Ajker Patrika

১০ পদে ‘প্রার্থী চূড়ান্ত করে’ নিয়োগ পরীক্ষা

হাসান মাতুব্বর, ফরিদপুর
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৩১
১০ পদে ‘প্রার্থী চূড়ান্ত করে’ নিয়োগ পরীক্ষা

দেশের একমাত্র নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট (নগই) অবস্থিত ফরিদপুর শহরে। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণির ১০টি পদে লোকবল নিয়োগে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।

বঞ্চিত প্রার্থীদের অভিযোগ, প্রার্থী আগে থেকেই চূড়ান্ত করে নিয়োগসংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে লোক দেখানো। এ নিয়ে তারা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।

নগই সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জুলাই চতুর্থ শ্রেণির ১০টি পদে পুনঃ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানটি। এতে ভান্ডার রক্ষক, অডিট সহকারী, কংক্রিট টেকনিশিয়ান, টেলিফোন অপারেটর, মেকানিক, কাঠমিস্ত্রি, ডার্করুম সহকারী, গবেষণাগার বেয়ারার ও অফিস সহায়ক পদে একজন করে এবং পাম্পচালক পদে দুজন উল্লেখ করা হয়। পরে সারা দেশ থেকে দুই হাজারের অধিক প্রার্থী আবেদন করেন।

নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৮ জানুয়ারি ৭০ মার্কের লিখিত ও প্রিলি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ৫১ জনকে সুপারিশকৃত প্রার্থী হিসেবে ফল প্রকাশ করা হয়। পরে গত ২১ জানুয়ারি মৌখিক পরীক্ষার জন্য তাদের ডাকা হয় এবং সকাল ১০টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষে ওই দিনই উপপরিচালক মো. আবুল এহছান মিয়া স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু কয়েক প্রার্থীর অভিযোগ, এসব পদে আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয় এবং গোপনে পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্রসহ উত্তর জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। পরে লোক দেখানো নিয়োগ কার্যক্রম করা হয়েছে। তবে পূর্বেই প্রশ্নপত্রসহ উত্তর জানিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। ফলাফলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন অফিস সহায়ক পদে প্রার্থী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আটচর নওপাড়া এলাকার মো. ইব্রাহিম লিংকন, ফরিদপুরের রহিজ আহমেদ, রাজবাড়ীর মৃত্যুঞ্জয় এবং বরিশালের অনুপ হালদার নামের এক প্রার্থী। প্রত্যেকেই মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

অভিযোগে তাঁরা উল্লেখ করেন, মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে অফিস সহায়ক পদে সীমা মালো, পাম্পচালক পদে হামিদুর রহমান নবী, টেলিফোন অপারেটর পদে বন্যা বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি যোগাযোগ করেন। তাঁদের ডেকে নিয়ে গোপনে কথা বলা হয়। এর মধ্যে সকাল ১০টায় উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টায় সীমা মালো উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষর করেন এবং তাঁর সঙ্গে অপরিচিত একাধিক ব্যক্তি বারবার যোগাযোগ করেন।

নিয়োগে লেনদেনের কলকাঠি নেড়েছেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পিন্টু কানুনগোয়। যারা টাকা দিয়েছেন, তাঁদের চাকরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট

জানা গেছে, সীমা মালোর স্বামী সম্রাট সরকার ৬ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রজেক্টে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করে আসছেন। লিখিত পরীক্ষায় কম মার্ক পেলেও তাঁকে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত করা হয় বলে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই নিয়োগের অবৈধ লেনদেনের কলকাঠি নেড়েছেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পিন্টু কানুনগোয়। যারা টাকা দিয়েছেন, তাঁদের চাকরি হয়েছে। সীমাকে উনি নিজে পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র ও উত্তর পাঠিয়েছেন।’

তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে বলে দাবি করেছেন পিন্টু কানুনগোয়। তিনি বলেন, ‘কোনো অনিয়ম হয়নি। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষার এক ঘণ্টা পূর্বে প্রশ্নপত্র ছাপা হয়েছে; যা কোনোভাবেই প্রার্থীদের দেওয়ার উপায় নেই।কিছুই জানি না। তাঁরা বাদ পড়ায় এখন মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’ একই দাবি করেছেন নগই-এর মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) এস এম আবু হোরায়রা। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। তাঁরা জিআরএসের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত