Ajker Patrika

ছোট্ট মানহার শরীরে গরম ছুরির অসংখ্য ছ্যাঁকা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
অভিযুক্ত শামসুজ্জামান। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযুক্ত শামসুজ্জামান। ছবি: আজকের পত্রিকা

চার বছরের ছোট্ট শিশু মানহার শরীরজুড়ে অসংখ্য পোড়া ক্ষতচিহ্ন। প্রতিবেশী ও পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই মৃদু হেসে উত্তর দিল, ‘আব্বু পুইড়া দিছে।’ কীভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে? মানহার জবাব, ‘ছুরি গরম করে ছ্যাঁকা দিছে।’

গতকাল রোববার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের ইউএনওর কার্যালয়ে মানহাকে উদ্ধার করে আনা হয়। সেই সঙ্গে আনা হয় তার মা রুমি আক্তার এবং মায়ের প্রেমিক শামসুজ্জামানকে (২৫)। তাদের বাস উপজেলার মাওনা চৌরাস্তাসংলগ্ন কলাবাগান এলাকার ফজলুল হকের ভাড়া বাড়িতে। শামসুজ্জামানকে বাবা হিসেবে চেনে মানহা। এই যুবকের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় তলিয়াচাঁদপুর গ্রামে।

বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়া এনামুল হক জানান, চার মাস আগে শামসুজ্জামান ও রুমি এ বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া আসেন। কিন্তু তাঁরা স্বামী-স্ত্রী নন। শিশু মানহাকে পরিচয় দিতেন রুমির বোনের মেয়ে হিসেবে। শামসুজ্জামান প্রায়ই শিশুটিকে নির্যাতন করতেন। এতে প্রেমিকের ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতেন না রুমি। মানহা পাশের ভাড়াটিয়া রায়হানের বাসায় খেলাধুলা করে দিন কাটত। তবে গত দুই দিন ধরে সে ওই বাসায় খেলতে আসেনি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মানহা রায়হানের বাসায় এলে নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ পায়।

ভাড়াটিয়া রায়হান বলেন, ‘গত চার মাস ধরে শিশুটির ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চলেছে...সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে গ্যাসের চুলায় ছুরি গরম করে শিশু মানহার কাঁধ, হাত, ঘাড়, গলা, গাল ও কানে ছ্যাঁকা দেয় কথিত পাষণ্ড বাবা। ঘরেই আটকে রাখা হয় তাকে। রোববার সন্ধ্যায় এক ফাঁকে সে বেরিয়ে আমার বাসায় চলে আসলে বিষয়টি জানতে পারি। রাতেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’

এ নিয়ে কথা হলে মানহার মা রুমি বলেন, ‘সব জেনেই আমাকে ঘরে তুলেছে শামসুজ্জামান। কথা ছিল আমার প্রথম স্বামীর ঘরের মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো দেখবে। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে আসার পর থেকে পাল্টে যায় তার চরিত্র। আমার মেয়েকে হরহামেশাই মারপিট-নির্যাতন করত, আমাকেও মারত। ভয়ে প্রকাশ বা প্রতিবাদ করতে পারতাম না। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মেয়েকে পাশের কক্ষে দরজা বন্ধ করে ছুরি গরম করে শরীরে ছ্যাঁকা দেয়। আমাদের ঘরে আটকে রাখে। কাউকে কিছু বলতে পারিনি। পাশের ভাড়াটিয়ারা জেনে আমাদের উদ্ধার করে। আমাদের বিয়ে হয়নি। শামসুজ্জামান বলছে কাবিন করবে, তা-ও করেনি।’

এ বিষয়ে শ্রীপুরের ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, ‘রোববার রাতে বাড়ির অপর ভাড়াটিয়াদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশের সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার করে আনা হয়। আটক করে আনা হয় রুমির কথিত স্বামী শামসুজ্জামানকে। বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়া ও শিশুর বক্তব্য শুনে শামসুজ্জামানকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শিশুটিকে মায়ের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন শিশুটির নিয়মিত খোঁজখবর রাখবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার পথে দিল্লির বাধা চীনের উত্থান: ভারতীয় সেনাপ্রধান

আসামির জবানবন্দি: মাগুরার শিশুটির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধর্ষণ করা হয়

ইউএনওর ফেসবুক পেজ হ্যাক করে পোস্ট, ‘করলাম না এই প্রশাসনের চাকরি’

রেমিট্যান্সের নামে ৭৩০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন একজন, কার কথা বললেন এনবিআর চেয়ারম্যান

অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে খাওয়ার খরচ চায় পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত