Ajker Patrika

পিপলস এয়ার

ক্রাউড ফান্ডে এয়ারলাইনসের উদ্যোগ, আছে প্রশ্ন ও সন্দেহ

  • আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধনও শুরু হয়েছে।
  • তবে আলোচনা করা হয়নি সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে।
  • ক্রাউড ফান্ডে এয়ারলাইনস খাতের জন্য সঠিক পদ্ধতি নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯: ০৬
ক্রাউড ফান্ডে এয়ারলাইনসের  উদ্যোগ, আছে প্রশ্ন ও সন্দেহ

সাধারণ মানুষের টাকায় ‘জনগণের এয়ারলাইন’ গড়ার ঘোষণা দিয়ে ‘পিপলস এয়ার’ নামের একটি নতুন এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন এক উদ্যোক্তা। তিনি দাবি করছেন, এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম ‘ক্রাউড ফান্ডেড’ এয়ারলাইনস। এরই মধ্যে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের নিবন্ধনও শুরু হয়েছে। তবে নতুন এয়ারলাইনস গঠনের উদ্যোগটিতে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা কিংবা ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা কীভাবে নিশ্চিত হবে, সেটি স্পষ্ট নয়। এমনকি আলোচনা করা হয়নি সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গেও। এ অবস্থায় নতুন এয়ারলাইনসে বিনিয়োগে আশার চেয়ে শঙ্কাই বাড়ছে বেশি।

জানা গেছে, পিপলস এয়ারের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে আছেন বৈমানিক আব্দুল্লাহ ফারুক। তিনি সর্বশেষ কর্মস্থল ফ্লাই ঢাকা এয়ারলাইনসের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) ছিলেন। ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ ফারুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত বিরতিতে বলে আসছেন, ‘এই এয়ারলাইনস হবে জনগণের মালিকানাধীন।’ তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১ হাজার ব্যক্তি প্রত্যেকে ২০ লাখ টাকা করে বিনিয়োগ করবেন। এতে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গড়ে উঠবে। বিনিয়োগকারীরা হবেন ‘ফাউন্ডার মেম্বার’। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, এসব ফাউন্ডার মেম্বার আজীবন ডিসকাউন্টে ভাড়া, বার্ষিক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ এবং লাভের অংশীদার হবেন।

‘ক্রাউড ফান্ডেড’ এয়ারলাইনসের উদাহরণ হিসেবে এয়ার এশিয়া ও ইন্ডিগোর কথা বলে আসছেন প্রধান উদ্যোক্তা। তিনি দাবি করেন, এসব এয়ারলাইনসের শুরু ‘জনগণের ছোট ছোট বিনিয়োগে’ হয়েছিল। পিপলস এয়ার চালু করতে এটিআর ৭২-৬০০ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করার পরিকল্পনার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ।

শুরুর দিকে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহীদের ইনবক্সে বার্তা পাঠাতে বলা হলেও সম্প্রতি নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের জন্য একটি ফরমও ছাড়া হয়েছে। নিবন্ধন ফি ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। চলতি জুলাই মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তার দাবি অনুযায়ী, এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি উত্তর আমেরিকায় থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিনিয়োগ আহ্বান করা হচ্ছে ব্যক্তিগত বার্তায়। উদ্যোগটির কোনো অফিশিয়াল ওয়েবসাইট নেই। বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহীদের ব্যক্তিগত ইনবক্সে বার্তা পাঠাতে বলা হচ্ছে, যা অনিয়ন্ত্রিত ও সন্দেহজনক। ২০ লাখ টাকা করে বিনিয়োগ আহ্বান করা হলেও নেই কোনো ট্রাস্ট অ্যাকাউন্ট, নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী বা স্বচ্ছ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, যা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর।

এ প্রসঙ্গে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এভিয়েশন খাত পুঁজি-নির্ভর, দীর্ঘমেয়াদি ও উচ্চ নিয়ন্ত্রিত। তা ছাড়া নতুন এয়ারলাইনস চালু করতে হলে বেবিচকসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। যে কেউ চাইলেই এয়ারলাইনস গঠনের অনুমতি পাবেন, বিষয়টি তেমন নয়। এ কারণে কেবল আবেগ বা সামাজিক আহ্বানে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সর্বোপরি ক্রাউড ফান্ডে এয়ারলাইনস খাতের জন্য সঠিক পদ্ধতি নয়। তিনি বলেন, অতীতেও এ ধরনের উদ্যোগ দেখা গেছে, যা পরবর্তী সময়ে সুখকর হয়নি।

জানা গেছে, ক্রাউড ফান্ডিং একটি বৈধ পদ্ধতি হলেও বাংলাদেশে এর জন্য স্পষ্ট কোনো আইন বা নিয়ন্ত্রক কাঠামো নেই। সাধারণত উদ্ভাবনী আইডিয়া, স্টার্টআপ বা এনজিও খাতে এটি ব্যবহৃত হয়। এমন একটি উচ্চ মূল্যের, উচ্চ ঝুঁকির খাত—এভিয়েশনে এ পদ্ধতি বিশ্বে কোথাও সাফল্যের নজির নেই। এয়ার এশিয়া, ইন্ডিগোসহ বড় বড় এয়ারলাইনস প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে নয়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, ‘পিপলস এয়ার’ নামে কোনো কোম্পানি এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোনো ধরনের আবেদন বা লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করেনি। বেবিচকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, নতুন কোনো এয়ারলাইন চালুর জন্য অন্তত ১৫টি ধরনের সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন। প্রয়োজন নিরাপত্তা মানদণ্ড, দক্ষ টিম, অপারেটিং সিস্টেম এবং আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন রেগুলেশন মেনে চলা। এগুলো ছাড়াই বিনিয়োগ আহ্বান বিভ্রান্তিকর।

বাংলাদেশে আগে ডেসটিনি, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বহু প্রতিষ্ঠান আবেগমূলক প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের টাকা সংগ্রহ করে প্রতারণা করেছে। শুরুতে তাদেরও ছিল উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি, স্বপ্ন দেখানো ও বিনিয়োগের মোহ। যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ তুলতে হলে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কোনো কোম্পানি তা না মেনে বিনিয়োগ আহ্বান করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু তা-ই নয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী, প্রতারণামূলকভাবে বিনিয়োগ আহ্বান করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের জন্য জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানাতে চাইলে পিপলস এয়ারের প্রধান উদ্যোক্তা ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে নতুন এয়ারলাইনস গঠনের উদ্যোগটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আমরা কারও কাছ থেকে এখনো অর্থ সংগ্রহ করিনি। বিনিয়োগ সংগ্রহের সম্ভাব্য প্রক্রিয়া এবং আইনি দিকগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘বেবিচক থেকে এয়ারলাইনস শুরুর অনুমতি অর্থাৎ এওসি পেতে আমরা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও আলোচনা করছি। কয়েকজন “ইনিশিয়াল বিনিয়োগকারী”ও পাওয়া গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত