Ajker Patrika

সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ২৬ মৃত্যু: মামলা আটকে আছে তদন্তে 

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ২৬ মৃত্যু: মামলা আটকে আছে তদন্তে 

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে গত বছর ২৬ জন মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত এক বছরেও শেষ হয়নি। গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণের কারণে ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাফিলতিতে ঝুলে আছে এই তদন্ত।

তদন্ত শেষ না হওয়ায় এত মানুষের প্রাণহানির ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না।
গত বছর ৭ মার্চ সিদ্দিক বাজারের কুইন টাওয়ারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। আটক করা হয় ওই ভবনের দুই মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমান এবং ভবনের বেসমেন্টের স্যানিটারি ব্যবসায়ী মোতালেব মিন্টুকে।

ঘটনার পর ৮ মার্চ তাদেরকে আটক করার পর ৯ মার্চ দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এদিকে ৯ মার্চ বংশাল থানার এসআই পলাশ সাহা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ১৪ মার্চ আটক তিন জনকে দায়িত্বে অবহেলা জনিত প্রাণহানির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার তিনজন জামিন পেয়ে যান।

মামলার নথি থেকে দেখা যায়, আসামি মোতালেব মিন্টুকে গত বছরের ২৮ মার্চ, পরে ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানকে জামিন দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। 

চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রসিকিউশন দপ্তরের কোতোয়ালি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মো. তৌহিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হয়নি।’

মামলার নথি থেকে আরও দেখা যায়, এই মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের পরিদর্শক এস এম রায়সুল ইসলাম। মামলার তদন্ত সম্পর্কে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কারাগারে পাঠানোর পর বিভিন্ন সময়ে তারা জামিন পান।’

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এই মামলার তদন্তের সঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিআইডি সম্পৃক্ত। কোনো সংস্থাই এই ভবনে কেন বিস্ফোরণ হয়েছে এমন কোনো তথ্য পাননি। তবে গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। 

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তদন্তে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই করে দেখা গেছে, সিদ্দিক বাজারের ওই ভবনটি এক সময় টিনশেড ভবন ছিল। তখন একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। সে সময় জায়গার মালিক যিনি এখন মৃত ( বর্তমান মালিক ওয়াহিদুর রহমান ও মতিউর রহমানের বাবা) ওই রেস্টুরেন্টের জন্য একটি  বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) গ্যাস লাইন নিয়েছিলেন। পরে টিনশেড ভবনটি ভেঙে পাঁচ তলা ভবন করা হয়। ওই ভবনের নিচ তলায় ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্ট ছিল। তখনো সেখানে বাণিজ্যিক গ্যাস লাইন ছিল। একপর্যায়ে রেস্টুরেন্টটি তুলে দিয়ে সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়। তখন বাণিজ্যিক গ্যাস লাইন সারেন্ডার করে সেখানে আবাসিক (ডোমেস্টিক) গ্যাস লাইন সংযোগের অনুমতি নেওয়া হয়। তৎকালীন বাড়ির মালিক তিতাস গ্যাসকে আবাসিক লাইনের সংযোগ দেওয়ার কথা বললে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে গ্যাসের লাইন পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু তিতাস গ্যাসের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাসের পাইপলাইন আগেরটা ঠিক রেখে আবাসিক লাইনের গ্যাস সংযোগ চালু করে।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ডমেস্টিক লাইনের গ্যাস পাইপ ও কমার্শিয়াল লাইনের গ্যাস পাইপ এক হতে পারে না। দুই লাইনের গ্যাস চলাচল ভিন্ন গতি। মূলত গ্যাস লাইনের পাইপ পরিবর্তন না করায় দীর্ঘদিন পর এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সে ক্ষেত্রে তিতাস গ্যাস ও তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটা দায়ী।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, তিতাস গ্যাসকে চিঠি দিয়ে ওই সময়কার (সম্ভবত ২০০২ সালে) যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল গ্যাস লাইনের পরিবর্তে ডোমেস্টিক লাইনের সংযোগ দিয়েছিল সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিতাস গ্যাস ওই নাম দিতে পারেনি। ওই সংক্রান্ত নথি তিতাস গ্যাস খুঁজে পাচ্ছে না বলে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। 

তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি আদালতকে জানালে, আদালত তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানাতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিতাস গ্যাস সেটা জানাতে পারেনি।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তিতাস গ্যাস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তথ্য ও ওই সময়ে তিতাস গ্যাসে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের তথ্য জানানোর পর গ্যাস বিস্ফোরণের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা যাবে এবং দ্রুত তদন্ত শেষ করা সম্ভব হবে।

ওইদিনের ঘটনা
গত বছর ৭ মার্চ। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট। গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের নর্থসাউথ রোডে সাততলা ওই ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে থমকে যায় নর্থসাউথ রোডে চলাচলকারী গাড়ি ও মানুষ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভবনের তিন তলা পর্যন্ত ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবনের মধ্যে এমন কি রাস্তায় চলাচলকারী অনেকের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়। ঘটনাস্থলে ২২ জনের মৃত্যু হয়। আহত অনেককে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুইজন মারা যান। পরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয় এই ঘটনায়।

বিস্ফোরণে ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে স্যানিটারি ও গৃহস্থালি সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। বিস্ফোরণে ভবনটির দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে পড়ে যায়। ভবনের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের কয়েকটি ভবনও।

মামলায় যা বলা হয়
মামলায় বলা হয়, বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি যথাযথ নিয়ম মেনে (বিল্ডিং কোড) নির্মাণ করা হয়নি। ভবনটিতে আন্ডারগ্রাউন্ড/ বেসমেন্ট তৈরির অনুমোদন ছিল না। অবৈধভাবে নির্মিত এই বেসমেন্টে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের কোনো অনুমতি ছিল না। সেখানে নির্মাণ সামগ্রী মজুত ও বিক্রয় কাজে ব্যবহার করা হতো। বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে কুইন্স ক্যাফে নামে রান্নাঘর করা হয়েছিল। অথচ গ্যাস লিকেজ সমস্যা ও পয়োবর্জ্যে সৃষ্ট গ্যাস নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল না। ভবন মালিক ও ব্যবহারকারীগণ অর্থের লোভে অবৈধভাবে বেসমেন্ট ও আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবহার করে আসছিলেন। এইরূপ অপরাধজনক কাজের জন্য এতগুলো প্রাণহানি ও মালামাল ধ্বংস হয়েছে।

যারা নিহত হন
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ২১ বছর বয়সী মো. সুমন, পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী বরিশালের কাজির হাট থানার ইসহাক মৃধা (৩৫), যাত্রাবাড়ীর ৪০ বছর বয়সী মুনসুর হোসেন, আলু বাজার এলাকার ৪২ বছর বয়সী মো. ইসমাইল, বিবিএ ছাত্র চাঁদপুরের মতলবের আল আমিন (২৩), কেরানীগঞ্জের মাস্টার বাড়ি এলাকার রাহাত হোসেন (১৮), ইসলামবাগের মমিনুল ইসলাম (৩৮), চক বাজারের নদী বেগম (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদরের মাঈন উদ্দিন (৫০), রাজধানীর বংশালের নাজমুল হোসেন (২৫), মানিকগঞ্জ সদরের ৫৫ বছর বয়সী ওবায়দুল হাসান বাবুল, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ৩৪ বছর বয়সী আবু জাফর সিদ্দিক, বংশালের ৭০ বছর বয়সী আকুতি বেগম, যাত্রাবাড়ীর ৬০ বছর বয়সী ইদ্রিস মীর, একই এলাকার ৫৫ বছর বয়সী নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, সিদ্দিক বাজারের মো. হৃদয় (২০) ও ওয়াসেক মো. সিয়াম (২০) ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ঘটনা স্থল থেকে আরও দুজনের মৃতদেহ একদিন পর উদ্ধার করা হয়। দুদিন পর আরেকজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আরও ছয় জন মৃত্যুবরণ করেন এই ঘটনায়। এছাড়াও অনেকে আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় ঘন কুয়াশা, ৮ ফ্লাইট নামল চট্টগ্রাম-কলকাতায়-ব্যাংককে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

ঘন কুয়াশার কারণে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ সম্ভব না হওয়ায় ৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চট্টগ্রাম, ভারতের কলকাতা এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে এ ফ্লাইট ডাইভারশন হয় বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, কুয়াশার কারণে রানওয়েতে দৃশ্যমানতা স্বাভাবিক মাত্রার নিচে নেমে আসায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডাইভার্ট করা ফ্লাইটগুলোর মধ্যে তিনটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, চারটি ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে এবং একটি ফ্লাইট ব্যাংকক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সকল ফ্লাইট অপারেশন পুনরায় স্বাভাবিকভাবে শুরু হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ডাইভার্ট ও বিলম্বিত ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও হোটেল সুবিধা প্রদান করছে। যাত্রীদের ধৈর্য ও সহযোগিতার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এদিকে, কুয়াশার কারণে ফ্লাইট ডাইভারশনের ঘটনায় কিছু যাত্রীকে ভোগান্তিতে পড়তে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক ফ্লাইট সূচি ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টানা দ্বিতীয় দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে, ঠান্ডা বাতাসে দুর্বিষহ জীবন

­যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৫
যশোর শহরের লালদীঘিপাড়ে শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হয়েছেন শ্রমজীবীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোর শহরের লালদীঘিপাড়ে শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হয়েছেন শ্রমজীবীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) জেলায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটি দেশে আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল শুক্রবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা দুই দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাঁপন ধরেছে হাড়ে। এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। শীত প্রভাব বিস্তার করেছে পশুপাখি ও কৃষিতেও।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানিয়েছে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় ঠান্ডার অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে তীব্র শীতের কারণে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। মোটা জ্যাকেট, মাফলারে ঢেকে জবুথবু হয়ে পথ চলতে দেখা যায় তাদের। হাড়কাঁপানো শীতে ঘর থেকে বের হননি অনেকে। তবে ঘর থেকে বের হয়েও কাজ মিলছে না শ্রমজীবী মানুষের।

যশোর শহরের লালদীঘিপাড়ে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ মানুষ শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হয়ে থাকেন। তীব্র শীতে সেই সংখ্যা অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপরও কাজ না পাওয়ায় অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কিছু মানুষ অনেক বেলা অবধি অপেক্ষা করছেন কাজের আশায়।

বাহাদুরপুর এলাকার সুজন মিয়া বলেন, ‘শীতে এক দিন কাজ পাই তো, তিন দিন পাই না। এক সপ্তাহ ধরে কাজ হচ্ছে না। শীতের মধ্যে প্রতিদিন ভোরবেলায় এসে বসে থেকেও কোনো লাভ হচ্ছে না।’

শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার নির্মাণশ্রমিক মো. মিনহাজ বলেন, ‘শীতে বাইরে দাঁড়াতে পারছি না। অনেক কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু উপায় নেই। কাজের সন্ধানে বের হয়েছি। ঠিকমতো কাজও পাচ্ছি না।’

মোটা জ্যাকেট, মাফলারে ঢেকে জবুথবু হয়ে পথ চলছে মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোটা জ্যাকেট, মাফলারে ঢেকে জবুথবু হয়ে পথ চলছে মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের শংকরপুর এলাকার শ্রমজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের রঙের কাজ করি। কাজের সন্ধানে এসেছি। এখানে বসে আছি। এখনো কাজ পাইনি। শীতের ভেতরে অনেক কষ্ট হচ্ছে। পেটের দায়ে ঘরের বাইরে বের হয়েছি। কাজ পাব কি না জানি না।’

শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক হানেফ আলী বলেন, ‘শীতে ঘর থেকে মানুষ বের হচ্ছে খুবই কম। এ জন্য যাত্রী পাচ্ছি না। আয়রোজগারও কমেছে। খুব কষ্টে দিন পার করছি।’

এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্বর, হাঁচি, কাশিসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শীতকালীন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পান করাসহ গরম কাপড় ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

প্রসঙ্গত, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ৪ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ: ভাই-বোনসহ নিহত ৩

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০১
দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও দুজন গুরুতর আহত হন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ গ্রামের রহমতুল্লাহর ছেলে নিশান (২৩), কেশবপুর উপজেলার চালতী বাড়ী গ্রামের বাবর আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৪০) এবং তাঁর বোন বিউটি (৩০)। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করেন ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি।

স্থানীয় ও ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গা থেকে খুলনাগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন এবং আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তিরা অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রী। খবর পেয়ে হাইওয়ে থানা-পুলিশ, স্থানীয় থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, হতাহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার পর কিছু সময় মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন হলেও বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় সাড়ে ১৪ ঘণ্টা পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে ফেরি চলাচল শুরু

রাজবাড়ী প্রতি‌নি‌ধি
আজ সকাল পৌ‌নে ১০টায় কুয়াশা কে‌টে গে‌লে ফে‌রি চলাচল শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল পৌ‌নে ১০টায় কুয়াশা কে‌টে গে‌লে ফে‌রি চলাচল শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘন কুয়াশায় সা‌ড়ে ১৪ ঘণ্টা ব‌ন্ধ থাকার পর দৌল‌তদিয়া-পাটু‌রিয়া নৌ-রু‌টে ফে‌রি চলাচল শুরু হ‌য়ে‌ছে। শ‌নিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল পৌ‌নে ১০টায় কুয়াশা কে‌টে গে‌লে ফে‌রি চলাচল শুরু হয়।

এর আগে গতকাল সন্ধ‌্যা সোয়া ৭টা থে‌কে ঘন কুয়াশার কারণে নৌ দুর্ঘটনা এড়া‌তে ফে‌রি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ফে‌রি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় কিছু যানবাহন আটকা প‌ড়ে। এতে ভোগা‌ন্তি‌তে প‌ড়েন চালক ও যা‌ত্রীরা।

বিআইড‌ব্লিউটিসি দৌলত‌দিয়া ঘাট শাখার ব‌্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন ব‌লেন, ‘শুক্রবার সন্ধ‌্যার পর থে‌কেই কুয়াশা পড়‌তে থা‌কে। সোয়া ৭টার সময় নদীপথ অস্পষ্ট হ‌য়ে যায়। সে সময় নৌ দুর্ঘটনা এড়া‌তে এই নৌ-রু‌টে ফে‌রি চলাচল বন্ধ ক‌রে দেওয়া হয়। ফে‌রি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় ‌কিছু যানবাহন আটকা পড়ে। আজ সকাল পৌ‌নে ১০টায় কুয়াশা কে‌টে গে‌লে ফে‌রি চলাচল শুরু হয়। ঘা‌টে আট‌কে থাকা যানবাহনগু‌লো দ্রুত পারাপা‌রের চেষ্টা চল‌ছে। দৌলত‌দিয়া-পাটু‌রিয়া নৌ-রু‌টে ছোট-বড় মি‌লিয়ে ১৫টি ফে‌রি চলাচল কর‌ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত