Ajker Patrika

গত ১৬ বছরের নির্যাতনের কথা ভুলে যাবেন না: ছাত্রদলকে হাসনাত আব্দুল্লাহ

ঢাবি সংবাদদাতা
কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্রদলের হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আজ বুধবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই হামলার এবং জুলাইয়ের হামলার ভিডিও চিত্র প্রদর্শনীর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর, হলপাড়া হয়ে মিছিলটি পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসে।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘কুয়েটে যখন রক্ত ঝরে, ওয়াসিম তোমায় মনে পড়ে’, ‘শিক্ষা-সন্ত্রাস, এক সঙ্গে চলে না’, ‘যেই হাত সন্ত্রাস করে, সেই হাত ভেঙে দাও’, ‘ছাত্রলীগ যে পথে, ছাত্রদল সে পথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘গত ১৬ বছর আপনাদের ব্যানার ধরার মানুষ ছিল না। এখন আপনাদের পেছনে শত শত মানুষ দাঁড়ায়। এটি যেই শিক্ষার্থীদের রক্তের বিনিময়ে সম্ভব হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। গত ১৬ বছরের নির্যাতনের কথা ভুলে যাবেন না। আপনারা যদি ছাত্রলীগের রাজনীতি অনুসরণ করেন তবে ছাত্রলীগ যে পথে গেছে আপনারাও সে পথেই যাবেন।’

হাসনাত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য রাজনীতি করতে চাইলে আপনারা শিক্ষার্থীদের ভাষায় কথা বলুন। যদি চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, দখলদারি করতে চান তবে সাদ্দামের মতো পরিণতি হবে। আপনারা মজলুম ছিলেন, জালিম হইয়েন না। মজলুম যখন জালিম হয়ে উঠে তখন পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়।’

বুধবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) সারা বাংলাদেশে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই এবং আজকের কুয়েটের হামলার ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হবে। বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ সকল প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি পালিত হবে।’

সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘জুলাই পরবর্তী সময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অবসান চেয়েছি। ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক কাঠামো উৎখাত করতে চেয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ক্যাম্পাসে নির্যাতন–নিপীড়ন আবার ফিরে এসেছে। ছাত্রলীগের সময়ে বিশ্বজিৎ, আবরার ফাহাদকে যখন মারা হয়, তখন ছাত্রলীগ এই হামলাকে বৈধতা দিত। আজও কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হামলাকে হচ্ছিল জায়েজ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগের জাহেলি আমলে আমরা আর ফেরত যেতে চাই না। যারা আবার ছাত্রলীগের মতো হতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব।’

ছাত্রদলের উদ্দেশে আরিফ সোহেল বলেন, ‘আপনারা অবিলম্বে আপনাদের সংগঠনকে ৫ আগস্টের পরের রাজনীতিতে আসুন। স্ট্যাম্প, লাঠির রাজনীতি বন্ধ করুন। প্রয়োজনে আমরা আবার আরেকটি জুলাই বরণ করতে প্রস্তুত আছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘জুলাইয়ের শহীদরা যে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য শহীদ হয়েছেন, সেই ক্যাম্পাসে আবারও রক্ত ঝরছে। আপনারা কি বিগত দেড় দশক ধরে এই রক্ত ঝরানোর অপেক্ষাই করে ছিলেন? ২৪–এর জুলাই অভ্যুত্থান সহিংস রাজনীতির ধারা পালটে দিয়েছে।’ ২৪ পরবর্তী সময়ে জনতার রাজনীতি করতে হলে জনতার চাওয়াকে মূল্যায়ন করতে হবে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, ছাত্রদল যদি ছাত্রলীগকে অনুসরণ করে তবে তাদেরও ছাত্রদলের মতো ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হবে।’

সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘জুলাইয়ে আমরা যখন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কর্মসূচি দিতাম তখন ছাত্রলীগ মধুর ক্যানটিনে প্রোগ্রাম দিত। আজ ছাত্রদল হামলা করার পর কর্মসূচি দিয়ে নাটক করছে। আমরা এই নাটক আর দেখতে চাই না। ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে বলছি, ছাত্রলীগের মতো এমন ন্যক্কারজনক কর্মসূচি দেওয়া বন্ধ করুন।’

সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘সন্ত্রাসী ভাড়া করে কুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন। ছাত্রলীগের কায়দায় ছাত্রদল এভাবে চলতে থাকলে তাদেরও নিষিদ্ধ ঘোষিত হতে সময় লাগবে না।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যদি দখলদারির রাজনীতি করতে চান তবে আপনাদেরও কালো হাত ভেঙে দেওয়া হবে।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অনেক শিক্ষার্থীদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় দেশীয় অস্ত্র হাতে অনেক বহিরাগতকেও দেখা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই অভিযোগ আমলে নেন। সেইসঙ্গে আগামী ২১ ডিসেম্বর তাঁকে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে এককভাবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৫ শর বেশি মানুষকে গুম পূর্বক হত্যাকাণ্ডের তথ্য ইতিমধ্যেই তদন্ত সংস্থার কাছে আছে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও নানা প্রমাণ প্রতিনিয়ত আসছে। তিনটি অভিযোগের মধ্যে শতাধিক মানুষকে গুম পূর্বক হত্যা করা এবং হত্যা করার পর তাঁদের মরদেহ কেটে পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে সিমেন্টের ব্লক বেঁধে বলেশ্বর নদী, সুন্দরবন, শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা নদী এবং কখনো রাস্তার ধারে ব্রিজ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এগুলো আমরা আজকে দাখিল করেছি।’

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গুম-খুনের কালচার শেখ হাসিনার আমলে শুরু হয়েছিল। সেটা সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে পরবর্তীতে এবং সেই কমান্ডটা আসত তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর মাধ্যমে। এই সবকিছুর বাস্তবায়নের মাস্টারমাইন্ড বা মহানায়ক ছিল জিয়াউল হাসান। তাঁর যে নিষ্ঠুরতা, হত্যাকাণ্ডের ধরন এবং হত্যাকাণ্ডের যে পরিমাণ এটা বাংলাদেশে আর কারও সঙ্গে তুলনীয় নয়। বাংলাদেশে এ রকম বীভৎস, নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানোর ব্যাপারে তাঁর যে স্পর্ধা, সেজন্য জিয়াউল হাসানকে আলাদাভাবে একক আসামি হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা ফরমাল চার্জ দাখিল করেছি।’

গত বছরের ১৫ আগস্ট সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। তারপর নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধেরসহ আরও মামলা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘অর্থ লোপাট করে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন ভেঙেছেন দীপু মনি ও তাঁর ভাই’

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আজ সকালে আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাবুরহাট ক্যাম্পাসে বক্তব্য দেন পর্ষদের সভাপতি মো. মোবারক হোসাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাবুরহাট ক্যাম্পাসে বক্তব্য দেন পর্ষদের সভাপতি মো. মোবারক হোসাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. মোবারক হোসাইন বলেছেন, ‘ফান্ডে থাকা সকল অর্থ লোপাট করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তাঁর ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু। তাঁদের এ ধরনের অন্যায়ের কারণে অনেক পিছিয়ে গেছে আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ বাবুরহাট ক্যাম্পাস।’ তিনি বলেন, এক একর জমির ওপর সোসাইটির নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাসটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও মনোরম পরিবেশের ছিল। কিন্তু অর্থ লোপাটের কারণে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যায়নি।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে শহরের বাবুরহাট পুলিশ লাইনসের পেছনে আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাবুরহাট ক্যাম্পাসে নতুন ভবন উদ্বোধন, বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোবারক হোসাইন এসব কথা বলেন।

মোবারক হোসাইন বলেন, ‘৪৮ বছরের দীর্ঘ পথচলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে আল-আমিন একাডেমি আজকের অবস্থানে এসেছে। দেশজুড়ে এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম রয়েছে। সরকারি উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তা এসে নিজেদের এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে আমরা গর্ববোধ করি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু সার্টিফিকেটধারী শিক্ষার্থী তৈরি করা নয়, বরং নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত সুনাগরিক গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীরা যেন পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য দায়বদ্ধ মানুষ হয়ে ওঠে, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’

দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে মোবারক হোসাইন বলেন, ‘সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জন করেও অনেক তরুণ চাকরি পাচ্ছে না। সম্প্রতি একটি সেমিনারে জেনে এসেছি, দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বেকার যুবক মানসিক রোগে আক্রান্ত। কাজের অভাবে পারিবারিক ও সামাজিক চাপ থেকেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা কেবল মানসিক রোগী তৈরি করবে। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা দক্ষতা ও নৈতিকতায় বলীয়ান হয়ে সমাজে কাজে লাগুক।’

মোবারক হোসাইন আরও বলেন, ‘আমি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানের নামে আলাদা অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছি; কিন্তু তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর ভাই সাত বছরের মধ্যে সকল অর্থ লোপাট করে নিয়ে গেছেন। যে কারণে আমাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় আর তৈরি করা হয় না। তবে আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আবারও শুরু করতে পেরেছি।’

আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজী ও আল-আমিন সোসাইটির সদস্য আব্দুল মালেক পাটোয়ারী।

আল-আমিন একাডেমি গুনরাজদী ক্যাম্পাসের ইনচার্জ নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় অভিভাকদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় বাসিন্দা ও গণঅধিকার পরিষদের জেলা সভাপতি কাজী রাসেল।

বক্তব্য শেষে ক্যাম্পাসের ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পরে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথি এবং শিক্ষকেরা নতুন ভবনের ফলক উন্মোচন করে দোয়া করেন। এরপর নতুন ক্যাম্পাসের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে গাছের চারা রোপণ করেন সভাপতিসহ শিক্ষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঠাকুরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঠাকুরগাঁও শহরের শান্তিনগর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এই ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূর নাম মোছা. স্বপ্না আক্তার সাথী (২১)। তিনি পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা মোছা. কহিনুর বেগমের মেয়ে।

ছয়-সাত মাস আগে ঠাকুরগাঁওয়ের জগদল বাজার এলাকার মো. সাবু ইসলামের ছেলে মো. লিয়নের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর দম্পতি শান্তিনগর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন।

নিহত ব্যক্তির মা কহিনুর বেগম জানান, দাম্পত্য জীবনে পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। এসব বিষয় তাঁর মেয়ে নিয়মিত তাঁকে ফোনে জানাতেন। ঘটনার দিন তিনি একাধিকবার মেয়েকে ফোন করলেও সাড়া পাননি। পরে জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে ঘরের বারান্দায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

খবর পেয়ে তিনি দ্রুত মেয়ের ভাড়া বাসায় এসে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ দেখতে পান। এরপর বিষয়টি আত্মীয়স্বজনকে জানিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় খবর দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, ঘটনার সময় বাসায় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। পাশের বাসার এক নারী প্রথম ঘটনাটি লক্ষ করেন।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতের পিঠায় জীবনের ভার টানছেন মা-মেয়ে

গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা
পিঠা তৈরি করছেন সাজেদা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিঠা তৈরি করছেন সাজেদা বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

৬০ বছরের সাজেদা বেগম ও তাঁর ৪০ বছর বয়সী মেয়ে সোনাভান—দুজনই স্বামী পরিত্যক্তা। জীবনের প্রয়োজনে নিরুপায় হয়ে তাঁরা বেছে নিয়েছেন পিঠা বিক্রির পেশা। শীতের পিঠা বিক্রি করে চলছে মা-মেয়ের সংসার।

নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দনগর মহল্লার বাসিন্দা এই মা-মেয়ে। মহল্লার মোড়ে বসে তাঁদের ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান। পথচারীসহ নানা বয়সী মানুষ এখানে পিঠা কিনলেও শিশুদের ভিড় বেশি।

সাজেদা বেগম জানান, একসময় তাঁর সুখের সংসার ছিল। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ছেলেসন্তানের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় অশান্তি শুরু হয়। মেয়ে সোনাভানের জন্মের এক বছরের মধ্যেই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর শিশুসন্তানকে নিয়ে তিনি চরম সংকটে পড়েন। অন্যের বাড়ি ও খেতখামারে কাজ করে মেয়েকে বড় করেছেন।

কিন্তু সোনাভানের সংসারও বেশি দিন টেকেনি। যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় তাঁর সংসার ভেঙে যায়। শেষ পর্যন্ত জীবন-জীবিকার তাগিদে মা-মেয়ে দুজনই পিঠা বিক্রির পেশায় নামেন। শীতের মৌসুমের প্রায় চার মাস এই পিঠা বিক্রির আয়ে তাঁদের সংসার চলে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, মহল্লার মোড়ে সাজেদার চুলা জ্বলছে। চুলায় বসানো হাঁড়িতে গরম হচ্ছে পানি, আর সেই পানির ভাপে সেদ্ধ হচ্ছে ভাপা পিঠা। পাঁচ টাকায় প্রতিটি ভাপা পিঠা পেতে চুলার সামনে ভিড় করছে শিশুরা। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে শীতের সকালে গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ বাসার জন্য প্যাকেট করে নিয়ে যাচ্ছে।

সাজেদা জানান, ঢেঁকিছাঁটা চালের গুঁড়ার সঙ্গে খেজুরের গুড় মিশিয়ে গরম পানির ভাপে তৈরি হয় ভাপা পিঠা। আর চালের গুঁড়ার সঙ্গে পানি মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে মাটির তাওয়ায় ঢাকনা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় রাখলেই তৈরি হয় চিতই পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে ধনেপাতা, কালিজিরা, সরিষা বাটা, কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি ভর্তা দেওয়া হয়, যা পিঠার স্বাদ বাড়িয়ে দেয়।

তিনি জানান, প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ কেজি চালের গুঁড়ার পিঠা তৈরি করেন। চালের গুঁড়া, খেজুরের গুড়, জ্বালানি ও অন্যান্য উপকরণ বাবদ দৈনিক খরচ পড়ে প্রায় ৮০০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন বিক্রি হয় দেড় হাজার টাকার পিঠা। খরচ বাদে লাভ থাকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এতে মোটামুটি ভালোভাবেই সংসার চলছে। এ কাজে মেয়ে সোনাভান সব সময় সহযোগিতা করেন।

পিঠা খেতে আসা যুবক মুন্না বলেন, ‘বাড়িতে সব সময় পিঠা বানানো সম্ভব হয় না। তাই মাঝেমধ্যে এখান থেকে পিঠা খাই। নিজে খাই, আবার পরিবারের জন্যও নিয়ে যাই। এখানে প্রতিটি পিঠা মাত্র পাঁচ টাকায় পাওয়া যায়।’

সাজেদা বেগমের মতো শীতের মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও সড়কের মোড়ে পিঠা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন অনেকে। অস্থায়ী এসব দোকানে সকাল ৬টা থেকে ৯টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি হয়। রস পিঠা, ঝাল পিঠা ও তেলে ভাজা পিঠা বিক্রি হলেও চিতই ও ভাপা পিঠার চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।

খুবজীপুর এম হক কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বেলাল হোসেন বলেন, শীত ও পিঠা বাঙালির ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীতের পিঠা বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাবার। কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে বাড়িতে পিঠা তৈরির সময় বের করা কঠিন। তাই পথের ধারের এসব পিঠার দোকানই অনেকের জন্য শীতের পিঠা উপভোগের সহজ ও উপযুক্ত স্থান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত