Ajker Patrika

রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরসার প্রধান আতাউল্লাহ ও সহযোগীসহ ১০ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জময়মনসিংহ প্রতিনিধিসিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ২৩: ১৫
আরসা প্রধান ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী গ্রেপ্তার। ছবি: র‍্যাব
আরসা প্রধান ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী গ্রেপ্তার। ছবি: র‍্যাব

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী ও তাঁর ও সহযোগীসহ সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব–১১। গত সোমবার ও মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ শহরে অভিযান চালিয়ে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নাশকতার ষড়যন্ত্রের মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— আরসার কমান্ডার আতাউল্লাহ (৪৮), সেকেন্ড ইন কমান্ড মোস্তাক (৬৬), মনিরুজ্জামান (৩৩), সলিমুল্লাহ (২৭), মোসা. আসমাউল হুসনা (২৩), আসমত উল্লাহ(২৪), মো. হাসান (৪৩), মোসা. শাহিনা(২২) এবং ১৫ ও ১৭ বছর বয়সী দুই কিশোর-কিশোরী।

এদের মধ্যে মনিরুজ্জামান সিদ্ধিরগঞ্জে ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার চর আলগী এলাকায়। তার বাবার নাম আতিকুল ইসলাম। বাকিরা সবাই রোহিঙ্গা।

র‍্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. ক. আশিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাবে দুটি দল গত রোববার (১৬ মার্চ) ভোররাতে মময়মনসিংহের নতুন বাজার মোড় থেকে চারজনকে এবং গতকাল সোমবার রাতে (১৭ মার্চ) সিদ্ধিরগঞ্জের ভুমিপল্লী আবাসিক এলাকায় ভূমিপল্লী টাওয়ার থেকে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোট ৫১ লাখ ৩৯ হাজার ১০০ নগদ টাকা, ইউএস ডলার ও মালয়েশিয়ার রিঙ্গিতসহ অন্যান্য কিছু বৈদেশিক মুদ্রা, আরসার কমবাট ইউনিফর্ম, মোবাইল ফোন, চাকু, স্টিলের চেইন ও ঘড়িসহ বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। পরে থানায় হস্তান্তর করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর আরসার প্রধানসহ দশজনের বিরুদ্ধে মামলা করে র‍্যাব তাঁদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আজ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দুটি মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মঈনউদ্দিন কাদির ৫ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান এতথ্য জানান।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর খোরশেদ আলম মোল্লা বলেন, আসামিরা নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতামূলক অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত করার জন্য গোপন বৈঠক করে আসছিল। র‍্যাব ও পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করে।

র‍্যাব ১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আসামিররা বিভিন্ন নাশকতার ষড়যন্ত্র করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ মামলা তদন্ত করছে।

এর আগে রোববার ভোররাতে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজার মোড়ের বহুতল ভবন গার্ডেন সিটির ১০ তলার ‘এ’ ব্লক থেকে চারজনকে আটক করে র‍্যাব। তাঁদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও দুজন নারী। এসময় তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়। ভবনের অন্য বাসিন্দারা জানান, ওই চারজনের সঙ্গে দুটি শিশুও ছিল। তারা ভুয়া পরিচয় ব‍্যবহার করে কিছুদিন ধরে ‘এ’ ব্লক ফ্ল্যাটে বসবাস করছিল।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে আতাউল্লাহর ভাই শাহ আলীকে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহীঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্রেপ্তার করে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)। তিনি চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজার এলাকার স্থায়ী ঠিকানায় বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছিলেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের সঙ্গে আরসার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।

২০১৭ সলে ১৫ আগস্ট আরসা বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের রাখাইনে একযোগে ২৪টি পুলিশ পোস্ট এবং ৫৫২তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন সেনাঘাঁটিতে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। এতে অন্তত এক ডজন সামরিক ব্যক্তি নিহত হন। এরপর জান্তা সরকার রাখাইনে একযোগে অভিযান শুরু করে; গণহত্যা চালায়। লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছে।

আরসা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনসহ বিভিন্ন অধিকারের কথা বললেও এই সংগঠনকে সমর্থনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভক্তি আছে।

টেকনাফ ও উখিয়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসায় আরসার ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যার অভিযোগও আছে আরসার বিরুদ্ধে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদান হামলা: সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো শান্তিরক্ষী শান্তকে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

সুদান থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে যখন কথা বলতেন, তখন অনাগত সন্তান নিয়ে কত শত স্বপ্ন বুনতেন শান্তিরক্ষী শান্ত মণ্ডল। সন্তান যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ পায়, সে জন্য পরিবারের সবাইকে ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকার কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সন্তানের মুখ দেখার আশা তাঁর আর পূরণ হলো না। সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাঁকে।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের একজন কুড়িগ্রামের শান্ত মণ্ডল (২৬)। তাঁর বাড়ি রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামে। তাঁর বাবা সাবেক সেনাসদস্য (মৃত) নূর ইসলাম মণ্ডল এবং মা সাহেরা বেগম। শান্তর বড় ভাই সোহাগ মণ্ডল সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ল্যান্স করপোরাল পদে রয়েছেন।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নিহত শান্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর মা সাহেরা বেগম শোকে স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে রয়েছেন। বড় ভাই সোহাগ মণ্ডলের চোখ কান্নায় লাল হয়ে আছে। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে গিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন।

সোহাগ মণ্ডল বলেন, শান্ত ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি সর্বশেষ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সৈনিক পদে ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে সুদানে যান। সোহাগ মণ্ডল আরও বলেন, ‘মাত্র এক বছর আগে শান্ত বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে তার বাবার বাড়িতে আছে। সেও খবর পেয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় শান্ত ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাই, ওদের ক্যাম্পে হামলা হয়েছে। হামলায় শান্ত মারা গেছে। হামলার সময় সে অস্ত্র পরিষ্কার করতে ছিল। তার এমন মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা। আমরা এখন তার লাশের অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে বাবার কবরের পাশে তাকে কবর দিতে চাই।’

পরিবার থেকে জানানো হয়, স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিতই কথা হতো শান্তর। গতকাল শান্তর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শোকে বিহ্বল হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় এখন তিনি নেই।

শান্তর বাল্যবন্ধু সুমন বলেন, ‘শান্তর মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নামের মতোই সে শান্ত ছিল। কোনো দিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ বা কটু কথা বলেনি। এমন বন্ধুর মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে আইনজীবী ছাড়া প্রবেশ সীমিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নিরাপত্তার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট—উভয় বিভাগের এজলাস কক্ষে আইনজীবী ছাড়া বিচারপ্রার্থী বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যক্তির প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। আজ রোববার প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত। প্রধান বিচারপতি ও উভয় বিভাগের বিচারপতিরা এখানে বিচারকার্য পরিচালনা করেন, তাই সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, আদালতে আগত কিছু বিচারপ্রার্থী, মামলাসংশ্লিষ্ট ও অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি এজলাসে প্রবেশ করছেন, যা আদালতের নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও বিচারকার্য পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের আইনজীবী বাদে বিচারপ্রার্থী কিংবা অপ্রত্যাশিত যেকোনো ব্যক্তির এজলাস কক্ষে প্রবেশাধিকার সীমিত অথবা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যেকোনো সমাবেশ ও মিছিল, বৈধ ও অবৈধ যেকোনো প্রকার অস্ত্র, মারণাস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো। এই আদেশ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত