Ajker Patrika

নরসিংদীতে ২ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা বিকাশ এজেন্ট

নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদীতে ২ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা বিকাশ এজেন্ট

নরসিংদীতে বিকাশে বাড়তি লাভের লোভে পড়ে একই এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী এক এজেন্টের কাছে প্রায় ২ কোটি বেশি টাকা খুইয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাতজন ভুক্তভোগী এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

এ দিকে জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ নিয়ে আলোচনার হরে ছায়াতদন্ত শুরু হয়। এ অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণও পেয়েছেন বলে জানিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টজন। 

এ ঘটনা ঘটেছে নরসিংদী পৌর শহরের ব্রাহ্মনদী এলাকায়। অভিযুক্ত বিকাশ এজেন্টের নাম—আনিকুল ইসলাম (২৩)। তিনি ওই এলাকার তৌহিদা এন্টারপ্রাইজের মালিক। এ ছাড়া নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও ইউনিয়ন আ. লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আরিফা ইয়াসমিন মুন্নির (৪২) ছেলে। 

গত মঙ্গলবার আনিকুল ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

আল আমিন নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ। আয় রোজগার না করতে পেরে আমার একটি নম্বরের বিকাশ এজেন্টের আয় থেকে পরিবার চালাইতাম। বাড়তি লাভের আশায় বিকাশ কোম্পানির কাছ থেকে ক্যাশ আউট না করে আনিকুলের এজেন্ট থেকে ক্যাশ আউট করতাম। বিকাশ কোম্পানি ক্যাশ আউটের জন্য এজেন্টকে দিত লাখে ৫০০ টাকা। আর আনিকুল দিত ৩ থেকে ৪ হাজার। এমন লোভে অনেক এজেন্ট তাঁর কাছে টাকা ক্যাশ আউটের জন্য যেত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত লাভের আশায় আনিকুলকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আমার পাশের বাসার ছেলে আনিকুল পুঁজি গায়েব করে পালিয়ে গেছে। অভিযুক্তের মায়ের কাছে টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দেয়। এখন না খেয়ে মরার মতো অবস্থা হয়েছে। মঙ্গলবার আমরা ৭ জন ভুক্তভোগী একত্রিত হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, যাদের মোট টাকার পরিমাণ ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।’ 

আলোকবালী ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামের ফাইভ জি স্টোরের মালিক ভুক্তভোগী সোহান আলী বলেন, ‘আনিকুলের বিকাশ এজেন্ট থেকে প্রতি এক লাখ টাকায় ক্যাশ আউটের জন্য অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। ৩ মাস ধরে আমাদেরকে এভাবে লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল এবং একই এলাকার ছেলে হিসেবে তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়। কিন্তু গত ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন অজুহাতে কাউকে টাকা না দিয়ে সুযোগ বুঝে সকল টাকা আটক করে। এবং কাউকে পরিশোধ না করে এলাকা থেকে গত সপ্তাহে পালিয়ে গেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তার পরিবারকে এ ঘটনা জানানো হলে, উল্টো আমরাই অভিযুক্ত আনিকুলকে গুম করেছি বলে হুমকি দেয়। তার পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না। ব্যবসার সকল টাকা হারিয়ে, না পারছি পরিবারকে বোঝাতে, না পারছি টাকা আদায় করে ব্যবসা চালিয়ে যেতে।’ 

একই এলাকার ভুক্তভোগী খলিল উল্লাহ স্টোরের মালিক খলিল উল্লাহ বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে বিকাশের মাধ্যমে আমার কাছে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছে। আনিকুলের এজেন্ট নম্বরে টাকা পাঠানোর ডকুমেন্টও আছে। আনিকুলের মায়ের আশ্বাসে তার সাথে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন টাকা, সম্মান দুটোই শেষ। এখন মানসিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে চরম খারাপ অবস্থার মধ্যে পরে গেছি। আমরা টাকা ফেরত চাই।’ 

এ বিষয়ে আলোকবালী ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দীপু বলেন, ‘অতিরিক্ত লাভের লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একাধিক অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত। থানায়ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত আনিকুল বা তার পরিবারের দৃশ্যমান কোনো আয় নেই। কিন্তু গত দুই মাসে অন্তত দুই কোটি টাকা ব্যয় করে সদর উপজেলার সংগীতা ও বাসাইল এলাকায় দুটি বাড়ি কিনেছেন তারা। ইতিপূর্বে তার মা-বাবার নামেও বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।’ 

এ দিকে অভিযুক্ত আনিকুল ইসলামের বাবা মাইনউদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ছেলে কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি। আমার ছেলেকেও গত কয়েক দিন ধরে খোঁজে পাচ্ছি না। নিখোঁজের ঘটনায় নরসিংদী সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আমরা শহরে কোনো বাড়ি কিনে থাকলে, সরকার তা খুঁজে বের করে বাজেয়াপ্ত করুক।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছায়া তদন্তকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি তদন্তে প্রায় ৫০ জন ভুক্তভোগীর নাম পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হবে।’ 

তিনি আরও জানান, ‘বিকাশ কর্তৃপক্ষ প্রতি এক লাখ টাকায় বিকাশ এজেন্টদের ৫০০ টাকা লভ্যাংশ দেয়। কিন্তু আনিকুল প্রতি এক লাখ টাকার বিপরীতে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লভ্যাংশ দিত। ভুক্তভোগীরা সবাই আনিকুলের এলাকার হওয়ায় সহজে আনিকুলকে বিশ্বাস করে তার এজেন্ট নম্বর থেকে টাকা তুলত। গত ৩-৪ মাস ধরে নিয়মিত টাকা পরিশোধ করে বিশ্বস্ততা অর্জন করে আনিকুল। পরে সুযোগ বুঝে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’ 

নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তানভীর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৭ জনের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে, বিকাশে অতিরিক্ত লাভের লোভ দেখিয়ে ও সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ভুক্তভোগীদের টাকা আনিকুল আত্মসাৎ করেছে। আমরা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভুক্তভোগীদের কেউ হুমকি দিলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ছাড়াও ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে টাকার সঠিক পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।’ 

এ দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঢাকা অফিসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আনিকুলের পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তিনি গত ১০ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে দুবাইয়ের শারজাই বিমানবন্দরে চলে গেছেন।’ 

উল্লেখ্য, গত ২৩ জানুয়ারি নরসিংদীর রায়পুরার আলগী বাজারের ডাচ বাংলার এজেন্ট শাখা থেকে প্রায় ৪৫-৫০ জন গ্রাহকদের প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হন এজেন্ট উদ্যোক্তা। এ ছাড়াও গত ১০ বছরে নরসিংদী থেকে আরডিবি, শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, সোনালী ইনস্যুরেন্স, সোয়াল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স, পিডিবি ও মধুমতি ইনস্যুরেন্সসহ নামে-বেনামে আরও একাধিক সংস্থা ও ব্যক্তির একাধিক অর্থ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, সিসিটিভির হার্ডডিস্ক নিয়ে আত্মগোপনে স্বামী

বগুড়া প্রতিনিধি
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় রিফাত জাহান রিংকি (১৯) নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার নুনগোলা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পরপরই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ির সিসিটিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এই ঘটনায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত রিংকি শাজাহানপুর উপজেলার নন্দকুল উত্তর পাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলামের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে নুনগোলা এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে নুরুন্নবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের চার বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা রিংকিকে বাড়ির উঠানে স্বাভাবিকভাবে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেন। যদিও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে পারিবারিক কলহের কথা শোনা যেত। রাতের দিকে হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

নিহত রিংকির বোন আশা খাতুন জানান, বিকেলে রিংকির মোবাইল থেকে তাঁর ফোনে একটি মিসকল আসে। পরে একাধিকবার ফোন করলেও রিংকি ফোন ধরেননি। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে নুরুন্নবী ফোন করে জানায়, রিংকির ওপর জিনের আছর পড়েছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রিংকির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তখন তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন লক্ষ করা যায়।

রিংকির মামি আয়না খাতুন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে রিংকিকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আলামত নষ্ট করতে বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী নুরুন্নবী ও তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু রায়হান বলেন, ‘এর আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ঝগড়াবিবাদের কথা আমার জানা ছিল না। হঠাৎ রাতে মৃত্যুর খবর পাই। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে আত্মহত্যার কোনো সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ দিন সূর্যহীন চুয়াডাঙ্গা: মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে বিপন্ন জনজীবন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। হিমাঙ্কের কাছাকাছি নামা তাপমাত্রার সঙ্গে টানা পাঁচ দিন সূর্যের দেখা না মেলায় স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। আজ বুধবার চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জেলাজুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। চলতি শীত মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ ছাড়া জেলায় ২৭ ডিসেম্বর থেকে একটানা সূর্যের দেখা মেলেনি। ২৭ ডিসেম্বর ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলেও বুধবার একলাফে তাপমাত্রা কমেছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ হওয়ায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রায় হঠাৎ করে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু এবং ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসাবে চুয়াডাঙ্গায় এখন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে এবং এই পরিস্থিতি আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। রাস্তাঘাটে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে।

চা-দোকানি আলফাজ আলী বলেন, ‘ঠান্ডার চোটে সকালে দোকান খোলাই দায় হয়ে পড়েছে। কুয়াশায় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, বেচাকেনাও খুব কম।’

দিনমজুর হারেজ আলী বলেন, ‘হাতে-পায়ে বরফের মতো ঠান্ডা লাগে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না, তাই এই শীতেও বের হতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলার একটি ইটভাটার শ্রমিক আফতাব হক বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। বাতাসের ঝাপটায় হাত অবশ হয়ে আসে, কাজ এগোয় না।’

টানা কুয়াশা ও সূর্যের অনুপস্থিতিতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। হাটকালুগঞ্জ গ্রামের ধানচাষি ফরজ আলী জানান, তীব্র ঠান্ডায় ধানের বীজতলা লালচে হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বীজতলা রক্ষায় সকালে দড়ি টেনে কুয়াশার পানি ঝরিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ফসল সুরক্ষায় ছত্রাকনাশক ও পরিমিত সেচ জরুরি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন আউটডোরে শত শত শিশু ও বৃদ্ধ রোগী নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিতে আসছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনসিপির প্রার্থী ডা. মাহমুদা মিতুকে হত্যার হুমকি

ঝালকাঠি প্রতিনিধি 
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতু। ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা মিতুকে পুড়িয়ে ও কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই অভিযোগ করেন।

ফেসবুক পোস্টে ডা. মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘আজকেও (+৯৬৬৫৪৮৬৮০৪৩৬) এই নম্বর থেকে হত্যার হুমকি আসছে। আবার নতুন করে প্রতিদিন হত্যার হুমকি শুরু হয়েছে। পুড়িয়ে মারবে, কুপিয়ে মারবে—এ ধরনের কথা বলছে। আপনাদের বিচলিত করতে চাই না বলে এত দিন জানাচ্ছিলাম না। কিন্তু জোটে ইলেকশন করব—এ খবর জানার পর একদম বানোয়াট ও উদ্ভট গল্প বানিয়ে চরিত্র হনন শুরু করেছে। জোটের খবর আওয়ামী লীগের পুচ্ছে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।’

মাহমুদা মিতু লেখেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি না, বিচলিতও নই। আপনারাও বিচলিত হবেন না। ওদের লেখাগুলো পড়ার দরকার নেই। আল্লাহ ভরসা। আমার স্বামী বলছে—এটা তো শুরু, সামনে এআই ভিডিও, ন্যুড ও এডিটেড ছবি ছড়ানোর চেষ্টাও হতে পারে। দোয়ার আরজি রইল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মাহমুদা মিতু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও বিভিন্ন সময় নানা ধরনের হুমকি এসেছিল। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর এই প্রথম এমন হুমকি এসেছে।’ তিনি জানান, শুধু হুমকি নয়, তাঁকে নিয়ে মিথ্যা বদনাম রটানোর চেষ্টাও চলছে।

ডা. মাহমুদা মিতুর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
ডা. মাহমুদা মিতুর ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আইনি সহায়তা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত এ ধরনের হুমকি-ধমকি আসছেই।’

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীতে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীতে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুয়াশার চাদরে মোড়া রাজশাহী কাঁপছে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায়। দিনের তাপমাত্রা ক্রমেই নেমে যাওয়ায় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে কনকনে শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে সময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল শতভাগ। ফলে শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

এদিকে তিন দিন ধরে পদ্মার তীরের এই জেলায় সূর্যের দেখা নেই বললে চলে। ভোর থেকে সকাল, এরপর দুপুর পেরিয়েও কুয়াশার আস্তরণ কাটছে না। হিমেল বাতাস শরীর ছুঁয়ে গেলেই কাঁপুনি ধরছে। প্রতিদিন যেন শীত নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে জনজীবনে।

সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে রাজশাহীর দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ কমে যাওয়ায় আয় নেই। আবার শীত নিবারণের পর্যাপ্ত গরম কাপড়ও নেই। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষকে কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করে রাত কাটাতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা থেকে ভোরে কাজের আশায় রাজশাহী নগরের তালাইমারী এলাকায় আসেন দিনমজুর নাজমুল। কিন্তু শীতের কারণে কাজের দেখা মেলেনি। তিনি বলেন, ‘আজ খুব বেশি ঠান্ডা। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, তাই কাজও পাওয়া যায়নি। আগে যেখানে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন কাজ মিলত, এখন এই শীতে সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই কাজ পাওয়া যায় না।’

রিকশাচালক জাকির আলী বলেন, ‘হুহু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। রিকশা চালাতে গেলে শরীর জমে আসে। যাত্রী কম, আয়ও কম। খুব কষ্টে দিন কাটছে। কয়দিন এই অবস্থা থাকবে কে জানে!’

এদিকে তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে নগরজীবনেও। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা আর ঠান্ডার ভয়ে মানুষ দ্রুত ঘরে ফিরছে। আর সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ দোকানপাট। যেন পুরো শহর আগেভাগেই নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে।

গ্রামাঞ্চলে শীতের দাপট আরও বেশি। রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার বাসিন্দা তুষার আলম জানান, শহরের তুলনায় গ্রামে শীত অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। খোলা মাঠ, নদী আর কুয়াশার কারণে ঠান্ডা যেন হাড়ে হাড়ে ঢুকে পড়ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিক থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। বুধবার ভোরের পর থেকে কুয়াশার আধিক্য দেখা যায়। কুয়াশার কারণে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মতো অনুভূতি হচ্ছে। রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন বিরাজ করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত