Ajker Patrika

সৌদি আরবে মৃত ভাইকে আনতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন ফটিকছড়ির দুই ভাই, বাড়িতে মর্মান্তিক দৃশ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও ফটিকছড়ি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৫১
রুবেলের পরিবারে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রুবেলের পরিবারে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ২০২৪ সালে সৌদি আরব পাড়ি দেন মোহাম্মদ রুবেল (২৭)। সেখানে দোকানমালিকের অনুমতি ছাড়া একটি বার্গার খাওয়ার অপরাধে শারীরিক নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রুবেল। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের ১৭ জুলাই রুবেল মারা যান। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে প্রায় এক বছর পর শনিবার তাঁর মরদেহ দেশে ফেরে।

ভাইয়ের লাশ আনতে ঢাকা বিমানবন্দরে যান রুবেলের বড় ভাই মোহাম্মদ বাবুল (৩৭) ও ফুফাতো ভাই মো. ওসমান গণি (৩৫)। বিকেলে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় পৌঁছালে সড়ক দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান মোহাম্মদ বাবুল ও ওসমান গণি। তাঁদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

সরেজমিন দেখা যায়, রুবেলের লাশ দেখার আগেই বাকরুদ্ধ মা আনোয়ারা বেগম। অ্যাম্বুলেন্স থেকে যখন নামানো হলো লাশের খাটিয়া, এগিয়ে এসে তিনি তা স্পর্শ করলেন। বুক চাপড়ে আহাজারি করে বললেন, ‘বাবা, তোমরা না তোমাদের বাবাকে দেখে রাখতে বলেছিলে? একবার কথা বল, শুধু একবার’—সন্তানদের উত্তর মেলে না। মিলবে কীভাবে? সন্তানেরা তো চিরঘুমে কফিনবন্দী।

শনিবার (৬ জুলাই) মধ্যরাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর এলাকার ছোট্ট গ্রাম তালুকদারপাড়ায় শত-সহস্র মানুষ এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেছে। নীরবে পানিতে ভেসে গেছে তাদের চোখ।

আনোয়ারা বেগমের ছয় সন্তান। তিন ছেলে আর তিন মেয়ে। মেজো ছেলে মোহাম্মদ রুবেল (২৭) গত বছর সৌদি আরবে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার তাঁর মরদেহ ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেই লাশ নিতে গিয়ে লাশ হয়েছেন আরও দুই ভাই!

নিহত ওসমান গণির ফুফাতো ভাই মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘মেজো ভাই রুবেলের লাশ নিয়ে আসার পথে অ্যাক্সিডেন্টে বড় ভাই বাবুলও মারা যান। এই কষ্ট আমরা কীভাবে সইব?’

নিহত রুবেল ও বাবুল তালুকদারপাড়ার ফুল মিয়ার ছেলে। ওসমান ওই এলাকা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে জয়নাল আবেদিনের ছেলে। ফুল মিয়াও অসুস্থ। দুই ছেলের মৃত্যু শোকে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদিকে, রুবেল ও বাবুলের আধা পাকা ঘরের একটি কক্ষে স্বজনদের নিয়ে একটু পরপর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মা আনোয়ারা বেগম। উপার্জনক্ষম দুই সন্তানকে হারিয়ে কীভাবে সংসারের হাল ধরবেন, কীভাবে অন্য সন্তানেরা মানুষ হবে, এটিই এখন আনোয়ারার সামনে বড় প্রশ্ন।

নিহত বাবুলের স্ত্রী সাহেদা আক্তার বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন। ছোট্ট দুই কন্যাসন্তানকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদছেন তিনি। সাহেদা আক্তার বলেন, ‘আমি এখন সন্তানদের কী জবাব দেব? কী নিয়ে বাঁচব? কে দেবে তাদের সান্ত্বনা?’

বাড়ির উঠানজুড়ে মানুষের কান্নার রোল। স্বজন হারানোর আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসছিল তখন। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা শোকাহত পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে ভিড় করেন।

স্থানীয় মসজিদের পাশের কবরস্থানে তিন ভাইয়ের দাফন সম্পন্ন হয়। ছবি: সংগৃহীত
স্থানীয় মসজিদের পাশের কবরস্থানে তিন ভাইয়ের দাফন সম্পন্ন হয়। ছবি: সংগৃহীত

১৭ বছর বয়সী রুবেলের ছোট বোন রুম্পা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাইয়েরাই ছিল আমাদের ভরসা। বাবা-মায়ের আশ্রয়স্থল। হে আল্লাহ আমাদের এ কী করলে তুমি, কেন করলে?’

ওসমান উপজেলার তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিলাপ করছেন স্ত্রী নুসরাত জাহান শিমা। দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে কীভাবে তিনি বাঁচবে—এ নিয়ে তাঁর উৎকণ্ঠা। শিমা বলেন, ‘দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট আগেও লাশ নিয়ে ফিরেছেন বলে কথা হয়। কিন্তু তিনি নিজেই ফিরলেন লাশ হয়ে।’

শনিবার মধ্যরাতে রুবেল আর বাবুলের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই আসে ওসমানকে বহনকারী লাশবাহী গাড়ি। এরপর তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় মসজিদের পাশের কবরস্থানে। সেখানে তাঁদের দাফন সম্পন্ন হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো গ্রাম যেন শোকের এক জনপদে রূপ নিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জয়া আহসানকে নিয়ে খেপেছেন তৃণমূল নেত্রী, টালিউডে বাংলাদেশিদের নিষিদ্ধের দাবি

এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কুৎসা, বরখাস্ত নিরাপত্তাপ্রহরী

অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে কঠোর মালয়েশিয়া, ফেরত পাঠাচ্ছে বিমানবন্দর থেকেই

এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে গোপালগঞ্জে পুলিশের গাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ

ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি ঐক্য, পাত্তা দিচ্ছে না বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত