Ajker Patrika

নির্বাচনের আগে-পরে ১৫ জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা: এএলআরডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নির্বাচনের আগে-পরে ১৫ জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা: এএলআরডি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের ১৫টি জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)। 

আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া অডিটোরিয়ামে ‘নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা, সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। 

গোলটেবিল আলোচনাটি আয়োজন করেছে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেল। অনুষ্ঠানে আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সুপ্রিম কর্মরতের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেকটিভের (আরডিসি) চেয়ারপারসন অধ্যাপক মেজবাহ কামাল প্রমুখ। 

আলোচনাপত্রে বলা হয়, নির্বাচনের আগে ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু করে নির্বাচনের পরে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দুদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া অনেক পরিবারের ওপর হামলা ও সহিংসতামূলক আচরণ করাও হয়েছে। 

শামসুল হুদা বলেন, এবারের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত জোট অংশগ্রহণ করেনি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ কিছুটা হলেও ভেবেছিল যে, বোধ হয় এ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তির আক্রমণ তেমন প্রকট হবে না। যদিও নির্বাচন পূর্ববর্তী দিনগুলোতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, এই নির্বাচনেও বহু স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিশ্চিন্তে থাকতে পারেনি। 

তিনি বলেন, অভিযোগ রয়েছে অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির কোনো কোনো প্রার্থী বা তার কর্মীরা সরাসরি হিন্দু সম্প্রদায়কে হুমকি দিয়েছেন, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য। পরে বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে, লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও সংখ্যালঘু পরিবার বাড়ি ঘর ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দাবিদার দল আওয়ামী লীগের একাংশের হাতেই বা স্বতন্ত্র নামে হামলার শিকার হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও। 

সুলতানা কামাল বলেন, নির্বাচন আসতে শুরু করলে সংখ্যালঘুরা একটা ভয়ানক অবস্থায় থাকে। তাদের মনে সব সময় ভয় থাকে। এই ভয়ানক অবস্থা নির্যাতনের চেয়েও ভয়াবহ। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ৷ মানবাধিকারের একটা অন্যতম মৌলিক শর্ত হচ্ছে মানুষ কোনো শঙ্কার মধ্যে দিয়ে বাস করবে না। কিন্তু সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত শঙ্কার মধ্যে দিয়ে বাস করছে। 

মেজবাহ কামাল বলেন, বিএনপি-জামায়াত যদি মনে করে সংখ্যালঘুরা তাঁদের কথা শুনে ভোট কেন্দ্রে যায়নি তাহলে তারা (বিএনপি) ভুল ভাবছেন। এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করেছে এটার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই। এই হামলা আওয়ামী লীগই করেছে, এটা আওয়ামী লীগ নিজেরা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। 

জেড আই খান পান্না বলেন, এ দেশে গরিবের জন্য কোনো আইন নেই, বড়লোকের জন্য আইন আছে। দেশের সব জায়গায় লুটতরাজের রাজত্ব চলছে। সমাজ যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা হলেন লুটতরাজের মূল। দেশকে পরিবর্তন করতে হলে একমাত্র যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্ম এগিয়ে আসলে দেশের পরিবর্তন হওয়া সম্ভব। 

আলোচনা পত্রে বলা হয়, শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের চিত্রের পরিবর্তন এবারও হলো না। বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের নির্বাচন ও রাজনৈতিক টানা পোড়নের প্রথম শিকার হন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও প্রান্তিক অবস্থানে থাকা মানুষেরা। রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্য রক্ষায় সরকার এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বদ্ধপরিকর। এরপরেও ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব সময়ই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা একটি নিয়মিত অপরাজনীতির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। 

বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’ নিশ্চিত করার যে কথা বলা হয়েছিল এদের কাছে তার কোনো মূল্যই দৃশ্যমান নয়। 

আলোচনায় নয়টি দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সবগুলো ঘটনার তদন্ত করা, ধর্মীয় উপাসনালয়কে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে রাখা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় মনিটরিং সেল তৈরি করা, সহিংসতার স্বীকার্য পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মির্জা ফখরুলের জন্য মনটা কাল থেকে খুব বিষণ্ন হয়ে আছে: প্রেস সচিব

তারেক রহমানের বাড়ি-গাড়ি নেই, আছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার সম্পদ

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান আর নেই

ভারতে চলন্ত গাড়িতে ২ ঘণ্টা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর ছুড়ে ফেলা হলো রাস্তায়

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত