Ajker Patrika

নগর পরিবহন: সুবিধা-অসুবিধার গণশুনানি গড়াল ভাড়া বৃদ্ধির আলোচনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ১৮: ৩৩
নগর পরিবহন: সুবিধা-অসুবিধার গণশুনানি গড়াল ভাড়া বৃদ্ধির আলোচনায়

দেড় বছর পার করেছে ঢাকা নগর পরিবহন। তবে কোনোভাবেই যাত্রীসেবা দিতে পারছে না বাস রুট রেশনালাইজেশনের অধীনে চালু হওয়া এই নগরকেন্দ্রিক সেবা। দিন দিন অনিয়মের অভিযোগ বাড়ছে। আর কমছে যাত্রীসেবার মান। নগর পরিবহন চালুর আগে ও পরে করা হয়েছে ২৭টি সভা। এসব সভায় সাধারণত যাত্রীসেবার মান বাড়ানোসহ নগর পরিবহনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এর মধ্যে আজ সোমবার হয়েছে ২৮তম গণশুনানি। তবে সেখানে প্রতিফলিত হয়নি যাত্রীসেবার মান নিয়ে আলোচনা। বরং সভার একপর্যায়ে মালিক সমিতির প্রতিনিধি দাবি করেন ভাড়া বৃদ্ধির। পরে এই ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গ নিয়েই এগোতে থাকে আলোচনা।

এদিকে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ভবনে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না যাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি। অন্যান্য সেবা সংস্থার ৩৮ জনের কাছে গণশুনানি উপলক্ষে চিঠি পাঠালেও দেখা যায়নি বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে।

সভার শুরুতে আলোচনা হয় নতুন রুট ও বাস বৃদ্ধির জন্য। তবে তাতে বাধ সাধেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান। মাহাবুবুর রহমান নগর পরিবহন পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, এখানে যাঁরা ছোট বাসমালিক আছেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে বড় কোনো সুবিধা হচ্ছে না। তাঁরা এভাবে বাস দিতে চান না।

এই প্রকল্প চালু করার আগে মালিক সমিতি থেকে শুরু করে সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে জানালে, তিনি এটাকে ব্যক্তিগত অভিমত বলে উল্লেখ করেন।

ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন বলেন, এই পদ্ধতিকে সেবা হিসেবে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার থেকে সহযোগিতা করা হবে। রুট বাড়ানো হলে বাস বাড়াতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মাহাবুবুর রহমান তখন ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলেন। সেই সঙ্গে সরকার থেকে প্রণোদনার দাবিও জানান তিনি। যা নিয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত হতে থাকে।

গণশুনানিতে মালিক সমিতির এক পক্ষীয় কথায় একপর্যায়ে ডিটিসিএ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ডিটিসিএর কোনো কর্মকর্তার কথা তিনি শুনতে নারাজ।

গণশুনানিতে যাত্রীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি না থাকায় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা মাহাবুবুর রহমানকে সাম্প্রতিক সময়ে চালু করা ই-টিকিট পদ্ধতি ও বাসের সেবা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তবে তিনি তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সে সময় সাবিহা পারভীন বলেন, এখানে সবাই যাত্রীদের প্রতিনিধি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হককে চিঠি দিলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি।

ভাড়া বাড়ানোর প্রসঙ্গে ডিটিসিএর সহকারী পরিকল্পনাবিদ ধ্রুব আলম বলেন, ভাড়া বাড়বে যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে তার সঙ্গে সমন্বয় করে। সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া নিয়ে আলোচনা যৌক্তিক নয়।

বাস রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৯টি ক্লাস্টার (৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের), ২২টি কোম্পানি ও ৪২টি রুটের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরবান ক্লাস্টার (নগর পরিবহন) ৬টি (রুট ৩৪টি) ও সাব-আরবান (শহরতলি পরিবহন) ক্লাস্টার ৩টি (রুট ৮টি)। সবুজ ক্লাস্টারে বর্তমানে চলমান মোট ৫৪টি রুটকে সমন্বয় করে ৮টি রুটে পরিণত করা হয়েছে, যাদের রুট নম্বর ২১ থেকে ২৮।

২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২১ নম্বর রুট এবং ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর ২২ ও ২৬ নম্বর রুটে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে সবুজ রঙের বাসসেবা চালু হয়।

সাবিহা পারভীন বলেন, এসব রুটে দৈনিক ৩০ হাজার যাত্রীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সবুজ বাস সার্ভিস বাস্তবায়ন সাপেক্ষে অন্যগুলো চালু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জ-৩: প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সেতু অবরোধ

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ বিকেলে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি ঘোষিত মো. কামরুজ্জামান রতনের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে ঢাকা–মুন্সিগঞ্জ সড়কে ষষ্ঠ বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সেতু ব্লকেড করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকেরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

বিকেল ৫টার দিকেও (এই প্রতিবেদন লেখার সময়) অবরোধ চলছিল। অবরোধের কারণে ঢাকা–মুন্সিগঞ্জ সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাইয়ের ছোট ভাই মো. মহিউদ্দিন-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে দলের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান রতনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে রাতেই জেলা শহরে মির্জা ফখরুল ও রতনের কুশপুত্তলিকা দাহ ও মুক্তারপুর এলাকায় মশালমিছিল করেন মহিউদ্দিনপন্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দিনভর এ ব্লকেড কর্মসূচি চলে।

অবরোধ চলাকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সাইদুর রহমান ফকির, শাহাদাত হোসেন সরকার, শহর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহবুব-উল-আলম স্বপন, পঞ্চসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, জেলা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মু. মাসুদ রানা, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মো. আবুল হাসেমসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঋণের টাকা শোধ না করায় গুলি করে হত্যা করা হয় রফিককে, গ্রেপ্তার ১

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় হেলমেটধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে রফিক ইসলাম (৫৫) হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকালে মামলার পর পুলিশ ফারুক হোসেন (২৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ বলছে, রফিক ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আল আমিন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু একাধিকবার চাওয়ার পরও সেই টাকা পরিশোধ না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আল আমিন লোকজন নিয়ে রফিককে গুলি করে করেন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পচাভিটা এলাকায় একটি চায়ের দোকানে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় রফিক ইসলাম গুলিতে নিহত এবং দুজন আহত হন।

রফিকুল ইসলাম উপজেলার পচাভিটা গ্রামের বাসিন্দা। আহত হয়েছেন একই গ্রামের রবজেল ফরাজি (৫২) ও ইউসুফ হোসেন (৫৫)। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

ঘটনার পর রাতেই দৌলতপুর থানা-পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) যৌথভাবে তদন্তে নামে। আজ সকালে নিহতের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পচাভিটা গ্রামের ফুলচাঁদ আলীর ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আল আমিন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন রফিক। তবে দীর্ঘদিনেও তিনি সেই টাকা পরিশোধ করেননি। এ নিয়ে আল আমিন ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার রফিক ও তাঁর স্ত্রী ব্যাংক থেকে ৫৪ হাজার টাকা তুলেছেন বলে খবর পান আল আমিন। পরে টাকা পরিশোধ করতে বলা নিয়ে কামালপুর বাজারে আল আমিনের সঙ্গে রফিকের কথা-কাটাকাটি হয়। এরই জেরে সন্ধ্যায় আল আমিন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। রফিক ওই দোকানে বসে চা পান করছিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মহসিন আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেলমেটধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে রফিক নিহত হওয়ার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে আসামিকে আদালতে হাজির করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দাবি পূরণে প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট হবে: ৮ দলের সমাবেশে জামায়াত আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে কোরআনের বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত আট দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের শীর্ষ এ নেতা এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আট দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্ক্ষার বিজয় হবে কোরআনের মাধ্যমে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এই ঐক্য আমাদের জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। আন্দোলনরত আট দলের পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’ প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ফ্যাসিবাদীদের উন্নয়নের বয়ান নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীরা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনাত। তারা বলত, বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ এখন কানাডায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ কানাডা হয়েছে তাদের জন্য, সিঙ্গাপুর হয়েছে তাদের জন্য। তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। কারণ, তারা বাংলাদেশের টাকা, ব্যাংকের টাকা লুট করে, ডাকাতি করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েছে। বাংলদেশের টাকা পাচার করে কানাডায় বাড়ি করেছে।’

সমাবেশে জামায়াতের আমির আরও বলেন, এই ফ্যাসিবাদ শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে আঘাত করেনি, তারা বড় আঘাত করেছে আলেম-ওলামাদের ওপর।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ রাসুলের বিরুদ্ধে কিছুসংখ্যক বেয়াদব কুৎসা রটিয়েছিল। সেটার প্রতিবাদ জানাতে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার রাজপথে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পালন করেছিলেন। সেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ফ্যাসিবাদীরা রাতের আঁধারে বর্বরতম হামলা চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে খুন করেছিল। এতগুলো আলেম-ওলামার খুনের পর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন—কেউ মারা যায়নি। আলেম-ওলামারা রং দিয়ে শুয়ে ছিল। এভাবে ফ্যাসিবাদীরা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল, রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না ইনশা আল্লাহ।’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘এবার ইসলামি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলার মাটিতে জেগে উঠেছে। আমরা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কবর রচনা করে আল্লাহর আইনের বাস্তবায়ন করব। সব চক্রান্ত, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয় হবে ইনশা আল্লাহ।’

আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ গরিব-দুঃখী, মেহনতি মানুষের রক্তে গড়া দেশ। বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। অনেক দল থেকে আসন সমঝোতার অফার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা এবার ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ‘হ্যাঁ’ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ৫ আগস্টের আন্দোলনে হাজার হাজার জীবনের বিনিময়েও মানুষ মুক্তি পায়নি। আগামী দিনে আবারও চাঁদাবাজ, জামেলদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে এই বৈষম্য থাকবে না। কেউ ১০ তলায় কেউ নিচতলায় থাকবে, সেটা আর হবে না।

মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসলাম আগামী দিনে ক্ষমতায় যাবে ইনশা আল্লাহ। যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ মানবে না। হুমকি-ধমকি চলবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। আট দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারাই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না।’

সমাবেশে আট দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী ও নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম চান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অভিযোগের পাহাড় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি 
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

অর্থ কেলেঙ্কারি, প্রশাসনিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাসের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত রবীন্দ্রনাথ দাস মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ২১ জন শিক্ষক ও কর্মচারী তাঁর অপসারণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে।

একই দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বানিয়াজুরী-ঘিওর সড়কের কলেজ গেটে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে শিক্ষকেরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অভিভাবকেরা আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারী আচরণ, আর্থিক অনিয়ম, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত ফি আদায় এবং প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতার অভাবে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রশাসনিক কাজের জন্য সরকার অনুমোদিত ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা কোনো কাজেই ব্যয় করা হয়নি। এ ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭০০ টাকা অধ্যক্ষ নিজের নামে উত্তোলন করেছেন, যা উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সরকারি পোশাকের জন্য ভাতার টাকা দীর্ঘ সময় আটকে রেখে পরে চাপের মুখে আংশিক টাকা বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া ইন্টারনেট বিল, কম্পিউটার খরচ, ভূমি উন্নয়ন কর, রাসায়নিক দ্রব্য, আসবাব, ক্রীড়াসামগ্রীসহ মোট ২১টি খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে সরকারি বরাদ্দের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রতিষ্ঠানটির ১৫ জন শিক্ষক এসব অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, লাইব্রেরির বই কেনার জন্য বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বই না কেনা, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ভর্তি ফি নিয়ম অনুযায়ী ব্যয় না করে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করা, সরকারি শিক্ষকদের এসিআর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা না দিয়ে নিজের কাছে আটকে রাখা, এসব অভিযোগও নথিভুক্ত করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাস নিজেই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে তদন্ত শুরু হতেই টানা তিন দিন প্রতিষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত দিনে রহস্যজনকভাবে কমিটি বাতিল করে নতুন পরিপত্র জারি করেন, যা নিয়ে শিক্ষকেরা আরও সন্দিহান হয়ে পড়েন।

শিক্ষক মো. মোনায়েম খান বলেন, ‘অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, নীরব থাকার কোনো উপায় নেই। তিনি মানসিকভাবে শিক্ষকদের হয়রানি করছেন এবং অভিযোগ করার পর উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দিয়েছেন, যা মানহানিকর ও লজ্জাজনক ব্যাপার।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘আমি অনেক অভিযোগ সম্পর্কে জানি না, কোথাও ভুল হয়ে থাকতে পারে। আর অধিকাংশ অভিযোগ সত্য নয়। শাস্তিযোগ্য কিছু প্রমাণিত হলে তা মেনে নেব।’

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিতা তুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছেছে, শিক্ষা বোর্ডেও অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত