Ajker Patrika

মুক্তির হাতে জিম্মি বিএডিসি

  • উপপরিচালক মুক্তির বিরুদ্ধে বিএডিসির চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ।
  • রেস্টহাউসে বসবাস করে ভাড়ার টাকা ও শ্রমিকদের বিল তুলে আত্মসাৎ।
  • ভুয়া দরদাতা বানিয়ে নিজেই বোরো বীজ পরিবহন করে টাকা হাতিয়ে নেন।
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৭: ২৬
এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তি
এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তি

কিশোরগঞ্জ বিএডিসির (বীউ) উপপরিচালক এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ঠিকাদার সেজে বীজ পরিবহন, রেস্টহাউসে বসবাস করে ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ ও শ্রমিকদের নামে বিল তুলে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ১৫ মার্চ উপপরিচালক মনিরুজ্জামান মুক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে জসিম উদ্দিন তাঁর পূর্ণ পরিচয় গোপন রেখেছেন।

কিশোরগঞ্জ বিএডিসি (বীউ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপপরিচালক মুক্তি ২০২৪-২৫ বিতরণ বর্ষে ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৮৭০ টাকার ভুয়া বীজ পরিবহন কোটেশন প্রস্তুত করে মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজকে সর্বনিম্ন দরদাতা দেখান। বাস্তবে কেজিপ্রতি বেশি দর দেখিয়ে ভুয়া দরদাতা বানিয়ে নিজেই বোরো বীজ পরিবহন করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন। কারণ খান এন্টারপ্রাইজের কাউকে কোনো দিন বিএডিসি অফিসে কেউ আসতে দেখেননি বলেও সূত্র জানায়।

ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলম সুরুজ সম্প্রতি উপপরিচালক মুক্তির সঙ্গে ভুয়া পরিবহনের বিষয়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ালে বিষয়টি প্রকাশ পায়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে শ্রমিকদের নামে ব্যাংকে বেতন বিল দেওয়ার নির্দেশ হয়। জুন থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ১৫ জন শ্রমিকের নামে ভুয়া বিল মাস্টাররোল তৈরি করেন মুক্তি। গত ৯ মাসে প্রতি শ্রমিকের ১৫ হাজার করে ১৫ জন শ্রমিকের ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় ২১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। ওই ১৫ জন শ্রমিক হলেন আজিজুল হক, মো. সোহাগ, আব্দুল্লাহ নোমান, শাহীন, জাকারিয়া আলমগীর রবিন, মোখলেছুর রহমান, আজহারুল ইসলাম, মাজাহারুল হক হান্নান, আব্দুল হক, নূরে আলম সিদ্দিকী, মুখলেছুর রহমান, ওমর ফয়সাল, হারুনুর রশিদ, কাইয়ুম ও মো. কাশেম। বাস্তবে এই ১৫ জন কোনো দিন বিএডিসি গুদামে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেননি বলে সূত্র জানায়। উপপরিচালক তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা আত্মসাৎ করেন।

এদিকে উপপরিচালক বীজ বিপণনের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকাকালে এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তির বিরুদ্ধে চলতি বোরো বীজ বরাদ্দে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। ডিলারদের দাবি ছিল, মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কোনো ডিলারকে বীজ বরাদ্দ দিতেন না মুক্তি। চাহিদামতো ঘুষ পাওয়ার পর বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে তিনি বীজের বরাদ্দ দিতেন। যেসব ডিলার বেশি ঘুষ দিতেন, তাঁরা বীজের বরাদ্দও পেতেন বেশি। এতে বীজ বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন ডিলাররা। সে সময় ঘুষ দিয়েও বেশ কয়েকজন ডিলার বীজ না পাওয়ায় উপপরিচালক মুক্তির ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় গত ২০ নভেম্বর বিএডিসির মহাব্যবস্থাপকের (বীজ) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগী ডিলার অলিউল ইসলাম।

পরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে উপপরিচালক মুক্তির ঘুষ-দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হলে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিএডিসির প্রধান কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বীজ) মো. আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ১২ ডিসেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে প্রধান করে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই দুই কমিটি তদন্ত করলেও রহস্যজনক কারণে গতকাল সোমবার পর্যন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

বিএডিসির ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এবং হাওরের মাছ পাঠিয়ে ম্যানেজ করেছেন—বলে বেড়াচ্ছেন মুক্তি। ফলে বর্তমানে তাঁকে আর কেউ কিছু করতে পারবে না।

জানা গেছে, মুক্তি জামালপুর জেলায় কর্মরত থাকাকালে দুদকের মামলার আসামি হন এবং বিএডিসি কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কার্যালয়টির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, যোগদান করার পর থেকেই মুক্তি রেস্টহাউসে বসবাস করেন। এখন পর্যন্ত তিনি বাইরে কোনো বাসা ভাড়া নেননি। স্ত্রী ও সন্তানেরা এখানে মাঝেমধ্যে এলে তিনি তাদের নিয়ে রেস্টহাউসেই থাকেন। কোনো টাকাপয়সা ছাড়াই নিজ ক্ষমতাবলে রেস্টহাউসে বসবাস করছেন। রেস্টহাউসে থেকে তিনি মাদক সেবন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাতাল অবস্থায় অফিসের কর্মী ও কৃষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। কেউ কিছু বললেই তাঁকে হয়রানি করেন এবং বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন মুক্তি।

সরকারি নিয়মে ৩৫ শতাংশ বাড়িভাড়া নিয়মিতই নিচ্ছেন মনিরুজ্জামান মুক্তি। তাঁর মূল বেতন ৬৯ হাজার ৮৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি মাসে বাড়িভাড়া বাবদ প্রায় ২৫ হাজার টাকা পান। সরকার তাঁকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা বাসাভাড়া প্রদান করলেও তিনি বাসাভাড়া না নিয়ে রেস্টহাউসে থাকেন। এ হিসাবে ভাড়া বাবদ গত ৩ বছরে মোট ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এ ছাড়া এখানে বিদ্যুৎ, এসি, ফ্যান, লাইট ব্যবহার করেন। চলতি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বাবদ সংস্থার ক্ষতি হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা।

কার্যালয়টির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আরও জানান, মুক্তি ৫ আগস্টের আগে অফিসে বলে বেড়াতেন তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। তাঁর একটা আঙুল গুলিতে নষ্ট হয়ে গেছে, বলতেন আর ভয় দেখাতেন। ৫ আগস্টের পর প্রায় ১০ দিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি আবার বেরিয়ে আসেন।

অভিযোগের বিষয়ে কিশোরগঞ্জ বিএডিসির (বীউ) উপপরিচালক এ কে এম মনিরুজ্জামান মুক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রেস্টহাউসে আমি ভাড়া দিয়ে থাকি। ভাড়া দিয়ে থাকার নিয়ম আছে।’ ভুয়া বীজ পরিবহন কোটেশন করার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা। কর্মকর্তা কখনো এভাবে করতে পারে না। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

শ্রমিকদের নামে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। আমি কোনো শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি কি না বা কোনো শ্রমিকের টাকা উঠাই কি না?’ কার্যালয়ে মাদক সেবনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হায়, সর্বনাশ! আমি এখানে আছি তিন বছর হয়ে গেছে। আর এসব কথা এখন উঠছে।’

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিরাপত্তা শঙ্কায় রাবি শিক্ষকের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

রাবি প্রতিনিধি  
সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদ। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে এক পোস্টে কাজী জাহিদ এ ঘোষণা দেন। পোস্টে তিনি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পোস্টে রাবির সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদ লেখেন, ‘নিরাপত্তা না থাকায় ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া ও অন্যান্য একডেমিক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দুঃখিত। আমার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব রয়েছে আমার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া এবং প্রয়োজনে আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে আটশত শিক্ষকের প্রতি ক্লাসরুমে প্রবেশ করলে তাদেরকে কলার ধরে টেনে প্রশাসন ভবনের সামনে এনে বেঁধে রাখার অব্যাহত হুমকি দেয়া হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সকল শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’

কাজী জাহিদ আরও লেখেন, ‘যেই মুহূর্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই মুহূর্ত থেকেই আমার উপরে ন্যস্ত দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করবো ইনশাল্লাহ।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কাজী জাহিদ বলেন, ‘এভাবে জেনারেল নোটিশের মতো সংখ্যা উল্লেখ করে হুমকি দেওয়ার পর আমরা কোনোভাবেই নিরাপদ অনুভব করছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী সাত শতাধিক শিক্ষক যদি ফ্যাসিস্ট হয়, তাহলে সেখানে তো আমারও নাম আছে!’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল শিক্ষকই তো রাজনীতি করে। বর্তমান প্রশাসনে থাকা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সেভাবেই আমাদেরও নাম আছে।’ নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলেও জানান কাজী জহিদ।

এর আগে গত শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে যারা নমনীয়তা উৎপাদন করবে, আমরা তাদের জুতা খুলে মুখে মারব ইনশা আল্লাহ। রাবিতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যদি চাকরি করে, তাদের আগামী রোববার থেকে কলার ধরে টেনে টেনে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেঁধে রাখব।’

এ ছাড়া গতকাল শনিবার আম্মার এক পোস্টে আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ শীর্ষক কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষকেরা যদি এভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে, তাহলে সমস্যা সৃষ্টি হবে। অনেক শিক্ষকই এভাবে নিরাপত্তা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিষ মাখানো সরিষার বীজ খেয়ে শতাধিক কবুতর ও ঘুঘুর মৃত্যু, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

তালা (সাতক্ষীরা)  প্রতিনিধি
কবুতর। ছবি: সংগৃহীত
কবুতর। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার তালায় ফসল রক্ষার নামে বিষ মাখানো সরিষার বীজ ছিটিয়ে পাখিনিধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিষ মাখানো বীজ খেয়ে শতাধিক কবুতর ও ঘুঘু পাখি মারা গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে উপজেলার হরিশ্চন্দ্রকাঠি গ্রামে একের পর এক কবুতর ও ঘুঘু পাখি মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর ছড়িয়ে পড়লে আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন খুলনা বন বিভাগের ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন অফিসার তন্ময় আচার্য্য।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তন্ময় আচার্য্য সাংবাদিকদের জানান, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপরাধমূলক ঘটনা। বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে বন্য প্রাণিনিধন আইনত দণ্ডনীয়। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ১৯ ডিসেম্বর হরিশ্চন্দ্রকাঠি বিলে সরিষা চাষের জন্য বীজ বপন করেন তালা মহিলা কলেজের প্রদর্শক আবদুল বারী। পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার উদ্দেশ্যে বীজে বিষ মাখানো হয়। পরদিন ওই ক্ষেতে কবুতর ও ঘুঘু পাখির ব্যাপক বিচরণ লক্ষ করা যায়। এর পর থেকে একে একে পাখিগুলো অসুস্থ হয়ে মারা যেতে থাকে। এ পর্যন্ত ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে ১০০টির বেশি কবুতর এবং একটি ঘুঘু পাখির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

হরিশ্চন্দ্রকাঠি গ্রামের বাসিন্দা জিন্নাত খাঁ ও হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের অনেক কবুতর মারা গেছে। এগুলো আমাদের শখ আর জীবিকার অংশ। এমন ক্ষতি আগে কখনো হয়নি।’

রহিমাবাদ গ্রামের আজিজ সরদার বলেন, ‘এক দিনেই আমার ২৪টি কবুতর মারা গেছে। পাখিরা তো জানে না বীজে বিষ মাখানো আছে। এ ক্ষতির বিচার চাই।’ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ক্ষতিপূরণ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

তালা মহিলা কলেজের প্রদর্শক আবদুল বারীকে ফোন করলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আবদুল মজিদ বলেন, কাজটি ঠিক হয়নি।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটির বিষয়ে আমি শুনেছি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে। পাশাপাশি যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নড়বড়ে বাঁশে ঠেস দেওয়া ৪৮০ ভোল্টের খুঁটি

  • যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা
  • ছয় মাস আগে ধানখেতে উপড়ে পড়েছিল খুঁটিটি
  • বিদুৎ অফিস সমস্যা আমলে নেয়নি, দাবি গ্রামবাসীর
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১০
বিদ্যুতের খুঁটিটি বাশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুতের খুঁটিটি বাশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। সেখানে নড়বড়ে কয়েকটি বাঁশের ওপর কাত হয়ে পড়ে রয়েছে একটি বিদ্যুতের খুঁটি। খুঁটির আশপাশে মাঠে লোকজন নতুন ফসল বপনের কাজ করছেন। কেউ কেউ গরু-ছাগল চরাচ্ছেন। সেখানে বাঁশের ওপর কোনো রকমভাবে ভর দিয়ে রাখা খুঁটিটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। এতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।

সম্প্রতি সরেজমিনে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরপুবাইল গ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা ৪৮০ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) খুঁটিটি চোখে পড়ে। ছয় মাস ধরে খুঁটিটি এভাবে বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, একবার সোজা করে দেওয়ার পর ফের হেলে পড়লেও খুঁটিটি স্থায়ীভাবে মেরামত বা প্রতিস্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্কুলসংলগ্ন কৃষি এলাকায় এভাবে উচ্চ ভোল্টেজের খুঁটি ঝুলে থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাসহ কৃষকেরা আতঙ্কে রয়েছেন।

জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের চরপুবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া পিডিবির বিদ্যুতের তার সংযুক্ত খুঁটিটি ছয় মাস আগে একটি ধানখেতে উপড়ে পড়ে। এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে খেতের পানিতে থাকা মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মারা যায়। পরে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে খুঁটিটি বাঁশের ওপর ঠেকিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেন। এর পর থেকে বাঁশের ওপর ঠেকিয়ে রেখেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদ্যুতের লাইন চালু রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত বাঁশগুলো নরম হয়ে পচন ধরেছে। এই অবস্থায়ই খুঁটির আশপাশে কৃষকেরা কাজ করেন। চরান গরু-ছাগল।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আল-আমিন বলেন, ‘খুঁটির নিচেই আমাদের খেত। কাজ করতে নামলেই ভয় লাগে—এই বুঝি খুঁটি ভেঙে পড়ল বা তার ছিঁড়ে পড়ল। এমন অবস্থায় দিনের পর দিন খেতে কাজ করা খুবই ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আরেক বাসিন্দা মো. মামুন মিয়া বলেন, খুঁটি পড়ে যাওয়ার সময় মাছসহ সব জলজ প্রাণী মরে গিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, দ্রুত খুঁটিটি ঠিক করা হবে। কিন্তু ছয় মাস পার হলেও শুধু বাঁশে ঠেস দিয়েই খুঁটিটি রাখা হয়েছে।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবুল কাশেম বলেন, এর আগেও কয়েক দফা খুঁটিটি উপড়ে পড়েছে। গত দুই বছর ধরে এমন সমস্যা চলছে। তখনো এমন বাঁশ দিয়ে কাজ চালানো হয়। বিষয়টি একাধিকবার বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি তারা আমলেই নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ আবাসিক উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) রেজাউল করিম বলেন, ‘বিষয়টি কেউ লিখিত কিংবা মৌখিকভাবেও জানায়নি। যেহেতু জেনেছি, আমি দ্রুত খুঁটিটি স্থায়ীভাবে প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডিসি অফিসে গিয়ে আটক ঝালকাঠির সাবেক মেয়র কারাগারে

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আফজাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
আফজাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আফজাল হোসেন রানাকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ রোববার ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে একটি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, সকালে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিজের অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নের জন্য যান আফজাল হোসেন রানা। কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা তাঁকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান।

বেলা আনুমানিক ৩টার দিকে তাঁকে ঝালকাঠি সদর থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর সদর থানার একটি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি তৌহিদুজ্জামান জানান, সদর থানায় দায়ের করা মামলায় আফজাল হোসেন রানাকে গ্রেপ্তারের জন্য থানা-পুলিশকে ডিবি পুলিশ সহায়তা করেছে।

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে জানান, আফজাল হোসেন রানাকে একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, আফজাল হোসেন রানা ঝালকাঠি পৌরসভার সাবেক মেয়র। তিনি ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পৃথক দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর বিরোধী অবস্থানে যাওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত