Ajker Patrika

তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ, বছর জুড়েই আলোচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ, বছর জুড়েই আলোচনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২১। দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২২। ২০২১ সালে বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে আলোচনায় এসেছে জেলাটি। এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম।

বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া
গত ৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের দামচাইল বাজারে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে দু'দফা মারামারি হয়। ওই ঘটনায় চারজন আহত হন। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থান পায়।

গত ৯ জুলাই কোপা আমেরিকার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে। যেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দূরত্ব প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার। অথচ ওই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে থাকতে হয় সতর্ক অবস্থানে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করার পাশাপাশি ফাইনাল খেলার দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।

গরু রাখা নিয়ে মারামারি
গত ১৭ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় পশুর হাটে গরু রাখার জায়গা নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে এক ব্যক্তি নিহত হন। কসবা উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে অস্থায়ী পশুর হাট বসে। ওই হাটে গরু রাখার জায়গা নিয়ে শ্যামবাড়ি গ্রামের শাহ আলম ও আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী মান্দারপুর গ্রামের মাহবুব ও বায়েজিদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।

পারিবারিক বিরোধের জেরে খুন
গত ২০ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ছোট দুই ভাইয়ের বল্লমের আঘাতে নিহত হন বড় ভাই। ছোট দুই ভাই সহেদ মিয়া ও আবদুল্লাহ মিয়া আজ ঈদ করতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। বড় ভাই আবদুর রহমানের সঙ্গে বসতভিটা নিয়ে মারামারি শুরু হয়। একপর্যায়ে আবদুর রহমানকে বল্লম দিয়ে আঘাত করেন সহেদ ও আবদুল্লাহ।

পানিপথে টেটা যুদ্ধ
গত ২১ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর এবং ফতেপুর গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নৌকা থেকে একে অপরের দিকে বর্শা, বল্লম ও ঢিল ছোড়েন। ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।

‘ঘরজামাই’ ডাকা নিয়ে সংঘর্ষ
গত ১ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের আটলা গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন আহত হন।

জেলার সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের আটলা গ্রামের আমির হকের ছেলে সোহাগ মিয়া ওই এলাকার ফজলুর রহমানে মেয়ের জামাই খুরশিদ মিয়াকে ‘ঘরজামাই’ বলে ডাকেন। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে খুরশিদকে মারধর করেন সোহাগ মিয়া। পরে বাজারের সালিস বৈঠকে সোহাগ ও খুরশিদ মিয়াকে মিলিয়ে দেওয়া হয়। পরে দুই গ্রুপ এলাকায় গিয়ে মারামারিতে জড়ায়।

ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সংঘর্ষ
গত ৮ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ফেসবুকের এক পোস্টকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন।

চুলার ধোঁয়া নিয়ে সংঘর্ষ
গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কুণ্ডা ইউনিয়নে চুলার ধোঁয়া নিয়ে দু'দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ২০ জন আহত হন। 

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে রুপালী বেগম চুলায় রান্না করছিল। সে সময় চুলার ধোঁয়া যেন পার্শ্ববর্তী বাবর আলীর বাড়িতে না যায় সে বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরের দিন ৯ সেপ্টেম্বর সকালে রুপালীর বাবার বাড়িতেও অতর্কিত হামলা করা হয়। এ সময় গ্রামের লোকজন দুই পক্ষকে সমর্থন করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।    

কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষ
গত ৩১ অক্টোবর স্থানীয় বড় ভাইদের ছত্রচ্ছায়া আর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা শহরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় গেটের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সকাল ৯টার দিকে রুপালীর বাবার বাড়িতেও অতর্কিত হামলা করেন বাবর আলীর লোকজন। এ সময় গ্রামের লোকজন দুই পক্ষকে সমর্থন করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

দরুদ পড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ
গত ৩ ডিসেম্বর মুয়াজ্জিন আজান দেওয়ার আগে মাইকে দরুদ শরিফ পাঠ করাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌর এলাকার ভাদুঘর খাদেম বাড়ি এলাকার খাদেমপাড়া নুর জামে মসজিদে দু'পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহেলাতুল সুন্নাতুল জামাত (সুন্নি) ও হেফাজতে ইসলাম (ওয়াহাবি) পন্থীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন ১০ জন।

পৌর এলাকার ভাদুঘর খাদেম বাড়ির জামে মসজিদে ওয়াহাবি পন্থী সোহেল, জুম্মার নামাজের আজানের আগে মুয়াজ্জিনকে দরুদ শরিফ পাঠ করতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি শুরু হয় এবং একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়।

নবীনগরে জোড়া খুন
গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদুল হক ও তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলচালক বাদল সরকারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় অপর ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৫ জনকে আসামি করে নবীনগর থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই মো. আখতারুজ্জামান। 

পুলিশ ওই ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম রাব্বিসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ও আদালতের কাছে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে বিস্তারিত জবানবন্দি দেন রাব্বি। 

জানা গেছে, টাকা নিয়ে আপস না করার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটনা হয়েছে।

তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ ছাড়াও আরও বেশ কিছু ঘটনা আলোচনায় ছিল। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য, হেফাজতের ভাঙচুর ও বিজয়নগরে নৌকাডুবি।

হেফাজতের ভাঙচুর
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ভাঙচুর চালায় হেফাজত। সরকারি-বেসরকারি অন্তত ৫৮ স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হেফাজতে হামলায় স্টেশনের সিগন্যাল সিস্টেম পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। গত ২৭ মার্চ থেকে এই স্টেশনে সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস বন্ধ থাকার পর স্টেশনটি নতুন করে মেরামত শেষে গত ১৪ নভেম্বর থেকে পুরোপুরি সচল হয়।

বিজয়নগরে নৌকাডুবি
গত ২৭ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইসকা বিলে শতাধিক যাত্রীবোঝাই ইঞ্জিনচালিত নৌকার সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা দুটি বালুবোঝাই বাল্কহেডের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাণ হারান ২৩ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফকিরহাটে ভৈরব নদ: খননেও মেলেনি সুফল বাধা ওয়াসার পাইপ

  • ২০২০ সালে নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পাউবো।
  • পাঁচ বছরের মধ্যে নদটির বিভিন্ন অংশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ খননের পরও সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। উপজেলার ফকিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকা দিয়ে নেওয়া খুলনা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে নৌচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দেখা দিয়েছে মারাত্মক নাব্যতাসংকট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফকিরহাট বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের একটি সেতুর নিচে ভৈরব নদের মাঝ বরাবর বড় পানির পাইপ রয়েছে। পাইপটি রক্ষায় নদীর ভেতর আড়াআড়িভাবে লোহার খাম্বা বসিয়ে বেড়া দেওয়ায় নদীটিতে বাঁধ তৈরি হয়েছে। ফলে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে নদীগর্ভে দ্রুত পলি জমছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌচলাচল।

স্থানীয়রা বলেন, ফকিরহাট, মোল্লাহাট এবং আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নৌপথ সচল রাখতে ২০২০ সালে ভৈরব নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে খননের সুফল কাজে আসেনি। মোল্লাহাটের মধুমতী নদী থেকে খুলনা শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় ফকিরহাট এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

ফকিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মুকুন্দ পাল বলেন, নৌচলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। নৌপথ চালু থাকলে খুলনা, মোংলা বন্দর, বাগেরহাট ও বরিশালের সঙ্গে স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহন সম্ভব হতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, ওয়াসার পাইপটি ফকিরহাটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান সিদ্দিক বলেন, ওই স্থানে পাইপলাইনের মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি চীন থেকে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যন্ত্রপাতি এলে পাইপলাইনটি নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিচার পেতে জীবনের ঝুঁকি

মো. হোসাইন আলী কাজী
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনের আশ্রয় নিতে এসে ভয় নিয়ে ঢুকতে হচ্ছে আদালতে। অর্ধশত বছরের পুরোনো দুটি পরিত্যক্ত ভবনের মাঝ দিয়েই বরগুনার আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল প্রবেশপথ। জরাজীর্ণ ভবন দুটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীরা ওই পথ ব্যবহার করছেন। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ভবন দুটি দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণের জন্য দুটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করে। প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা প্রশাসন ভবন দুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেগুলো অপসারণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পরিত্যক্ত ওই ভবন দুটির মাঝখান দিয়েই আদালতের প্রধান প্রবেশদ্বার নির্মিত। প্রতিদিন বিচারকাজে অংশ নিতে হাজারো মানুষ ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচ দিয়ে আদালতে যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের দাবি, ভবন দুটি এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এতে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।

গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবন দুটির বিভিন্ন অংশ থেকে ইট, পাথর ও বিম খসে পড়ছে। দেয়ালজুড়ে জন্মেছে পরগাছা। ভেতরের অবস্থা এমন যে দিনের বেলায়ও সেখানে ঢুকতে ভয় পান মানুষ। ভবন দুটি ভুতুড়ে অবস্থায় পরিণত হওয়ায় আদালত প্রাঙ্গণের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

বিচারপ্রার্থী আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘আদালতের সামনে এভাবে দুটি পরিত্যক্ত ভবন থাকা যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনি তা আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা প্রয়োজন।’

আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. আবুবকর বলেন, আদালতের প্রবেশপথের দুই পাশে পরিত্যক্ত দুটি ভবন পড়ে আছে। ভবন ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

জেলা বার সদস্য ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা জরুরি।

জানতে চাইলে আমতলী উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভবন দুটি বহু আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন এখনো সেগুলো অপসারণ করা হয়নি, তা আমারও বোধগম্য নয়।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপসারণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত