Ajker Patrika

স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে জবির ১৪ সমন্বয়কের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা

জবি সংবাদদাতা 
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ০৬
স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে জবির ১৪ সমন্বয়কের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক কমিটির ১৪ জন শিক্ষার্থী অপর সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তাঁরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৪ আগস্ট আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লড়াকু বীর ইকরামুল হক সাজিদ দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষার পর শহীদ হন। আমরা তাঁর মহান আত্মত্যাগকে স্মরণ করছি। একই সঙ্গে স্মরণ করছি আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ, তানভিন, ফাহাদসহ সব শহীদকে। যাঁদের তাজা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আমরা সকলের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা এই আত্মত্যাগকে অঙ্কুরে বিনষ্ট হতে দেবেন না। 

কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার‌ই ধারাবাহিকতায় আমরা বুঝতে পারি, শুধু কোটার সংস্কারই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন রাষ্ট্র সংস্কার। দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকারত্বের যে সংকট, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা পদ্ধতিতে সামান্যতম সংস্কার চেয়েছিলাম। কিন্তু এই সামান্য চাওয়া পূরণ করতে শত শত জীবন দিতে হলো, হাজারো মানুষ আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করল। হাসিনা রেজিম এই সামান্য চাওয়া দমন করতে গুলি ছুড়ল স্নাইপার ও হেলিকপ্টার থেকে। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিল, কারফিউ জারি করল ও রাস্তায় সেনাবাহিনী নামিয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত কোটা আন্দোলন পরিণত হলো ছাত্র-জনতার অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে। হয় হাসিনা নয় ছাত্র-জনতা। দেশের মানুষের মধ্যে এক গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলো—এই দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিশাল আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালায়। আমরা হলাম জুলাই অভ্যুত্থানের সাক্ষী।

সারা দেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর নেতৃত্বে যে সংগ্রাম সংগঠিত হলো, তার অংশীদার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এই সংগ্রামে ১৫ জুলাই আমাদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়, ১৬ জুলাই সন্ত্রাসীদের দ্বারা অনিক-ফেরদৌসসহ ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়, ১৯ জুলাই আটক হয় আমাদের সহযোদ্ধা নুর নবী, ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হওয়া সাজিদ সবশেষ শহীদী পরিচয় বরণ করে নেন। গুলিতে অনিকের খাদ্যনালি ছিঁড়েছে, নুর নবীকে ডিবি হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, লক্ষ্মীবাজারে শিক্ষার্থীদের ওপর ছোড়া হয়েছে লাইভ বুলেট। আমরা যেন এসব গল্প ভুলে না যাই। 

এসব নিপীড়ন প্রতিরোধ করতে যে রক্তক্ষয় হয়েছে, তার যথার্থ মূল্যায়ন হবে আন্দোলনের যে গণ-আকাঙ্ক্ষা তার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। গত ১৬ বছরে সৃষ্ট ত্রাসের রাজত্বকে ধূলিসাৎ করে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে আমূল সংস্কারের মধ্য দিয়ে একমাত্র এর মূল্যায়ন সম্ভব। যে ফ্যাসিস্টের হুকুমে এত প্রাণ ঝরে গেল, তার বিচার নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব এখনো বাকি। এর মধ্যেই সারা দেশে একটা সূক্ষ্ম অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা এখনো রাস্তায়, দেশজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা অকার্যকর। দেশ স্থিতিশীল হতে আমাদের আরও ধৈর্য ধরতে হবে। এ সময় এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা আমাদের আন্দোলনের স্পিরিটকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এ রকম সময়ে আমরা লক্ষ করছি, সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অথবা আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও এর ব্যতিক্রম নয়। ৫ আগস্টের পর থেকেই অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যার দায় এসে পড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে এমন অনেক কাজ করা হয়েছে, যার সঙ্গে আন্দোলনকারী ‘সমন্বয়ক‘ হিসেবে পরিচিত অনেকেরই কোনো প্রকারের সম্পৃক্ততা নেই। আমরা এসব কর্মকাণ্ডকে প্রত্যাখ্যান করছি। কিছু ঘটনা আমরা উল্লেখ করছি—

বিজয় অর্জনের পর এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ২৭ জন সমন্বয়কের অধিকাংশের উপস্থিতিতে কোনো প্রকার সভায় বসা সম্ভব হয়নি। যখনই বসার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা নানাভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন মাসুদ রানা ও নূর নবী। অথচ কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়াই একের পর এক কর্মসূচি আর দাবি এই ব্যানার থেকে উত্থাপন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নূর নবীর স্বেচ্ছাচারিতা অনেক বেশি লক্ষণীয়। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ‘আমি যা বলব তা-ই হবে’ এমন বচনভঙ্গি অনেককেই মনঃক্ষুণ্ন করেছে।

মতবিনিময় সভার নামে ১১ আগস্ট যে ‘মব ট্রায়াল’–এর আয়োজন করা হয়েছে। আমরা তা সমর্থন করি না। ‘গোপন নথি গায়েব করা হচ্ছে’ বলে যেভাবে শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নাসির উদ্দীন আহমদ স্যারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। এরপর যখন আমরা সবাই একমত হই, তিনজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শিক্ষকেরা নথিগুলো যাচাই করবে—তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু বকর, নূর নবীর নির্দেশে ভিসি ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। অথচ, আপনাদের মনে আছে, সেই নথিগুলোর মধ্যে নাসির স্যারের ‘জয়েনিং লেটার’ ছিল। যাতে দ্রুত ভিসির স্বাক্ষর প্রয়োজন ছিল। তাহলে, নূর নবী-আবু বকরদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে এ রকম হঠকারী পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কী?

আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমের পক্ষ নিয়ে যেই প্রশাসন আমাদের আন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল, সেই প্রশাসনের পদত্যাগ ছিল ছাত্রদের দাবি। তার পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ সম্পূর্ণ প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করে। কিন্তু সন্দেহের উদ্রেক হয় তখনই, যখন ট্রেজারারের পদত্যাগের প্রশ্নে এই সমন্বয়কেরা ভিন্ন সুরে কথা বলে। তাঁরা ট্রেজারারকে বহাল তবিয়ত রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট হয়। এমনকি কনফারেন্স রুমে সব ডিপার্টমেন্টের চেয়ারপারসনদের উপস্থিতিতে গুটিকয়েক সমন্বয়ক ট্রেজারারের গুণকীর্তন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু বকর এবং ১৪ ব্যাচের রিয়াজুল ইসলামের বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করলে সবাই বুঝতে পারবেন, তাঁরা বিভিন্ন কৌশলে কতিপয় শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার্থে নানা ধরনের চাটুকারিতার আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা স্পষ্ট করতে চাই, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

সমন্বয়কদের মধ্যে কোনো রকমে আলোচনা ছাড়াই মব ট্রায়ালের মাধ্যমে একটা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে, যার নজির সারা দেশে আর কোনো ইউনিটে নেই। সমন্বয়কদের আবার উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রয়োজন পড়ল কেন? আর কাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে এই উপদেষ্টা পরিষদ? মুন্না, জসীম, শাহিন আলম শানসহ যেসব ব্যক্তি উপদেষ্টা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন, আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। ১১ জুলাইয়ের কথা মনে আছে তো? সেদিন কুমিল্লায় গুলি ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি হামলা চলে। ওই দিন প্রক্টরিয়াল বডির সামান্য হুমকির মুখে এই ব্যক্তিরাই মিছিল স্থগিতের ঘোষণা দেন। তারপর জুনিয়র শিক্ষার্থীরা তাঁদের নেতৃত্ব অমান্য করে ক্যাম্পাসের গেট ভেঙে মিছিল নিয়ে শাহবাগে যান। ফলে এই সুযোগ সন্ধানী শক্তির উপদেষ্টা পরিষদ আমরা কখনোই সমর্থন করিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও অন্যতম সমন্বয়ক মাসুদ রানার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষ করা যায়। তাঁকে এমন কথা বলতে শোনা গেছে, ‘জকসু নির্বাচনে আমি ভিপি পদে দাঁড়াব। সমন্বয়কদের মধ্যে যাদের শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। ওরা থাকলে আমি ভোট পাব? আমি ১০-১২ দিনের মধ্যেই এই সমন্বয়ক কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দিয়ে ওদের বের করে দেব।’ সমন্বয়কদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ছাত্রলীগের অনুগতদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন ও নতুন কমিটি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত মাসুদ রানার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে কি না আমরা সেই প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি।

দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে জবির ‘হল উদ্ধার আন্দোলন’ একটা আত্মঘাতী কর্মসূচি বলেই আমরা মনে করি। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে, যা মোটেই কাম্য নয়। অথচ নূর নবীর পরিচালনায় সমন্বয়কদের একাংশ, আবু বকর, রিয়াজসহ বিতর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ মিলে এই অযৌক্তিক কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। পরবর্তীকালে এর পেছনে কিছু শিক্ষকের দুরভিসন্ধিমূলক আচরণ আমাদের সবার সামনে উন্মোচিত হয়। এ ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিষয়েও এসব ব্যক্তি ও কিছু শিক্ষকদের দুরভিসন্ধি কারোরই চোখ এড়ায়নি। এসব ঘটনার পরও এই মানুষগুলোর ওপর আস্থা রাখা যায় কীভাবে? 

১৫ আগস্ট রাতে ক্যাম্পাসে সমন্বয়ক নূর নবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলেন। ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে ক্যাম্পাসে ঢুকিয়েছেন। একই সঙ্গে সেই ছাত্রলীগ কর্মীকেও বেধড়ক পেটানো হয়। আমরা বলতে চাই, এই আচরণের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের গত ১৬ বছরের কর্মকাণ্ডের কোনো পার্থক্য আছে কি? যেখানে সারা দেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আহ্বান করা হয়েছে কোনো প্রকারের সহিংসতায় না জড়াতে, সেখানে একজন সমন্বয়কের এমন আচরণ কোনোভাবেই আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না বলে আমরা মনে করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহিন আলম শান বর্তমানে বেশ সক্রিয়ভাবে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছেন। এই শাহিন আলম শান আন্দোলন চলাকালে আমাদের মাঝপথে রেখে চলে গিয়েছিল এবং নূর নবীর আটকের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সে নূর নবীর প্রতি শিবির সন্দেহ পোষণ করে অনাস্থা জানায়। নূর নবী জেল থেকে বেরিয়ে অভিযোগ তুলেছিল, শাহিন আলম শানই ডিবির কাছে আমাদের সব ম্যাসেজ ও তথ্য ফাঁস করেন। শাহিন আলম শান আন্দোলনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল মুহূর্তে আন্দোলন ছেড়ে চলে যান। এমনকি বিজয় অর্জনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জায়গা না পেয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদ’ নামক ভুঁইফোড় প্ল্যাটফর্ম খুলে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে। এত কিছুর পর কী করে শিক্ষার্থীরা তাঁর ওপর আস্থা রাখবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফরহাদ ভূঁইয়াকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মামলা-মোকদ্দমা, জমিসংক্রান্ত বিষয়ে বিচার-সালিস করতে দেখা গেছে। আমরা এ ধরনের অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড সমর্থন করি না। আমরা মনে করি, দেশ গঠন প্রক্রিয়ায় নতুন প্রশাসন‌ই সব দায়িত্ব নেবে, এগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের এখতিয়ার বহির্ভূত। বরং এসব কর্মকাণ্ডে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

সমন্বয়কদের কোনো প্রকার পরামর্শ ছাড়াই ডিসি অফিসে বসে আবু বকরের মধ্যস্থতায় একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই লিয়াজোঁ কমিটির প্রয়োজনীয়তা কী? ডিসি অফিসে এ রকম লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের নজির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে অন্য কোথাও নেই। গঠনকৃত এই লিয়াজোঁ কমিটির উদ্দেশ্য ও স্বার্থ কী? আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সুবিধাভোগ ছাড়া ফলপ্রসূ কোনো কর্মকাণ্ড সম্পাদন সম্ভব নয়।

এ ঘটনাগুলো সবাইকে ভালো করে লক্ষ করার অনুরোধ করছি। ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি কি আদৌ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে গ্রহণ করা হয়েছে না কি শুধু কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থে এবং প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে করা হয়েছে—সেই প্রশ্ন উত্থাপন করতে সবাইকে আহ্বান করছি।

সবশেষে বলতে চাই, মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় প্রশ্নবিদ্ধ হোক, এটা আমরা কখনো চাইনি। ১৬ বছরের ভয়ের সংস্কৃতি ভেঙে সবাই যখন ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে দাঁড়াতে পারছি, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংকট দূরীকরণে সম্মিলিতভাবে কাজ করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। যেসব ঘটনা এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাধা হয়ে এসেছে, তা সবার সামনে আমরা উত্থাপন করছি। বিচার করার দায়িত্ব সবার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বাপর সব বৈষম্যের, নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা সর্বদা সোচ্চার ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।

এ বিষয়ে সমন্বয়ক কিশোর সাম্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করা হয়েছে, আমরা মনে করি, এই প্ল্যাটফর্ম এসব সমর্থন করে না। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে প্ল্যাটফর্মটি গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। তাই আমরা মনে করছি, এই সময়ে এসে এই প্ল্যাটফর্মের আর প্রয়োজনীয়তা থাকছে না। আমরা আসলে কী ঘটেছে, ঘটছে—সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহির জায়গা থাকে। আর আমরা এই প্ল্যাটফর্মে থাকছি না—এটা ক্লিয়ার। কারণ, এখানে এখন পেশিশক্তির ব্যবহার হচ্ছে। যে পেশিশক্তির বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছিলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জেলে

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহরে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে চাটমোহর থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ও রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা (৭০) এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর সদরের মধ্য শালিখা মহল্লার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন (৫৪)।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বামনগ্রাম নিজ বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নবীর উদ্দিন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ছাড়া একই দিন রাতে মধ্য শালিখা মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুজনের বিরুদ্ধে চাটমোহর থানায় বিস্ফোরক মামলা রয়েছে। আজ সকালে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রামেকে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। অনেকের ক্ষেত্রে ভর্তি রাখার প্রয়োজন থাকলেও সেটি সম্ভব হতো না। কিছু কিছু রোগী রাখা হতো মেডিসিন বিভাগেই।

এবার প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। এ ওয়ার্ডে ২৫টি শয্যা আছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য সাতটি, শিশু-কিশোরদের জন্য পাঁচটি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য তিনটি শয্যা সংরক্ষিত। এ ছাড়া রোগীদের থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করা হয়েছে এ ওয়ার্ডে।

রামেক হাসপাতালের সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদের উদ্যোগে হাসপাতালের পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই ওয়ার্ড করা হয়েছে। গত বুধবার তিনি এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। তারা মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমবে। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজের অ্যাক্রেডিটেশনেও সমস্যা হতে পারে। তখন এ কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার সুযোগ কমবে। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এই ওয়ার্ডটি জরুরি ছিল।

তাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে এই ওয়ার্ড চালু করার জন্য হাসপাতাল পরিচালকের কাছে অনুরোধ করা হয়। সবকিছু শুনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন। ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এ হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটিই অবাক করার বিষয়। প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও চিকিৎসা নিতে পারবে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। এরপর তিনি হাসপাতাল ও রোগীদের কল্যাণে নতুন অনেক উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন। হাসপাতালকে করে তুলেছেন রোগীবান্ধব। বাড়িয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান। বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

মানসিক রোগীদের জন্য নতুন ওয়ার্ড চালুর আগে গেল ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করেন শামীম আহাম্মদ। এরপর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে একজন সাপে কাটা রোগীরও মৃত্যু হয়নি। আগে প্রায় প্রতিদিনই সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হতো এ হাসপাতালে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মান্নাকে ৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ‘কলব্যাক নোটিশ’

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২০
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি

আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ‘কলব্যাক নোটিশ’ জারি করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, বগুড়া শাখা। গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এ নোটিশ ইস্যু করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করা হলে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হলেও মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ না করায় বর্তমানে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। নোটিশে বলা হয়, আফাকু কোল্ড স্টোরেজ একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মান্না ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করেননি। বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও টাকা পরিশোধের কোনো চেষ্টাও করেননি তিনি।

গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এই নোটিশ ইস্যু করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এই নোটিশ ইস্যু করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শাখাপ্রধান তৌহিদ রেজা স্বাক্ষরিত নোটিশে আরও বলা হয়, ‘মঞ্জুরিপত্রের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ডিলে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও আপনাকে/আপনাদেরকে মৌখিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে ও মোবাইল ফোনে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আপনি/আপনারা তা পরিশোধ করেননি। ইতিপূর্বে আপনাকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে, তবুও বিনিয়োগের দায় পরিশোধ করেননি। আপনার/আপনাদের লেনদেনের পরিস্থিতি দেখে আমাদের কাছে অনুমিত হচ্ছে যে, আপনার/আপনাদের সঙ্গে আমাদের আর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অতএব, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিয়োগের সমুদয় দায় ৩৮৪.৭৬ মিলিয়ন টাকা পরিশোধ করে হিসাবসমূহ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে।’

এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) তৃতীয় অধ্যায় (নির্বাচন) ১২(১)(ঠ) ধারা অনুসারে কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আছে, এটা সঠিক। তবে চিঠির বিষয়ে এখনো কিছু জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে পাইলিংয়ের সময় ধসে পড়ল পাশের ভবন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১০
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। এতে ভবনটিসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনে অবস্থিত আরএফএল কোম্পানির বেস্ট বাই শোরুম। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন সেখানে কর্মরতরা। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনমালিকের অভিযোগ, নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের বলা হলেও কর্ণপাত না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

আজ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলি স্বর্ণকারপট্টির মুজিব সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একাধিক টিম।

সরেজমিন দেখা গেছে, একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছিল। নির্মাণাধীন এই ভবনের মালিক স্থানীয় সঞ্জয় কর্মকার, অজয় কর্মকার ও সেলিম নামে আরেক ব্যক্তি। পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পার্শ্ববর্তী ভবনসংলগ্ন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা বা প্যারাসাইলিং ব্যবস্থা ছিল না। এই অবস্থায় পাইলিংয়ের (নিচের অংশ) কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্মাণশ্রমিকেরা। হঠাৎ করেই ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে দৌড়ে সরে পড়েন নির্মাণশ্রমিক ও শোরুমটির কর্মচারীরা।

বেস্ট বাইয়ের কর্মীরা জানান, তারা সকালে এসে ফ্লোরের টাইলসে ফাটল দেখতে পান। ফাটল ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে ক্যাশ কাউন্টার টেবিলটা সরিয়ে ফেলেন, এর মধ্যেই ধসে পড়ে ভবনের এক পাশ।

ধসে পড়া ভবন ও বেস্ট বাই ফ্রাঞ্চাইজের মালিক মনিরা খাতুনের দাবি, এ ঘটনায় তাঁর ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং তিনি এর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বারবার নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের সতর্ক করা হয়েছে এবং নিয়ম মেনে কাজ করতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা রাতের আঁধারে আমার ভবনের নিচের মাটি সরিয়ে ফেলেছে, যার কারণে আজকের এই দুর্ঘটনা। পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী ৩ ফুট দূরত্ব রেখে কাজ করার কথা থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আজ সকালে উল্টো আমার কর্মচারীদের হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়।’

একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘটনাস্থলে ছুটে আসা শহরের বাসিন্দা ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোজাফফর আলী মুসা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণ করতে হলে পৌরসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হয় এবং তা সঠিকভাবে তদারকির দায়িত্ব তাদের। যদি সঠিকভাবে তদারকি হতো তাহলে এমন দুর্ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ভবনমালিকদের একজন সঞ্জয় সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে আসা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মাসুদ আলম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তবে কোনো অভিযোগ পায়নি পুলিশ। অভিযোগ পেলে সেটা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পৌরসভার প্রশাসক ও ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত