Ajker Patrika

‘তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি’

মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
আপডেট : ০২ মে ২০২২, ০০: ২৪
‘তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি’

আজ মহান মে দিবস। সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমজীবী মানুষের দীপ্ত সংগ্রামের দিন। মে দিবসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কর্মঘণ্টার সঙ্গে সঙ্গে ন্যায্য মজুরির প্রশ্ন। আট ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকশ্রেণি ১৮৮৬ সালে ইতিহাস বদলে দেওয়া আন্দোলন শুরু করেছিল। বীরত্বপূর্ণ সে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছিল নতুন ইতিহাস। সময়ের সঙ্গে দিবসটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেলেও শ্রমিকেরা এখনো বিভিন্ন কারখানায় বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু পাচ্ছেন না। আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে নানাভাবে তাঁদের প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মাস শেষে শ্রমিকদের যে বেতন দেওয়া হয়, তাতে তাঁরা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নিশ্চিত করতে পারেন না। 

প্রতিটি উৎসবের আগে তাই এখনো বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামতে হয়। এটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি বছর এমন ঘটনা বলে দেয়—এ দেশের শ্রমিক শ্রেণি নিয়ে কারও তেমন কোনো মাথা ব্যথা নেই। অথচ এই শ্রমিক শ্রেণির কারণে রাষ্ট্র বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে। এ দেশের শ্রমিকেরা রপ্তানিতে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ করেও পাচ্ছে সর্বনিম্ন মজুরি। যদিও সরকার ও মালিকপক্ষ থেকে বলা হয়, শ্রমিকেরা দেশের অর্থনীতির মূল হাতিয়ার। শ্রমিকের শ্রমে ও ঘামে বাড়ছে জাতীয় উৎপাদন। কিন্তু সে অনুপাতে তাদের মজুরি বাড়ছে না। এ যেন ‘তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি’। 

ঈদ আসন্ন। ঈদের আগে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন প্যারাডাইস ক্যাবলস কারখানার শ্রমিকেরা। এ কারখানার শ্রমিক মো. রাসেল হোসেন বলছেন, ‘আমাদের ১১ মাস ১৫ দিনের বকেয়া বেতন বাকি। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে আমাদের মালিকপক্ষের কথা হয়েছে। মালিকের বক্তব্য হলো আমাদের এ কারখানা থেকে শতভাগ উৎপাদন হয় না। তাই বেসিকের ৬০ শতাংশ বোনাস দেওয়া হবে। আর ধীরে ধীরে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।’ 

এই হিসাব মানতে রাজি নন রাসেল। তাঁর দৃষ্টিতে এটা শ্রমিক ঠকানোর অজুহাত মাত্র। বললেন, ‘আসলে আমরা শ্রমিকেরা সব সময় অবহেলিত। প্যারাডাইস কেবলসের শ্রমিকেরা যে এ দেশে একমাত্র শোষিত শ্রমিক, তা কিন্তু নয়। আমরা তো দেখি দেশের বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। এসব কলকারখানার শ্রমিকেরা মালিক দ্বারা নির্যাতিত, শোষিত। আমরা যখন আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে নামি, তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালায়।’ 

কারখানায় কাজ করতে গেলে শ্রমিকদের যেমন বিভিন্ন নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, তেমনি কারখানার মালিকদের জন্যও রয়েছে নিয়মকানুন। মালিকপক্ষ যেন নিজেদের স্বার্থে শ্রমিকদের নির্যাতন করতে না পারেন, সে বিষয়টিও আইনে আছে উল্লেখ করে রাসেল বলেন, ‘আমাদের মালিকেরা চার ভাই। তাদের নিজেদের সম্পত্তি ভাগাভাগির জন্য কোন্দল চলছে। আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের মতো শ্রমিকদের ওপর। তাদের কোন্দলের কারণে আমরা শ্রমিকেরা মাস শেষে বেতন পাচ্ছি না। বেতন না পেলে শ্রমিকদের অসহনীয়ভাবে জীবন চালাতে হয়। আমার ১৪ মাসের এক মেয়ে আছে। টাকার অভাবে তার চিকিৎসার খরচ দিতে পারছি না। আবার নিজেও ঠিকমতো পেট ভরে খেতে পারছি না। এ কষ্ট শুধু আমার নয়। এ দেশের হাজার হাজার শ্রমিক এ রকম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।’ 

এবার একটু পরিসংখ্যানে নজর দেওয়া যাক। শিল্প পুলিশের এপ্রিল মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ-সংক্রান্ত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বিজিএমইএ ১৬১৫টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৩৫টি কারখানায়। বকেয়া রয়েছে ১৫৮০টি কারখানায়। বিকেএমইএ ৬৮৫টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৩১ টিতে; বকেয়া রয়েছে ৬৫৪টি কারখানা। বিটিএমএ ৩৩৮টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৯ টিতে, বকেয়া রয়েছে ৩২৯ টির। বেপজা ৩৪৮টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ১০ টির, বকেয়া রয়েছে ৩৩৮ টির। পাটকলের ৮৩টি কারখানার মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৫৮ টির, বকেয়া রয়েছে ২৫ টির। অন্যান্য কারখানা মিলে মোট ৯১৭৬টি কারখানার মধ্যে মোট ১০২৫টি কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। বকেয়া রয়েছে ৮১৫১ টির বেতন-ভাতা। 

শ্রমিকদের পাওনা মজুরি পরিশোধের প্রসঙ্গে বিকেএমই-এর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ‘আমরা সব কল-কারখানায় বকেয়া বেতন, বোনাস পরিশোধ করতে পারিনি। ব্যাংক খোলা আছে। আশা করছি ঈদের আগে শতভাগ কারখানার বকেয়া বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করতে পারব। তবে কয়েকটা কারখানায় কিছু সমস্যা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেখানে কারখানার বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে মালিক পলাতক রয়েছে। আমরা মনে করি, কল-কারখানার যত সমস্যায়ই থাকুক না কেন, শ্রমিকদের বেতন, বোনাস দিয়ে দিতে হবে। আমরা এ বিষয়ে বিকল্প কোনো কথা শুনব না। শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিতে হবে।’ 

মো. হাতেম বলেন, ‘যেসব কারখানা নিয়মিত বেতন পরিশোধ করে না, সেসব কারখানা আমরা নজরদারিতে রেখেছি। এ ধরনের কারখানার মালিকদের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। এসব কারখানার ক্ষেত্রে অনেক সময় কারখানার মেশিন বিক্রি করে হলেও শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করার কথা বলে থাকি।’ 

সময়ের সঙ্গে মে দিবস রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেলেও শ্রমিকেরা এখনো বিভিন্ন কারখানায় বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু পাচ্ছেন না। ছবি: হাসান রাজাকিন্তু পরিসংখ্যান তো সে কথা বলছে না। অনেক সময়ই দেখা যায়, বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে দিনের পর দিন সরকার ও মালিক পক্ষ আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায়। মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ তেমন একটা দেখা যায় না। এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্প এ দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প খাত। এই খাতে প্রায় ৪০ লাখের বেশি নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন। আবার এ খাতের রপ্তানির পরিমাণও অনেক বেশি। করোনাকালে এ শ্রমিকেরাই দেশের অর্থনীতি টিকেয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প শ্রমিকদের মজুরি কম। মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করলে মালিক পক্ষ চাকরিচ্যুতির ভয় দেখায়।’ 

ন্যায্য মজুরি না পাওয়ার তালিকায় শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকেরাই নন। এ তালিকায় আছেন চা বাগানের শ্রমিকেরা। চা শিল্প এ দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। চা শ্রমিকের জীবন ছেঁটে দেওয়া চা গাছের মতো। এখানকার শ্রমিকেরাও কাজ শেষে প্রাপ্য মজুরি পান না। এ বিষয়ে কথা হয় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের লস্করপুর চা বাগানের চা শ্রমিক বীরেন কালিন্দীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে আমি একজন শ্রমিক। আমার কর্ম দ্বারা আমার বাবা-মা, সন্তানকে খাওয়াতে হয়। সেই হিসাবে আমাদেরর চা শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা হওয়া উচিত। অথচ আমরা মজুরি পাই ১২০ টাকা। প্রতিদিন ২৩ কেজি চা পাতা তুলি। আবার প্রতিদিন যদি ২৩ কেজি চা পাতা তুলতে না পারি, তাহলে আবার টাকা কেটে রাখা হয়। নারী চা শ্রমিকদের জন্য আবার বাগানে শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানকার নারী শ্রমিকেরা অনেক বেশি শোষিত। শোষণের কারণে আমাদের সন্তানেরা লেখাপড়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।’ 

বছর বছর একইভাবে শ্রমিক শোষণের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে শ্রমিক অধিকার আদায়ের দীর্ঘ লড়াই নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন। মে দিবসের আলোকে দেশে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মে দিবসের মূল তাৎপর্য ছিল ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবির অন্তরালে এমন একটা মজুরি, যা তার জীবন-জীবিকা নির্বাহে সহায় হবে এবং তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দেবে। এখন মে দিবসের ১৩৬ বছর পর যদি আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৮ ঘণ্টা কাজের মজুরি কাঠামোর দিকে দেখি, তাহলে দেখব ৮ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়—এমন কোনো মজুরি কাঠামো কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে যে গার্মেন্টস খাত থেকে, সে খাতের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। এই খাতে আইন করে মালিকদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ আইন বলে মালিকেরা এই খাতের শ্রমিকদের এমনকি ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করিয়ে নিতে পারছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে মজুরি পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।’ 

শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত এবং কতগুলো কারখানায় এটি নিশ্চিত হয়েছে জানতে চাইলে রাজেকুজ্জামান বলেন, ‘শ্রমিকদের কতটুকু মজুরি হলে সেটা ন্যায্য হয়, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এই বিষয়ে আমরা অন্তত বলতে চাই, সরকারের মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল যে, পে স্কেলে সর্বনিম্ন মজুরি কত হবে এবং বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি কত হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের শ্রমিকদের জন্য পে স্কেলে সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল বেসিক ৮ হাজার ২৫০ টাকা। আর মজুরি কমিশনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল ৮ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৫ সালের ৮ হাজার ২৫০ টাকা বেসিক হলে সেটা বর্তমান সময়ের বাজার দর অনুযায়ী ২০২২ সালে ২০ হাজার টাকার ওপরে হয়। এখন কথা হলো সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন এ মজুরি বাংলাদেশের কোনো খাতে কি দেওয়া হয়? সরকার যে মজুরি নির্ধারণ করেছিল, তাও বৈষম্যমূলক ছিল। কিন্তু সে বৈষম্যমূলক মজুরিও যে বেসরকারি মালিকেরা দিচ্ছেন না, সে ব্যাপারে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। এই পলিসিই চলছে সবদিকে।’ 

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘আমরা দেখছি সরকার নির্ধারিত মজুরি কমিশনের মজুরিও ৪৩টি খাতের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ড কার্যকর করেনি। ৪৩টা সেক্টর মজুরি নির্ধারণ করার কথা শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি ৫ বছর পরপর। এর মধ্যে প্রায় ২৯টা মতো সেক্টরে ২০১৩ সালের পর থেকে মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি। সরকারের নীতি অনুযায়ী যদি প্রতি বছর ৬ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয়, তাহলে ২০১৩ সাল থেকে সরল হিসাব করলেও গত ৮ বছরে অন্তত ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যার মানে হলো ২০১৩ সালে শ্রমিক ১০০ টাকায় যে জিনিস কিনতেন, তা এখন কিনছেন ১৪৮ টাকায়। করোনাকালে একদিকে শ্রমিক তার কাজ হারিয়েছে, অন্যদিকে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সবকিছুর দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শ্রমিকের জীবনের সব ক্ষেত্রে। আমাদের শ্রমিকদের আয়ের প্রায় ৬২ শতাংশ ব্যয় হয় খাদ্যপণ্য ক্রয়ের পেছনে। ফলে মজুরি কমলে তার পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দেবে, যা শুধু তার নয়, তার পরবর্তী প্রজন্মের পুষ্টি নিরাপত্তায়ও প্রভাব ফেলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ মারা গেছেন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত
সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ (৭০) মারা গেছেন। আজ সোমবার ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

পরিবারসূত্রে জানা যায়, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ধরে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। তিনি ধানমন্ডির বাসায় থাকতেন। গত কয়েক দিন ধরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

সুকুমার রঞ্জন ঘোষ শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ শ্রীনগর উপজেলা সদরে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে অসুস্থ ছিলেন।

উল্লেখ্য, সুকুমার রঞ্জন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (কুলা প্রতীক) ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে (ধানের শীষ) পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে নিহত দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক, স্ত্রীকে চাকরির আশ্বাস

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১০
ময়মনসিংহে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ভালুকায় গণপিটুনিতে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের বাড়িতে শোকের মাতম এখনো থামেনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পুরো পরিবার যেন শোকে কাতর।

প্রতিদিনই বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে দিপুর পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সহায়তাসহ নানা আশ্বাস। এ ছাড়া দিপুর পরিবারের জন্য বাড়িতে সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

আজ সোমবার ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান নিহত দিপু দাসের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। তাঁর সঙ্গে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দিপুর পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা, শীতবস্ত্র, শুকনো খাবার ও একটি সেলাই মেশিন পরিবারটিকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি দিপুর স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার ঘোষণাও দেন জেলা প্রশাসক।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সহযোগিতাসহ সব সময় তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছি।’

উল্লেখ্য, ১৮ ডিসেম্বর রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। পরে তাঁর মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ময়মনসিংহে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহে নিহত পোশাকশ্রমিক দিপুর বাড়িতে জেলা প্রশাসক। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ ঘটনায় নিহতে দিপুর ছোট ভাই অপু দাস ১৯ ডিসেম্বর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে ভালুকা থানায় একটি মামলা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রতিবাদ সমাবেশ

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকায় দিপু দাস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ময়মনসিংহ নগরী ও তারাকান্দায় মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। আজ সচেতন ময়মনসিংহবাসীর ব্যানারে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন দিপু দাসের ছোট ভাই অপু দাস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা আল নুর মো. আয়াস, হৃদয় খান, সাংবাদিক মোজাম্মেল খোকন, কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা প্রমুখ।

একই দাবিতে দিপু দাসের নিজ উপজেলা তারাকান্দায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ফ্রন্ট ও দিপু দাসের পরিবার। আজ সকালে তারাকান্দা বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তারাকান্দা উপজেলা সভাপতি বিজন কুমার ভৌমিক রতন, সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শর্মা সরকার কাঞ্চনসহ দিপুর পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা কারখানার মালিকসহ প্রকৃত দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন এবং দিপু দাসের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের, যানজটে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় আট দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা রহমতপুর এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। ঘণ্টা তিনেক ধরে চলা অবরোধে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজট তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।

ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত সপ্তাহ থেকে ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) থেকে পৃথক করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করা, সব কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদ শুধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য সংরক্ষণ, ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের বেসরকারি চাকরিতে ন্যূনতম দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের চাকরিতে যোগদানের পর ছয় মাসের বনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘৯ মাস আগে আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তখন শুধু আশ্বাস দিয়েছিল, বাস্তব কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’ আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত আমাদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মেনে না নেবে, তত দিন ক্যাম্পাস লকডাউন, প্রশাসনিক ভবন বন্ধসহ এই আন্দোলন চলবে।’

এ বিষয়ে রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। তবে এসব দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিতাসে শাশুড়িকে চুবিয়ে হত্যায় জামাতা গ্রেপ্তার

হোমনা (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
মো. জামাল সিকদার। ছবি: সংগৃহীত
মো. জামাল সিকদার। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় শাশুড়িকে খালে চুবিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি জামাতা মো. জামাল সিকদারকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল রোববার রাতে ঢাকার সাভারে আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। আজ সোমবার সকালে তাঁকে তিতাস থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে তিতাস থানা-পুলিশ দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায়।

গত ১০ অক্টোবর উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে সুফিয়া খাতুন নামে (৭০) এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়। পারিবারিক কলহের জেরে তাঁর জামাতা জামাল তাঁকে বসতবাড়ির কাছে খালে চুবিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে তিতাস থানা-পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে পালিয়ে ছিলেন জামাল।

জানা গেছে, জামাল সুফিয়া বেগমের ভাই দিলু সিকদারের ছেলে। তাঁর সঙ্গে সুফিয়ার মেয়ে রহিমা বেগমের বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ির পাশেই জামালের বাড়ি।

তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, শাশুড়িকে চুবিয়ে হত্যার প্রধান আসামি জামাল উদ্দিন শিকদারকে যৌথ বাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করে আজ সকালে থানায় আনা হয়। পরে দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত