Ajker Patrika

ছয় বছরে শতকোটির মালিক জনস্বাস্থ্যের ড্রাফটম্যান শাহিন

  • শাহিনের নামে ঢাকা ও কুমিল্লায় ১০ কোটি টাকার জমি।
  • ঢাকা-কক্সবাজার পথে চলছে ৮টি বিলাসবহুল স্লিপার কোচ।
  • বেনামি লাইসেন্সে করেন ঠিকাদারি ব্যবসা।
মো. আখতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১০: ১১
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ড্রাফটম্যান শাহিন আলমের বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি। সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের শুভপুর ইউনিয়নের তেলিহাটি গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ড্রাফটম্যান শাহিন আলমের বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি। সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের শুভপুর ইউনিয়নের তেলিহাটি গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শাহিন আলম। বয়স ৩২ বছর। ফেনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ড্রাফটম্যান। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে চাকরিতে যোগ দেন ২১,৪৭০ টাকা বেতন স্কেলে। এই চাকরি যেন শাহিনের জন্য আলাদিনের চেরাগ হিসেবে এসেছে। এরপর ৬ বছরে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি করে এই কয়েক বছরে শাহিন বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। এসব অভিযোগে এই ছয় বছরে তাঁকে অন্তত ছয় দফায় ছয় জেলায় বদলি করা হয়। এ ছাড়া বেনামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে তিনি জনস্বাস্থ্যের কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

শাহিন আলম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের শুভপুর ইউনিয়নের তেলিহাটি গ্রামের জয়নাল আবেদীন ও রাবেয়া দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। গত ২৪ মে শাহিন আলমের তেলিহাটি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জয়নাল আবেদীন স্থানীয় কাদৈর বাজারে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ফসলি কোনো জমি ছিল না তাঁদের। শাহিন আলম ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। ২০১৮ সালে শাহিন আলম তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সুপারিশে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্রাফটম্যান হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। শাহিন আলমের বড় ভাই রফিক ও ছোট ভাই সোহেল রানা সৌদিপ্রবাসী ছিলেন।

শাহিন আলম প্রথম সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরে। চাকরি হওয়ার দু-এক বছরের মাথায় তিনি ৬ শতক জমিন কিনে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেন। বরুড়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগের মুখে শাহিনকে ২০১৯ সালের মার্চে জেলার লাকসাম উপজেলায় বদলি করা হয়। তারপর তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতি যেন বেড়ে যায়। একই গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগদানের পর শাহিন হঠাৎ কোটিপতি হয়ে যান। নিয়মিত অফিসে যান না তিনি। আর ঠিকাদারি ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করতে ছোট ভাইয়ের নামে রানা হাইটেক বিল্ডার্স ও এক নিকটাত্মীয়ের নামে শম্পা এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স তৈরি করেন। এই লাইসেন্সগুলো দিয়ে শাহিন কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নেন।

২৫ মে লাকসাম গিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ মার্চ শাহিন আলম এখানে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক এলজিইডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক আওয়ামী লীগ নেতা মোহব্বত আলীর সঙ্গে সিন্ডিকেট করে শুরু করেন নানা অনিয়ম। মোহব্বতের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ ভাগিয়ে নেন তিনি।

এ ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করেও মোহব্বত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর তিনি আত্মগোপন করেছেন বলে জানা গেছে।

লাকসাম জনস্বাস্থ্যের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শাহিন আলম এই কার্যালয় থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৬২টি গভীর নলকূপ স্থাপনে ভুয়া বিল-ভাউচার করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহের ৩৮টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গভীর নলকূপ না বসিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে আসায় শাহিন আলমকে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর শাস্তি হিসেবে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয় পঞ্চগড় জেলা কার্যালয়ে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শাহিন আলম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন ড্রাফটম্যান, যাকে বলা হয় নকশাকারক। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২১ সালে চৌদ্দগ্রামে ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকায় ১৯৭৫ মিটারের একটি ড্রেনের কাজ তিনি তৎকালীন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের প্রভাব খাটিয়ে ভাগিয়ে নেন। কাজগুলো নিম্নমানের হওয়ায় আমরা কয়েকবার বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিলের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করে কাজ শেষ না করেই পালিয়ে যান।’

শাহিন আলমের যত সম্পদ

শাহিন আলমের সম্পত্তির বেশ কিছু দলিলসহ প্রমাণাধি এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহিন ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ১৯৭২ নম্বর দলিলে শুভপুরের তেলিহাটি মৌজায় ১০ শতক জমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট একই মৌজায় ১৫৫৮ নম্বর দলিলে আরও ১০ শতক জমি কেনেন। যার মূল্য ৩০ লাখ টাকা। একই সালের একই তারিখে একই মৌজায় ১৫৫৫ নম্বর দলিলে ১৬ শতক জমি কেনেন। যার বাজারমূল্য ৪৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট জেলার চান্দিনা উপজেলার থানগাঁও মৌজায় ৭৩৭৫ নম্বর দলিলে ৯.৩৪ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ১ কোটি টাকার বেশি। চান্দিনা উপজেলার বেলাশর মৌজায় ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট দলিল নম্বর ৭৩৭৪ ও ৭৯৭৪-এর মাধ্যমে ২৫.১৪ অযুতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। স্থানীয় কাদৈর বাজারে আরও ৪০ শতক ভূমি ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া জেলা শহরের বাগিচাগাঁও এলাকায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ঢাকার খিলগাঁওয়ে তাঁর কোটি টাকা মূল্যের আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব সম্পত্তি শাহিন আলম নিজ নামে কিনেছেন।

আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শাহিন আলম ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ইফাদ মোটরস থেকে ৫টি বিলাসবহুল স্লিপার কোচ ক্রয় করেন। গাড়িগুলো বর্তমানে এশিয়ান ট্রান্সপোর্টের অধীনে ঢাকার আরামবাগ থেকে কক্সবাজার চলাচল করে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য ২ কোটি টাকারও বেশি। ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাড়িগুলো ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর রেজিস্ট্রেশন নম্বর পেয়ে সড়কে চলাচল শুরু করে।

এ ছাড়া অন্য ট্রান্সপোর্টের অধীনে আরও ৩টি স্লিপার কোচ রয়েছে শাহিনের। এগুলো ছোট ভাই সোহেল রানার নামে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য ১১টি ডাম্প ট্রাক রয়েছে; যার বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকা। ১৫ কোটি টাকার ১১টি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) রয়েছে। ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের টয়োটা প্রিমিও গাড়িতে চলাফেরা করেন শাহিন আলম। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে শাহিনের কয়েক কোটি টাকার এফডিআর করা রয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে দুবাইতেও তাঁর ব্যবসা রয়েছে।

শাহিন আলমের অবৈধ সম্পদের বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আরমান মিয়া নামের এক ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে হত্যাচেষ্টার একটি মামলার আসামি শাহিন আলম।

ফেনী জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল হক বলেন, শাহিন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বদলি হয়ে ফেনীতে ড্রাফটম্যান হিসেবে যোগ দেন। বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। সেই মামলার তদন্ত চলছে।

বিপুল সম্পদ ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে শাহিন আলমের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল ফোনে গত রোববার বিকেলে কল করা হয়। শাহিন এই প্রতিবেদককে কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। প্রতিবেদক শাহিনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, ‘আপনার মন যা চায় তা আমার বিরুদ্ধে লিখে দেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে নতুন ভোটারদের নিয়ে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চাঁদপুরে শতাধিক নতুন ভোটারের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁদপুর জেলা কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিয়া। নতুন ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। সুজনের সহযোগিতায় এই আয়োজন অবশ্যই অংশগ্রহণকারীদের অনেক সমৃদ্ধ করবে এবং সচেতন নাগরিক তৈরি হবে।’

পরে কলেজের অডিটরিয়ামে ৫০টি এমসিকিউ পদ্ধতির প্রশ্নের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজন জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়।

পরীক্ষা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ও বিজয়ীদের হাতে সনদ তুলে দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন।

সুজন চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রহিব বাদশা, শিক্ষক ওমর ফারুক, সংগঠক সালাউদ্দিন, কর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সাংবাদিক আলম পলাশ, জাকির হোসেন, শোভন আল-ইমরান, মোরশেদ আলম রোকন, মো. মাসুদ আলম, শরীফুল ইসলামসহ সুজন জেলা কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত