Ajker Patrika

নির্মম হত্যার শিকার শামীম মোল্লার সঙ্গে জাবির নিরাপত্তা কার্যালয়ে সেদিন কী ঘটেছিল

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩: ২১
নির্মম হত্যার শিকার শামীম মোল্লার সঙ্গে জাবির নিরাপত্তা কার্যালয়ে সেদিন কী ঘটেছিল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধরের একপর্যায়ে তিনি পানি খেতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁকে মারধরকারীরা পানি খেতে দেয়নি। নিরাপত্তা কর্মকর্তা পানির বোতল দিতে গেলে তাঁর হাত থেকে বোতল ফেলে দেওয়া হয়। 

গত বুধবার বিকেলে শামীম মোল্লাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা গেটে (প্রান্তিক গেট) পেটানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তার অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও কয়েক দফা মারধর করে শামীমকে রাত ৮টার কিছু পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাত ৯টায় শামীম সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, হাসপাতালে তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। 

শামীম মোল্লাকে মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ৮ জন শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে; আটজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কেউ এখনও গ্রেপ্তার হননি। 

আজকের পত্রিকার হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রান্তিক গেটে লাঠি হাতে শামীমকে মেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব। এসময় লাথি দিতে দেখা যায় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিককে। আহসান লাবিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক। গতকাল তাঁকে এ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যখন সবাইকে আটকাতে যাব, তখন আমাকে আহসান লাবিব আটকে রাখে। শামীম যখন পানি খেতে চায়, তখন আমি তাকে পানি দিতে গেলে আমার হাত থেকে পানির বোতল ফেলে দেওয়া হয়।’ 

এর আগে ফেসবুকে আহসান লাবিব গতকাল একটি পোস্ট করেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। তবে সেই পোস্ট পরে তিনি সরিয়ে নেন। সেখানেও সুদীপ্ত শাহীন মন্তব্যের ঘরে লেখেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, শামীমকে তার শেষ চাওয়া পানিটুকু দিতে দেয়নি এই ছেলে। সে যে ধমক আমাকে দিছে গতকাল, তা আমার চাকরি জীবনে কেউ দেয়নি। বেশি না, আমি তার ২৩ ব্যাচ সিনিয়র!’ 

সুদীপ্ত শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওখানে যখন আমি যাই, তখন ওকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ওদিকে মার হচ্ছে আর বীভৎস চিৎকার। এদিকে সবাই প্রক্টর রুমে বসে চিৎকার শুনতেছে; তারা বের হচ্ছে না।’ 

সুদীপ্ত বলেন, তিনি প্রক্টরকে বলেছিলেন, ছেলেটা মরে যাবে। সে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রাখে। তখন প্রক্টর তাঁকে বলেন, ‘ছেলেপেলে তাকে এখানে থেকে নিয়ে গেছে’। তখন সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘শামীমকে প্রক্টর রুমে রাখতে হবে। নিরাপত্তা কর্মকর্তার রুমেও না।’ 

নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরও জানান, শামীমকে নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনে বেশ প্রশস্ত একটা খালি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর সামনেই কলাপসিবল গেট।

তিনি বলেন, শামীম প্রক্টরের কক্ষে থাকলে মারধর হয়তো কিছুটা কম হত। কিন্তু প্রক্টরের কক্ষের বাইরে নেওয়ায় ব্যাপক পিটুনির সুযোগ মেলে। তাঁকে বড় ডাল, গজার গাছের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।

সুদীপ্ত শাহীন বলেন, শামীমকে সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রক্টর অফিস) সোহেলের কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে ছাত্ররা তুলে নিয়ে এসেছে। তাঁকে প্রথম দফা মারধর করা হয় প্রান্তিকে। এরপর দ্বিতীয় দফা মারধর করা হয় ওই কক্ষ থেকে বের করে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষের সামনে । তখন আহসান লাবিব তাঁকে বের করে নিয়ে চলে যান। 

প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সময় সুদীপ্ত শাহীন যখন প্রক্টরের কক্ষ থেকে উঠে বের হতে চান তখন লাবিব তাঁকে বলেন, ‘এই মিয়া আপনি কই যান, বেশি বাড়িয়েন না। আমরা আছি বলেই চাকরি করতে পারছেন। না হলে আপনিও মামলার আসামি হতেন।’

এরপর লাবিব সেখান থেকে চলে গেলে সুদীপ্ত শাহীন প্রক্টরকে কিছু করার তাগাদা দেন। তখন প্রক্টর বলেন, ‘যেহেতু মব (অনেক মানুষ) বা ছেলেপেলে যা চায় এখন আর কী করবা!’ এসময় শামীমকে তৃতীয় দফা মারধর করা হয়। 

সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘এরপর শামীমকে ওই জায়গায় রেখে তালা মেরে রাখা হয়। এসময় লাবিব ভবনের নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ঘুষি মারতে থাকে। তখন প্রক্টর স্যার সামনেই ছিল। গার্ডের পকেট থেকে চাবি নিয়ে তালা খুলে আরেক দফা পিটায়।’ 

কেন এতবার শামীমকে মারা হলো এমন প্রশ্নে শাহীন বলেন, ‘যে শুনেছে, সে–ই শামীম মোল্লাকে মারার জন্য এসেছে।’

নিরাপত্তা শাখার কার্যালয়ের ভিডিও ফুটেজ থেকে আরও পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন— সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া, রাজু আহমেদ, রাজন হাসান, হামিদুল্লাহ সালমান এবং এম এন সোহাগ। সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া ৩৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া রাজু আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও রাজন হাসান একই বিভাগের ৪৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী, হামিদুল্লাহ সালমান ইংরেজি ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও এমএন সোহাগ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

বারবার কেন লাবিবের কথা বলা হচ্ছে এমন প্রশ্নে শাহীন বলেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগরে চাকরিতে এসে ছাত্রদলকে (ক্ষমতায়) পাননি। তাই তাঁদের কাউকেই ওইভাবে চেনেন না। তবে লাবিবের সঙ্গে যেহেতু একবার কথাকাটাকাটি হয়েছে, সেহেতু লাবিবকে তাঁর মনে আছে।

শাহীন বলেন, ‘লাবিব প্রান্তিক গেট থেকে সাঈদ হোসেন ভূঁইয়াকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসে।’

পানি খেতে চাওয়ার বিষয়ে শাহীন বলেন, ‘যখন শেষবার মারধরের সময় শামীম পানি খেতে চেয়েছিল তখন আমি বলেছিলাম তাকে একবারে অনেক পানি দিলে সমস্যা হবে। একটা হাফ লিটার ঠান্ডা পানির বোতল থেকে অল্প অল্প করে দিতে হবে। তখন শামীমকে পানির বোতল দিতে গেলে লাবিব সেটি আমার হাত থেকে নিয়ে ফেলে দেয়।’

প্রান্তিক গেটে মারধরের পর যখন শামীম মোল্লাকে নিরাপত্তা অফিসে আনা হয় তখন সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া সেখানে ছিলেন। ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া উপাচার্যের সঙ্গেও দেখা করেন। ‘শামীমকে মেরে ক্লান্ত’, এ কথা উপাচার্যকে জানান সাঈদ হোসেন। উপাচার্যের কক্ষে থাকা গ্লাস থেকে পানিও খান। সে সময় সেখানে সাংবাদিকসহ অন্যরাও ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাঈদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই সময় প্রক্টর অফিসে উপাচার্য এসেছেন, এটি শুনে সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। ‘শামীমকে মেরে ক্লান্ত’ এমন কোনো কথা তিনি উপাচার্যকে বলেননি। সৌজন্য সাক্ষাৎ করেই তিনি বেরিয়ে যান। আর শামীমকে মারধরের সময় ছাত্রদের ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন।

শামীমকে থানায় নেওয়া হয়নি 
আজকের পত্রিকার কাছে শামীম মোল্লার ডেথ সার্টিফিকেটের কপি এসেছে, সেখানে দেখা গেছে, শামীম মোল্লা রাত ৯টায় মারা যান। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়নি। সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

সুদীপ্ত শাহীন বলেন, ‘শামীম মোল্লা শুধু একবার উঠে দাঁড়াতে পেরেছিল। তখন তাকে ধরে গাড়িতে তোলা হয়। গাড়িতে উঠেই সে সিটের ওপর পড়ে যায়। গাড়িতে ওঠানোর সময়েও তাকে মারধর করা হচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠানো হয়। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যেতে সময় লাগবে আর কত! ৯টার পরেই তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। এখানে থানা বা অন্য কোথাও তাকে নেওয়ায় সুযোগ ছিল না।’

আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, ওই দিন দুই পুলিশের কাঁধে ভর দিয়ে শামীম মোল্লা পুলিশ ভ্যানে ওঠেন। তখনও পেছন থেকে তাঁকে  ধাক্কা ও কিল ঘুষি মারা হচ্ছিল; গাড়িতে উঠেই তিনি পড়ে যান। তখন পুলিশ ধারণা করে, গাড়িতেই শামীম হয়তো মারা যাবে। পুলিশের গাড়ি সরাসরি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যায়। শামীম মোল্লা গাড়িতে থাকা পুলিশের কাঁধে এলিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর পালস পাওয়া যায়নি। এরপর ইসিজি করা হয়। 

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রান্তিক গেট থেকে শামীম মোল্লাকে নিয়ে আসার পরে আমরা তাঁকে নিরাপত্তা অফিসে কলাপসিবল গেটে তালা মেরে আটকে রাখি ৷ এসময় কলাপসিবল গেট ভেঙে কিছু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী শামীম মোল্লাকে মারধর শুরু করে। এ ঘটনা দেখে আমি এবং আমার টিম দৌড়ে যাই এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াই। এতে কিছু শিক্ষার্থী নিবৃত্ত হয়।’ 

তখন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কী করছিলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, ‘তারা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে তারাও ব্যর্থ হয়।’

প্রক্টরের উপস্থিতিতে এরকম পিটুনি ঠেকানো গেল না কেন, শামীমকে তৃতীয় দফা মারা হয় এবং সেক্ষেত্রে কোনো অবহেলা আছে কিনা— এমন প্রসঙ্গ তুললে প্রক্টর বলেন, ‘আমি আমার শিক্ষার্থীদের বলেছি, আমার সামনে তোমরা এটা করতে পার না। এমনকি আমি তাদের সামনে ঢাল হয়েও দাঁড়িয়েছি। এতে কিছু শিক্ষার্থী আমার কথা শুনলেও অনেকে না শুনে মারধর করেছে। আমাদের কয়েকজনের পক্ষে এতজন শিক্ষার্থীকে আটকানো সম্ভব ছিল না।’

[এই প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জাবি সংবাদদাতা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে পঞ্চগড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা

বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝড়ছে পঞ্চগড়ে। উত্তরাঞ্চলের এই জেলায় ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক ও জনপথ। কুয়াশার কারণে দৃশ্যময়তা কমে যাওয়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এর প্রভাব পড়েছে জেলার হাসপাতালগুলোতেও। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি। ওই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাত—দুই সময়েই শীত অনুভূত হচ্ছে প্রায় সমানভাবে।

ঘন কুয়াশার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালকেরা। মোটরসাইকেল চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত কুয়াশায় রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। খুব সাবধানে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত আসলেই আমাদের এই সমস্যা হয়, ঘন কুয়াশায় সামনে কিছু বোঝা যায় না।’

আরেক মোটরসাইকেল চালক আব্দুল মালেক জানান, কুয়াশা এত বেশি যে হেডলাইট জ্বালিয়েও রাস্তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। সামান্য অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

টানা কুয়াশা ও কনকনে শীতে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সকালে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। অটোরিকশা চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, শীতের কারণে লোকজন বাইরে বের হয় না। যাত্রী নাই, ভাড়াও নাই। খুব কষ্টে আছি, কিন্তু বের না হয়েও পারি না, সংসার চালাতে হবে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজ সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এসব শীতবস্ত্র প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বনজীবী-রক্ষীরা চিকিৎসাবঞ্চিত

  • গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা লাগে
  • জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার সন্ধানে বনে যান
  • চিকিৎসাসেবা ও জীবনরক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে এসব বনজীবী জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে মহাজনেরা সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি বনরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জ ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোম মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম থাকায় প্রায় বছরজুড়ে জীবিকার টানে ছুটে আসে জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। এ সময় বিশুদ্ধ পানি ও সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া বাঘ, কুমির, বিষধর সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ হয় প্রতিনিয়ত।

সূত্র আরও জানায়, মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এ স্থানে কোনোভাবে আক্রান্ত হলে বনজীবীদের গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। যার কারণে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে বনজীবীদের পথে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণির কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। কিন্তু সেটা শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করে। কিন্তু ১৫ বছর পার হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

১৯ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে অন্তত ৩০ জেলের সঙ্গে কথা বলেন। মঠবাড়িয়ার সেলিম পাটোয়ারী, পাইকগাছার আলমগীর হোসেন, মোংলার নজরুল ইসলামসহ একাধিক জেলে জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে ৫-৬টি ফার্মেসি আছে। তবে কোনো চিকিৎসক নেই। জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও সচরাচর মেলে না। তাঁরা বলেন, ‘এসব জায়গায় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা হাত-পা কেটে গেলে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।’

শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর ইলিশ মৌসুম, শুঁটকি মৌসুম, গোলপাতা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের চিকিৎসার জন্য সরকার বা বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে কেউ তা বলতে পারে না।’

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। যার কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি বা আদৌ হবে কি না, সংশ্লিষ্টরা সেই বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো কিছু বলতে পারছে না।’

সুন্দরবন রক্ষায় যাঁরা কর্মরত সেসব বনরক্ষীর চিকিৎসার জন্যও একই রকম সমস্যা দেখা যায়। করমজল বন্য প্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনে জলে কুমির ডাঙায় বাঘসহ বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ফলে বন্য প্রাণীর আক্রমণে কেউ আহতে হলে চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের লোকালয় অথবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বনের অনেক দূরবর্তী ও দুর্গম স্থান রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারে বা নৌকা করে লোকালয়ে আসতে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে। সুন্দরবনে যদি রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে সবার জন্য খুবই উপকার হতো। একই সঙ্গে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুবই উপকৃত হতাম।’

এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয় সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ

করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। দুই বছর আগে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবেন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজ করছেন। যদিও সেটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় এবং বনজীবী ও বনকর্মীদের সংখ্যার তুলনায় সেটা খুবই অপ্রতুল। তবে সুন্দবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থার জন্য আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের অর্থায়নে ২০২৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী: পানিনিষ্কাশন সংকট, চরম ক্ষতির মুখে চাষিরা

  • ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে
  • কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন, কোথাও দূষিত পানিতে ভোগান্তি
মো. মাসুম, টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) 
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৮
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল বিলের অনেক জমিতে আলু রোপণ ব্যহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল বিলের অনেক জমিতে আলু রোপণ ব্যহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে কৃষিজমিতে পানি জমে থাকায় সময়মতো আলু রোপণসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে খালগুলোতে পানি জমে থাকলেও তা সঠিকভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমি দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকে। এতে আলু, শাকসবজি ও অন্যান্য রবিশস্য চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সময়মতো রোপণ করতে না পারায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে এবং অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। খাল দখল ও দূষণের কারণে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থার অবনতি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, বরং আলু চাষসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনেও বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। দ্রুত সমাধানের আশায় দিন গুনছেন এলাকার কৃষকেরা।

কৃষক মো. বিপ্লব আলম বলেন, ‘আড়িয়ল বিলের অনেক জমি এখনো পানিতে ভেজা রয়েছে। ফলে আলু রোপণ সম্ভব হচ্ছে না।’

টঙ্গিবাড়ী খাল রক্ষা পরিষদের সদস্য মো. অনিক শেখ বলেন, বিভিন্ন স্থানে খালের মুখগুলো মূলত সড়ক নির্মাণ ও অবৈধ দখলের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এখানে যদি অন্তত স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়, তাহলে পানিনিষ্কাশন অনেকটা সচল হয়ে উঠবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃতীশ চন্দ্র পাল বলেন, আড়িয়ল ইউনিয়নে আবাদ অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম। বিভিন্ন স্থানে খালের মুখ বন্ধ ও দখল হয়ে থাকায় পানিনিষ্কাশনে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে ওই এলাকায় চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মুন্সিগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া মমতাজকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের শতভাগ বই এলেও সংকট মাধ্যমিকে

  • জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২২ লাখ ৭ হাজার
  • সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি
  • মাধ্যমিকের সব বই না আসায় এ বছরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা শিক্ষকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৯
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি বই। এরই মধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বইগুলো স্কুলে স্কুলে পাঠানো শুরু হয়েছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলো উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বই আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।

গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন-চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত