এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে খরচ কম। এ বছর বিঘায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। ফলন যদি ভালো হয়, তাহলে বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ পাব।’

চাষি কাশেম মোল্লা আরও বলেন, ‘গত বছর তো পেঁয়াজে লোকসান গেছে। বিঘায় খরচ পড়েছিল এক লাখ টাকা করে। গুটি পেঁয়াজ কিনতে হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ। এবার গুটি পেঁয়াজ ৩ হাজার থেকে ৩৫ শ টাকা মণ দরে কেনা যাচ্ছে। যে কারণে খরচ কমছে।’

পাশেই দাঁড়িয়ে আফজাল মোল্লা। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল। তারপরও আশা করতেছি ফলন ভালো পাব। তবে সমস্যা হচ্ছে, সার পাচ্ছি না বাজারে। যা পাচ্ছি, দাম একটু বেশি নিচ্ছে।’

আরেক চাষি আব্দুল আজিজ প্রামাণিক বলেন, ‘সার, সেচ, চাষ, শ্রমিক খরচ সব আগের মতোই আছে। খালি এ বছর গুটি পেঁয়াজের দামটা কম। গত বছর ১০-১৫ হাজার টাকা মণ কেনা লাগছিল, এ বছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ। এ জন্য আবাদ খরচ কম লাগতেছে।’ তবে বাজারে সার কম পাওয়া যাচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের তৃতীয় অবস্থানে রাজবাড়ী জেলা। সারা দেশের ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ এই জেলায় হয়ে থাকে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু করে চাষিরা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা যায়। ফলে লাভের আশায় চাষিরা এ জাতের পেঁয়াজের আগাম চাষ করেন। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ও অক্টোবরের শুরুতে কয়েক দফায় বৃষ্টির কারণে কিছুটা দেরিতে পেঁয়াজ আবাদ শুরু হয়েছে।’

সারের দাম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারের দামের ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। কোথাও কোথাও দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে, তবে আমরা কৃষকদের বলছি, সরকারি দামে সার নিতে হবে। সেই সঙ্গে ডিলারদেরও কড়া নজরে রেখেছি যেন কৃষক সঠিক দামে সব উপকরণ পেয়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষাবাদ করতে পারে।’

শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর জেলায় ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হবে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার টন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...