Ajker Patrika

শেবাচিম হাসপাতালে যন্ত্রপাতি অচল, সিন্ডিকেটে জিম্মি রোগী

  • আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে
  • ১৩টি এক্স-রে মেশিনের ৮টি বিকল
  • ইকোকার্ডিওগ্রাম মেশিন অচল
  • ৫টি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের ৩টি অচল
  • গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট, সব নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৩৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বৃহত্তর বরিশালের জনসাধারণের সেবা নেওয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। তবে হাসপাতালের পাশে গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যেতে বাধ্য করা, নিম্নমানের খাবার, সরকারি অ্যাম্বুলেন্সসেবা না পাওয়ায় ভুগছে রোগীরা। সিন্ডিকেট-বাণিজ্যের কারণে রোগীরা সেখানে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাসহ সন্দ্বীপ-হাতিয়া, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ একাংশের জনসাধারণ শেবাচিমে চিকিৎসা নেয়। হাজার শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি থাকে গড়ে ১ হাজার ৭০০ রোগী। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয় হাজারের বেশি রোগী। হাসপাতালের প্রতিটি সেক্টর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, চিকিৎসকসহ নগরের অনেক প্রভাবশালী ঠিকাদার এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত।

এদিকে হাসপাতালের সার্বিক তদারকিতে গঠিত হয়েছিল ‘স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা কমিটি’। এই কমিটি এখন অকার্যকর। গত ১৫ জুন নতুন সভাপতি হয়েছেন তৎকালীন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। নানা আশা জোগালেও তিনি হাসপাতালে রোগীর সেবা ফেরাতে পারেননি।

নামে অ্যাম্বুলেন্স

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শেবাচিম হাসপাতালে ৩০টি আইসিইউ শয্যা আছে। কিন্তু নেই ডায়ালাইসিস সুবিধা। হৃদ্‌রোগীদের চিকিৎসায় এনজিওগ্রামের সব ব্যবস্থা আছে, নেই চিকিৎসক। কোটি টাকা মূল্যের রোগনির্ণয় সরঞ্জামগুলো বিকল। আইসিইউ সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে এই হাসপাতালে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারকে ভারত সরকারের উপহারের ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্সের এটি একটি। হাসপাতাল সূত্র বলছে, এটি পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত কোনো রোগী এই অ্যাম্বুলেন্সসেবা পায়নি। এ ছাড়া হাসপাতালে আরও চারটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেগুলোর সেবা থাকে নামমাত্র। এর বাইরে গড়ে উঠেছে অ্যাম্বুলেন্সের বিশাল বাণিজ্য। শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। শেবাচিম থেকে ১৫৫ কিলোমিটার দূরের রাজধানীতে রোগী বহনে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট।

বিকল রোগনির্ণয় যন্ত্র

শেবাচিমের দুটি সিটি স্ক্যান মেশিনের একটি পরিত্যক্ত হয়েছে অনেক বছর আগে। হাসপাতালের ৫টি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের ৩টি অচল ২-৩ বছর ধরে। ১৩টি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে বিকল ৮টি। এগুলোর মধ্যে ৫টি এক্স-রে মেশিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। একমাত্র এমআরআই মেশিনটি বিকল ৭ বছর ধরে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে ইকোকার্ডিওগ্রাম মেশিন অচল থাকায় সেবা পাচ্ছেন না হৃদ্‌রোগীরা।

হাসপাতালের ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয় ২০১৪ সালে। সেটি বন্ধ থাকায় মাঝে টানা তিন বছর এনজিওগ্রাম বন্ধ ছিল। সেটি পরিচালনাকারী টেকনিশিয়ান গোলাম মোস্তফা বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ এই মেশিন বারবার সার্ভিসিং করে সচল রাখতে হচ্ছে। যেকোনো সময়ে আবার অচল হয়ে যেতে পারে। ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কোবাল্ট-৬০ মেশিনটি স্থায়ীভাবে অচল।

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সিন্ডিকেট

হাসপাতালের সামনে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেখানে রোগী পাঠালে ৪০ শতাংশ হারে কমিশন পান চিকিৎসক। রোগী নেওয়া দালালেরা পান ১০ শতাংশ। হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন হাসপাতালের কর্মচারী শহীদ, কালাম মৃধা, মিলন ও ধলা জাফর। রোগীপ্রতি ৪০ শতাংশ কমিশন পান। ৫ ভাই রবিন, কবির, আজিজুল, হাসিব, মিলন এবং তাঁদের এক ভগ্নিপতি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রোগী ভাগিয়ে নেন। প্রতি হাজারে ৩০০ টাকা কমিশন পান তাঁরা।

খাবারের নিম্নমানের

হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তালিকায় অনেক খাবার সরবরাহ করা হয় না। তারপরও নিয়মিত বিল ও যুগের পর যুগ একই ঠিকাদারের ওপরই ভরসা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেবাচিম হাসপাতালে ৩ বেলা খাবারসহ সব ধরনের কাজের ঠিকদার হলেন চারজন। ৩০ বছরের বেশি সময় তাঁরাই ঠিকাদারি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। চার ঠিকাদার হলেন হাসিব মল্লিক, মরন পিপলাই, আশরাফুল ইসলাম রেজা ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবর রহমান। ওষুধ সরবরাহের ঠিকাদারি করেন শাহীন নামের একজন।

এই হাসপাতালে চলতি বছর চিকিৎসা নিয়েছেন বরিশাল নগর উন্নয়ন ফোরামের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু। তিনি বলেন, তিনি ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত শেবাচিমতে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালটির অব্যবস্থাপনা অবর্ণনীয়। হাসপাতালের সিন্ডিকেট ভাঙাই নতুন পরিচালকের বড় চ্যালেঞ্জ। এর ওপর নির্ভর করবে হাসপাতালে ভবিষ্যৎ সেবার মান।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যা হচ্ছে

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর হাসপাতালের পরিচালকসহ অনেক চিকিৎসক ও ইন্টার্নদের হাসপাতাল ছাড়তে হয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের মুখে পরিচালক পদত্যাগ করেন। হাসপাতাল সূত্র বলছে, চিকিৎসকের সংখ্যা আগেও কম ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা চলে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালটির পরিচালক নিযুক্ত হয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর। তিনি এখনো দায়িত্ব নেননি।

তাই হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় উপপরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে। তাঁর মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই বিষয়ে জানতে কল করা হয় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রেজাউল আলম রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যস্ত আছেন। এ বিষয়ে কথা বলবেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, সরকারি হাসপাতালের দামি যন্ত্রপাতিগুলো কেন অচল থাকবে? আসলে কর্মচারীরাই এগুলো অচল করে রোগী বাইরে পাঠায়। তিনি আরও বলেন, যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করা, ওয়ার্ডগুলোয় সেবা নিশ্চিত করা, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করাই হবে নতুন প্রশাসনের বড় চ্যালেঞ্জ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের শতভাগ বই এলেও সংকট মাধ্যমিকে

  • জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২২ লাখ ৭ হাজার
  • সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি
  • মাধ্যমিকের সব বই না আসায় এ বছরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা শিক্ষকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি বই। এরই মধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বইগুলো স্কুলে স্কুলে পাঠানো শুরু হয়েছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলো উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বই আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।

গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন-চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্যটকের বাড়তি চাপে ঠাঁই নেই হোটেল-মোটেলে

  • তিন দিনের ছুটিতে হোটেল-মোটেলের প্রায় সব কক্ষ বুকড
  • ২০২৫-কে বিদায় ও ২০২৬-কে স্বাগত জানাতে পর্যটকের চাপ আরও বাড়বে
  • বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কক্সবাজারে যানজট
কক্সবাজার প্রতিনিধি
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। ছবি: আজকের পত্রিকা
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন। বরাবরের মতোই অবকাশযাপনে ভ্রমণপিপাসুরা এবারও দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করবেন। তবে শনিবারেই চাপ কমবে না। পর্যটকের এই ঢল আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকেরা ভিড় করবেন।

হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের মালিকেরা বলছেন, বুধবার বিকেল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের তারকা মানের হোটেলগুলোয় শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। মাঝারি মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।

সাগরপারের তারকা মানের হোটেল কক্স টুডেতে কক্ষ আছে ২৪৫টি। তাদের প্রায় সব কক্ষ শনিবার পর্যন্ত বুকিং আছে। হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক (রিজার্ভেশন) আবু তালেব শাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিন দিনের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন।

কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ, সেন্ট মার্টিন ও আশপাশের এলাকার ৬০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ আছে। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ সময়ে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিপুল পর্যটক সমাগমে যেন কেউ থাকা-খাওয়ায় বাড়তি অর্থ আদায় না করে তার জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকের আনাগোনায় তিন কিলোমিটার সৈকত মুখর। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শান্ত সৈকতে কেউ গোসলে নেমেছেন, কেউ জেটস্কি করে দূর সাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার চেয়ার-ছাতায় বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে সমুদ্র দর্শনে সময় কাটাচ্ছেন। গোসলে নামা বিপুল পর্যটকদের নানাভাবে সতর্ক করছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকের বাড়তি চাপে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে কলাতলী সড়ক, মেরিন ড্রাইভ ও শহরের প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

পর্যটকেরা শহরের এই তিন পয়েন্টের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সৈকতে ভিড় করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন।

কুমিল্লার হোমনা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে বড়দিনের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। ফলে বাচ্চাদের নিয়ে তিন দিনের জন্য ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।’ তাঁর মতো পরিবার নিয়ে অনেকেই বেড়ানোর জন্য বের হয়েছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছুটিতে পর্যটকদের চাপ বাড়বে—বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। কোথাও পর্যটক হয়রানির খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেটে জুয়া খেলা অবস্থায় আটক ৭

সিলেট প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটে জুয়া খেলা অবস্থায় ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কানিশাইল ১ নম্বর রোডের মারুফ টি স্টল নামক দোকানে অভিযান পরিচালনা করে তির শিলং-জাতীয় জুয়া খেলা অবস্থায় তাঁদের আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কানিশাইলের সজীব মিয়ার কলোনির রমিজ আলীর ছেলে তাহের মিয়া (৩০), উসমান মিয়ার ছেলে শামীম (২০), ইমন মিয়ার কলোনির মো. আব্দুল করিম তালুকদারের ছেলে মো. স্বপন মিয়া (৫৫), রঙ্গ মিয়ার ছেলে জসিম (৪৫), জামাল উদ্দিনের ছেলে আল আমিন (২৭), আব্দুর রশিদের ছেলে মো. বাদল (৩৮) এবং আবুল কালামের ছেলে সুজাত মিয়া (৩৫)।

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনায় মা হত্যায় ছেলে গ্রেপ্তার

খুলনা প্রতিনিধি
মো. রিয়াদ খান।  ছবি: সংগৃহীত
মো. রিয়াদ খান। ছবি: সংগৃহীত

খুলনায় শিউলী বেগম হত্যা মামলায় ছেলে মো. রিয়াদ খানকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তাঁকে খুলনা র‌্যাব-৬ এবং ৭-এর যৌথ অভিযানে ফেনী জেলার সদর থানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার রিয়াদ শিউলী বেগমের একমাত্র ছেলে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ২ লাখ ৫ হাজার ৮০ টাকা, দুটি আইফোন, একটি স্মার্টফোন ও একটি এয়ারপড জব্দ করা হয়।

র‌্যাবের পাঠানো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে, নিহত শিউলি বেগম সৌদি আরবপ্রবাসী ছিলেন। গত ২৭ অক্টোবর দুই মাসের ছুটিতে বাংলাদেশে আসেন। পরে নগরীর ট্যাংক রোডের বাসিন্দা রবিউল ইসলামের বাড়ির নিচতলায় ছেলে রিয়াদ খান এবং দ্বিতীয় স্বামী সাগরকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

দেশে আসার ১০-১২ দিন পরে উত্তরা ব্যাংক খুলনা শাখা থেকে পৌনে ৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে আলমারিতে রেখে দেন।

৯ ডিসেম্বর রাতে শিউলী বেগমের বড় মেয়ে রুবিনা আক্তার এবং তাঁর স্বামী রাজিব রাতের খাবার খেয়ে বাড়িতে চলে যান। ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে শিউলী বেগমকে ফোনে না পেয়ে রুবিনা আক্তারকে খোঁজ নিতে বলেন তাঁর স্বামী।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে তাঁর সন্ধান না পেয়ে ওই দিন রাতে স্থানীয়দের সহায়তায় তালা ভেঙে ঘর থেকে শিউলী বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরে তাঁর ঘর থেকে পৌনে ৭ লাখ টাকা উধাও হয়ে যায়। শিউলী বেগম হত্যার পর থেকে একমাত্র ছেলে রিয়াদ খানেরও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই রায়হান গাজী বাদী হয়ে শিউলী বেগমের ছেলে রিয়াদ খানকে আসামি করে মামলা করেন। উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব খুলনা-৬ ও ৭-এর একটি দল তাঁকে ফেনী সদর থেকে গ্রেপ্তার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত