Ajker Patrika

পেনশন চাইতে আসা চিকিৎসকের কর্মস্থলে মৃত্যু: রহস্য মেলাতে পারছে না পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ২৬
পেনশন চাইতে আসা চিকিৎসকের কর্মস্থলে মৃত্যু: রহস্য মেলাতে পারছে না পরিবার

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে অডিট কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চিকিৎসক মনোয়ারুল হকের (৫৯) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্যের কুল পাচ্ছে না পরিবার ও স্বজনেরা। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘ ৩২ বছর সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন চিকিৎসক মনোয়ারুল। তবে কর্মজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মীমাংসিত বিষয় নিয়ে নতুন করে অভিযোগ আপত্তি তোলা উদ্দেশ্য মূলক।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে মরদেহ বুঝে নিতে এসেছেন নিহতের বড় ভাই অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মাহফুজুল হক ও ছোট ভাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মনিরুল হক ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

মনিরুল হক বলেন, ‘মৃত্যুর মাত্র ২৫ মিনিট আগেও তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তার পেনশন বন্ধ থাকায় মেজ মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা বকেয়া পড়েছিল। আমি তাঁকে ব্যাংকে এক লাখ টাকা পাঠাই। টাকা পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই আবার মৃত্যু সংবাদ পাই। কিভাবে কি হলো কিছুই মিলাতে পারছি না।’

মনিরুল হক আরও বলেন, ‘২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল মনোয়ারুলের। কিন্তু অডিট আপত্তির কারণে তিনি প্রত্যয়নপত্র বা ছাড়পত্র পাচ্ছিলেন না। ফলে তাঁর এলপিআর–এ যাওয়া ও বেতন দুটিই স্থগিত ছিল। সব মিলিয়ে আমার ভাই একটু চাপে ছিলেন। যদিও অবসরে যাওয়ার ছয় মাস আগে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বিভাগীয় পর্যায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে।’

মৃত্যুর একদিন আগে মনোয়ারুল হক বেতন ভাতা পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছে উল্লেখ করে মনিরুল বলেন, ‘গত ২ তারিখ আমার ভাই মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে তাঁর সমস্যা ও অভিযোগের বিষয়ে সচিবকে বিস্তারিত জানান। তখন সচিবের কার্যালয়ে থাকা দুটি ফাইল পাওয়া যায়। একটিতে বিভাগীয় পর্যায়ে অভিযোগের নিষ্পত্তির ও অপরটিতে নতুন করে অডিট বিভাগের আপত্তি। অভিযোগের নিষ্পত্তি করে সচিবালয়ের নির্দেশনার পরেও বেতন–ভাতা চালু না করে আপত্তি তোলায় অডিট বিভাগের নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালামের বিরুদ্ধে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব চেয়ে একটি শো কজের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অডিট কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। সহকর্মীদের নামাজের কথা বলে বের হন তিনি। এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে অপর এক অডিট কর্মকর্তার রুমে তাঁকে পাওয়া যায়।

তাঁর রুমে চিকিৎসকের আত্মহত্যার বিষয়ে আবুল কালাম বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসক মনোয়ারুল আমার রুমে এসেছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলা শেষে আমি নামাজে চলে যাই। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আমার অফিস সহকারী রুম খুলে তাঁর মরদেহ ঝুলতে দেখে আমাকে ডাক দেন। পরে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পরে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ নামায়। কীভাবে তিনি রুমে গেলেন বা কি হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

নিহত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ছিল। গত ছয় মাস আগে এক কোটি ১০ লাখ টাকা অনিয়মের একটি অভিযোগ করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নরসিংদী জেলার উপপরিচালক অরবিন্দ দত্ত। তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা তদন্ত করি। তদন্তে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার অভিযোগসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পাই। যা লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়।’

মীমাংসিত বিষয়ে ফের আপত্তি তোলায় তাঁর বিরুদ্ধে শো কজ নোটিশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

পরিবারসূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার মৃত ওবায়দুল হকের দ্বিতীয় সন্তান মনোয়ারুল হক রাজধানীর সূত্রাপুর থানার নারিন্দা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তিনি যে বাসাটিতে থাকেন সেটি তাঁর স্ত্রী বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অপর এক মেয়ে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়েন। আর একমাত্র ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এ দিকে আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম। তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত চিকিৎসকের মরদেহ তাঁর ভাই বুঝে নিয়েছেন। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। চিকিৎসক মনোয়ারুল হককে নারিন্দা এলাকায় নামাজে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়, থার্টি ফার্স্ট নাইটে ৭ দফা বিধিনিষেধ পুলিশের

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
কক্সবাজার সৈকতে ভরপুর পর্যটক। শনিবার বিকেলে শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের সৈকত এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার সৈকতে ভরপুর পর্যটক। শনিবার বিকেলে শহরের সুগন্ধা পয়েন্টের সৈকত এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। এ বছরও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা কক্সবাজারে এসেছেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের আবহ বিরাজ করায় অনেকেই ভ্রমণ বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতসহ উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ও জনসমাগম না করতে ৭ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার জেলা পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, অপপ্রচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ানো, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, নাশকতা কিংবা সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ থাকবে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজার শহর ও সমুদ্রসৈকতে আতশবাজি ও পটকা বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। একই সময়ে উন্মুক্ত স্থান ও রাস্তায় কোনো কনসার্ট কিংবা নাচগানের আয়োজন করা যাবে না। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বার ও মদের দোকানে বেচাকেনা বন্ধ থাকবে।

অলক বিশ্বাস জানান, বিধিনিষেধ কার্যকরের পাশাপাশি শহরের প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নজরদারি জোরদার করা হবে।

পর্যটকের উপস্থিতি

বছরের শেষ দিন ও নতুন বছরের শুরুতে কক্সবাজারে সাধারণত পর্যটকের ঢল নামে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারাও সৈকতে ভিড় জমান। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে ৮-৯ বছর ধরে সৈকতে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের উন্মুক্ত কোনো আয়োজন হচ্ছে না। শহরের কয়েকটি মানসম্মত হোটেল ও রিসোর্টে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান হলেও এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সেসব আয়োজনও বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেলের মালিকেরা।

হোটেল ও রিসোর্টের মালিকেরা বলেন, ‘শোকাবহ পরিস্থিতির কারণে অনেক পর্যটক বুধবারের কক্ষ বুকিং বাতিল করেছেন। আবার যাঁরা মঙ্গল বা বুধবার কক্সবাজারে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁদের বড় অংশই সফর স্থগিত করেছেন।’

কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খানসামায় গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার ২ নম্বর ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া চেয়ারম্যানপাড়া গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দায় একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ভ্যানযোগে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাছেত সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাশটির পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। মৃত্যুর কারণ ও পরিচয় উদ্‌ঘাটনে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, সিসিটিভির হার্ডডিস্ক নিয়ে আত্মগোপনে স্বামী

বগুড়া প্রতিনিধি
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় রিফাত জাহান রিংকি (১৯) নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার নুনগোলা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পরপরই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ির সিসিটিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এই ঘটনায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত রিংকি শাজাহানপুর উপজেলার নন্দকুল উত্তর পাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলামের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে নুনগোলা এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে নুরুন্নবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের চার বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা রিংকিকে বাড়ির উঠানে স্বাভাবিকভাবে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেন। যদিও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে পারিবারিক কলহের কথা শোনা যেত। রাতের দিকে হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

নিহত রিংকির বোন আশা খাতুন জানান, বিকেলে রিংকির মোবাইল থেকে তাঁর ফোনে একটি মিসকল আসে। পরে একাধিকবার ফোন করলেও রিংকি ফোন ধরেননি। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে নুরুন্নবী ফোন করে জানায়, রিংকির ওপর জিনের আছর পড়েছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রিংকির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তখন তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন লক্ষ করা যায়।

রিংকির মামি আয়না খাতুন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে রিংকিকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আলামত নষ্ট করতে বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী নুরুন্নবী ও তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু রায়হান বলেন, ‘এর আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ঝগড়াবিবাদের কথা আমার জানা ছিল না। হঠাৎ রাতে মৃত্যুর খবর পাই। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে আত্মহত্যার কোনো সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫ দিন সূর্যহীন চুয়াডাঙ্গা: মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে বিপন্ন জনজীবন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। হিমাঙ্কের কাছাকাছি নামা তাপমাত্রার সঙ্গে টানা পাঁচ দিন সূর্যের দেখা না মেলায় স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। আজ বুধবার চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জেলাজুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সৃষ্টি করেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। চলতি শীত মৌসুমে এটিই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ ছাড়া জেলায় ২৭ ডিসেম্বর থেকে একটানা সূর্যের দেখা মেলেনি। ২৭ ডিসেম্বর ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলেও বুধবার একলাফে তাপমাত্রা কমেছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ হওয়ায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রায় হঠাৎ করে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু এবং ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সেই হিসাবে চুয়াডাঙ্গায় এখন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে এবং এই পরিস্থিতি আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। রাস্তাঘাটে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে।

চা-দোকানি আলফাজ আলী বলেন, ‘ঠান্ডার চোটে সকালে দোকান খোলাই দায় হয়ে পড়েছে। কুয়াশায় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না, বেচাকেনাও খুব কম।’

দিনমজুর হারেজ আলী বলেন, ‘হাতে-পায়ে বরফের মতো ঠান্ডা লাগে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না, তাই এই শীতেও বের হতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলার একটি ইটভাটার শ্রমিক আফতাব হক বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। বাতাসের ঝাপটায় হাত অবশ হয়ে আসে, কাজ এগোয় না।’

টানা কুয়াশা ও সূর্যের অনুপস্থিতিতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। হাটকালুগঞ্জ গ্রামের ধানচাষি ফরজ আলী জানান, তীব্র ঠান্ডায় ধানের বীজতলা লালচে হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বীজতলা রক্ষায় সকালে দড়ি টেনে কুয়াশার পানি ঝরিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। ফসল সুরক্ষায় ছত্রাকনাশক ও পরিমিত সেচ জরুরি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন আউটডোরে শত শত শিশু ও বৃদ্ধ রোগী নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিতে আসছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত