Ajker Patrika

ধুঁকতে থাকা ২ এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে নতুন গতির আশা

  • ৯ মাস বন্ধ থাকার পর শুরু হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ
  • শুরুতে পান্থকুঞ্জ থেকে বুয়েট পর্যন্ত অংশ গুরুত্ব পাবে, পরে মগবাজার অংশ
সৌগত বসু, ঢাকা 
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৩০
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ আবার শুরু হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে কারওয়ান বাজারের এফডিসি গেট এলাকায়। ফাইল ছবি
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ আবার শুরু হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে কারওয়ান বাজারের এফডিসি গেট এলাকায়। ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকার যানজট কমাতে নেওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) এই প্রকল্পের ঠিকাদারদের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা অবসানের পর শুরু হচ্ছে নতুন ধাপ, এতে গুরুত্ব দেওয়া হবে পান্থকুঞ্জ থেকে বুয়েট পর্যন্ত অংশ। ঢাকায় অপর প্রকল্প আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও চলছে। দুই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নতুন গতি ও দ্রুত কাজ শেষের আশা শোনাচ্ছেন।

অর্থায়ন নিয়ে জটিলতার কারণে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ১২ বছর ও আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ৭ বছর ধরে ধুঁকছে। এ পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেডের কাজ হয়েছে ৭৫ শতাংশ এবং আশুলিয়া প্রকল্পের ৩৫ শতাংশ। অবশ্য ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দরের কাওলা থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো কাজ সম্পন্ন এবং সুশাসন নিশ্চিত হলে এই প্রকল্পগুলো ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারত। জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, পিপিপি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হলে বিনিয়োগকারীরা টোল আদায়ের মাধ্যমে তাঁদের অর্থ তুলে নিতে পারেন। তবে বাংলাদেশের পিপিপি প্রকল্পগুলোতে ঋণ ছাড়ে জটিলতা এবং প্রশাসনিক ধোঁয়াশা প্রকল্প দীর্ঘায়িত করে। তিনি বলেন, ঠিকাদারেরা নিয়ম লঙ্ঘন করেও ছাড় পাচ্ছেন। দেশি-বিদেশি আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না। এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে।

৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের চুক্তি হয় ২০১১ সালে। কাজ শুরুর কথা ছিল ২০১২ সালে। কিন্তু শুরু হয় ২০২০ সালে। এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এবং র‍্যাম্পসহ ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এটি কাওলা থেকে শুরু হয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে শেষ হবে। ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রথম অংশ উদ্বোধনের পর ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার (দক্ষিণ কাওলা থেকে ফার্মগেট) খুলে দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২০ মার্চ কারওয়ান বাজারে নামার র‍্যাম্প চালু করা হয়। তবে এর আগেই হাতিরঝিল অংশের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

পিপিপির এই প্রকল্পের তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতাল থাই সরে গেছে। বাকি দুটি চীনের শেনডং ও সিনো হাইড্রো করপোরেশন যুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সূত্র জানায়, তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশীদারত্ব (শেয়ার) নিয়ে জটিলতা ও অর্থসংকটে ৯ মাস ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকা ইতাল থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে এবং গত ২০ অক্টোবর উচ্চ আদালতে এবং সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারে (এসআইএসি) আইনি লড়াইয়ে হেরে গেছে। ইতাল থাইয়ের শেয়ার যাচ্ছে শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের হাতে। শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হলে শেনডংয়ের শেয়ার ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৫ শতাংশ হবে। সিনো হাইড্রোর শেয়ার ১৫ শতাংশ। অংশীদারত্ব নিয়ে আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় ডিসেম্বরের শুরুতে আবার কাজ শুরু হচ্ছে।

সূত্র বলছে, এবার পান্থকুঞ্জ মোড়ের র‍্যাম্প ও বুয়েট অংশের র‍্যাম্পের কাজ আগে হবে। হাতিরঝিল অংশের কাজেও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে মগবাজার, কমলাপুর হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত অংশের কাজ চলবে।

এই প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার গত বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঠিকাদারদের মধ্যে শেয়ার নিয়ে জটিলতা থাকলেও প্রকল্পের কাজ কখনোই পুরো থেমে থাকেনি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আবার কাজ শুরু হবে। শেয়ার হস্তান্তর এ মাসেই শেষ হবে বলে তাঁর আশা। নির্ধারিত ২০২৫ সালের জুনে পুরো কাজ শেষ করার আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যে অংশে যানবাহন চলছে তা গত দুই বছরে শেষ হয়েছে। আর এ সময়ে প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তাই বাকি সাত মাসে ২৫ শতাংশ কাজ শেষ করার চেষ্টা থাকবে।

অর্থ ছাড়ে বিলম্বে ধুঁকছে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে

২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। ডিপিপি অনুমোদন হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর। সে সময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ঋণ সহায়তা নিয়ে জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতেই লেগে যায় কয়েক বছর। তাই ২০১৭ সালে শুরু হলেও কাজে গতি আসে ২০২২ সালে। ২০২২ সালের জুনে সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের বিষয়ে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর। ঋণ কার্যকর হয় ২০২২ সালের ১০ মে। কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর। ২ শতাংশ সুদে প্রকল্প ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ ঋণ দিচ্ছে চীন (এক্সিম ব্যাংক)। বাকি ১৫ শতাংশ অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে এই প্রকল্পের কমিশন নিয়ে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি করপোরেশন (সিএমসি) ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এপিক সলিউশনের মধ্যে বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ২০১৫ সালে কাজ পাওয়ার জন্য সিএমসি ৬ শতাংশ কমিশনের চুক্তি করে এপিক সলিউশনের সঙ্গে। তবে কাজ পেয়েও সিএমসি কমিশন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই বিরোধে প্রকল্পের কাজে জটিলতা দেখা দেয় ও গতি ধীর হয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এটি উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টর, আবদুল্লাহপুর, ধউর, আশুলিয়া, জিরাবো, ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা বাজারে গিয়ে শেষ হবে। এক্সপ্রেসওয়ের সাতটি স্থানে ১৪টি ওঠানামার র‍্যাম্প থাকবে। সব র‍্যাম্প মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১১ কিলোমিটার। পাঁচটি টোল প্লাজা থাকবে।

এই প্রকল্পের কাজের কারণে নবীনগর-চন্দ্রা চার লেনের মহাসড়ক সরু হয়ে গেছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত ওই মহাসড়কে তীব্র যানজট লেগেই থাকছে।

আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মাহমুদ ইবনে কাশেম গত বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের কাজ ৩৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। মাঝে জুলাই-আগস্টে ২০ দিনের মতো কাজ বন্ধ ছিল। এখন কোনো সমস্যা নেই। পুরোদমে কাজ চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লাঠিতে ভর দিয়ে করতে হয় যাতায়াত, একই পরিবারে ছয় প্রতিবন্ধীর মানবেতর জীবন

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম বড়ালী গ্রামের প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির ছয় সন্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে একটি পরিবার। পরিবারটির ছয় সদস্যই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের আজিম বাড়ির বাসিন্দা প্রয়াত আবু মনুহর ও ফুল বানু দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে শুধু একজন সুস্থ। বাকি ছয় সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।

পরিবারে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। একমাত্র সুস্থ সন্তান মিসু আক্তার প্রিয়া (৩৩) গৃহস্থালির কাজ করেন। অন্য ছয় সন্তানের কেউই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক জীবন কিংবা দাম্পত্য জীবনে পা রাখতে পারেননি। অর্থাভাবে নিয়মিত চিকিৎসাও হচ্ছে না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের। ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থাও নেই। ফলে পুরো পরিবারের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানেরা হলেন নুরুল ইসলাম (৪১), তাজুল ইসলাম (৩৯), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৪), মো. আবদুর রব (৩২) ও রেহানা বেগম (২৩)। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সবাই স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিলেও ছয় থেকে সাত বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।

জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আবু মনুহর দিনমজুরের কাজ করে সন্তানদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় দেড় বছর আগে স্ট্রোক করে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পর থেকে পরিবারটির দুর্দশা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে তাঁরা নিজের ঘরে শিশুদের খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে কোনোরকমে দিন চালাচ্ছেন।

প্রতিবন্ধী আবদুর রব বলেন, ‘শরীরে শক্তি নেই, হাঁটতেও পারি না। তাই ভিক্ষাও করতে পারি না। ঘরে বসে শিশুখাদ্য বিক্রি করি। দিনে ৭০ থেকে ১০০ টাকা আয় হয়। আটজনের সংসারে অনেক সময় না খেয়েই থাকতে হয়।’

নুরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। সরকারি বা বেসরকারি আর কোনো সহযোগিতা পাই না। বেঁচে থাকার জন্য সহযোগিতা চাই।’

প্রতিবন্ধী সন্তানদের মা ফুল বানু বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক সন্তান বড় করতেই এখন অনেক কষ্ট। সেখানে পরপর ছয়টি প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করছি, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। আমি এখনো বিধবা ভাতার কার্ড পাইনি।’

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ, বিল্লাল হোসেন মানিক ও রাজনীতিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় পরিবারটি চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আর কোনো সহায়তা তারা পাচ্ছে না। তাঁরা পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় এসেছেন। কেউ বাদ পড়লে যাচাই-বাছাই করে সুবিধার আওতায় আনা হবে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। হাসপাতালে এলে বিশেষভাবে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার জানান, বিষয়টি দুঃখজনক, খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে আগুন: দগ্ধ আরেক সন্তানের মৃত্যু

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর বড় মেয়ে সালমা আক্তার স্মৃতিও (১৭) মারা গেছে। এর আগে একই ঘটনায় তাঁর ছোট মেয়ে আয়েশা বেগমের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল দুজনে।

গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতির মৃত্যু হয়। বেলাল হোসেন নিজেও অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন। রাত ১টার দিকে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর রাতে ভবানীগঞ্জের চরমনসা গ্রামের সুতারগোপ্তা এলাকায় দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেনের বসতঘরে আগুন দেয়। এতে ঘর ও আসবাব পুড়ে যায় এবং আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই ছোট মেয়ে আয়েশা বেগমের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় বেলাল হোসেন, তাঁর বড় মেয়ে স্মৃতি এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেজো মেয়ে সায়মা আক্তার বিথি (১৪) দগ্ধ হয়। বেলাল হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। স্মৃতি ও বিথিকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের তথ্যমতে, স্মৃতির শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং বিথির প্রায় ৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে বিথিকে পরদিনই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে স্মৃতি পাঁচ দিন ধরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায়।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে বেলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করা হয়েছে, এর মধ্যে দুটি বন্ধ এবং একটি খোলা অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে পোড়া বাড়ি পরিদর্শন করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী বলেন, ঘটনার দিন আগুনে পুড়ে আয়েশার মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্মৃতিও মারা গেছে। নিহত সন্তানদের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে প্রাথমিকের শতভাগ বই পৌঁছেছে, বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে নতুন বই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৮
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস। তবে মাধ্যমিকের সব বই পৌঁছেনি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
২১ ডিসেম্বর থেকে নতুন বই স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, প্রাক্‌-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪ কপি বই। ইতিমধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বই বিভিন্ন স্কুলে পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার কপি। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলোই উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বইগুলো আসামাত্র বিতরণ করা হবে।

বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন থেকে চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুজনের গোলটেবিলে পর্যবেক্ষণ: ভোটের খরচ না কমলে দুর্নীতিও কমবে না

  • আর্থিক বিষয়সহ কমিশনের অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করার অভিযোগ।
  • নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ও বিবেচনায় রাখার তাগিদ।
  • অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি বলে অভিমত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী ব্যয় কমানো না গেলে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতিও কমানো যাবে না। কিন্তু অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিবিড় নজরদারি করতে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) উভয়ের তরফে অবহেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ণ, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দলের সদস্যদের দায়বদ্ধতা, নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কিছু সুপারিশ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) গ্রহণ করা হয়নি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের কাছ থেকে এসব কথা উঠে আসে। বেসরকারি সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’ এ বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকার ও ইসির প্রস্তাবের মাধ্যমে আরপিওর বিভিন্ন অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আবার অনেক বিষয়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। কোনো আসনে মোট ভোটের ৪০ শতাংশ না পড়লে আবার ভোট গ্রহণের বিধান, পর পর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান বাতিল করা এবং প্রতি পাঁচ বছর পর দলের নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করা, কোনো ব্যক্তির একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করা, ২০২৩ সালে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ নিবন্ধন দেওয়া দলের নিবন্ধন বাতিল করাসহ অনেক সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে।

নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ পরে জনগণের কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি মনে করেন, ইতিমধ্যে ‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের মাধ্যমে’ নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচনে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা থেকেও সুরক্ষা প্রয়োজন। জাতীয় ঐক্য ছাড়া একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

সুজনের সম্পাদক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, ভোট গণনা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ হিসেবে দেখা উচিত। নির্বাচন কমিশন এবং সরকার নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যে সংস্কারগুলো করেছে, তা সন্তোষজনক নয়।

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, নির্বাচনসংক্রান্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশ গৃহীত হয়েছে। বাকি সুপারিশগুলো যাতে গ্রহণ করা হয়, সে জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং কমিশনকে চাপের মুখে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

ইসির সাবেক অতিরিক্তি সচিব জেসমিন টুলি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা নির্বাচনী আচরণবিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর অপব্যবহার বা ভোটারদের বিভ্রান্তি রোধে প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ বা সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্টভাবে থাকা উচিত ছিল। তা করা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য সংস্কার কমিশনের তুলনায় নির্বাচনবিষয়ক কমিশনের অর্জন কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ পড়েছে বা গৃহীত হয়নি।

বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, অধ্যাপক ওয়ারেসুল করিম, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য মীর নাদিয়া নিভিন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত