Ajker Patrika

সাবেক সেনাপ্রধানের তিন ভাইয়ের গ্রেপ্তার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১৮: ৪৮
সাবেক সেনাপ্রধানের তিন ভাইয়ের গ্রেপ্তার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

১৯৯৬ সালে মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলায় দণ্ডিত রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া সাবেক সেনাপ্রধানের তিন ভাই জোসেফ, হারিস ও আনিস আহমেদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের ভাই মোহাম্মদপুরের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান। 

আজ রোববার দুপুরে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব তাঁর সঙ্গে ছিলেন। 

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের তিন ভাইয়ের ‘স্বার্থ উদ্ধারের জন্য’ হয়রানি করতে ২০১৯ সালের শেষ দিকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে দুজনই দাবি করেছেন। 

ঢাকা উত্তরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন অনুগত কর্মী। আমি ফ্রিডম মিজান নই। ফ্রিডম মিজান সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’

মিজান বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন ১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরে আমার ভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার জজ আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে জোসেফ আপিল করলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ এ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সেই মামলায় আরও আসামি ছিলেন জোসেফের ভাই হারিস আহমেদ ও আনিস আহমেদ। তাঁরাও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। হারিস ও আনিস রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা পেয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এমনকি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তাঁদের কারাগারে যেতে হয়নি। তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে।’

মিজান আরও বলেন, ‘আমার ভাই খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান ২০১৮ সালের মে মাসে। বড় ভাই হারিস আহমেদের হাত ধরে রাজনীতির মাঠে আসেন জোসেফ। একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন হারিস। নব্বই দশকে জাতীয় পার্টি ছেড়ে হারিস দলবদল করেন। বড় ভাইয়ের ক্যাডার বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন জোসেফ। ওই সময় মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন জোসেফ। যোগ দেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলোচিত সেভেন স্টার গ্রুপে। জোসেফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনো চলছে।’

সাবেক এই কাউন্সিলর বলেন, ‘২০১৯ সালে পরিবর্তিত এক পরিস্থিতিতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় আমাকে আটক করা হয়। যদিও এর আগে আমার নামে কোনো থানায় কখনো কোনো মামলা ছিল না। ওই সময় আমার বিরুদ্ধে সাজানো সব অভিযোগ আনা হয়। এমনকি আমার নামও বদলে দেওয়া হয়। আমার নাম দেওয়া হয় মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান। অথচ আমার নাম হাবিবুর রহমান মিজান। সরকারের ওই অভিযান ছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। অথচ এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে আমি সম্পৃক্ত না থাকলেও সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমার বাসায় থাকা মূল্যবান দলিলপত্র, টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়া হয়, যা মামলার জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। আজও তা আমি ফেরত পাইনি।’ 

মিজান অভিযোগ করে বলেন, ‘একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি ইন্ধনে ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ-হারিস-আনিসের মদদে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাঁর নামে আমার পরিচয় দেওয়া হয়। ওই সময়ের বিভীষিকা আমি কখনো ভুলতে পারব না। আমাকে গ্রেপ্তারের মূল কারণ ছিল সন্ত্রাসী জোসেফ গংরা মোহাম্মদপুর এলাকায় আবারও তাদের পুরোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করা। অথচ আমার ভাই হত্যায় তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় জোসেফ অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি ভালো হয়ে গেছেন, আর কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করবেন না। বাস্তবে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা তার এক আপনজনের সরাসরি সহযোগিতায় আমার ওপর এ ধরনের নৃশংসতা চালান তাঁরা।’ 

তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মিজান বলেন, ‘তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাভোগের পর অবশেষে আমি মুক্তি পাই গত বছরের ৮ নভেম্বর। আমাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিকার চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছি। এটাই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ ও তাঁর প্রভাবশালী শক্তি আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব বলেন, ‘আমি নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নিবেদিত কর্মী। খুব অল্প বয়সেই আমি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন ঢাকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ, হারিস আহমেদ ও আনিস আহমেদ গং। তাঁদের স্বার্থ উদ্ধারে ২০১৯ সালের অক্টোবরে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাঁর সন্ত্রাসী ভাইদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।’

রাজীব বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাকে আটকের পর রাতভর আমার বাসা ও অফিসে তল্লাশি অভিযান চলেছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের মতো করে সন্ধান করেছে। তবে অভিযান শেষে অভিযান পরিচালনাকারী দল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, আমার কোনো ক্যাসিনোসম্পৃক্ততা নেই। অথচ সেই অভিযান ছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। আমার বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এমনকি বিদেশে আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যপ্রমাণও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের তদন্তে পায়নি।’

নব্বইয়ের দশক থেকে জোসেফ-হারিস পরিবার ঢাকা শহরের ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে পরিচিত মন্তব্য করে সাবেক এই কাউন্সিলর বলেন, ‘তাঁরা রাজনৈতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চান। মোহাম্মদপুর তাঁদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পুরোনো অভয়ারণ্য। সেই এলাকার একজন কাউন্সিলর ছিলাম আমি। আমার জায়গায় তাঁদের ভাতিজা আসিফ হোসেনকে কাউন্সিলর বানাতে পরিকল্পিতভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত একটা মামলা কিংবা জিডি পর্যন্ত ছিল না।’

তারেকুজ্জামান রাজীব বলেন, ‘কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হয়েও শুধু ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিনা অপরাধে তিন বছরের বেশি সময় জেলে থাকতে হয়েছে। আমার জীবন থেকে তিনটি বছর কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমি এবং আমার পরিবার ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকির মুখে আছি। আমার প্রাণনাশের শঙ্কা রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনায় জড়িত বিশেষ মহলের দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...