Ajker Patrika

নির্মম হত্যার শিকার শামীম মোল্লার সঙ্গে জাবির নিরাপত্তা কার্যালয়ে সেদিন কী ঘটেছিল

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩: ২১
নির্মম হত্যার শিকার শামীম মোল্লার সঙ্গে জাবির নিরাপত্তা কার্যালয়ে সেদিন কী ঘটেছিল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধরের একপর্যায়ে তিনি পানি খেতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁকে মারধরকারীরা পানি খেতে দেয়নি। নিরাপত্তা কর্মকর্তা পানির বোতল দিতে গেলে তাঁর হাত থেকে বোতল ফেলে দেওয়া হয়। 

গত বুধবার বিকেলে শামীম মোল্লাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেটে (প্রান্তিক গেট) পেটানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তার অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও কয়েক দফা মারধর করে শামীমকে রাত ৮টার কিছু পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাত ৯টায় শামীম সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, হাসপাতালে তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। 

শামীম মোল্লাকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ৮ জন শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে; আটজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কেউ এখনও গ্রেপ্তার হননি। 

আজকের পত্রিকার হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রান্তিক গেটে লাঠি হাতে শামীমকে মেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব। এসময় লাথি দিতে দেখা যায় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিককে। আহসান লাবিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক। গতকাল তাঁকে এ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যখন সবাইকে আটকাতে যাব, তখন আমাকে আহসান লাবিব আটকে রাখে। শামীম যখন পানি খেতে চায়, তখন আমি তাকে পানি দিতে গেলে আমার হাত থেকে পানির বোতল ফেলে দেওয়া হয়।’ 

এর আগে ফেসবুকে আহসান লাবিব গতকাল একটি পোস্ট করেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। তবে সেই পোস্ট পরে তিনি সরিয়ে নেন। সেখানেও সুদীপ্ত শাহীন মন্তব্যের ঘরে লেখেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, শামীমকে তার শেষ চাওয়া পানিটুকু দিতে দেয়নি এই ছেলে। সে যে ধমক আমাকে দিছে গতকাল, তা আমার চাকরি জীবনে কেউ দেয়নি। বেশি না, আমি তার ২৩ ব্যাচ সিনিয়র!’ 

সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওখানে যখন আমি যাই, তখন ওকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওদিকে মার হচ্ছে আর বীভৎস চিৎকার। এদিকে সবাই প্রক্টর রুমে বসে চিৎকার শুনতেছে; তারা বের হচ্ছে না।’ 

সুদীপ্ত বলেন, তিনি প্রক্টরকে বলেছিলেন, ছেলেটা মরে যাবে। সে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখে। তখন প্রক্টর তাঁকে বলেন, ‘ছেলেপেলে তাকে এখানে থেকে নিয়ে গেছে’। তখন সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘শামীমকে প্রক্টর রুমে রাখতে হবে। নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমেও না।’ 

নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরও জানান, শামীমকে নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনে বেশ প্রশস্ত একটা খালি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর সামনেই কলাপসিবল গেট।

তিনি বলেন, শামীম প্রক্টরের কক্ষে থাকলে মারধর হয়তো কিছুটা কম হত। কিন্তু প্রক্টরের কক্ষের বাইরে নেওয়ায় ব্যাপক পিটুনির সুযোগ মেলে। তাঁকে বড় ডাল, গজার গাছের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।

সুদীপ্ত শাহীন বলেন, শামীমকে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রক্টর অফিস) সোহেলের কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে ছাত্ররা তুলে নিয়ে এসেছে। তাঁকে প্রথম দফা মারধর করা হয় প্রান্তিকে। এরপর দ্বিতীয় দফা মারধর করা হয় ওই কক্ষ থেকে বের করে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনে । তখন আহসান লাবিব তাঁকে বের করে নিয়ে চলে যান। 

প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সময় সুদীপ্ত শাহীন যখন প্রক্টরের কক্ষ থেকে উঠে বের হতে চান তখন লাবিব তাঁকে বলেন, ‘এই মিয়া আপনি কই যান, বেশি বাড়িয়েন না। আমরা আছি বলেই চাকরি করতে পারছেন। না হলে আপনিও মামলার আসামি হতেন।’

এরপর লাবিব সেখান থেকে চলে গেলে সুদীপ্ত শাহীন প্রক্টরকে কিছু করার তাগাদা দেন। তখন প্রক্টর বলেন, ‘যেহেতু মব (অনেক মানুষ) বা ছেলেপেলে যা চায় এখন আর কী করবা!’ এসময় শামীমকে তৃতীয় দফা মারধর করা হয়। 

সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘এরপর শামীমকে ওই জায়গায় রেখে তালা মেরে রাখা হয়। এসময় লাবিব ভবনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ঘুষি মারতে থাকে। তখন প্রক্টর স্যার সামনেই ছিল। গার্ডের পকেট থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে আরেক দফা পিটায়।’ 

কেন এতবার শামীমকে মারা হলো এমন প্রশ্নে শাহীন বলেন, ‘যে শুনেছে, সে–ই শামীম মোল্লাকে মারার জন্য এসেছে।’

নিরাপত্তা শাখার কার্যালয়ের ভিডিও ফুটেজ থেকে আরও পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন— সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া, রাজু আহমেদ, রাজন হাসান, হামিদুল্লাহ সালমান এবং এম এন সোহাগ। সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া ৩৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া রাজু আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও রাজন হাসান একই বিভাগের ৪৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী, হামিদুল্লাহ সালমান ইংরেজি ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও এমএন সোহাগ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

বারবার কেন লাবিবের কথা বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নে শাহীন বলেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগরে চাকরিতে এসে ছাত্রদলকে (ক্ষমতায়) পাননি। তাই তাঁদের কাউকেই ওইভাবে চেনেন না। তবে লাবিবের সঙ্গে যেহেতু একবার কথাকাটাকাটি হয়েছে, সেহেতু লাবিবকে তাঁর মনে আছে।

শাহীন বলেন, ‘লাবিব প্রান্তিক গেট থেকে সাঈদ হোসেন ভূঁইয়াকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসে।’

পানি খেতে চাওয়ার বিষয়ে শাহীন বলেন, ‘যখন শেষবার মারধরের সময় শামীম পানি খেতে চেয়েছিল তখন আমি বলেছিলাম তাকে একবারে অনেক পানি দিলে সমস্যা হবে। একটা হাফ লিটার ঠান্ডা পানির বোতল থেকে অল্প অল্প করে দিতে হবে। তখন শামীমকে পানির বোতল দিতে গেলে লাবিব সেটি আমার হাত থেকে নিয়ে ফেলে দেয়।’

প্রান্তিক গেটে মারধরের পর যখন শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা অফিসে আনা হয় তখন সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া সেখানে ছিলেন। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া উপাচার্যের সঙ্গেও দেখা করেন। ‘শামীমকে মেরে ক্লান্ত’, এ কথা উপাচার্যকে জানান সাঈদ হোসেন। উপাচার্যের কক্ষে থাকা গ্লাস থেকে পানিও খান। সে সময় সেখানে সাংবাদিকসহ অন্যরাও ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাঈদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় প্রক্টর অফিসে উপাচার্য এসেছেন, এটি শুনে সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। ‘শামীমকে মেরে ক্লান্ত’ এমন কোনো কথা তিনি উপাচার্যকে বলেননি। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেই তিনি বেরিয়ে যান। আর শামীমকে মারধরের সময় ছাত্রদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন।

শামীমকে থানায় নেওয়া হয়নি 
আজকের পত্রিকার কাছে শামীম মোল্লার ডেথ সার্টিফিকেটের কপি এসেছে, সেখানে দেখা গেছে, শামীম মোল্লা রাত ৯টায় মারা যান। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়নি। সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘শামীম মোল্লা শুধু একবার উঠে দাঁড়াতে পেরেছিল। তখন তাকে ধরে গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িতে উঠেই সে সিটের ওপর পড়ে যায়। গাড়িতে ওঠানোর সময়েও তাকে মারধর করা হচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠানো হয়। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যেতে সময় লাগবে আর কত! ৯টার পরেই তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। এখানে থানা বা অন্য কোথাও তাকে নেওয়ায় সুযোগ ছিল না।’

আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, ওই দিন দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে শামীম মোল্লা পুলিশ ভ্যানে ওঠেন। তখনও পেছন থেকে তাঁকে  ধাক্কা ও কিল ঘুষি মারা হচ্ছিল; গাড়িতে উঠেই তিনি পড়ে যান। তখন পুলিশ ধারণা করে, গাড়িতেই শামীম হয়তো মারা যাবে। পুলিশের গাড়ি সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যায়। শামীম মোল্লা গাড়িতে থাকা পুলিশের কাঁধে এলিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর পালস পাওয়া যায়নি। এরপর ইসিজি করা হয়। 

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রান্তিক গেট থেকে শামীম মোল্লাকে নিয়ে আসার পরে আমরা তাঁকে নিরাপত্তা অফিসে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে আটকে রাখি ৷ এসময় কলাপসিবল গেট ভেঙে কিছু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে মারধর শুরু করে। এ ঘটনা দেখে আমি এবং আমার টিম দৌড়ে যাই এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াই। এতে কিছু শিক্ষার্থী নিবৃত্ত হয়।’ 

তখন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কী করছিলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, ‘তারা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে তারাও ব্যর্থ হয়।’

প্রক্টরের উপস্থিতিতে এরকম পিটুনি ঠেকানো গেল না কেন, শামীমকে তৃতীয় দফা মারা হয় এবং সেক্ষেত্রে কোনো অবহেলা আছে কিনা— এমন প্রসঙ্গ তুললে প্রক্টর বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষার্থীদের বলেছি, আমার সামনে তোমরা এটা করতে পার না। এমনকি আমি তাদের সামনে ঢাল হয়েও দাঁড়িয়েছি। এতে কিছু শিক্ষার্থী আমার কথা শুনলেও অনেকে না শুনে মারধর করেছে। আমাদের কয়েকজনের পক্ষে এতজন শিক্ষার্থীকে আটকানো সম্ভব ছিল না।’

[এই প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জাবি সংবাদদাতা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে নতুন ভোটারদের নিয়ে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চাঁদপুরে শতাধিক নতুন ভোটারের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁদপুর জেলা কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিয়া। নতুন ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। সুজনের সহযোগিতায় এই আয়োজন অবশ্যই অংশগ্রহণকারীদের অনেক সমৃদ্ধ করবে এবং সচেতন নাগরিক তৈরি হবে।’

পরে কলেজের অডিটরিয়ামে ৫০টি এমসিকিউ পদ্ধতির প্রশ্নের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজন জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়।

পরীক্ষা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ও বিজয়ীদের হাতে সনদ তুলে দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন।

সুজন চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রহিব বাদশা, শিক্ষক ওমর ফারুক, সংগঠক সালাউদ্দিন, কর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সাংবাদিক আলম পলাশ, জাকির হোসেন, শোভন আল-ইমরান, মোরশেদ আলম রোকন, মো. মাসুদ আলম, শরীফুল ইসলামসহ সুজন জেলা কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত