Ajker Patrika

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদচ্যুতি চাই: ঢাবি অধ্যাপক

ঢাবি সংবাদদাতা
নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সমাবেশে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সমাবেশে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিরাজ মাহবুব বলেছেন, ‘সবাই এখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাচ্ছে। আমি এটি আরও চার মাস আগে চেয়েছি। এখন আর পদত্যাগ চাই না, পদচ্যুতি চাই। পদত্যাগ সম্মানজনক অব্যাহতি। সে তো এ সম্মানের যোগ্য না।’ ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

আজ রোববার (৯ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় এ সমাবেশ আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গত কয়েক সপ্তাহে দেশব্যাপী চলমান ধর্ষণ, নিপীড়নের ঘটনায় দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে একই বিষয়ে আন্দোলন করেছে শিক্ষকদের এ সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ সমাবেশে দেশব্যাপী নারী নিপীড়ন ও অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ধর্ষণের কারণ, প্রতিকার ও সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বেশ কিছু দাবিও তাঁরা উত্থাপন করেন।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘যে নারী এবং শিশুদের জন্য বাংলাদেশ গঠন করেছি, দেশের সরকার তাদেরই নিরাপত্তা দিতে পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তা করে কর্মচারী ছাড় পেয়ে যায়। উগ্রপন্থীরা থানা কবজায় নেয়। মব করে আসামির বক্তব্য এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তিগত পরিচয় জব্দ করে। ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মানসিক নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।’

অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার এক জঘন্য উদাহরণ। ঢাবি প্রশাসনও এ জায়গায় প্রশ্নবিদ্ধ। হেনস্তার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া যেত, প্রশাসন তা করেনি।’

সামিনা লুৎফা বলেন, ‘ঢাবি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও হেনস্তার ঘটনায় ছাত্রীকে মামলা করতে কেন থানায় পাঠানো হলো তার জবাব দিতে হবে। সকল বাধা দূর করে নারীর স্বাধীন চলাফেরা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকটা প্রশাসন নারীর বিষয়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আট বছরের শিশুর সাথে ঘটা সহিংসতার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

এ সময় সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, পাহাড় ও সমতলের সব ধর্ষণের বিচার, প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল গঠন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নিপীড়নের ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং বিচার বা তদন্তে কেবল নারী বিচারকদের নিয়োগ।

দাবির মধ্যে আরও আছে হাইকোর্টের নীতিমালায় অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল গঠন, প্রাথমিক শিক্ষায় জেন্ডার সংবেদনশীলতার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা, থানার জটিলতা দূর করা, সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সাক্ষী সুরক্ষা আইন পুনর্বিবেচনা করা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিষ্কৃত নারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি।

সমাবেশে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ‘গতকাল শনিবার রাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ দেখা গেছে, তা একদিনের নয়। বহু ধর্ষণ আর নিপীড়নের অভিযোগ কেবল জমা পড়ে। কিন্তু কারও বিচার হয় না। তনু, মুনিয়ার প্রতি সহিংসতার মতো বহু ঘটনা আছে। এ সরকার আসার সাথে সাথে উচিত ছিল এগুলোর তদন্ত করা। কিন্তু সরকার তা করেনি। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জমা রাখতে পারেনি।’

উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা ধর্ষণ ও নিপীড়নের কেবল আলোচিত দু-একটি ঘটনার বিচার চাই। অব্যাহত এ সহিংসতার কারণ খুঁজি না। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এসবের জন্য দায়ী।’

সংস্কৃতিকর্মী সুস্মিতা রায় বলেন, ‘নারী মানুষ হিসেবে এখনো মর্যাদার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হেনস্তার শিকার হয়েও ন্যায্য বিচার পায়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সরকারের এ জায়গায় দায় আছে। তারা বলছে মব প্রশ্রয় দেবে না। কিন্তু একের পর এক মব হয়ে যাচ্ছে। পুরো বাংলাদেশকে এ পরিস্থিতিতে দাঁড়ানোর জন্য সরকার দায়ী।’

সুস্মিতা রায় আরও বলেন, ‘আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে সকল বৈষম্য দূর করতে হবে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, ‘সরকার তাদের দায়িত্বগুলো পালন করতে সক্ষম হচ্ছে না। সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চোর, ধর্ষক, উন্মাদ লোকজন ফ্যাসিবাদ কায়েম করছে। গত ফ্যাসিবাদের সময়ে ধর্মীয় জনগোষ্ঠী নানা নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর তারা এর সঠিক ব্যবহার না করে নিজেরাই ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।’

সভাপ্রধানের বক্তব্যে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘নারীর ওপর নিপীড়ন পাবলিক-প্রাইভেট সর্বত্রই চলছে। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো চলছে। আমরা তখনই সচেতন হই, যখন মিডিয়া কথা বলে।’

অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন আরও বলেন, ‘নিপীড়নের মনোবৃত্তির বিপক্ষে গৃহ থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্বপনের নতুন বাংলাদেশ সত্যিকারার্থে বাস্তবায়ন না হলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার পথে দিল্লির বাধা চীনের উত্থান: ভারতীয় সেনাপ্রধান

আসামির জবানবন্দি: মাগুরার শিশুটির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধর্ষণ করা হয়

ইউএনওর ফেসবুক পেজ হ্যাক করে পোস্ট, ‘করলাম না এই প্রশাসনের চাকরি’

রেমিট্যান্সের নামে ৭৩০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন একজন, কার কথা বললেন এনবিআর চেয়ারম্যান

অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে খাওয়ার খরচ চায় পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত