Ajker Patrika

ডিপি ওয়ার্ল্ডের ২১ ভারতীয় কর্মকর্তা ঢুকলেন বন্দরে, চট্টগ্রামে উত্তেজনা

সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ১৩: ৫৬
নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)
নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ইজারা ইস্যু ঘিরে চট্টগ্রামে উত্তেজনা চরমে। দুবাইভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এনসিটির দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ ঘিরে শ্রমিকদের ক্ষোভ, রাজনৈতিক প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তা সংশয়—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল আকার নিয়েছে। সর্বশেষ এই উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ডিপি ওয়ার্ল্ডের ৩৪ জন কর্মকর্তার এনসিটিতে প্রবেশ, যার মধ্যে ২১ জনই ভারতীয় নাগরিক।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এনসিটির ইজারা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এখনো ‘গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট’ (জিটুজি) ভিত্তিতে প্রস্তাব বিবেচনার পর্যায়ে থাকলেও ডিপি ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তারা টার্মিনালের ভেতরে ঢুকে কার্যত পর্যবেক্ষণ ও ‘প্রাথমিক দখলদারি’র আচরণ শুরু করেছেন। এর ফলে শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা এবং চাকরি হারানোর আতঙ্ক।

‘ইজারা এখনো হয়নি, অথচ দখলদারি শুরু!’

শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, এনসিটির মতো একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হস্তান্তরের আগে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক উপস্থিতি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, “ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এখনো ইজারা দেওয়া হয়নি। অথচ তাদের কর্মকর্তারা বন্দরের ভেতরে ঘোরাফেরা করছেন। ভবিষ্যতে যাতে তাদের আর দেখা না যায়, আমরা সেই হুঁশিয়ারি দিচ্ছি।”

ডিপি ওয়ার্ল্ডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তানভীর হোসাইন গত ১৫ এপ্রিল বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানের কাছে গেটপাস চেয়ে আবেদন করেন। পরদিনই বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের এনসিটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এই প্রতিনিধি দলে ভারতীয় নাগরিক ছিলেন ২১ জন, বাকি সদস্যরা দক্ষিণ আফ্রিকা, আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও ফিনল্যান্ডের নাগরিক।

শ্রমিকদের প্রতিক্রিয়া: কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি

চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক মো. ইব্রাহিম খোকন বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, বিদেশি অপারেটর ও সাইফ পাওয়ারটেক কাউকে চাই না। এটি দেশের সম্পদ, কোনো একক স্বার্থের বিষয় নয়।”

তিনি আরও জানান, ডিপি ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ টার্মিনালের অভ্যন্তরে গিয়ে বলছেন, “এই কক্ষটি আমার দরকার হবে।” কেউ আবার যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে জেনে নিচ্ছেন, বর্তমান কর্মীরা তা পরিচালনা করতে সক্ষম কি না। এর ফলে কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে ১৬ জুন পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে বিদেশি অপারেটরকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে ২২ জুন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করব।”

ইজারার ভবিষ্যৎ কী?

চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ৮,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালটি চালু হয় ২০০৭ সালে। দেশের মোট কন্টেইনার পণ্যের প্রায় ৫৫ শতাংশ এই টার্মিনালের মাধ্যমে ওঠানামা করে। টার্মিনালটি আধুনিক যন্ত্রপাতিসম্পন্ন ও অত্যন্ত লাভজনক—বছরে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব দেয়।

তারপরও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ বহু দূর এগিয়ে গিয়েছিল। এমনকি পিপিপি কর্তৃপক্ষ ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার পর্যন্ত নিয়োগ করেছিল। তবে রাজনৈতিক পালাবদলের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই উদ্যোগ পুনরায় বিবেচনায় নেয়। এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে শ্রমিক সংগঠন ও রাজনৈতিক মহলে প্রতিবাদ শুরু হয়।

বর্তমানে এনসিটি পরিচালনায় সাইফ পাওয়ারটেকের মেয়াদ আগামী ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে। কে দায়িত্ব নেবে, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে পরবর্তী করণীয় জানতে চেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।”

ডিপি ওয়ার্ল্ডের নীরবতা, ভারতীয় প্রতিনিধিদের ঘিরে সন্দেহ

ডিপি ওয়ার্ল্ডের বাংলাদেশ প্রধান নির্বাহী শামীম উল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অন্যদিকে, ভারতীয় প্রতিনিধিদের হঠাৎ বন্দরে প্রবেশকে অনেকে ‘কৌশলগত আগাম দখল’ বলেই মনে করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ২১ জন ভারতীয় কর্মকর্তার একসঙ্গে বন্দরের অভ্যন্তরে ঢোকা কেবল কারিগরি পর্যবেক্ষণের নাম করে হলেও ভূ-রাজনৈতিকভাবে তা স্পর্শকাতর একটি ঘটনা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপড়েন এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।

চট্টগ্রাম উত্তাল, সরকারের সিদ্ধান্তের দিকেই চেয়ে সবাই

চট্টগ্রামে এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—ডিপি ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তাদের এনসিটিতে প্রবেশ। শ্রমিক আন্দোলনের হুমকি, রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্বেগ ও কৌশলগত সংশয়—সব কিছুই পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সরকার শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয়—বিদেশি অপারেটর দিয়ে এনসিটি পরিচালনার পথে এগোবে, না কি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রাখবে—তা এখন সময়ের অপেক্ষা। তবে ১৬ জুন এবং ২২ জুন—এই দুটি দিন চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত