Ajker Patrika

পিপলস এয়ার

ক্রাউড ফান্ডে এয়ারলাইনসের উদ্যোগ, আছে প্রশ্ন ও সন্দেহ

  • আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধনও শুরু হয়েছে।
  • তবে আলোচনা করা হয়নি সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে।
  • ক্রাউড ফান্ডে এয়ারলাইনস খাতের জন্য সঠিক পদ্ধতি নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯: ০৬
ক্রাউড ফান্ডে এয়ারলাইনসের  উদ্যোগ, আছে প্রশ্ন ও সন্দেহ

সাধারণ মানুষের টাকায় ‘জনগণের এয়ারলাইন’ গড়ার ঘোষণা দিয়ে ‘পিপলস এয়ার’ নামের একটি নতুন এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন এক উদ্যোক্তা। তিনি দাবি করছেন, এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম ‘ক্রাউড ফান্ডেড’ এয়ারলাইনস। এরই মধ্যে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধনও শুরু হয়েছে। তবে নতুন এয়ারলাইনস গঠনের উদ্যোগটিতে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা কিংবা ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা কীভাবে নিশ্চিত হবে, সেটি স্পষ্ট নয়। এমনকি আলোচনা করা হয়নি সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গেও। এ অবস্থায় নতুন এয়ারলাইনসে বিনিয়োগে আশার চেয়ে শঙ্কাই বাড়ছে বেশি।

জানা গেছে, পিপলস এয়ারের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে আছেন বৈমানিক আব্দুল্লাহ ফারুক। তিনি সর্বশেষ কর্মস্থল ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইনসের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) ছিলেন। ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ ফারুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত বিরতিতে বলে আসছেন, ‘এই এয়ারলাইনস হবে জনগণের মালিকানাধীন।’ তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১ হাজার ব্যক্তি প্রত্যেকে ২০ লাখ টাকা করে বিনিয়োগ করবেন। এতে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গড়ে উঠবে। বিনিয়োগকারীরা হবেন ‘ফাউন্ডার মেম্বার’। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, এসব ফাউন্ডার মেম্বার আজীবন ডিসকাউন্টে ভাড়া, বার্ষিক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ এবং লাভের অংশীদার হবেন।

‘ক্রাউড ফান্ডেড’ এয়ারলাইনসের উদাহরণ হিসেবে এয়ার এশিয়া ও ইন্ডিগোর কথা বলে আসছেন প্রধান উদ্যোক্তা। তিনি দাবি করেন, এসব এয়ারলাইনসের শুরু ‘জনগণের ছোট ছোট বিনিয়োগে’ হয়েছিল। পিপলস এয়ার চালু করতে এটিআর ৭২-৬০০ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করার পরিকল্পনার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ।

শুরুর দিকে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহীদের ইনবক্সে বার্তা পাঠাতে বলা হলেও সম্প্রতি নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের জন্য একটি ফরমও ছাড়া হয়েছে। নিবন্ধন ফি ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। চলতি জুলাই মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তার দাবি অনুযায়ী, এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি উত্তর আমেরিকায় থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিনিয়োগ আহ্বান করা হচ্ছে ব্যক্তিগত বার্তায়। উদ্যোগটির কোনো অফিশিয়াল ওয়েবসাইট নেই। বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহীদের ব্যক্তিগত ইনবক্সে বার্তা পাঠাতে বলা হচ্ছে, যা অনিয়ন্ত্রিত ও সন্দেহজনক। ২০ লাখ টাকা করে বিনিয়োগ আহ্বান করা হলেও নেই কোনো ট্রাস্ট অ্যাকাউন্ট, নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী বা স্বচ্ছ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, যা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর।

এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এভিয়েশন খাত পুঁজি-নির্ভর, দীর্ঘমেয়াদি ও উচ্চ নিয়ন্ত্রিত। তা ছাড়া নতুন এয়ারলাইনস চালু করতে হলে বেবিচকসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। যে কেউ চাইলেই এয়ারলাইনস গঠনের অনুমতি পাবেন, বিষয়টি তেমন নয়। এ কারণে কেবল আবেগ বা সামাজিক আহ্বানে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সর্বোপরি ক্রাউড ফান্ডে এয়ারলাইনস খাতের জন্য সঠিক পদ্ধতি নয়। তিনি বলেন, অতীতেও এ ধরনের উদ্যোগ দেখা গেছে, যা পরবর্তী সময়ে সুখকর হয়নি।

জানা গেছে, ক্রাউড ফান্ডিং একটি বৈধ পদ্ধতি হলেও বাংলাদেশে এর জন্য স্পষ্ট কোনো আইন বা নিয়ন্ত্রক কাঠামো নেই। সাধারণত উদ্ভাবনী আইডিয়া, স্টার্টআপ বা এনজিও খাতে এটি ব্যবহৃত হয়। এমন একটি উচ্চ মূল্যের, উচ্চ ঝুঁকির খাত—এভিয়েশনে এ পদ্ধতি বিশ্বে কোথাও সাফল্যের নজির নেই। এয়ার এশিয়া, ইন্ডিগোসহ বড় বড় এয়ারলাইনস প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে নয়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, ‘পিপলস এয়ার’ নামে কোনো কোম্পানি এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোনো ধরনের আবেদন বা লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করেনি। বেবিচকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, নতুন কোনো এয়ারলাইন চালুর জন্য অন্তত ১৫টি ধরনের সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন। প্রয়োজন নিরাপত্তা মানদণ্ড, দক্ষ টিম, অপারেটিং সিস্টেম এবং আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন রেগুলেশন মেনে চলা। এগুলো ছাড়াই বিনিয়োগ আহ্বান বিভ্রান্তিকর।

বাংলাদেশে আগে ডেসটিনি, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বহু প্রতিষ্ঠান আবেগমূলক প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের টাকা সংগ্রহ করে প্রতারণা করেছে। শুরুতে তাদেরও ছিল উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি, স্বপ্ন দেখানো ও বিনিয়োগের মোহ। যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ তুলতে হলে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কোনো কোম্পানি তা না মেনে বিনিয়োগ আহ্বান করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু তা-ই নয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী, প্রতারণামূলকভাবে বিনিয়োগ আহ্বান করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানাতে চাইলে পিপলস এয়ারের প্রধান উদ্যোক্তা ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে নতুন এয়ারলাইনস গঠনের উদ্যোগটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা কারও কাছ থেকে এখনো অর্থ সংগ্রহ করিনি। বিনিয়োগ সংগ্রহের সম্ভাব্য প্রক্রিয়া এবং আইনি দিকগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘বেবিচক থেকে এয়ারলাইনস শুরুর অনুমতি অর্থাৎ এওসি পেতে আমরা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও আলোচনা করছি। কয়েকজন “ইনিশিয়াল বিনিয়োগকারী”ও পাওয়া গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠছে মরা মাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুকুরটিতে এই মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই পুকুরটিতে মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে চারপাশে পচা-গলা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরপাড় দিয়ে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরটিতে মাছ চাষ করায় বিভিন্ন সময় মাছ মরার ঘটনা ঘটছে। এতে পুকুরের পানিতে দূষণ ঘটছে। দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

বিবির পুকুরের সঙ্গে অতীতে কীর্তনখোলা নদীর সংযোগ ছিল। বর্তমানে নদী থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকাসহ ময়লা ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নীল রং ধারণ করা পানিতে একধরনের স্তর পড়ে গেছে।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তত্ত্বাবধানে থাকা বিবির পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন সময় সেই মাছ মরে পচে ভেসে উঠে। এতে দুর্গন্ধে পুকুরপাড়ে আসা বিনোদনপ্রেমী ও পথচারীদের টেকা দায় হয়ে পড়ে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, পুকুরপাড়ে এসে মরা মাছের গন্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। দ্রুত মরা মাছ অপসারণ করে পুকুরটির পানিদূষণ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বিবির পুকুরটির অবস্থান। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় নানা সময় মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হয়তো পুকুরের পানির মান খারাপ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে উচিত হবে, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিদর্শক রকিব উদ্দিন বলেন, বিবির পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পানির মান দেখতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং নদীর পানির মানমাত্রা পরীক্ষা করেন। বিবির পুকুরের পরিস্থিতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, মরা মাছ দ্রুত অপসারণের জন্য ইজারাদারকে বলা হচ্ছে। যদিও তাঁরা পুকুরের পানি দূষণ ঠেকাতে কিছু অংশ জাল দিয়ে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বিবির পুকুর বরিশাল নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়। উনিশ শতকে জনসাধারণের জলকষ্ট দূর করতে জিন্নাত বিবি নামে এক মুসলিম নারীর উদ্যোগে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই পুকুরটি সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত এবং এটি বরিশাল নগরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এখন আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সিয়াম, নিভে গেলেন হাতবোমায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছেন সিয়াম মজুমদার (২১)। তাই চার বছর আগে ঋণগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। নিউ ইস্কাটনের একটি মোটরকার ডেকোরেশন দোকানে কাজ করে পরিবারকে সহায়তাও করতেন তিনি। ঋণ পরিশোধের পর দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেলের বিস্ফোরণে সিয়ামের সেই স্বপ্ন থেমে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ককটেলটি ওপর থেকে এসে তাঁর মাথায় লাগে।

সিয়ামের পরিবার জানায়, ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন তাঁর বাবা আলী আকবর মজুমদার। মা সিজু বেগম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ নেন। ছোট ভাই সেজান মজুমদারও ইস্কাটন এলাকায় একটি গাড়ি ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করছিলেন ঋণমুক্ত হওয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ ইস্কাটনের দুই হাজার গলির ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে ভেঙে পড়েছেন সিয়ামের মা সিজু বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ছোট ভাই সেজান মজুমদার বলেন, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ভাই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এই মৃত্যু পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছেলের মরদেহ নিতে গিয়ে বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় এসে ছেলেকে হারাতে হবে—এমনটা জানলে তিনি কখনোই ঢাকায় আসতেন না।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ১০ মিনিটে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বিস্ফোরকদ্রব্যের আঘাতে সিয়াম মজুমদার নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি মগবাজার-নিউ ইস্কাটন সড়কে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ঘটনাস্থলের চা-দোকানি মো. ফারুক আজ বিকেলে বলেন, চা বানানোর সময় বিকট শব্দ হয়। পরে দেখা যায়, সিয়াম মাটিতে পড়ে আছেন, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা হাতিরঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাস্টার্সের সনদ জাল: কলেজের সভাপতির পদ হারালেন সবুজ খাঁন

ভোলা প্রতিনিধি
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত

‎মাস্টার্সের সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ হারালেন মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবুজ খাঁনের সভাপতির পদ বাতিল করে নতুন সভাপতি মনোনয়নের নির্দেশ দিয়েছে।‎

‎মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন দক্ষিণ আইচা থানাধীন চরমানিকা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী মিয়ার ছেলে।‎

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সবুজ খাঁন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত মাস্টার্স ডিগ্রির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব েনন। তবে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গত ১ নভেম্বর জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই কার্যক্রম শুরু করে।‎

‎সূত্র আরও জানায়, যাচাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবুজ খাঁনের দাখিল করা সনদে কোনো ক্রমিক নম্বর নেই, কোর্স কোডে অসংগতি রয়েছে এবং স্বাক্ষর ও তারিখেও গরমিল পাওয়া গেছে। এসব কারণে সনদ দুটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।‎

‎বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসে। পরে গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক লিখিত নির্দেশনায় দক্ষিণ আইচা কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়, মো. সিরাজুল ইসলামের মাস্টার্স সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর সভাপতির দায়িত্ব আর বৈধ নয়। ফলে শূন্য ঘোষিত পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য তিনজন প্রার্থীর নাম শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‎

‎এই আদেশ প্রকাশের পর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।‎

‎কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ থেকে সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁনের অব্যাহতিপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেইলে পাওয়ার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ আইচা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কলেজের সভাপতির সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি কথা শুনেছি। এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। তবে আমি এর প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করব।’ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেও জানান সবুজ খাঁন।

সবুজ খাঁন নিজেকে থানা বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও দলের কোনো সাংগঠনিক পদে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেক ডিজঅনারের মামলা: ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েদির মৃত্যু

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কয়েদি মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

ওই কয়েদির নাম বিমল কুমার দাস (৬২)। কয়েদি নম্বর ২৫২৫। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার কদমতলী আমিরাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন। তিনি মাদারীপুর কারাগারে ছিলেন। ওই হাজতি ডায়াবেটিসসহ বয়সের বিভিন্ন রোগে  ভুগছিলেন। মাদারীপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে মাদারীপুর কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে আনা হয়। ফরিদপুরে আসামাত্রই তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল শুক্রবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত