Ajker Patrika

ভূগর্ভস্থ পানি তুলে নিচ্ছে কাফকো, নলকূপে পানি পাচ্ছে না দুই ইউনিয়নের মানুষ

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১৪: ৫৮
ভূগর্ভস্থ পানি তুলে নিচ্ছে কাফকো, নলকূপে পানি পাচ্ছে না দুই ইউনিয়নের মানুষ

খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর দুই ইউনিয়নে। দুই ইউনিয়নে অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়ন ও কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের অংশ থেকে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি তুলে নেওয়ায় এসব এলাকার সাধারণ মানুষের নলকূপগুলোতে পানির সংকট চলছে। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহুজাতিক কোম্পানি কাফকো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ভূগর্ভস্থ পানি উঠিয়ে নেওয়ার ফলে উপজেলার বৈরাগসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর বড় উঠানের হাজারের বেশি টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। 

এলাকাবাসী অভিযোগ করে আরও বলেন, কাফকোর উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ফেলায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে, যার কারণে অগভীর নলকূপগুলোতে পানি মিলছে না। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে বছর দুয়েক ধরে পুকুর থেকে পানি নিয়ে ফুটিয়ে পান করে আসছিলেন। কিন্তু এখন আর পুকুরেও ঠিকমতো পানি থাকছে না। এমনকি পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। 

এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। এ ছাড়া ভয়াবহ লোডশেডিং আরও ১০ গুণ কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে মানুষের জীবনমান চরম কষ্টের দিকে ধাবিত হচ্ছে। 

গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নে গুয়াপঞ্চক, বৈরাগ ও উত্তর বন্দর এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন ও বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী পরিদর্শন করেন এবং নলকূপ দেখে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। 

বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, ‘কাফকো শুরু থেকে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে কারখানা পরিচালনা করে। এর ফলে আনোয়ারার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে কমছে। ১০ বছর আগেও স্থানীয়রা কাফকোর পানি উত্তোলন নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে, কিন্তু তার সুরাহা হয়নি। বর্তমানে বৈরাগ ইউনিয়নে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বলতে গেলে খাওয়ার পানির জন্য হাহাকার চলছে। এলাকার শত শত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। আমি এ বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে অবহিত করেছি। পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’ 

নোয়াব আলী আরও বলেন, ‘সব পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। সিইউএফএল রাষ্ট্রীয় কোম্পানি হয়ে কালুরঘাটের কর্ণফুলী নদী এলাকা থেকে যদি মিঠাপানি আনতে পারে, তাহলে কাফকো কেন পারবে না?’ 

কেইপিজেডের ডিজিএম মুশফিকুর রহমান বলেন, কেইপিজেড প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার বাড়ানোর জন্য কেইপিজেডে বনায়নের পাশাপাশি বড় বড় লেক তৈরি করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কেইপিজেডের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। শুধু শ্রমিকদের খাওয়া ও পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রয়োজনীয় পানি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করে। 

মুশফিকুর রহমান আরও বলেন, কেইপিজেডের উদ্যোগে চট্টগ্রাম ওয়াসার যে পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হয়েছে, সেটির সুফল পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী ভোগ করবে। ইতিমধ্যে কেইপিজেডের কর্ণফুলীর দৌলতপুর প্রধান গেটে ওয়াসা পানি সংরক্ষণাগার স্থাপন করেছে। আগামী জুনে এটি চালু হলে ভূগর্ভস্থ কোনো পানি কেইপিজেড ব্যবহার করবে না। 

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন সাংবাদিকদের বলেেন, ‘বৈরাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় টিউবওয়েলে ভূগর্ভস্থ পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ সরেজমিনে তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছি। এ বিষয়ে কাফকো ও কেইপিজেডের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’ 

সূত্র জানায়, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (কাফকো) উৎপাদন চালু রাখতে হলে ঘণ্টায় ৮০০ মেট্রিক টন মিঠাপানির প্রয়োজন হয়। এসব পানি পাশের কর্ণফুলী নদী থেকে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেলে চাহিদামতো পানি পাচ্ছে না কাফকো। ফলে প্রতিষ্ঠানটি সাতটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি তুলে নিচ্ছে কারখানায়। এ কারণে উপজেলার বৈরাগ, চাতরী, বারশত ইউনিয়ন ও কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ বিগত কয়েক বছর ধরে তাদের নলকূপগুলোতে পানি পাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অধৈর্য হয়ে পুতিন-এরদোয়ানের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

হাদিকে বলেছিলাম—‘র’ তোকে বাঁচতে দেবে না: বোন মাছুমা

হাদির ভাইয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ, সর্বোচ্চ সহযোগিতার নিশ্চয়তা

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মাথায় নয়, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো অভ্যুত্থানের বুকে বুলেট: সারজিস আলম

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
গতকাল রাতে পঞ্চগড় চৌরঙ্গী মোড়ে বিক্ষোভ মিছিলে কথা বলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে পঞ্চগড় চৌরঙ্গী মোড়ে বিক্ষোভ মিছিলে কথা বলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

বুলেট শুধু শরিফ ওসমান হাদির মাথায় নয়, এই বুলেট বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া যে অভ্যুত্থান, তার বুকে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গতকাল শুক্রবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির প্রতিবাদে পঞ্চগড় চৌরঙ্গী মোড়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে এসব কথা বলেন তিনি।

সারজিস বলেন, ‘যারা আগামীর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে চাচ্ছে, যারা নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিকে বানচাল করতে চাচ্ছে দেশে ও দেশের বাইরে, ওই এজেন্টদের এটা একটা খেলা। আর হাদিকে গুলি করার মধ্য দিয়ে এই খেলা তারা শুরু করল। আগামীতে আমরা ঐক্যবদ্ধ না থাকলে, যে পথে চলছি, সেই পথ থেকে বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদি অভ্যুত্থানের আগ থেকে অভ্যুত্থানের পর পর্যন্ত ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধের সিনা টান করে কথা বলে এসেছেন। যারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের ভয় দেখানোর জন্য হাদিকে গুলি করা হয়েছে। বিগত কয়েক মাসে এই বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিচয়ে সীমান্ত দিয়ে এমন অনেক মানুষকে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে এসেছে।’ 

সারজিস বলেন, ‘আমাদের সামনে শুধু নির্বাচনী লড়াই নয়, আমাদের সামনে বাংলাদেশকে রক্ষা করার লড়াই। আমাদের সামনে শুধু ভোটের লড়াই নয়, যারা বাংলাদেশকে ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই। আওয়ামী সন্ত্রাসী যারা ছিল, তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। তাদের সঙ্গে ইন্টারনাল আপস করে, ইন্টারনাল প্রটেকশন দিয়ে এই বাংলাদেশে আগামীতে কোনো কিছু সুষ্ঠুভাবে হতে পারে না। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করছি, সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। খুনি-সন্ত্রাসী, তাদের দোসর এবং বাইরে থেকে যারা ষড়যন্ত্র করছে, যারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়, অগ্রযাত্রা থামাতে চায়, যাদের স্বার্থ বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে মিলছে না, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সবাইকে বলি, লুতুপুতু করে আগামীর বাংলাদেশে খুনিদের আশ্রয় দিয়ে কখনোই শান্তি ফেরানো সম্ভব নয়। দিনে এক কথা, রাতে এক কথা, এই যদি হয় অবস্থা; তাহলে আগামীতে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অধৈর্য হয়ে পুতিন-এরদোয়ানের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

হাদিকে বলেছিলাম—‘র’ তোকে বাঁচতে দেবে না: বোন মাছুমা

হাদির ভাইয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ, সর্বোচ্চ সহযোগিতার নিশ্চয়তা

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাকেরগঞ্জে একই ঘরে ৩ জন অচেতন, বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৫
সন্ধ্যা রানী সাহাকে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সন্ধ্যা রানী সাহাকে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লার বাজার-সংলগ্ন মরণ সাহার বাড়িতে চেতনানাশক স্প্রে করে পরিবারের সবাইকে অচেতন করে মালপত্র লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ঘরের মালিক মরণ সাহার মা অঞ্জলি রানী সাহা (৯০) মারা গেছেন। গুরুতর অবস্থায় অচেতন মরণ সাহাকে (৫৫) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে এবং তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা রানী সাহাকে (৪৮) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মোল্লার বাজার-সংলগ্ন ওই ঘরে বসবাস করেন প্রশান্ত কুমার ওরফে মরণ সাহা, তাঁর মা অঞ্জলি সাহা এবং স্ত্রী সন্ধ্যা রানী। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। দুপুর পর্যন্ত তাঁদের কাউকে বাইরে দেখা না যাওয়ায় এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ অবস্থায় দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে একপর্যায়ে তাঁরা দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় ঘরের মেঝেতে তিনজনকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে অঞ্জলি সাহাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় ঘরের মালপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে ছিল।

স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রশান্ত সাহাকে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠান। সন্ধ্যা রানীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মরণ সাহার স্ত্রী সন্ধ্যা রানীর অবস্থা অনেকটা ভালো। তবে মরণ সাহা বেশি অসুস্থ ও অজ্ঞান থাকায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম সোহেল রানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, কারা কীভাবে ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত নয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য কাজ চলছে এবং ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অধৈর্য হয়ে পুতিন-এরদোয়ানের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

হাদিকে বলেছিলাম—‘র’ তোকে বাঁচতে দেবে না: বোন মাছুমা

হাদির ভাইয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ, সর্বোচ্চ সহযোগিতার নিশ্চয়তা

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পটুয়াখালীর কলাপাড়া: এক রাখাইন পরিবারের ৪০ একর জমি দখল

  • রাখাইন পরিবারটি অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সুযোগে জমি জবরদখল ও বিক্রি
  • অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে ১৫৫ শতাংশ দখলের লিখিত অভিযোগ
  • ভুয়া আমমোক্তারনামা মূলে প্রতারণার মাধ্যমে কবলা দলিল তৈরি
মীর মহিবুল্লাহ, পটুয়াখালী
অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন রাখাইন পরিবারের সদস্যরা। সেই সুযোগে তাঁদের জমিগুলো দখল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি কর্মকর্তা। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কালাচানপাড়ায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন রাখাইন পরিবারের সদস্যরা। সেই সুযোগে তাঁদের জমিগুলো দখল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি কর্মকর্তা। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কালাচানপাড়ায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের কালাচানপাড়ায় একটি রাখাইন পরিবারের প্রায় ৪০ একর জমি জবরদখল হয়েছে। গত ১৫ বছরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীরা জালিয়াতির মাধ্যমে অধিকাংশ জমি দখলে নিয়ে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৩ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খাদেম উল কায়েস ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ওই জমির ১৫৫ শতাংশ দখলের লিখিত অভিযোগ করা হয়। প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা, আইনসচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ পাঠিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন জমির মালিক লাচাউ রাখাইন।

লাচাউ রাখাইনের স্বজনেরা জানান, লাচাউয়ের স্বামী অংশাচিং রাখাইন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় (এফএও) কর্মকর্তা হিসেবে বহু বছর কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি চাকরিসূত্রে বদলি হন অস্ট্রেলিয়ায়। তারপর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। লাচাউ রাখাইন ও তাঁর দুই ছেলে পরে সেখানকার নাগরিকত্বও পান। যদিও তাঁরা প্রতিবছর কলাপাড়ার কালাচানপাড়ায় নিজেদের বাড়িতে আসতেন। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অংশাচিং অসুস্থ হয়ে পড়ায় সে বছর তাঁদের আর দেশে আসা সম্ভব হয়নি। দুই ছেলে সেখানকার সরকারি চাকরিতে থাকায় তাঁরাও দেশে ফিরতে পারেননি। এভাবেই কেটে যায় এক যুগ।

লাচাউয়ের স্বজনদের অভিযোগ, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে লাচাউ রাখাইন দেশে এসে জানতে পারেন, তিনি ও তাঁর দুই ছেলের নামে ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে একাধিক নকল খতিয়ান, জাল দলিল এবং ভুয়া উত্তরাধিকার সনদ বানানো হয়েছে। এসব নথির ভিত্তিতে তাঁদের জমি আত্মসাৎ করা হয়। আর এ দখলে নেতৃত্ব দিয়েছেন কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বারেক মোল্লা, তাঁর ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি হোসেন মোল্লাসহ অনেক নেতা। যাঁরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে পলাতক। এ ছাড়া রয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদেম উল কায়েস, তাঁর ভাই মাওলানা হারুন ও বেয়াই ইউসুফ মুসল্লিসহ কয়েকজন।

এই চক্রের বিভিন্ন সদস্যের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করায় লাচাউদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি দেশে এসেছিলেন লাচাউ রাখাইন ও তাঁর বড় ছেলে উয়েন চিং রাখাইনের স্ত্রী খেনমা ম্যা। লাচাউ রাখাইন (৮৬) বলেন, ‘আমি জমি উদ্ধার করতে গেলে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়; যাতে আমরা এলাকায় না যেতে পারি। এই অন্যায়ের সঙ্গে যারা জড়িত, আমি তাদের সবার বিচার চাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে।’

অভিযোগে যা আছে

অতিরিক্ত সচিব খাদেম উল কায়েসের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী, কলাপাড়ার আলীপুর মৌজার ৬৩ নম্বর বিএস খতিয়ানের ৪২০৪, ৫, ৬, ১১, ১২, ৭৪ ও ৪৪৪২, ৪৩৮৭ এবং ৪৬১০ নম্বর দাগের ৮.০৬ একর ভূমির মালিক লাচাউ রাখাইন ও তাঁর পরিবার। তবে তাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালে লাচাউ রাখাইন ও তাঁর দুই ছেলে উয়েন চিং ও ম্যাওয়েন চিংয়ের নামে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ও অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের সিল ও সই জাল করে ২০০০ সালের ৮ আগস্ট ক্ষমতাপত্র তৈরি করা হয়। ওই আমমোক্তারনামা মূলে জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে খাদেম উল কায়েস তাঁর স্ত্রী মোসা. আইরিন জেসমিন ও বেয়াই মো. ইউসুফ মুসল্লির নামে ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল কবলা দলিল তৈরি করে ১৫৫ শতাংশ জমি দখল করেন।

ওই আমমোক্তারনামার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১৬ জুন জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রথম আদালতে লাচাউ বাদী হয়ে মামলা করেন। বিচারক মামলাটি পটুয়াখালী সদর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ ও সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আমমোক্তারনামার বৈধতা যাচাইয়ে সিআইডি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তথ্য চাইলে ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মো. তানজিল কবির স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘৪৩০ নম্বর আমমোক্তারনামা’ সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আদালতকে এই আমমোক্তারনামা-সংক্রান্ত কোনো তথ্য না পাওয়ার কথা জানায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুয়াকাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বারেক মোল্লা আলীপুর মৌজার ১০৪২ এসএ খতিয়ান এবং ৩০৫ নম্বর বিএস খতিয়ানের জমি জাল কাগজ তৈরি করে কিছু দখল করেছেন। অন্যদিকে তাঁর ভাই এলাকার যুবলীগের সাবেক সভাপতি হোসেন মোল্লা একই ১০৪২ এসএ খতিয়ান ও ১৭৬১ নম্বর বিএস খতিয়ানের ২১৯ দাগ থেকে ১৮ শতাংশ, ৪৭৪ নম্বর খতিয়ান, ১০৮৬ ও ১০৮৮ খতিয়ান থেকে ৮.৫০ শতাংশ এবং ৬২ নম্বর খতিয়ানের ৪২০৬ দাগ থেকে ১২ শতাংশ জমি দখল করে বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ি ও মার্কেট নির্মাণ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা ৪৩০টি ভুয়া আমমোক্তারনামা নোটারি করে এসব জমি নিজেদের দখলে নেন।

এ বিষয়ে হোসেন মোল্লা মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা। আমরা অংশাচির কাছ থেকে দলিল নিয়েছি, তিনি আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন, বসাইয়াও দিয়েছেন। ২০১০ সালের পর কিছু জমি দখল হয়েছে, সেটা তো আমরা করিনি।’

জানতে চাইলে বারেক মোল্লা মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দলিল ছাড়া আমার জমি নাই ১ শতাংশও। আমার জমি তাদের থেকে নিলে অল্প নেওয়া থাকতে পারে। কিন্তু আমার জমি অন্য মানুষের থেকে নেওয়া, মংচোবার থেকে নেওয়া। এ ছাড়া তাদের অনেক জমি আছে, তারা দলিল দেয় নাই। কিন্তু মানুষ দখল করে আছে। দলিল দেছে, আর না দেছে, সব অংশাচি বাবুর ডায়েরিতে লেখা আছে। সে যদি আসে এবং একদিন বসে কোটি কোটি টাকার জমি বের হয়ে যাবে।’

সরেজমিন চিত্র

সম্প্রতি এক বিকেলে আলীপুরের থ্রি পয়েন্টের পশ্চিম পাশে গিয়ে লাচাউয়ের অভিযোগে উল্লেখ করা দাগের ২১ শতাংশ জমির ওপর একটি মার্কেট দেখা যায়। সেখানে রয়েছে ৮টি দোকান এবং পেছনে নির্মিত হয়েছে ৫টি বসতঘর। এলাকাবাসীর ভাষ্য, এই মার্কেটটি ‘খাদেম উল কায়েস জজের মার্কেট’ নামে পরিচিত। এর আশপাশে অধিকাংশ জমি ইউসুফ মুসল্লি বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন।

এ সময় কথা হয় ওই মার্কেটের ঝালাইয়ের দোকানদার মো. কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি, এটা জজ (খাদেম উল) সাহেবের জমি, তাঁর বউয়ের নামে। এখানে ৮টি দোকান ও ৫টির মতো ঘর আছে। এসবের ভাড়া তাঁর ভাই হারুন মাওলানা উঠান।’

এ সময় ওই এলাকার বাসিন্দা টাইলস দোকানের মালিক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ইউসুফ মুসল্লির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমার আসতে হয়েছে, সে আমার থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে, বলেছে এ জমি সব তাঁর। স্ট্যাম্প আছে। সে এখানে অনেকের কাছ থেকে নিয়েছে। এখনো বলে জমি তাঁর।’ ইসমাইল আরও বলেন, ‘ইউসুফ মুসল্লি বহুত টাকা খাইছে। ১ কোটি টাকার মতো নেছে। উনি (খাদেম উল সাহেব) ওনার (ইউসুফ মুসল্লি) সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় এসে ঠ্যাক (সমর্থন) দিতেন।’

অতিরিক্ত সচিব যা বলেন

অভিযোগের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদেম উল কায়েস মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আইন, নিয়ম সবার জন্য সমান। সেখানে যদি কোনো ঝামেলা থাকে সেটা কোর্ট দেখবে, অথরিটি দেখবে। কিন্তু কথা হলো, জমি তো সবাই কিনতে পারবে, আল্লাহ যদি সামর্থ্য দেয় আপনি কিনতে পারবেন, আমি ১ ইঞ্চি পারব। আইন আছে, সাবরেজিস্ট্রি অফিস আছে। কেউ যদি কারও প্রতি অন্যায় করে দেখার মতো এজেন্সিও আছে।’

ইউসুফ মুসল্লি ও মাওলানা হারুনের বিষয়ে জানতে চাইলে খাদেম উল কায়েস বলেন, ‘আমার বেয়াই বলে কথা না, আইনে যার জন্য যেটা প্রযোজ্য, তার জন্য সেটাই হবে। ইউসুফ মুসল্লির জবাব সে দেবে। আমার ভাই কিছু করলে তাঁর সাথে কথা বলেন, তাঁরা কী বলে শোনেন। নিয়মের বাইরে গেলে আমরা কেউ কিছু করতে পারব না, সাপোর্ট করি না, করবও না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউসুফ মুসল্লি ও মাওলানা হারুনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তাঁরা রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অধৈর্য হয়ে পুতিন-এরদোয়ানের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

হাদিকে বলেছিলাম—‘র’ তোকে বাঁচতে দেবে না: বোন মাছুমা

হাদির ভাইয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ, সর্বোচ্চ সহযোগিতার নিশ্চয়তা

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাওরে বিদ্যুৎ সংযোগ: বাঁশ দিয়ে ৩৩,০০০ কেভির খুঁটি

  • অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে ৭টি বাঁশের খুঁটির ওপর দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার
  • বর্ষা মৌসুমে বসানো এসব অস্থায়ী খুঁটি শুষ্ক মৌসুমেও অপসারণ করেনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি
  • ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটি অপসারণের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের
  • দ্রুত বাঁশের খুঁটি অপসারণ করে সিমেন্টের খুঁটি বসানো হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ
মো. ফরিদ রায়হান,অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) 
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫৬
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বড় হাওরে বাঁশের খুঁটির ওপর দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বড় হাওরে বাঁশের খুঁটির ওপর দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার বড় হাওরে এখন আর থইথই পানি নেই। বিস্তীর্ণ হাওরের মধ্য দিয়ে টানা হয়েছে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। কিন্তু উচ্চমাত্রার এই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে। বাঁশ, কাঠ ও জিআই তারের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের খুঁটির মাথায় এমন ছয়টি বাঁশের খুঁটি রয়েছে। পাশের উপজেলা মিঠামইনের নবাবপুর হাওরে আরও একটি বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, হাওরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তার টানার জন্য বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করায় স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাঁরা দ্রুত এসব খুঁটি অপসারণ করে সিমেন্টের তৈরি খুঁটি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর অষ্টগ্রামের হাওরে বর্ষার পানির স্রোতে ছয়টি সিমেন্টের খুঁটি পড়ে যায়। এতে সে সময় প্রায় ৭২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকে অষ্টগ্রাম উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক। এর আগে আগস্টে একটি খুঁটি পড়ে গিয়ে সারা দিন বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে মিঠামইন সদর ইউনিয়নের নবাবপুরে।

বিস্তীর্ণ হাওরে বর্ষার পানির প্রবল স্রোতের মধ্যে নৌকায় দাঁড়িয়ে তৈরি করতে হয় এসব বাঁশের খুঁটি। ১২-১৪ জন শ্রমিক ও টেকনিশিয়ান মিলে দুই দিনে তৈরি হয় একেকটি খুঁটি। প্রতিটি অস্থায়ী খুঁটিতে খরচ পড়ে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। শুষ্ক মৌসুমে বর্ষায় নির্মিত বাঁশের খুঁটির স্থলে বসানো হয় নতুন বৈদ্যুতিক খুঁটি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে হাওরাঞ্চলে বৈদ্যুতিক খুঁটি পানিতে পড়ে গেলে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে বাঁশের অস্থায়ী খুঁটি ব্যবহার করা হয়। পরে শুষ্ক মৌসুমে তা অপসারণ করে সিমেন্টের তৈরি খুঁটি স্থাপন করা হয়।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিঠামইন জোনাল অফিসের অধীনে তিন হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইনে ১০৮ কিলোমিটার ৩৩ হাজার ভোল্টেজ (কেভি) ও ৯৪৫ কিলোমিটার ১১ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন রয়েছে। তিন উপজেলায় গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার ৬৩৫ জন। তাদের মধ্যে অষ্টগ্রামে ৩৩ হাজার ৫১৩ জন, মিঠামইনে ২৭ হাজার ৬৫৩ ও ইটনা আংশিকে ১৯ হাজার ৩৬৯ জন গ্রাহক।

বর্ষাকালে বিস্তীর্ণ হাওরের পানিতে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটির গোড়ার মাটি নরম থাকে। এতে পানির স্রোত, ঝড়, নৌকা ও পর্যটকবাহী ট্রলারের ধাক্কায় অনেক সময় হেলে পড়ে। কখনো একেবারেই পড়ে যায় বৈদ্যুতিক খুঁটি। পানিতে ছিঁড়ে পড়ে বৈদ্যুতিক তার। দুর্ঘটনা এড়াতে দু-এক দিন ধরে বন্ধ থাকে কয়েক হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ। ভোগান্তিতে পড়ে লাখো মানুষ।

তবে গত চার বছর আগে হাওরাঞ্চলে বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়া রোধে টেকসই স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা প্রস্তাব পাঠানো হয় পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে। কিন্তু কোনো কার্যক্রম গ্রহণ হয়নি।

মিঠামইন সদর ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহক ফরহাদ আহমেদ (৪০) বলেন, ‘পানির সময় কারেন্টের পিলার পড়লে হাওরের পানিতে বাঁশের খুঁটি করে বিদ্যুৎ দেওন ছাড়া কোনো উপায় নাই, তা জানি। বেশি সুবিধা দিতে কিছু অসুবিধাও হয়। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে বিপদ কমবে না।’

তিন উপজেলা নিয়ে পরিচালিত মিঠামইন পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা) মো. নবী উল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাওরে বর্ষাকালে খুঁটি পড়ে গেলে সিমেন্টের তৈরি খুঁটি বসানো সম্ভব হয় না। গ্রাহকের সুবিধার্থে কিছু ঝুঁকি থাকলেও বিকল্প উপায়ে এই বাঁশের খুঁটি দিয়ে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখি। বর্ষা শেষে সরবরাহ লাইন মেরামত করা হয়। এখন পানি নেমে গেছে। দ্রুত বাঁশের খুঁটি অপসারণ করে সিমেন্টের খুঁটি বসানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অধৈর্য হয়ে পুতিন-এরদোয়ানের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়লেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

হাদিকে বলেছিলাম—‘র’ তোকে বাঁচতে দেবে না: বোন মাছুমা

হাদির ভাইয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ, সর্বোচ্চ সহযোগিতার নিশ্চয়তা

ওষুধকে ফাঁকি দিতে মরার ভান করে ক্যানসার কোষ—গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত